কয়লা সংকট কাটছে

২০ জানুয়ারি, ২০২৩ | ৭:১২ পূর্বাহ্ণ
অনলাইন নিউজ ডেস্ক , ইউ এস বাংলা ২৪

বাণিজ্যিক উৎপাদনে যাওয়ার মাত্র ২৩ দিনের মধ্যে কয়লা সংকটে উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায় দেশের অন্যতম বড় বিদ্যুৎ কেন্দ্র রামপালের। প্রায় একই সময়ে কারিগরি ত্রুটির কারণে বন্ধ হয় পায়রা বিদ্যুৎ কেন্দ্রও। তবে ত্রুটি শেষে উৎপাদনে ফিরলেও এই কেন্দ্রেও কয়লা সংকট চরমে। ডলার সংকটে নিতান্ত জরুরি পণ্য ছাড়া লেটার অব ক্রেডিট (এলসি) বা ঋণপত্র খুলছে না বাংলাদেশ ব্যাংক। কিন্তু বিদ্যুৎ উৎপাদনের বিষয়টিকে অপেক্ষাকৃত বেশি গুরুত্ব দিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোকে কয়লা আমদানির জন্য ঋণপত্র খোলার নির্দেশনা দিয়েছে। এতে করে আপাতত কয়লা আমদানির সংকট কাটছে বলে মনে করছে বিদ্যুৎ বিভাগ। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর উৎপাদনের অন্যতম কাঁচামাল কয়লা আমদানিতে দেশের সব রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংককে মৌখিকভাবে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। যদিও কাগজে কলমে কোনো আদেশ জারি করা হয়নি তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হক বলেছেন, এখন থেকে কয়লা আমদানিতে এলসি খুলতে সমস্যা হবে না। আশা করছি আগামী সপ্তাহের শুরুতেই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কয়লা আমদানির জন্য এলসি খুলতে পারবেন। তবে বিদ্যুৎ বিভাগ বলছে, এলসি খুলতে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতি পাওয়া গেলেও আগামী সপ্তাহের রবিবারের আগে এলসি খোলা যাচ্ছে না। এরপর অন্যান্য প্রক্রিয়া শেষে কয়লা দেশে পৌঁছতে ১৫ থেকে ৩০ দিন সময় লাগবে। এ সময়টায় রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রে উৎপাদন বন্ধই থাকবে। তবে পায়রা বিদ্যুৎ কেন্দ্র কর্তৃপক্ষ দাবি করছে, যে পরিমাণ কয়লার মজুত রয়েছে তা দিয়ে ১৫ থেকে ২০ দিন স্বাভাবিকভাবে উৎপাদন করতে পারবে কেন্দ্রটি। কিন্তু কয়লা আমদানি ও খালাসসহ সার্বিক প্রক্রিয়া শেষ করতে তাদেরও লেগে যাবে মাসখানেকের বেশি। এমন অবস্থায় শঙ্কা রয়েছে রামপালের পর পায়রারও উৎপাদন বন্ধ হয়ে হয়ে যায় কিনা। তবে কর্তৃপক্ষ আশ্বস্ত করেছে, শঙ্কার কোনো কারণ নেই। বন্ধের মতো পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে না পায়রা বিদ্যুৎ কেন্দ্রকে। বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশ-ইন্ডিয়া পার্টনারশিপ পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেডের (বিআইএফপিসিএল-রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র) থেকে ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াটের দুটি ইউনিটের মধ্যে ৬৬০ মেগাওয়াটের একটি ইউনিট গত বছরের ২৩ ডিসেম্বর বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন শুরু করে। এই ইউনিটে বিদ্যুৎ উৎপাদনে প্রতিদিন প্রায় ৬ হাজার টন কয়লার প্রয়োজন হয়। কিন্তু গত শনিবার সকালে কয়লার মজুত না থাকায় কেন্দ্রটিতে উৎপাদন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে বিআইএফপিসিএলের উপ-মহাব্যবস্থাপক আনোয়ারুল আজিম বলেন, ডলার সংকটের কারণে বাংলাদেশ ব্যাংক কয়লা আমদানির ঋণপত্র (এলসি) খোলার অনুমোদন দেরি হওয়ায় আমরা সংকটে পড়েছি। তবে আমাদের জন্য কয়লা ইতোমধ্যে জাহাজে উঠে গেছে। এখন আমাদের সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলেই রওনা দিয়ে দেবে। তা হলে ৭ থেকে ১০ দিনের বেশি সময় লাগবে না জাহাজ পৌঁছতে দাবি করে তিনি বলেন, কয়লা আসার সঙ্গে সঙ্গেই