১০-১৫ হাত দূর থেকে এলোপাতাড়ি গুলি

১৭ জানুয়ারি, ২০২৩ | ৭:১০ পূর্বাহ্ণ
অনলাইন নিউজ ডেস্ক , ইউ এস বাংলা ২৪

‘স্যার গিয়েছিলেন গ্লোরিয়া জিন্সের ভেতরে কফি খেতে। আমি গাড়িটা পার্কিংয়ে রেখে একটু বের হয়েছি। এরই মধ্যে দেখি একজন অস্ত্র উঁচিয়ে হুমকি-ধমকি দিচ্ছেন। দম্ভ নিয়ে নানাকথা বলছেন। এরই মধ্যে ১০-১৫ হাত দূর থেকে এলোপাতাড়ি গুলি ছুড়তে শুরু করেন তিনি। একটি গুলি এসে আমার পায়ে লাগে। আমি হিতাহিত জ্ঞানশূন্য হয়ে দৌড় দিতেই মাটিতে লুটিয়ে পড়ে চিৎকার করতে থাকি। তখন চারদিকে হাজারো লোক জড়ো হয়ে যায়। এরপর আমাকে রক্তাক্ত অবস্থায় হাসপাতালে নেওয়া হয়। গুলিটা পায়ে না লেগে অন্য কোথাও লাগলে হয়তো মৃত্যু নির্ঘাত ছিল। শুকরিয়া আল্লাহ বাঁচিয়ে দিয়েছেন।’ সোমবার সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা বলছিলেন স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা আব্দুল ওয়াহিদ ওরফে ওয়াহিদুজ্জামান মিন্টুর গুলিতে আহত গাড়িচালক মো. আমিনুল ইসলাম। তিনি মো. মহিউদ্দিন নামে একজনের ব্যক্তিগত গাড়ির চালক। এ ঘটনায় সোমবার রাজধানীর গুলশান থানায় হত্যার উদ্দেশ্যে জখমের অভিযোগে একটি মামলা করেন তিনি। মামলা নং-৯। এতে স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা মিন্টুসহ পাঁচজনকে আসামি করা হয়েছে। অন্য আসামিরা হলেন-আরিফ হোসেন (২৪), মনির আহাম্মেদ (৩৫), শরিফুল (৫৫) ও মহাখালী আমতলীর হুমায়ুন (৪৫)। এদের মধ্যে মিন্টু, আরিফ ও মনিরকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত। সোমবার ঢাকার মহানগর হাকিম সৈয়দ মোস্তফা রেজা নূর এ আদেশ দেন। রাজধানীর খিলগাঁওয়ের ভূঁইয়াপাড়ায় স্ত্রী ও তিন সন্তানকে নিয়ে থাকেন মো. আমিনুল ইসলাম। ঘটনার বিষয়ে তিনি আরও বলেন, রোববার বিকাল ৪টার দিকে ঘটনাটি ঘটে। এতে আব্দুর রহিম নামের একজন ভ্যানচালকও গুলিবিদ্ধ হন। ঘটনার পর ইউনাইটেড হাসপাতালে আমাকে চিকিৎসার জন্য নেওয়া হয়। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে ডাক্তার দুদিন ভর্তি থাকার জন্য বলেন। কিন্তু আমি সামান্য বেতনে কর্ম করে খাই। এত খরচ দিয়ে তো ভর্তি থাকা সম্ভব নয়। ঘটনার পর এক ধরনের অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে গেছি। স্ত্রী ও তিন সন্তানকে নিয়ে সামনে কীভাবে চলব তাই ভাবছি। এদিকে মামলার এজাহারে ঘটনার সূত্রপাত হিসাবে বলা হয়, গুলশান-১ এর ১১নং সড়কের মো. হাবিবুর রহমান আলিমের মালিকানাধীন আলফা জেনারেল স্টোরে যান আরিফ হোসেন। সেখান থেকে কয়েকটি বিকাশ নম্বরে ৭৫ হাজার ৪০০ টাকা পাঠান। পরে টাকা পরিশোধ করছিলেন না তিনি। আলিম তাকে টাকা দিয়ে যাওয়ার জন্য বলেন। এরপর আরিফ ফোন করে মনির ও শরিফুলকে আনেন। শরিফুল ফোন করে ঢাকা মহানগর উত্তর স্বেচ্ছাসেবক লীগের ৫নং সহসভাপতি মিন্টু এবং হুমায়ুনকে ডাকেন। তারা এসে বিকাশ দোকানদারকে ভয়ভীতি দেখান এবং মারধর করেন। এ সময় গুলশান শপিং কমপ্লেক্সের বিভিন্ন দোকানের কর্মচারীরা প্রতিবাদ করেন। তখন স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা মিন্টু তার কাছে থাকা পিস্তল দিয়ে ৩-৪ রাউন্ড গুলি করেন। মিন্টু গুলি করার কারণে উপস্থিত লোকজন তাদের ধাওয়া দেয়। এরপর মিন্টু গ্লোরিয়া জিন্স কফি শপের সামনে দৌড়ে আসে। সেখানে হত্যার উদ্দেশ্যে এলোপাতাড়িভাবে ৩-৪টি গুলি করে। আলফা জেনারেল স্টোরের সহকারী খলিল বলেন, আমাদের দোকান থেকে পাঠানো ৭৫ হাজার টাকার বিষয়ে কোনো সুরাহা হয়নি। টাকা নেওয়া ব্যক্তিসহ অন্যদের গ্রেফতার করায় টাকা পেতে সময় লাগতে পারে। তবে পুলিশের পক্ষ থেকে টাকার বিষয়টি সুরাহা করা হবে বলে আশ্বস্ত করা হয়েছে। জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশের গুলশান থানার পরিদর্শক (অপারেশনস) মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, পাঁচ আসামির মধ্যে তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ঘটনার পর থেকেই শরিফুল ও হুমায়ুন পলাতক রয়েছে। তাদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত আছে।