বয়ান তাশকিলে কাটল ইজতেমার দ্বিতীয় দিন

২২ জানুয়ারি, ২০২৩ | ১০:৩৩ পূর্বাহ্ণ
অনলাইন নিউজ ডেস্ক , ইউ এস বাংলা ২৪

তাবলিগ জামাতের শীর্ষ মুরুব্বিদের গুরুত্বপূর্ণ বয়ান ও মুসল্লিদের তাশকিল, নফল নামাজ, তাসবিহ-তাহলিল, জিকির-আসগারের মধ্য দিয়ে শনিবার বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় দিন অতিবাহিত হয়েছে। আজ সকাল ১০টা থেকে বেলা সাড়ে ১২টার মধ্যে আখেরি মোনাজাতের মাধ্যমে এবারের ৫৬তম বিশ্ব ইজতেমার সমাপ্তি ঘটবে। বিশ্ব ইজতেমার আয়োজক কমিটির শীর্ষ মুরুব্বি প্রকৌশলী শাহ মোহাম্মদ মুহিবুল্লাহ জানিয়েছেন, ভারতের নিজামুদ্দিন মারকাজের মাওলানা ইউসুফ বিন সাদ কান্ধলভী আখেরি মোনাজাত পরিচালনা করতে পারেন। মাওলানা ইউসুফ নিজামুদ্দিন মারকাজের শীর্ষ মুরুব্বি মাওলানা সাদ কান্ধলভীর ছেলে। ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বেও যৌতুকবিহীন বিয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে। বাদ আসর মূল বয়ানমঞ্চের পাশে বর ও কনের অভিভাবকদের উপস্থিতিতে ১৫টি বিয়ে অনুষ্ঠিত হয়। বিয়ে পড়ান মাওলানা ইউসুফ। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন আয়োজক কমিটির সদস্য হাজি মনির হোসেন। তাবলিগের ছয় উসুলের (মৌলিক বিষয়ে) ওপর বাদ ফজর নিজামুদ্দিন মারকাজের মাওলানা ইয়াকুব ছিলানীর বয়ানের মধ্য দিয়ে দ্বিতীয় দিনের কার্যক্রম শুরু হয়। তার বয়ান বাংলায় অনুবাদ করেন মাওলানা মুনির বিন ইউসুফ। বাদ জোহর আরবিতে বয়ান করেন তুরস্কের মাওলানা ওমর তুর্কি। তার বয়ান বাংলায় অনুবাদ করেন মাওলানা আজিম উদ্দিন। বাদ আসর বয়ান করেন নিজামুদ্দিন মারকাজের মাওলানা ইলিয়াস বিন সাদ কান্ধলভী, তা বাংলায় অনুবাদ করেন মাওলানা মুফতি ওসামা ইসলাম। বাদ মাগরিব বয়ান করেন নিজামুদ্দিন মারকাজের মাওলানা আব্দুস সাত্তার, তা বাংলায় ভাষান্তর করেন মাওলানা জিয়া বিন কাসিম। মাওলানা ইয়াকুব ছিলানী ইমান, আমল, জাহান্নাম, জান্নাত ও দাওয়াতের মেহনতের ওপর কথা বলেন। তিনি বলেন, মানুষকে দাওয়াত দিয়ে মসজিদমুখী করতে হবে। মসজিদ হলো মানুষের দিন ও এলেম শিক্ষার জায়গা। মসজিদে নিয়মিত যাতায়াত থাকলে মানুষের জীবন সুন্দর হয়। তিনি আরও বলেন, দিনের দাওয়াতের পাশাপাশি তালিম করতে হবে। নবি করিম (সা.) যেখানে যেতেন, সেখানে গিয়ে তালিম করতেন। আমরাও নিজের ঘর, আত্মীয়স্বজনের বাড়ি, বন্ধুবান্ধবের কাছে যখন যেখানে যাব, সেখানেই তালিম করব। তিনি বলেন, যে ব্যক্তি দিনের দাওয়াতের পথে বের হতে দেরি করে, আল্লাহতায়ালা তার অন্তরে মোহর মেরে দেন। তাই সে কোনটা ভালো, কোনটা খারাপ, বুঝতে পারে না। বিদেশি মুসল্লিদের অংশগ্রহণ: শনিবার বিকাল পর্যন্ত বিশ্বের ৬৫ দেশের সাড়ে ৮ হাজার মেহমান ইজতেমা ময়দানের বিভিন্ন তাঁবুতে অবস্থান নিয়েছেন। ময়দানের মিডিয়া সমন্বয়কারী মোহাম্মদ সায়েম জানান, বিগত বছরের চেয়ে অনেক বেশি বিদেশি মেহমান ময়দানে এসেছেন। তাদের মধ্যে আরবি ভাষী ৬৩২ জন, ইংরেজি ভাষী ৩ হাজার ১৮৮ জন, উর্দু ভাষী ১ হাজার ৫৯০ জন, পশ্চিমবঙ্গ (ভারত) থেকে ২ হাজার ৫ জন, অন্যান্য ভাষাভাষীর ৩১০ জনসহ সাড়ে ৮ হাজার মেহমান ময়দানে তাদের জন্য নির্ধারিত খিত্তায় অবস্থান নিয়েছেন। আখেরি মোনাজাতের আগ পর্যন্ত বিদেশি মেহমানের আসা অব্যাহত থাকবে। দুই দিনে ৫ মুসল্লির মৃত্যু: বৃহস্পতিবার থেকে শনিবার বিকাল পর্যন্ত ৫ মুসল্লির মৃত্যু হয়েছে। তাদের মধ্যে শুক্রবার রাতে ঢাকার কদমতলী থানার পূর্ব জুরাইন এলাকার মৃত আব্দুল জব্বারের ছেলে আব্দুল মান্নান (৫৮), ঢাকা বঙ্গবাজার নিমতলা এলাকার হাজি মো. বোরহান (৪৫), গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ থানার মৃত শুকুর মন্ডলের ছেলে মো. হামিদ মন্ডল (৫৫), ঢাকার সাভারের আব্দুল আলীমের ছেলে মফিজুল ইসলাম (৫৪)। এছাড়াও বরিশালের বরগুনার বাসিন্দা আব্দুল আলী রানার ছেলে মফিজুল ইসলাম (৭৫) মারা গেছেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন লাশের জিম্মাদার মোহাম্মদ রফিক। যৌতুকবিহীন বিয়ে: তাবলিগের রেওয়াজ অনুযায়ী ইজতেমার দ্বিতীয় দিন বাদ আসর বয়ানমঞ্চের পাশে বসে যৌতুকবিহীন বিয়ের আসরে কনের সম্মতিতে বর ও কনেপক্ষের লোকজনের উপস্থিতিতে ওই বিয়ে অনুষ্ঠিত হয়। বিয়েতে মোহরানা ধার্য করা হয় ‘মোহর ফাতেমি’। বিয়ের পর নবদম্পতিদের সুখ-সমৃদ্ধি কামনা করে আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের দরবারে দোয়া করা হয়। এ সময় মঞ্চের আশপাশের মুসল্লিদের মাঝে খুরমা-খেজুর ছিটিয়ে দেওয়া হয়। শনিবার ১৫টি বিয়ে হয়েছে। প্রথম পর্বে ৭০ জোড়া যৌতুকবিহীন বিয়ে অনুষ্ঠিত হয়। যান চলাচল বন্ধ রয়েছে যেসব সড়কে: আজ আখেরি মোনাজাতে অংশ নেওয়া ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের যাতায়াত সুগম করার জন্য শনিবার রাত ১২টার পরে থেকে টঙ্গী-কামারপাড়া রোড, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের টঙ্গী থেকে গাজীপুরের ভোগরা বাইপাস পর্যন্ত যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। এছাড়াও ময়মনসিংহ ও গাজীপুরগামী যানবাহনগুলোকে গাবতলী দিয়ে কোনাবাড়ী হয়ে এবং ময়মনসিংহ থেকে ঢাকাগামী যানবাহনগুলোকে ভোগরা বাইপাস দিয়ে তিনশ ফিট রাস্তা ব্যবহার করে চলাচল করতে বলা হয়েছে। বিশেষ ট্রেন ও বাস: আখেরি মোনাজাত উপলক্ষ্যে আজ পাঁচ জোড়া বিশেষ ট্রেন চালাবে বাংলাদেশ রেলওয়ে। এদিকে মেট্রোরেল সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত চালু থাকবে। বিশেষ বাস সার্ভিস থাকবে বিআরটিসিরও। সরকারি-বেসরকারিভাবে দেশি-বিদেশিদের চিকিৎসা: শুক্রবার বিকাল ৪টা পর্যন্ত ঠান্ডা, বুকে ব্যথা, শ্বাসকষ্টজনিত কারণে ৬৬ জন মুসল্লি টঙ্গী শহিদ আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। এছাড়া ৪ জন রোগীকে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ওই হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. ইমাম গাজ্জালী। এছাড়াও ইজতেমাস্থলের পার্শ্ববর্তী নিউ অলিম্পিয়া মিলস মাঠে স্থাপিত হামদর্দ ল্যাবরেটরি (ওয়াকফ) লিমিটেড ৬ হাজার ৫৬, টঙ্গী ওষুধ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতি ৫০০, আঞ্জুমান মফিদুল ইসলাম ৪৫০, ইবনে সিনা ৯০০, যমুনা ব্যাংক ফাউন্ডেশন ৬৫০, বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথি বোর্ড ১ হাজার ২০০, র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন র‌্যাব ৫৮৯ এবং ইস্ট ওয়েস্ট মেডিকেল ৮৮ জনকে চিকিৎসা সেবা দিয়েছে। এদিকে বিদেশি তাঁবুতে স্থাপিত ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্পে শনিবার ৬৬ জন বিদেশি মেহমানকে চিকিৎসা সেবা দেওয়া হয়েছে। তাদের মধ্যে ডায়রিয়া, পিঠ ব্যথা, গ্যাস্ট্রিক ও শ্বাসকষ্টের রোগী রয়েছেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ক্যাম্পের চিকিৎসক ডা. মাকসুদুর রহমান। ইজতেমা আয়োজক কমিটির জিম্মাদার প্রকৌশলী শাহ মোহাম্মদ মুহিবুল্লাহ বলেন, ইনশাআল্লাহ, রোববার (আজ) সকাল ১০টা থেকে বেলা সাড়ে ১২টার মধ্যে আখেরি মোনাজাত অনুষ্ঠিত হবে।