আমরা উৎপাদন শুরু করে দিতে পারব। এদিকে কারিগরি ত্রুটি সারিয়ে পায়রা বিদ্যুৎ কেন্দ্র উৎপাদনে ফিরলেও এই কেন্দ্রেও প্রকট হয়ে দাঁড়িয়েছে কয়লার সংকট। এলসি খুলতে না পারায় এ মাসে আসেনি কয়লা। এই কেন্দ্রের দুই ইউনিটের উৎপাদন সক্ষমতা ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াটের (৬৬০ করে একটি ইউনিটে)। এ কেন্দ্রটি ৬ মাসের বাকিতে ইন্দোনেশিয়া থেকে কয়লা আমদানি করে। গত বছরের জানুয়ারিতে আনা কয়লা আমদানির অর্থ এখনো পায়রা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশ-চীন পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড (বিআইএফসিএল) পরিশোধ করতে পারেনি। পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রের সমান অংশীদার হলো সরকারের নর্থওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি ও চীনের সিএমসি। বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা বলেছেন, ছয় মাসের বাকিতে ২০২০ সালের ২০ এপ্রিলে পায়রা বিদ্যুৎ কেন্দ্রে কয়লার দাম পরিশোধের একটি চুক্তি করে চীনা সিএমসি ও বিসিপিসিএল। কেন্দ্রটিতে কয়লা সরবরাহ করছে পিটি বায়ার্নস। পিটি বায়ার্নসকে নগদ মূল্য দিয়ে দেয় পায়রা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ৫০ শতাংশের অংশীদার সিএমসি। আর সিএমসিকে ছয় মাস পর পায়রা বিদ্যুৎ কেন্দ্র কর্তৃপক্ষ বিসিপিসিএল কয়লার দাম পরিশোধ করে। ছয় মাসের বাকিতে এভাবেই কয়লা কিনে আসছিল পায়রা বিদ্যুৎ কেন্দ্র। কিন্তু সম্প্রতি এলসি খুলতে না পারায় নতুন করে কয়লা আমদানিতে তৈরি হয়েছে জটিলতা। মজুত কয়লা যে কোনো সময় শেষ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় কেন্দ্র সংশ্লিষ্টরা। যদিও এরই মধ্যে বিদ্যুৎ বিভাগ জানিয়েছে, বকেয়ার ৭৪ মিলিয়ন ডলার পরিশোধে মঙ্গলবার মিলেছে এলসি খোলার অনুমতি। আর বৃহস্পতিবার পাওয়া গেছে আরও ৪১ মিলিয়ন ডলার পরিশোধের অনুমতি। ফলে উৎপাদন বন্ধ হবে না। বিসিপিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী এএম খোরশেদুল আলম বলেন, আতঙ্কিত হওয়ার মতো কিছু নেই, কারণ আমাদের মজুতও আছে এবং ৭৪ মিলিয়ন ডলার পেমেন্ট হয়েছে আর বাকিটা বৃহস্পতিবার দেওয়া হয়েছে। আমাদের এখন যে, পরিমাণে কয়লা মজুত আছে সেটুকু সময় আমরা মানিয়ে নেব, অসুবিধা হবে না। শঙ্কিত হওয়ার মতো কিছু নেই, পাওয়ার প্লান্ট চলবে এবং এটি পরিপূর্ণভাবেই চলবে। পিডিবির তথ্য মতে, চলতি শীতে বিদ্যুতের গড় চাহিদা ৯ থেকে সাড়ে ৯ হাজার মেগাওয়াটের মতো থাকলেও গ্রীষ্মে এই চাহিদা বেড়ে প্রায় ঘণ্টাপ্রতি গড়ে ১২ থেকে ১৪ হাজার মেগাওয়াটে উন্নীত হয়। দেশে বর্তমানে প্রায় ৪ হাজার ২০০ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের স্থাপিত ক্ষমতা। এর মধ্যে কয়লার অভাবে চালু আছে মাত্র ১ হাজার ৫০০ মেগাওয়াট, তেলভিত্তিক কেন্দ্র চালু আছে গড়ে প্রায় ১ হাজার ৫০০ মেগাওয়াট, ভারত থেকে ১ হাজার ১৬০ মেগাওয়াট আমদানির কথা থাকলেও এখন গড়ে ৬৫০ মেগাওয়াটের মতো আমদানি হচ্ছে। এ ছাড়া গ্যাসে উৎপাদন হচ্ছে গড়ে ৪ হাজার ২০০ মেগাওয়াট। সামান্য পরিমাণ আসছে জলবিদ্যুৎ ও সৌরবিদ্যুৎ থেকে। তবে তাপমাত্রা কম থাকায় এবং চাহিদা মোতাবেক বিদ্যুৎ সরবরাহ থাকায় এখন পর্যন্ত সংকট হয়নি জানিয়ে পিডিবির পরিচালক (জনসংযোগ) মো. শামীম হাসান বলেন, আমাদের বর্তমানে মোট বিদ্যুতের চাহিদা রয়েছে ৯ হাজার মেগাওয়াট থেকে সাড়ে ৯ হাজার মেগাওয়াট। যার পুরোটাই আমরা সরবরাহ পাচ্ছি। তাই রামপালের উৎপাদন বন্ধ থাকা বা পায়রার সংকট নিয়ে আমাদের কোনো সমস্যা হচ্ছে না। তবে তাপমাত্রা বাড়লে সংকট হবে।