চূড়ান্ত আন্দোলনের ঘোষণা আসছে

২৯ জানুয়ারি, ২০২৩ | ৬:২৭ পূর্বাহ্ণ
অনলাইন নিউজ ডেস্ক , ইউ এস বাংলা ২৪

সরকারের পদত্যাগ ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারসহ দশ দফা দাবিতে চূড়ান্ত আন্দোলনের দিকে অগ্রসর বিএনপি। এজন্য পূর্বঘোষিত ৪ ফেব্রুয়ারির বিভাগীয় সমাবেশকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে দলটি। এ সমাবেশ থেকে তৃণমূলকে চূড়ান্ত আন্দোলনের বার্তাও দিতে চায়। গণসমাবেশের মতো বিভাগীয় এ কর্মসূচিতে বড় জমায়েতের লক্ষ্যে ইতোমধ্যে তৃণমূলকে আট দফা নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সমাবেশের আগে দাবি-দাওয়ার বিষয়ে জনসাধারণকে অবহিত করতে ইউনিয়ন ও ওয়ার্ডের হাট-বাজার, পাড়া-মহল্লায় পদযাত্রা, প্রচারপত্র বিতরণ, পথসভা, হাটসভা, মিছিল ও গণসংযোগ করতে বলা হয়। সব সাংগঠনিক ও সহ-সাংগঠনিক সম্পাদকরা ইতোমধ্যে নির্দেশনা বাস্তবায়নে দায়িত্বপ্রাপ্ত বিভাগে অবস্থান করছেন। একই সঙ্গে তারা জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন নেতাদের নিয়ে সমাবেশ সফল করতে দফায় দফায় বৈঠক করছেন, প্রচারেও অংশ নিচ্ছেন। দলের একাধিক সূত্র এসব তথ্য নিশ্চিত করেছে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত দপ্তর সম্পাদক ও ময়মনসিংহ বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স শনিবার বলেন, ‘৪ ফেব্রুয়ারি সমাবেশের মাধ্যমে আমরা চূড়ান্ত আন্দোলন শুরু করব। এ রকম চূড়ান্ত আন্দোলনের ডাকের জন্য সবাই উন্মুখ হয়ে আছেন। নির্যাতিত-নিপীড়িত জনতার দাবির মুখে আমাদের কর্মসূচি এখন চূড়ান্ত আন্দোলনের দিকে ধাবিত হচ্ছে’। তিনি বলেন, ‘ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সঙ্গে বৈঠকে চলমান আন্দোলনে সম্পৃক্ত করার জন্য কিভাবে আবার জনসাধারণকে উদ্ধুব্ধ করা যায়, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। ২ ফেব্রয়ারি পর্যন্ত তৃণমূল পর্যায়ে পদযাত্রা, পথসভা, হাটসভা, প্রচারপত্র বিতরণসহ নানা কর্মসূচি পালনের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে’। তিনি জানান, দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য, ভাইস-চেয়ারম্যান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা, যুগ্ম মহাসচিবদের সমন্বয়ে প্রতিটি বিভাগীয় সমাবেশে একটি টিম অংশগ্রহণ করবে। বিএনপির কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা জানান, গত বছরের শেষদিকে দশটি বিভাগীয় গণসমাবেশ তৃণমূলকে ব্যাপকভাবে উজ্জীবিত করে। জনসম্পৃক্ত ওই কর্মসূচিতে দলীয় নেতাকর্মীর পাশাপশি সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণও ছিল অনেক বেশি। বিশেষ করে ঢাকায় ১০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত সর্বশেষ গণসমাবেশ ঘিরে দলের নেতাকর্মী ছাড়াও মুক্তিকামী জনগণের মধ্যে বড় ধরনের প্রত্যাশা তৈরি হয়েছিল। এ কারণে ওই সমাবেশে দলের নেতাকর্মী ছাড়াও হাজার হাজার সাধারণ মানুষ অনেক কষ্ট সহ্য করে ঢাকায় জড়ো হন। স্মরণকালের ওই গণসমাবেশ সরকারের ভিতও কাঁপিয়ে দেয়। কিন্তু ওই সমাবেশের উত্তাপ পরবর্তীতে আর ধরে রাখা যায়নি। এই ব্যর্থতা অনেকের মধ্যে এক ধরনের হতাশা তৈরি করেছে। ফলে অনাকাঙ্ক্ষিত এই ছন্দপতন দূর করে আন্দোলনকে একটি গ্রহণযোগ্য ও প্রত্যাশিত পরিণতির দিকে নিয়ে যেতেই হবে। তা না হলে সরকার পতনের চূড়ান্ত আন্দোলনে সাধারণ মানুষকে সম্পৃক্ত করা যাবে না। সাধারণ মানুষ সম্পৃক্ত না হলে এই আন্দোলন সফল হবে না। এজন্য আসন্ন এই সমাবেশকে সার্থক না করার আর কোনো বিকল্প নেই। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘দলের প্রতিটি কর্মসূচিতেই নেতাকর্মীদের পাশাপাশি বিপুলসংখ্যক সাধারণ জনগণ অংশ নিচ্ছেন। কারণ, বর্তমান অবৈধ সরকারকে জনগণ আর চায় না। তারা সবকিছুতেই ব্যর্থ। তাই তাদের পদত্যাগ করতেই হবে, ক্ষমতা ছেড়ে দিতে হবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে। দশ দফা দাবি আদায়ে বিএনপির আন্দোলন চলছে। শান্তিপূর্ণ এ আন্দোলনের মধ্য দিয়েই আমরা সরকারের পতন ঘটাব।’ বিএনপি নেতারা আরও বলেন, যুগপৎ আন্দোলনের অংশ হিসাবে এই বিভাগীয় সমাবেশ। