‘১০২, নট আউট’ সিনেমাটা দেখছেন, প্রশ্ন মির্জা ফখরুলের

২৬ জানুয়ারি, ২০২৩ | ৮:৩৯ অপরাহ্ণ
অনলাইন নিউজ ডেস্ক , ইউ এস বাংলা ২৪

জন্মদিন নিয়ে বাড়তি কোনো উচ্ছ্বাস নেই মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের। বরং এটি তার জন্য নিদারুণ কষ্টের। বয়স হয়েছে, এ কারণে নয়। কেন কষ্টের সেই ব্যাখ্যাও দিয়েছেন প্রবীণ এই রাজনীতিক। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সবার কাছে সজ্জন ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত। রাজনীতিকদের নিয়ে অনেক বিতর্ক ও সমালোচনা থাকলেও তার বেলায় উল্টো। তার প্রতিপক্ষ রাজনীতিবিদেরাও তাকে ভালো জানেন। আজ ৭৬ বছরে পা দিয়েছেন মির্জা ফখরুল। সবাই শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন বটে, তবে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের মনে আরও একটি বছর হারিয়ে ফেলার বেদনা। আবার সিনেমায় দেখা শতবর্ষীর জীবন তাকে প্রেরণাও যোগাচ্ছে। মির্জা ফখরুল জানিয়েছেন, তার জন্মদিনের ঘুম ভাঙে বড় মেয়ে মির্জা শামারুহর ফোনে। বৃহস্পতিবার সকালে অস্ট্রেলিয়া থেকে বড় মেয়ে ফোন করেছেন। ছোট মেয়েও জন্মদিনের জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। স্ত্রী রাহাত আরা বেগমও হ্যাপি বার্থ ডে বলে উইশ করেন ৭৫ পেরোনো এই রাজনীতিককে। জন্মদিন নিয়ে বাড়তি কোনো আনন্দ নেই ফখরুলের মনে। তিনি বলেন, আমার কাছে এখনকার জন্মদিন নিদারুণ কষ্টের। কারণ আমাদের প্রাণপ্রিয় নেত্রী গণতন্ত্রের মাতা দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া কারাবন্দি, এখন গৃহে অন্তরীণ হয়ে আছেন। নিদারুণ কষ্ট-যন্ত্রণায় দিনযাপন করছেন। এরকম একটা অবস্থায় জন্মদিন নিয়ে কি বলার আছে?' বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল স্ত্রী রাহাত আরা বেগমকে নিয়ে উত্তরায় ভাড়া বাসায় থাকেন। সকালে স্ত্রীর সঙ্গে এক টেবিলে নাস্তা করেছেন। তারপর বাসা থেকে নিজের প্রাইভেট কারে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের উদ্দেশে রওনা হন। কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে পৌঁছে নেতাকর্মীদের শুভেচ্ছায় সিক্ত হন মির্জা ফখরুল। আগেই তিনি বারণ করে দিয়েছিলেন, জন্মদিনে তাকে যেন ফুল দিয়ে বরণ করা না হয়। নয়াপল্টনের সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে সাংবাদিকরা জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানালে মির্জা ফখরুল বলেন, ধন্যবাদ মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য যে, আমার সময় প্রায় শেষের দিকে। পাশে বসা ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আবদুস সালাম এ সময় বলেন, একটা ছোট গোলাপ দিলে ভালো হতো। সঙ্গে সঙ্গে ‘না না’ করে উঠে মির্জা ফখরুল বলেন, 'প্লিজ এটা করবেন না।' সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘ওয়ান হান্ড্রেড টু, নট আউট’, দেখছেন ছবিটা? এই ছবিটা সবাইকে দেখতে বলব। ইটস এ ওয়ান্ডারফুল মাস্টার পিস। আমাদের মত মানুষদের এই জীবনকে পজিটিভলি নেওয়া– এটা এত চমৎকারভাবে এই ছবিতে উঠে এসেছে। তিনি বলেন, অনেকে আছেন না, বৃদ্ধ হয়ে যায়, মরার আগে মরে যায়। তো ওটাকে নেগলেট করে ১০২ বছরের বৃদ্ধ সে জীবনকে উপভোগ করেতেছে, এটা দেখার মত। সবারই এই ছবি দেখা উচিত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী মির্জা ফখরুল ছাত্রজীবনে বাম রাজনীতিতে সম্পৃক্ত ছিলেন। পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি ছিলেন তিনি। তার বাবা প্রয়াত মির্জা রুহুল আমিন ছিলেন মুসলিম লীগের নেতা, পাকিস্তান আমলে মন্ত্রীও ছিলেন তিনি। লেখাপড়া শেষ করে ঢাকা কলেজসহ কয়েকটি সরকারি কলেজে শিক্ষকতা করেছেন ফখরুল। ১৯৮৬ সালে সরকারি চাকরি ছেড়ে পুরোপুরি রাজনীতিতে সক্রিয় হন। ১৯৮৮ সালে ঠাকুরগাঁও পৌরসভা নির্বাচনে জিতে হন চেয়ারম্যান। মির্জা ফখরুলের জাতীয় রাজনীতিতে হাতেখড়ি আবদুল হামিদ খান ভাসানীর দল ন্যাপে। সেখান থেকেই তার বিএনপিতে যোগদান। ১৯৭৯ সালে জিয়াউর রহমানের শাসনামলে তৎকালীন উপপ্রধানমন্ত্রী এস এ বারীর একান্ত সচিব ছিলেন ফখরুল। ১৯৯২ সালে ঠাকুরগাঁও জেলা বিএনপির সভাপতি, পরে দলের নির্বাহী কমিটির সদস্য থেকে শুরু করে ধীরে ধীরে জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব পদে উঠে আসেন তিনি। খোন্দকার দেলোয়ার হোসেনের মৃত্যুর পর ২০১১ সালে দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব হন মির্জা ফখরুল। ২০১৬ সালে বিএনপির ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিলে তিনি মহাসচিব হন। ফখরুল দুই সন্তানের জনক। তার বড় মেয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক শামারুহ মির্জা স্বামী-সন্তান নিয়ে অস্ট্রেলিয়ায় আছেন। সিডনির একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পোস্টডক্টরাল ফেলো হিসেবে কাজ করছেন তিনি। ছোট মেয়ে সাফারুহ মির্জা ঢাকার একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে শিক্ষকতা করেন।