ডলারের দুর্বলতায় দাম বাড়ছে স্বর্ণের

আন্তর্জাতিক বাজারে আবারো ঊর্ধ্বমুখী স্বর্ণের দাম। ডলারের বিনিময় হার দুর্বল হয়ে পড়া ও যুক্তরাষ্ট্রের বাজেট নিয়ে অনিশ্চয়তা বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আপৎকালীন বিনিয়োগ হিসেবে স্বর্ণের প্রতি আগ্রহ আরো বাড়িয়েছে। গতকাল আন্তর্জাতিক বাজারে স্বর্ণের দাম প্রায় ১ শতাংশ বেড়েছে। খবর রয়টার্স। স্পট মার্কেটে গতকাল স্বর্ণের দাম দশমিক ৯ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে আউন্সপ্রতি ৩ হাজার ৩১৯ ডলার ৫১ সেন্টে। আগের দিন লেনদেনের শুরুতে মূল্যবান ধাতুটি ১২ মের পর সর্বোচ্চ দামে পৌঁছে। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের ফিউচার মার্কেটে স্বর্ণের দাম ১ দশমিক ১ শতাংশ বেড়ে দাঁড়ায় ৩ হাজার ৩২০ ডলার ৩০ সেন্টে। বিশ্লেষকদের মতে, ডলারের মান ৭ মে’র পর সবচেয়ে নিচে নামায় অন্যান্য মুদ্রা ব্যবহারকারীদের কাছে স্বর্ণ এখন তুলনামূলক সস্তা। ফলে চাহিদা বেড়ে যাওয়ার প্রভাব পড়ে স্বর্ণের দামে। মার্কিন গবেষণাপ্রতিষ্ঠান ম্যারেক্সের বিশ্লেষক এডওয়ার্ড মেয়ার বলেন, “মুডি’স যুক্তরাষ্ট্রের ঋণমান কমানো ও ট্রাম্পের কর বিল নিয়ে অনিশ্চয়তার প্রভাবে ডলারের ওপর বিনিয়োগকারীদের আস্থা কমেছে। এতে স্বর্ণের দাম বাড়ছে।” যুক্তরাষ্ট্রের হাউজ অব রিপ্রেজেন্টেটিভসে বুধবার বড় আকারের করছাড় ও সরকারি ব্যয়ের পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা হয়। সেখানে রিপাবলিকানদের মধ্যে স্বাস্থ্যসেবায় বাজেট কমানো ও ব্যয়বহুল উপকূলীয় রাজ্যগুলোয় করছাড় দেয়া নিয়ে মতবিরোধ দেখা দেয়। এসব অনিশ্চয়তা স্বর্ণের বাজারে প্রভাব ফেলেছে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন। ঐতিহাসিকভাবে রাজনৈতিক বা আর্থিক অনিশ্চয়তার সময় স্বর্ণ নিরাপদ বিনিয়োগ হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে। বিশেষ করে সুদের হার কম থাকার পরিবেশে স্বর্ণের দাম বাড়ার প্রবণতা থাকে। কেসিএম ট্রেডের প্রধান বাজার বিশ্লেষক টিম ওয়াটারার বলেন, ‘মাঝারি ও দীর্ঘমেয়াদে স্বর্ণের দাম আরো বাড়তে পারে। তবে কোনো ইতিবাচক বাণিজ্য চুক্তির ঘোষণা স্বর্ণের দাম আউন্সপ্রতি ৩ হাজার ৫০০ ডলারে পৌঁছতে বাধা সৃষ্টি করতে পারে।’ বৈশ্বিক অর্থনীতিতে বাণিজ্য উত্তেজনা প্রশমনের সম্ভাব্য প্রভাব প্রসঙ্গে অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের সেন্ট লুইস ফেডারেল রিজার্ভের প্রেসিডেন্ট আলবার্তো মুসালেম বলেন, ‘বাণিজ্য উত্তেজনা প্রশমিত হলে মার্কিন শ্রমবাজারে স্থিতিশীলতা বজায় থাকবে এবং মূল্যস্ফীতি ২ শতাংশের লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছতে পারবে।’ গতকালের বাজারে অন্যান্য মূল্যবান ধাতুর মধ্যে দাম বেড়েছে কেবল রুপার। স্পট মার্কেটে দশমিক ২ শতাংশ বেড়ে গতকাল প্রতি আউন্স রুপার কেনাবেচা হয়েছে ৩৩ ডলার ১৪ সেন্টে। স্পট মার্কেটে গতকাল প্যালাডিয়ামের দাম দশমিক ৮ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে আউন্সপ্রতি ১ হাজার ৫ ডলার ১১ সেন্টে। যদিও দিনের শুরুতে এটি ৪ ফেব্রুয়ারির পর সর্বোচ্চ দামে পৌঁছেছিল। ধাতুটির বাজারে ইতিবাচক খবরের ঘাটতি থাকায় দাম কিছুটা কমেছে বলে মন্তব্য করেছেন স্বাধীন ধাতুবিশেষজ্ঞ তাই ওয়ং। তিনি বলেন, ‘হোন্ডা যেভাবে বিদ্যুচ্চালিত গাড়ির বদলে হাইব্রিড গাড়ির দিকে ঝুঁকছে, সেটা প্যালাডিয়ামের চাহিদা বাড়ানোর একটা যুক্তিসংগত কারণ হতে পারে।’ অন্যদিকে, প্লাটিনামের দাম ১ শতাংশ কমে আউন্সপ্রতি ১ হাজার ৪৩ ডলার ৩৫ সেন্টে নেমে এসেছে।