মেগা প্রকল্পে ধীরগতির তদন্ত শুরু

২৭ জানুয়ারি, ২০২৩ | ৭:১৬ পূর্বাহ্ণ
অনলাইন নিউজ ডেস্ক , ইউ এস বাংলা ২৪

সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ২৩শ কোটি টাকার মেগা প্রকল্পে ধীরগতির তদন্ত শুরু করেছে সরকার। বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয় এই তদন্ত করছে। ২৭ নভেম্বর এ নিয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। ২ সদস্য বিশিষ্ট কমিটির আহ্বায়ক করা হয় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (পরিকল্পনা) খলিলুর রহমানকে। কমিটির অপর সদস্য হলেন-সিনিয়র সহকারী সচিব ও সহকারী নিয়ন্ত্রক (হোটেল ও রেস্তোরাঁ সেল) আয়েশা হক। কমিটিকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে তদন্তের মাধ্যমে দায়দায়িত্ব নিরূপণ শেষে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে। ২০১৮ সালের ৭ নভেম্বর সরকার প্রকল্পটি অনুমোদন দেয়। ২০২১ সালের ডিসেম্বর কাজ শেষ হওয়ার কথা। উলটো দুই দফায় সময়ও বাড়ানো হয়েছে। এরপরও এখন পর্যন্ত দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি নেই। ২৭ অক্টোবর ‘সিলেট ওসমানী বিমানবন্দর-অনিশ্চিত ২৩শ কোটি টাকার মেগা প্রকল্প’ শিরোনামে একটি রিপোর্ট প্রকাশিত হয়। এরপরই টনক নড়ে মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের। এদিকে দুদফায় প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোর পরও টার্মিনাল ভবন নির্মাণ কাজের অগ্রগতি না থাকায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একেএম আব্দুল মোমেন। ২৩ জানুয়ারি তিনি এ নিয়ে বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলীকে চিঠি দেন। চিঠিতে তিনি বলেন, প্রকল্পটি এখন যে অবস্থায় আছে তাতে ‘বিশেষ ব্যবস্থা ও উদ্যোগ’ না নিলে আরও বিলম্বিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তিনি বলেন, আমাদের দেশে প্রকল্প ব্যয় বাড়াতে উন্নয়ন কাজ বিলম্বিত করার ট্র্যাডিশন রয়েছে। জাপান ও চায়নার মতো দেশে এমনটি করতে দেখা যায় না। তারা মেয়াদের আগেই কাজ শেষ করে। মেট্রোরেলের কাজ ৬ মাস আগে শেষ করে টাকা ফেরত দেওয়ার নজির আছে। সিলেট ওসমানী বিমানবন্দর উন্নয়নের কাজ অত্যন্ত ধীরগতিতে হচ্ছে। এটি কোনোভাবেই কাম্য নয়। টার্মিনালের কাজ বিলম্ব হওয়ার বিষয়টি খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। মন্ত্রণালয় সূত্র জানায় তদন্ত কমিটি ইতোমধ্যে ওসমানী বিমানবন্দর পরিদর্শন করেছে। এসময় তারা দীর্ঘদিনেও এই মেগা প্রকল্পটির অগ্রগতি না দেখে বিস্ময় প্রকাশ করেন। প্রকল্পের অন্যতম স্থাপনা টার্মিনাল ভবন নির্মাণ কাজের দৃশ্যমান কিছু না দেখে হতাশা প্রকাশ করেন। বিষয়টি নিয়ে তারা প্রকল্পের পিডির (প্রজেক্ট ডিরেক্টর) সঙ্গে কথা বলেন। বিদেশি ঠিকাদার চীনের বেইজিং আরবান কনস্ট্রাকশন গ্রুপের (বিইউসিজি) কর্মকর্তা-কর্মচারী, কনসালট্যান্ট, বুয়েট শিক্ষক ও প্রকল্পের সাব ঠিকাদারদের সঙ্গেও কথা বলেন। তাদের বক্তব্য রেকর্ডও করেন। বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের এক চিঠিতে বলা হয়েছে, ওসমানী বিমানবন্দর সম্প্রসারণ প্রকল্পে অনুমোদিত ডিপিপি নিয়মবহির্ভূতভাবে প্রকল্প পরিচালক নিয়োগ করা হয়েছে। যার ফলে প্রকল্প বাস্তবায়নে বিঘ্ন সৃষ্টি হচ্ছে। কারণ পিডি প্রেষণে নিয়োগ হওয়ায় এভিয়েশনসংক্রান্ত কাজে তিনি দক্ষ ও অভিজ্ঞ নন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অনুশাসনে বলা আছে, পিডি পদে নিয়োগকৃত কর্মকর্তাকে অবশ্যই দক্ষ ও কারিগরি জ্ঞানসম্পন্ন হতে হবে। বেবিচকের বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পগুলো এভিয়েশন সেক্টরের সংশ্লিষ্ট বিধায় ওই পদে