১৭ কোটি মানুষের জন্য চার হাসপাতাল

২৬ জানুয়ারি, ২০২৩ | ১০:৩৭ পূর্বাহ্ণ
অনলাইন নিউজ ডেস্ক , ইউ এস বাংলা ২৪

দেশে ভাস্কুলার ডিজিজ বা রক্তনালি রোগের চিকিৎসা খুবই অপ্রতুল। ১৭ কোটি মানুষের বিপরীতে সরকারি-বেসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত চারটি হাসপাতালে ১৩৮টি শয্যা রয়েছে। রোগটির চিকিৎসায় কর্মরত আছেন প্রায় অর্ধশত চিকিৎসক। এর মধ্যে সরকারি হাসপাতালে একজন এবং বেসরকারিতে তিনজন অধ্যাপক আছেন। সব হাসপাতালে ভাস্কুলার সার্জারি বিভাগ, প্রয়োজনীয় সংখ্যক চিকিৎসক ও শয্যা না থাকায় রোগীরা ভোগান্তিতে পড়ছেন। এমন পরিস্থিতিতে সংশ্লিষ্টরা বলছেন চিকিৎসাসেবাটি দ্রুত সহজলভ্য করা না গেলে ভবিষ্যতে হাত-পা হারানো মানুষের সংখ্যা অনেক বেড়ে যাবে। বিশেষজ্ঞদের অভিমত-সাধারণত একজন মানুষের শরীরে ধমনি ও শিরা নামে দুই ধরনের রক্তনালি থাকে। ধমনির কাজ হার্টে একধরনের পাম্প বা চাপ প্রয়োগ করে দেহের অঙ্গপ্রত্যঙ্গে বিশুদ্ধ রক্ত সরবরাহ করা। অন্যদিকে শিরা দেহের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গে উৎপন্ন দূষিত রক্ত হার্টে জমা করে। কোনো রোগের কারণে শিরা বা ধমনির স্বাভাবিক কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হলে চিকিৎসাশাস্ত্রের পরিভাষায় একে ভাস্কুলার ডিজিজেস বা রক্তনালির রোগ বলে। রোগটি কেন হয় জানতে চাইলে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের ভাস্কুলার সার্জারির বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. মো. ফিদাহ্ হোসেন বলেন, রক্তনালি রোগের কারণ নির্দিষ্টভাবে বলা কঠিন। সাধারণত শরীরের রক্ত জমাট বেঁধে ব্লক হতে পারে। এক্ষত্রে হাত-পা ছাড়াও শরীরের বিভিন্ন জায়গায় টিউমার, ভেরিকস ভেইন, আলসার, গ্যাংগ্রিনসহ নানা কারণে রক্তনালি ব্লক হতে পারে। এর বাইরেও কিছু রিস্ক ফ্যাক্টর রয়েছে, যেগুলো এ রোগের জন্য অন্যতম দায়ী। এগুলো হচ্ছে-ধূমপান, মদ্যপান, তামাক বা জর্দা সেবন। এছাড়া ডায়াবেটিস, উচ্চরক্তচাপ, জন্মগত বা জিনগত সমস্যা, জীবাণু সংক্রমণ (কোভিড-১৯), চর্বিজাতীয় খাদ্য গ্রহণ ও আঘাতজনিত কারণেই এ রোগ হয়। আঘাতের ফলে ধমনি অথবা শিরার রক্তনালি ক্ষতিগ্রস্ত হলে জরুরি ভিত্তিতে অস্ত্রোপচার করতে হয়। জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের ভাস্কুলার সার্জন ডা. কেএম জিয়াউল হক বলেন, দুর্ঘটনাকবলিত মানুষের বড় একটি সংখ্যা রক্তনালির ইনজুরির কারণে অকাল পঙ্গুত্ববরণ করেন। আবার বাংলাদেশে প্রায় এক কোটি মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। তাদের অনেকেই রক্তনালি ব্লকজনিত ডায়াবেটিস ফুট সমস্যায় ভুগছেন। এছাড়া একই আসনে বসে দীর্ঘক্ষণ কম্পিউটার বা ডেস্কটপ ব্যবহার, দীর্ঘ বিমানযাত্রার কারণে (ইকোনমিক ক্লাস সিনড্রোম) অনেকেই ডিপ ভেনাস থমব্রোসিস (ডিভিটি) সমস্যায় আক্রান্ত হচ্ছেন। কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে ডিভিটি এবং পালমোনারি এম্বোলিজম হতে দেখা গেছে। দেশে প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে এক-তৃতীয়াংশ জনগোষ্ঠী সিভিআই বা ক্রনিক ভেনাস ইনসাফিসিয়েন্সি রোগে আক্রান্ত বলে ধারণা করা হয়। এর একটি বড় অংশ ভ্যারিকোস ভেইনের রোগী হিসাবে হাসপাতাল চিকিৎসা নিতে আসেন। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রক্তানালি রোগের সেবায় সরকারিভাবে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে একটি স্বতন্ত্র বিভাগ রয়েছে। এখানে ৮ শয্যার ইমার্জেন্সি বিভাগ ও অপারেশন থিয়েটার আছে। জরুরি অস্ত্রোপচার শুধু এই হাসপাতালেই হয়। এছাড়া ১০০ শয্যাবিশিষ্ট একটি আন্তঃবিভাগ ইউনিট আছে। যেটি দেশের একমাত্র সার্জারি ও জরুরি বিভাগ। হাসপাতাল বহিঃবিভাগে দুটি অস্ত্রোপচার কক্ষ ও একটি আইসিইউ রয়েছে। সেবাদানের জন্য একজন অধ্যাপক, একজন সহযোগী অধ্যাপক, সাতজন সহাকারী অধ্যাপক এবং একজন কনসালটেন্ট ও রেজিস্ট্রার, সহকারী রেজিস্ট্রার, মেডিকেল অফিসারসহ বিভাগটিতে ১২ জন চিকিৎসক রয়েছেন। এর বাইরে সরকারিভাবে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্বল্পপরিসরে বিভাগটি চালু আছে। সেখানে একজন সহকারী অধ্যাপক এবং একজন আবাসিক সার্জন রয়েছেন। বিএসএমএমইউতে বহিঃবিভাগ এবং ৮ শয্যার একটি আন্তঃবিভাগ রয়েছে। বিএসএমএমইউতে সহযোগী অধ্যাপক একজন, সহকারী অধ্যাপক একজন, মেডিকেল অফিসার তিনজন এবং একজন গবেষণা সহকারী আছেন। বেসরকারিভাবে বারডেম ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতালের ভাস্কুলার সার্জারি বিভাগে ৩০টি শয্যা এবং তিনজন সহযোগী অধ্যাপক রয়েছেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) ভাস্কুলার সার্জারি বিভাগের গবেষণা সহকারী ডা. এ কে আল মিরাজ বলেন, দেশ কতসংখ্যক মানুষ ভাস্কুলার সমস্যায় ভুগছেন, এর সঠিক তথ্য-উপাত্ত নেই। সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকদের ধারণা-মোট জনগোষ্ঠীর প্রায় চার শতাংশ কমবেশি রক্তনালি রোগের সমস্যায় ভুগছেন। চিকিৎসাসেবা ব্যবস্থা অপ্রতুল হওয়ায় অধিকাংশই শনাক্তের বাইরে থাকছেন। বিভিন্ন কারণে রক্তনালি রোগ হলেও চিকিৎসা সম্পর্কে সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতার অভাব রয়েছে। আবার রোগটির সেবায় হাতেগোনা কয়েকজন ভাস্কুলার সার্জন রয়েছেন। চিকিৎসক ও চিকিৎসাব্যবস্থা অপ্রতুলতায় রোগ নির্ণয়ের অভাবে অনেক রোগী মারাও যাচ্ছেন। ভাস্কুলার ডিজিজ চিকিৎসার কলেবর বৃদ্ধি সম্পর্কে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীর জামাল উদ্দিন জানান, দেশে তার হাসপাতালেই প্রথম স্বল্পপরিসরে এই চিকিৎসা শুরু হয়। ২০১০ সালে পৃথক বিভাগ খোলা হয়। বর্তমানে বহিঃবিভাগে দৈনিক ১০০ থেকে ১৫০ রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন। আন্তঃবিভাগে দৈনিক ৬০ থেকে ৭০ জন রোগী ভর্তি থাকছেন। তিনি আরও বলেন, বিশেষজ্ঞ ভাস্কুলার সার্জন তৈরিতে বিএসএমএমইউতে এমএস কোর্সে প্রতি ব্যাচে তিনজন করে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হচ্ছে। চলতি বছর এখানেও কোর্সটি চালু হয়েছে। প্রতি ব্যাচে তিনজন করে ভর্তি হচ্ছেন। অচিরেই হাইব্রিড অপারেশন থিয়েটার চালু করা হবে।