নতুন পাঠ্যবইয়ে ভুল-অসংগতি

২৫ জানুয়ারি, ২০২৩ | ৯:৫৮ পূর্বাহ্ণ
অনলাইন নিউজ ডেস্ক , ইউ এস বাংলা ২৪

মানসম্মত ও নির্ভুল পাঠ্যবই প্রণয়ন যেন একটি অসাধ্য বিষয়ে পরিণত হয়েছে। এত আলোচনা-সমালোচনার পরও পাঠ্যবইয়ে ভুল ও অসংগতি দূর হচ্ছে না। পাঠ্যপুস্তক প্রণয়নের পুরো প্রক্রিয়ায় হযবরল অবস্থা সৃষ্টি হবে, বইয়ে ভুল তথ্য ছাপা হবে, সংশ্লিষ্টরা ভুল স্বীকার করে বিবৃতি দেবেন, দুঃখপ্রকাশ করবেন-এটাই কি স্বাভাবিক নিয়মে পরিণত হবে? পাঠ্যবই প্রণয়নে কেন হযবরল অবস্থার অবসান হচ্ছে না? তাহলে কি সরষের ভেতরই রয়েছে ভূত? জানা যায়, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির নতুন পাঠ্যবইয়ের অসংগতি ও বিতর্কিত বিষয় চিহ্নিত করার কাজ চলছে। বিষয়গুলোর সত্যতা নিরূপণ সাপেক্ষে খুব দ্রুত সংশোধনী সার্কুলার আকারে জারির চিন্তাও চলছে। নিষেধ করা সত্ত্বেও যেসব লেখক ও সম্পাদক পাঠ্যবইয়ে অনাকাঙ্ক্ষিত তথ্য ও ছবি রেখেছেন, তাদের ব্যাপারে গোয়েন্দা তদন্ত চলছে। শাস্তি হিসাবে তাদের ভবিষ্যতে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) কোনো কাজে নেওয়া হবে না বলেও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। প্রশ্ন হলো, এ বিষয়ে এনসিটিবির দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের পক্ষ থেকে যে ধরনের বক্তব্য দেওয়া হচ্ছে, তা কতটা গ্রহণযোগ্য? এনসিটিবির নেওয়া দায়সারা উদ্যোগে শেষ পর্যন্ত কতটা সুফল মিলবে-এ নিয়েও প্রশ্ন থেকে যায়। যেসব লেখকের যোগ্যতা-দক্ষতা-আন্তরিকতা প্রশ্নবিদ্ধ, তারা এ প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার সুযোগ পান কী করে? আমাদের দেশের ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাঠ্যপুস্তকে বিভিন্ন সময়ে ভুলভাবে প্রকাশিত হয়েছে। এ বিষয়টিকে কি সাধারণ ভুল হিসাবে বিবেচনা করা যায়? দেশের শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে নানা বিতর্ক থাকলেও সরকার শিক্ষার্থীদের স্কুলমুখী করার জন্য ইতিবাচক বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে। কিন্তু এনসিটিবির নিুমান ও ভুলে ভরা পাঠ্যবই আমাদের আশাহত করে। শিশু-কিশোরদের জন্য লেখা বই মানসম্মত ও ত্রুটিমুক্ত না হওয়ার বিষয়টি দুঃখজনক। দেশে কি মানসম্মত বই লেখার মতো যোগ্য মানুষের অভাব রয়েছে? তাহলে যোগ্যদের দূরে সরিয়ে রেখে অযোগ্যদের এমন গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত করার কারণ কী? চতুর্থ ও পঞ্চম শিল্পবিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য শিক্ষা খাতে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। তবে মানসম্মত ও ত্রুটিমুক্ত বই সময়মতো শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেওয়া সম্ভব না হলে তাদের দক্ষ জনশক্তিতে রূপান্তরের কাজে জটিলতা সৃষ্টি হবে। আগামী দিনেও যদি এনসিটিবির পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন প্রকল্পে অযোগ্য ব্যক্তিরা অন্তর্ভুক্ত হন, তাহলে মানসম্মত ও ত্রুটিমুক্ত বই প্রণয়নে অনিশ্চয়তা সৃষ্টির আশঙ্কা থেকেই যাবে। ইচ্ছাকৃত বা অনিচ্ছাকৃত ভুল কিছু শেখানোকে অপরাধ হিসাবে গণ্য করে-এমন অপরাধে জড়িতদের শাস্তি হওয়ার উচিত। এ প্রকল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট লেখক-সম্পাদক সবার কাজে সমন্বয়ের জন্যও যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে। পরিবর্তিত বিশ্ব পরিস্থিতিতে বর্তমান ও আগামী প্রজন্মকে উপযুক্ত করে গড়ে তুলতে যে শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যবই দরকার, তা পর্যায়ক্রমে প্রবর্তনের কাজটি চলমান রয়েছে। এসব বইয়ের আলোচনায় শব্দচয়ন, বাক্য বিন্যাসসহ সামগ্রিক উপস্থাপনে রুচিবোধেরও পরিচয় দিতে হবে। ইতোমধ্যে প্রকাশিত বইগুলোয় ভুল ও বিতর্কিত তথ্যগুলো চিহ্নিত করা হয়েছে; এখন পরবর্তী পদক্ষেপগুলো সময়মতো সম্পন্ন করতে হবে। এনসিটিবি কর্তৃপক্ষের উচিত পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন ও সংশোধনের জন্য পর্যাপ্ত সময় বরাদ্দ করা। সরকারি এ প্রতিষ্ঠানটি শিক্ষার্থীদের হাতে মানসম্মত ও নির্ভুল পাঠ্যপুস্তক তুলে দেওয়ার সক্ষমতা এতদিনেও কেন অর্জন করতে পারেনি, তা খতিয়ে দেখা দরকার।