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ‘রাজনৈতিক কৌশল’ জেনেই এ কর্মসূচিকে অধিক গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। আন্দোলনকে চূড়ান্ত রূপ দিতেই এ সমাবেশ। এ সমাবেশ থেকে দাবি বাস্তবায়নে চূড়ান্ত আন্দোলনের নানা দিকনির্দেশনাও দেওয়া হবে। এমনও হতে পারে সরকার পতনের এক দফা আন্দোলনের ঘোষণাও আসতে পারে। সূত্র জানায়, ঢাকা মহানগরের সাংগঠনিক শক্তি পরীক্ষায় ইতোমধ্যে ৪ দিনের পদযাত্রা কর্মসূচি দিয়েছে বিএনপি। যা শনিবার শুরু হয়েছে, চলবে পহেলা ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। এ কর্মসূচি চলাকালীন সময়েই দশ সাংগঠনিক বিভাগে দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক ও সহ-সাংগঠনিক সম্পাদকরা অবস্থান করছেন। সমাবেশ সফল করতে তারা স্থানীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে জনসাধারণকে উদ্বুব্ধ করতে প্রচারে অংশ নিচ্ছেন। এ উপলক্ষ্যে শুক্রবার দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ভার্চুয়াল বৈঠকও করেছেন। এতে মহাসচিবসহ সব বিভাগীয় সাংগঠনিক ও সহ-সাংগঠনিক সম্পাদকরা অংশ নেন। এতে সমাবেশ সফল করতে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নানা দিকনির্দেশনা দেন। রাজশাহী বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু বলেন, ‘আমরা বড় জমায়েতের মাধ্যমে এ সমাবেশ করতে চাই। বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন চূড়ান্ত লক্ষ্যে পৌঁছানের জন্য জনগণকে সম্পৃক্ত করতে আমাদের কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছি। প্রতিটি সমাবেশে অতীতের চেয়েও বেশি জনসমাগম হবে বলে আশা করছি।’ তৃণমূলে আট দফা নির্দেশনা: বিএনপির দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, বিভাগীয় সমাবেশ সফল করতে ইতোমধ্যে কেন্দ্র থেকে তৃণমূলে আট দফা নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে। নির্দেশনার মধ্যে রয়েছে-৩০ জানুয়ারির মধ্যে বিভাগের অন্তর্গত জেলা, মহানগর সফর ও প্রস্তুতি বৈঠক করবেন বিভাগীয় সাংগঠনিক ও সহ-সাংগঠনিক সম্পাদকরা। জেলা, মহানগর, উপজেলা, পৌর নেতারা টিম করে ২ ফেব্রুয়ারির মধ্যে অধীনস্ত ইউনিট সফর করবেন। ২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সমাবেশে যোগ দিতে জনসাধারণকে উদ্বুদ্ধ ও দাবি-দাওয়া বিষয়ে তাদেরকে অবহিত করতে ইউনিয়ন, ওয়ার্ডের হাট-বাজার, পাড়া-মহল্লায় পদযাত্রা, প্রচারপত্র বিতরণ, পথসভা, হাটসভা, মিছিল, গণসংযোগ করতে হবে। জেলা, মহানগর, উপজেলা, পৌর নেতারা এ সময় সংশ্লিষ্ট ইউনিটের সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের নিয়ে প্রস্তুতি বৈঠকের পাশাপাশি হাট-বাজার, পাড়া-মহল্লায় পদযাত্রা, প্রচারপত্র বিতরণ, পথসভা, হাটসভা, মিছিল, গণসংযোগে অংশ নেবেন। এসব কর্মসূচিতে জেলার অধিবাসী কেন্দ্রীয় নেতা, সাবেক সংসদ-সদস্য ও সংসদ-সদস্য প্রার্থীরাও থাকবেন। জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন নেতাকর্মী ও সমর্থকদের বিভাগীয় সমাবেশ সফল করতে উদ্বুদ্ধ করতে হবে এবং সার্বক্ষণিক মনিটরিং করতে হবে, স্থানীয় জনসাধারণকেও সমাবেশে যোগ দিতে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। বিভাগের সাংগঠনিক ও সহ-সাংগঠনিক সম্পাদকরা সার্বিক কর্মসূচি সমন্বয় করবেন। এ কর্মসূচির বিষয়ে বিশেষ করে জেলা, উপজেলা, ইউনিয়নে প্রস্তুতি সভা, গণসংযোগ, তৃণমূল পর্যায়ে মিছিল, সমাবেশে কেন্দ্রীয়, জেলা, উপজেলা পর্যায়ের নেতা, কেন্দ্রীয় নেতা, সাবেক সদস্যদের উপস্থিতি, সম্পৃক্ততা বিষয়ে মূল্যায়ন রিপোর্ট ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বরাবরে কেন্দ্রীয় দপ্তরে পাঠাতে হবে। ‘আওয়ামী সন্ত্রাস, সরকারের দমন-নিপীড়ন ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে, বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের নিঃশর্ত মুক্তির দাবি, বিদ্যুৎ, গ্যাস ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য কমানোসহ ১০ দফা দাবি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে’ ৪ ফেব্রুয়ারি দেশব্যাপী বিভাগীয় সদরে সমাবেশ করবে বিএনপি। এদিন আলাদাভাবে একই কর্মসূচি পালন করবে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা গণতন্ত্র মঞ্চ, ১২ দলীয় জোট, ১২ দলের জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, এলডিপি, গণফোরাম ও পিপলস পার্টি, চার দলের বাম গণতান্ত্রিক ঐক্য এবং ১৫ সংগঠনের সমমনা পেশাজীবী গণতান্ত্রিক জোটও।