জনবল নিয়োগের ক্ষেত্রে বেবিচকের নিজস্ব জনবল থেকে দক্ষ ও অভিজ্ঞ কর্মকর্তাকে নিয়োগ দেওয়ার কথা। কিন্তু নিয়োগকৃত কর্মকর্তার এ ধরনের কোনো কারিগরি জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা নেই। এ ধরনের মেগা প্রকল্পের ৭৫ ভাগ কাজ হচ্ছে পূর্তসংশ্লিষ্ট। বাকি ২৫ ভাগ কাজ ইলেকট্রিক্যাল-মেকানিক্যাল ও যোগাযোগ যন্ত্রাবলীর। অথচ যে কর্মকর্তাকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, তিনি একজন মেকানিক্যাল প্রকৌশলী। এভিয়েশনসংক্রান্ত বিষয়ে তার কোনো কারিগরি জ্ঞান নেই। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী এ ধরনের প্রকল্পে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার আইকাও’র (ইন্টারন্যাশনাল সিভিল এভিয়েশন অরগানাইজেশন) অ্যানেক্স-১৪-সহ অন্যান্য রুলস-রেগুলেশন, এফএএ’র (ফেডারেশন এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন) অ্যাডভাইজরি সার্কুলারসংক্রান্ত দেশীয় ও আন্তর্জাতিক স্ট্যান্ডার্ড সম্পর্কে ধারণা থাকতে হবে। বর্তমান পিডির এ ধরনের কারিগরি জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা না থাকার কারণে তিনি প্রকল্প নিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন। এদিকে সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সম্প্রসারণ প্রকল্পে অনিয়মের অভিযোগ এনে বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচি গ্রহণ করেছে সিলেটের বিভিন্ন সামাজিক ও পেশাজীবী সংগঠন। তারা এ নিয়ে আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণারও আলটিমেটাম দিয়েছেন। সিলেটের যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী খলকু কামাল বলেন, প্রতিবছর সিলেটি প্রবাসীরা ২০ হাজার কোটি টাকা রেমিট্যান্স পাঠান দেশে। কিন্তু সিলেট বিমানবন্দরে তারা কোনো ধরনের সেবা পান না। বাধ্য হয়ে তাদের ঢাকায় অবতরণ করতে হয়। তিনি সিলেট বিমানবন্দর সম্প্রসারণ প্রকল্পটির অগ্রগতি না হওয়ার পেছনে কারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান। অন্যথায় যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত সিলেটবাসী কঠোর কর্মসূচি গ্রহণ করবে বলেও জানান। তবে প্রকল্প সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, ঠিকাদারিদের একটি সিন্ডিকেট নিম্নমানের মালামাল দিয়ে প্রকল্পটি নির্মাণ করতে চাচ্ছে। তারা চুক্তি বহির্ভূতভাবে নিম্নমানের ও দেশীয় নির্মাণসামগ্রী যেমন স্টিল স্ট্রাকচার দিয়ে প্রকল্পটি করতে চাচ্ছে। এতে বাধা দেওয়ায় সিন্ডিকেট প্রকল্প নিয়ে অপপ্রচার চালাচ্ছে। সিভিল এভিয়েশন থেকেও প্রকল্পসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন কাজে অসহযোগিতা করা হচ্ছে। জানা যায়, সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সম্প্রসারণ প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে ২৩০৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে দেওয়া হবে ২২৭৪ কোটি টাকা। বাকি ৬১২ কোটি টাকা দেওয়া হবে বেবিচকের নিজস্ব তহবিল থেকে। মোট ৩২টি বিদেশি কোম্পানি এই প্রকল্পের দরপত্রে অংশ নেয়। প্রথম দফায় সব কোম্পানির দরপত্র বাতিল হয়ে যায়। দ্বিতীয় দফায় ২০১৯ সালের ১১ নভেম্বর আবার দরপত্র আহ্বান করা হয়। সেবার মোট ১৯টি দরদাতা অংশ নেন। তাতে ৬টি প্রতিষ্ঠান যোগ্য বিবেচিত হয়। এরপর দীর্ঘ প্রক্রিয়া শেষে এই প্রকল্পের কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে বিশ্বের অষ্টম বৃহৎ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান চীনের বেইজিং আরবান কনস্ট্রাকশন গ্রুপকে (বিইউসিজি)। বর্তমান প্রকল্পটির দ্বিতীয় মেয়াদের আর মাত্র ৪ মাস বাকি আছে।