এক যুগের সর্বনিম্ন এডিপি বাস্তবায়ন

২৭ জানুয়ারি, ২০২৩ | ৯:২৭ পূর্বাহ্ণ
অনলাইন নিউজ ডেস্ক , ইউ এস বাংলা ২৪

পদ্মা সেতু এবং মেট্রোরেলের মতো বড় প্রকল্পের দরজা খুলেছে গেল বছর। যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্পের একটি অংশও। এ সব প্রকল্পের সেবা ভোগ করছে সাধারণ মানুষ। খুব শিগগির যোগাযোগ অবকাঠামোতে যোগ হতে যাচ্ছে চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে বঙ্গবন্ধু টানেল। এত সব সাফল্যের মধ্যেও এই অর্থবছরের প্রথম ছয় মাস জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়ন গত এক যুগের মধ্যে সবচেয়ে কম। সাত মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন হার ৫ শতাংশের ঘরে। গত ছয় মাসে ১ টাকাও খরচ করতে পারেনি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সর্বোচ্চ বরাদ্দ পাওয়া ১৫ মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সর্বনিম্ন বাস্তবায়ন স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের। এ বিভাগের বাস্তবায়ন হার ১০ শতাংশের কম। সরকারের অগ্রাধিকার দেওয়া মেগা প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়ন চিত্রও প্রায় অভিন্ন। অবশ্য সরকারি অর্থের চেয়ে বিদেশি ঋণের উৎসের খরচ তুলনামূলক বেশি। এডিপি বাস্তবায়নে হতাশাজনক চিত্রের কারণে এবার বড় অঙ্কের এডিপি কাটছাঁট হতে পারে। সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (আরএডিপি) বরাদ্দ ৬ দশমিক ১ শতাংশ ছেঁটে ফেলা হচ্ছে। অর্থাৎ এডিপি থেকে ২৫ হাজার কোটি টাকা কমিয়ে আনা হচ্ছে। আগামী ফেব্রুয়ারির শেষ দিকে আরএডিপি চূড়ান্ত হতে পারে বলে জানিয়েছে সূত্র। জানতে চাইলে বিশ্বব্যাংকের সাবেক লিড ইকোনমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন বলেন, পরিস্থিতি সামাল দিতে আপাতত প্রকল্প বাস্তবায়নে কৃচ্ছ্রর প্রাথমিক লক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। তিন ক্যাটাগরিতে প্রকল্প বিন্যাস করা হয়েছে। সে কারণে বাস্তবায়ন হয়তো কিছুটা কম হতে পারে। তবে অপ্রয়োজনে যাতে প্রকল্প বাস্তবায়ন বাধাগ্রস্ত না করা হয় সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। এ ছাড়া সরকারি উৎস থেকে খরচের ক্ষেত্রেও সতর্কতার প্রয়োজন রয়েছে। কারণ, সরকার বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। এতে মূল্যস্ম্ফীতির চাপ আরও বেড়ে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি) সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। এ অর্থবছরের জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ছয় মাসে এডিপি বাস্তবায়নের হার ২৩ দশমিক ৫৩ শতাংশ। গত অর্থবছরের একই সময়ে বাস্তবায়নের হার ছিল ২৪ দশমিক ০৬ শতাংশ। এর আগের অর্থবছরের এ হার ছিল ২৩ দশমিক ৮৯ শতাংশ। এডিপি বাস্তবায়নের উপাত্ত ঘেঁটে দেখা যায়, এক যুগের মধ্যে আর কোনো অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে এত কম হারে বাস্তবায়ন হয়নি। এক যুগ আগে ২০১০-১১ অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বর সময়ের এডিপি বাস্তবায়ন হার ছিল ২৭ দশমিক ৪৫ শতাংশ। সার্বিকভাবে ছয় মাসের হিসাব বাদ দিলেও একক ডিসেম্বরের বাস্তবায়ন চিত্র ছিল অভিন্ন। ওই মাসটিতে এডিবি বাস্তবায়ন হয়েছে ৫ দশমিক ১৩ শতাংশ। গত অর্থবছরের একই সময়ে এ হার ছিল ৫ দশমিক ৪৫ শতাংশ। ধীরগতির কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে আইএমইডি সচিব আবুল কাশেম মো. মহিউদ্দিন বলেন, মূলত রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধসহ আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির কারণে অর্থনৈতিক সংকটই এডিপি বাস্তবায়নের ধীরগতির প্রধান কারণ। ওই কারণেই প্রকল্পগুলোকে তিন ক্যাটাগরি করে কোনো কোনো প্রকল্পের বরাদ্দ স্থগিত করা হয়েছে। তবে এ পরিস্থিতি থাকবে না। গত একনেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে কিছু নির্দেশনা দিয়েছেন। সে অনুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। আগামীতে প্রকল্প বাস্তবায়নের গতি ব্যাপকভাবে বাড়বে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা সম্পর্কে জানতে চাইলে সচিব বলেন, অনেক প্রকল্পের সঙ্গে বিলাসী কিছু অঙ্গ রয়েছে। যেমন কম প্রয়োজনে একটা রেস্ট হাউস রাখা হয়েছে, সেগুলো বাদ দেওয়া হবে। খুব সতর্কতার সঙ্গে এগুলো যাচাই-বাছাই করে বরাদ্দ ঠিক করা হবে। সূত্র জানিয়েছে, গত ছয় মাসে বিভিন্ন প্রকল্পে খরচ হয়েছে ৬০ হাজার ২৪৯ কোটি টাকা। এই অর্থবছরে এক হাজার ৪৯৬ প্রকল্পের বিপরীতে এডিপি বরাদ্দ ২ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ আগামী ৬ মাসে প্রায় ২ লাখ কোটি টাকা খরচ করতে হবে, যা প্রায় অসম্ভব। এডিপি বাস্তবায়নের ধীরগতির মধ্যেও সরকারি উৎসের বরাদ্দের চেয়ে বিদেশি ঋণের খরচ বেড়েছে বেশি হারে। গত ছয় মাসে সরকারি উৎসের মোট বরাদ্দ থেকে খরচ হয়েছে ২৩ শতাংশের কিছু কম। এ সময় বিদেশি ঋণের জোগান থেকে খরচ হয়েছে বরাদ্দের প্রায় ২৭ শতাংশ। এডিপির মোট বরাদ্দের মধ্যে সরকারের জোগান ৫৮ দশমিক ২১ শতাংশ। বিদেশি ঋণ মোট বরাদ্দের প্রায় ৩৬ শতাংশ। বাকি ৩ দশমিক ৮৮ অর্থের জোগান বাস্তবায়নকারী সংস্থাগুলোর নিজস্ব। ফাস্ট ট্র্যাক প্রকল্প বাস্তবায়নও সন্তোষজনক নয় :বাস্তবায়নে সরকারের অগ্রাধিকারে থাকা ফাস্ট ট্রাক আট প্রকল্পের অগ্রগতিও সন্তোষজনক নয়। কৃচ্ছ্রর অংশ হিসেবে এই অর্থবছরের বাজেটে এসব প্রকল্পের বরাদ্দ কমানো হয়েছে। ডিসেম্বর পর্যন্ত চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম পর্যন্ত ডুয়েল গেজ রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পের আর্থিক অগ্রগতি মাত্র ৪০ শতাংশ। প্রকল্পটি আগামী জুনে শেষ হওয়ার কথা। অন্য প্রকল্পের গতিও ধীর।