পাকিস্তানকে সমর্থন করায় তুরস্ককে যে বার্তা দিল ভারত

সম্প্রতি ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনার সময় শাহবাজ শরিফের দেশকেই শক্ত সমর্থন দেয় তুরস্ক। তবে দেশটির পাকিস্তানপ্রীতির প্রতিক্রিয়ায় বেশ চটে গেছে ভারত। বৃহস্পতিবার এক প্রতিক্রিয়ায় জানিয়েছে, দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক গড়ে উঠে ‘পারস্পরিক সম্মান ও একে অপরের উদ্বেগের সংবেদনশীলতার’ ভিত্তিতে। সেই সূত্রেই নয়াদিল্লির পক্ষ থেকে আঙ্কারার উদ্দেশে আহ্বান জানানো হয়েছে—তারা যেন পাকিস্তানকে রাষ্ট্রীয় নীতির অংশ হিসেবে সন্ত্রাসবাদ ব্যবহারের পথ থেকে বিরত করে। এদিন সন্ধ্যায় নয়া দিল্লিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল সাপ্তাহিক প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, ‘আমরা আশা করি তুরস্ক পাকিস্তানকে অনুরোধ করবে যাতে তারা সীমান্তপারের সন্ত্রাসে সমর্থন বন্ধ করে এবং সেই সন্ত্রাসী পরিকাঠামোর বিরুদ্ধে নিশ্চিত ও যাচাইযোগ্য ব্যবস্থা নেয়। ‘পাকিস্তান গত কয়েক দশক ধরে উপরোক্ত ধারণা পোষণ করে আসছে’ বলেও দাবি করেন তিনি। ভারতের এই বিবৃতি এমন সময় এলো, যখন জম্মু-কাশ্মীরের পেহেলগামে এক সন্ত্রাসী হামলার পর ভারত পাকিস্তানে হামলা চালালে তুরস্ক প্রকাশ্যে পাকিস্তানের পাশে দাঁড়ায়। ভারতের ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর প্রতিক্রিয়ায় বিষয়টি আরও স্পষ্ট হয়, যখন তুরস্ক ‘কেবল আদর্শগত নয়, অস্ত্র-সহায়তার মাধ্যমেও পাকিস্তানকে সহযোগিতা দিয়ে যাবে’ বলে ঘোষণা দেয়। ভারত সরকারের দাবি অনুযায়ী, পাকিস্তান তাদের ‘অপারেশন বুনিয়ানুম মারসুস’ চলাকালে যে ৩০০-৪০০টি ড্রোন ব্যবহার করেছে ভারতীয় সামরিক ও বেসামরিক অঞ্চল টার্গেট করতে, তার অধিকাংশই তুরস্ক সরবরাহ করেছে। এই ড্রোনগুলো লেহ থেকে গুজরাটের স্যার ক্রিক পর্যন্ত সীমান্তের ৩৬টি পয়েন্টে অনুপ্রবেশ ও আকাশসীমা লঙ্ঘনে ব্যবহৃত হয়েছে বলেও দাবি করে ভারত। এর আগে, ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর অংশ হিসেবে ভারতের তরফে শতাধিক সন্ত্রাসী ঘাঁটি ও প্রশিক্ষণ শিবিরে মিসাইল স্ট্রাইক চালানো হয়, যাতে বহু জঙ্গি নিহত হয় বলেও দাবি করে ভারত। তাদের দাবি অনুযায়ী, এসব শিবির পাকিস্তান ও পাকিস্তান-অধিকৃত কাশ্মীরে অবস্থিত ছিল। কিন্তু এসব হামলার পরেও তুরস্ক পাকিস্তানের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে এবং পেহেলগামের জঙ্গি হামলার নিন্দা করেনি। ভারতের দাবি, ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর সময় তুরস্ক শুধু পাকিস্তানকেই সমর্থন করেনি, তারা করাচি বন্দরে যুদ্ধজাহাজ পাঠিয়ে সামরিক শক্তির প্রদর্শনও করেছে। তবে তুরস্ক দাবি করেছে এটি তাদের ‘রুটিন পোর্ট কল’ ছিল। এছাড়া তুরস্ক থেকে অস্ত্রবোঝাই সামরিক বিমান পাকিস্তানে পৌঁছায় বলেও দাবি করে ভারত। তবে আঙ্কারা বলছে, এগুলো শুধুই রিফুয়েলিং-এর জন্য পাকিস্তানে নেমেছিল। ওই পরিস্থিতির মধ্যেই তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফকে বার্তা পাঠিয়ে বলেন, ‘আমি আল্লাহর কাছে দোয়া করি, যারা হামলায় নিহত হয়েছেন, তারা যেন শান্তি পান। আমি পাকিস্তানের ভাই-জনগণ ও রাষ্ট্রের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাই’। মূলত ভারতীয় মুখপাত্রের এই মন্তব্য ও সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহ স্পষ্ট করে দিয়েছে, ভারত ও তুরস্কের সম্পর্ক এক সংকটপূর্ণ মোড়ে এসে পৌঁছেছে। নয়াদিল্লি তুরস্কের পক্ষ থেকে নিরপেক্ষতা ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে অবস্থান প্রত্যাশা করছে। এটাই এখন ভারতের কূটনৈতিক অসন্তোষের কেন্দ্রে। সূত্র: এনডিটিভি