ভবন নির্মাণের অনুমোদন দেবে বিসি কমিটি

২১ জানুয়ারি, ২০২৩ | ৬:৪৩ পূর্বাহ্ণ
অনলাইন নিউজ ডেস্ক , ইউ এস বাংলা ২৪

সারা দেশে বিক্ষিপ্তভাবে ভবন নির্মাণকাজ বন্ধ করে পরিকল্পিত উন্নয়ন নিশ্চিত করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এজন্য শিগগিরই ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড ২০২০-এর আলোকে জেলা পর্যায়ের বিল্ডিং কনস্ট্রাকশন বিসি কমিটি কার্যকর করা হবে। উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, সিটি করপোরেশন ও পৌরসভা এলাকার বাইরে ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে এই কমিটি দায়িত্ব পালন করবে। বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে গঠিত বিসি কমিটি ভবন নির্মাণের অনুমোদন দেবে। এই কমিটি কার্যকর করতে ইতোমধ্যে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে একটি শাখা খোলা হয়েছে। গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্টরা জানান, উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার বাইরের এলাকায় কোনো অনুমোদন ছাড়াই নিজেদের মতো করে ভবন নির্মাণ হচ্ছে। দুর্বল কাঠামো ও মানহীনভাবে নির্মিত হচ্ছে এসব ভবন। এভাবে যত্রতত্র ভবন নির্মাণ করায় কৃষি জমি নষ্টের পাশাপাশি ঝুঁকি বাড়ছে। পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে। তাই এলাকার টেকসই ও বাসযোগ্য পরিবেশ নিশ্চিত করতে এই পদক্ষেপ। তারা জানান, বর্ষা, ঘূর্ণিঝড় ও অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় দেশের বিভিন্ন এলাকার দুর্বল অবকাঠামো ভেঙে প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। ঘিঞ্জি করে ভবন নির্মাণ করায় অগ্নিকাণ্ড ও প্রাকৃতিক দুর্যোগে ভয়াবহ ক্ষতির মুখে পড়ছে মানুষ। মানসম্মত বসবাস উপযোগী পরিবেশ না থাকায় সরকার সমগ্র দেশকে পরিকল্পিত উন্নয়নের আওতায় আনতে চায়। এরই অংশ হিসেবে ‘সরকার ন্যাশনাল বিল্ডিং কোর্ড ২০২০’ বাস্তবায়ন করেছে। গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় নতুন বিল্ডিং কোড অনুসরণ করে বিসি কমিটি কার্যকর করার মাধ্যমে সারা দেশে পরিকল্পিত উন্নয়ন কাজ বেগবান করতে চায়। এ প্রসঙ্গে এই মন্ত্রণালয়ের সচিব কাজী ওয়াছি উদ্দিন বলেন, ‘ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড ২০২০ প্রকাশ করে সরকার। সেখানে উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের বাইরের এলাকার ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞদের নেতৃত্বে বিসি কমিটি গঠনের কথা বলা হয়েছে। এই কমিটিকে কার্যকর করানোর মাধ্যমে বিল্ডিং কোড বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এটা করা গেলে উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার বাইরের এলাকায় বিসি কমিটির নেতৃত্বে ভবন নির্মাণকাজের অনুমোদন ও নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম পরিচালনা হবে। কোনো কোনো এলাকায় উপজেলা চেয়ারম্যানরা ভবন নির্মাণের অনুমোদন দেন। তাদেরও বিসি কমিটির মাধ্যমে ভবন নির্মাণ অনুমোদনের কাজ করতে হবে। তিনি আরও বলেন, গ্রাম এলাকার ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে ভবনের মান দেখা হচ্ছে কিনা-সেটা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। সরকার আমার গ্রাম আমার শহর প্রকল্পের আওতায় দেশের গ্রাম এলাকাগুলো পরিকল্পিতভাবে গড়ে তোলার উদ্যোগ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। কিন্তু বাস্তবে সেসবের ব্যাপক অনুপস্থিতি লক্ষ করা যাচ্ছে। কোনো কোনো মন্ত্রণালয় থেকে আমার শহর, আমার গ্রাম কর্মসূচি বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হলেও সেগুলো তেমন কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারছে না। জানতে চাইলে ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড ২০২০ প্রণয়ন সংক্রান্ত স্ট্রেয়ারিং কমিটির সদস্য সচিব এবং হাউজিং অ্যান্ড বিল্ডিং রিসার্চ ইনস্টিটিউটের সাবেক মহাপরিচালক প্রকৌশলী মো. আবু সাদেক জানান, ন্যাশাল বিল্ডিং কোড ২০২০-এর গেজেট প্রকাশ হয়েছে প্রায় দুই বছর। এখনো সরকার বিল্ডিং কোডের বাস্তবায়ন কাজ শুরু করেনি। নতুন করে উদ্যোগ নেওয়ায় কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানাই। তিনি বলেন, উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, সিটি করপোরেশন ও পৌরসভা এলাকায় অনুমোদন নিয়ে ভবন নির্মাণের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। গ্রাম পর্যায়ে অনুমোদন নেওয়ার জন্য ডিসিদের নেতৃত্বে একটি বিসি কমিটি থাকলেও সেটা অকার্যকর। নতুন বিল্ডিং কোডে ডিসিদের পরিবর্তে গণপূর্ত অধিদপ্তরের জেলা পর্যায়ের নির্বাহী প্রকৌশলীকে ভবন নির্মাণ অনুমোদনের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তার নেতৃত্বাধীন কমিটিই মূলত এই কাজ করবে। দ্রুততম সময়ে এটা হওয়া দরকার। এ সম্পর্কে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর অঞ্চল ও পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড অনুযায়ী জেলা পর্যায়ের বিসি কমিটি গঠন করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট এলাকার সব ধরনের ভবনের নির্মাণ অনুমোদন দেবে ওই কমিটি। এ ব্যাপারে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করা দরকার। প্রসঙ্গত, দেশে এখন ৫টি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ রয়েছে। সেগুলো হলো-রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক), খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (খউক), রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাউক), চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (চউক) এবং কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (কউক)। আর সিটি করপোরেশন রয়েছে ১২টি এবং পৌরসভা রয়েছে ৩২৯টি। যেসব সিটি বা পৌরসভা এলাকায় উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ রয়েছে, ওইসব এলাকায় ভবন নির্মাণ অনুমোদন ও উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম পরিচালনা করবে সেই সংস্থা। সিটি করপোরেশন, পৌরসভা বা বিসি কমিটি সেখানে ভবনের নির্মাণ অনুমোদন দিতে পারবে না।