কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ঋণে লাগাম টানার পরামর্শ

১৬ জানুয়ারি, ২০২৩ | ৯:০৪ পূর্বাহ্ণ
অনলাইন নিউজ ডেস্ক , ইউ এস বাংলা ২৪

আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিল (আইএমএফ) অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় সরকারের নেওয়া পদক্ষেপের প্রশংসা করেছে। একই সঙ্গে তারা ঋণ মূল্যস্ফীতির হার নিয়ন্ত্রণে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে সরকারের নেওয়া ঋণে লাগাম টানতে বলেছে। অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে আইএমএফ’র দেওয়া পরামর্শগুলো নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বাস্তবায়নের তাগিদ দিয়েছে। তারা বলেছে, শর্ত মানলে বাংলাদেশের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াবে। ভোক্তাদের ওপর পণ্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও মূল্যস্ফীতির চাপও ধীরে ধীরে কমবে। ঢাকা সফররত আইএমএফ’র উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) অ্যান্তইনেত এম সায়েহ রোববার সকালে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারের সঙ্গে বৈঠক করেন। এতে বাংলাদেশ ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও আইএমএফ’র প্রতিনিধি দলের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠক শেষে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মেসবাউল হক সাংবাদিকদের বলেন, আলোচনা ফলপ্রসূ হয়েছে। আইএমএফ অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় বাংলাদেশের নেওয়া পদক্ষেপের প্রশংসা করেছে। তারা বাংলাদেশকে সহায়তা করতে আগ্রহী। ফেব্রুয়ারির শুরুতে ঋণের প্রথম কিস্তি পাওয়া যেতে পারে। সূত্র জানায়, বৈঠকে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি, বৈশ্বিক পরিস্থিতির প্রভাব, বৈদেশিক মুদ্রা ব্যবস্থাপনা, সরকারের ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহণ, মূল্যস্ফীতির হার নিয়ন্ত্রণ, গ্যাস, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির বিষয়গুলো আলোচনায় স্থান পেয়েছে। বাংলাদেশকে ঋণ দিতে অক্টোবর-নভেম্বরে আইএমএফ’র যে মিশন ঢাকা সফর করে গেছে তারা যেসব শর্ত দিয়েছে সেগুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এর মধ্যে বেশিরভাগ শর্তই বাংলাদেশ বাস্তবায়ন করেছে। তবে কিছু শর্ত বাস্তবায়ন হয়নি। সেগুলো পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন করা হবে বলে বৈঠকে জানানো হয়েছে। সূত্র জানায়, সরকার আর্থিক সংকট মোকাবিলায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে যাচ্ছে। ডিসেম্বর পর্যন্ত এ ঋণ বেড়ে ৪৯ হাজার কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। আইএমএফ কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়া কমাতে বলেছে। কারণ এসব ঋণ মূল্যস্ফীতির হার বাড়াতে ভূমিকা রাখছে। তারা বলেছে, মূল্যস্ফীতির হার নিয়ন্ত্রণে সরকারের নেওয়া পদক্ষেপগুলো ইতিবাচক। তবে সরকার এখনো বিভিন্ন খাতে মোটা অঙ্কের ভর্তুকি দিচ্ছে। ইতোমধ্যে ভর্তুকি ১ লাখ ৭৫ হাজার কোটি টাকায় পৌঁছে গেছে। বাড়তি ভর্তুকির কারণে ঋণ নিতে হচ্ছে। যার বেশিরভাগই কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে হাই পাওয়ার্ড মানি বা উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন অর্থ। এগুলো বাজারে গিয়ে টাকার প্রবাহ বাড়িয়ে দিচ্ছে। ফলে মূল্যস্ফীতিতে চাপ বেড়েছে। বৈঠকে আইএমএফ ভর্তুকি কমাতে সরকারকে জ্বালানি তেল, গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সমন্বয় করতে বলেছে। বৈঠকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে সরকারের নেওয়া পদক্ষেপগুলো তুলে ধরা হয়েছে। ইতোমধ্যে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর পাশাপাশি প্রতি মাসে সমন্বয় করার কথা বলা হয়েছে। গ্যাসের দামের বিষয়টি বিবেচনাধীন রয়েছে। জ্বালানি তেলের দামও আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে পর্যায়ক্রমে সমন্বয় করা হবে। বৈঠকে অর্থনীতিতে বৈশ্বিক ও অভ্যন্তরীণ যে সংকট চলছে, তা মোকাবিলায় বাংলাদেশ কি পদক্ষেপ নিয়েছে, সেগুলো কিভাবে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে, এগুলোর সুফল সম্পর্কে জানতে চেয়েছে আইএমএফ। বৈঠক শেষে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মেসবাউল হক সাংবাদিকদের জানান, সংকট মোকাবিলায় সরকার যেসব পরিকল্পনা নিয়েছে এবং আগামীতে আরও যেসব পদক্ষেপ নিচ্ছে সেগুলো বৈঠকে তুলে ধরা হয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় বাংলাদেশের পদক্ষেপগুলো উপস্থাপন করা হয়েছে। কেননা, জলবায়ুকে এখন বাংলাদেশের জন্য অন্যতম চ্যালেঞ্জ মনে করা হয়। তিনি আরও বলেন, আইএমএফ’র ঋণ পাওয়া নিয়ে কোনো সমস্যা হবে না। নিয়ম অনুযায়ী ঋণ পাওয়া যাবে। ৩১ জানুয়ারি আইএমএফ’র বোর্ড সভায় বাংলাদেশকে ঋণ দেওয়ার বিষয়টি উপস্থাপন করা হবে। ওই সভায় ঋণ অনুমোদন হবে বলে তারা আশাবাদী। বোর্ডে অনুমোদন হলে ফেব্রুয়ারিতে প্রথম কিস্তিতে মিলতে পারে ৪৫ কোটি ৪৫ লাখ ডলার। ২০২৬ সাল পর্যন্ত ৭ কিস্তিতে মিলবে পুরো ঋণের অর্থ। অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় বাংলাদেশ আইএমএফ’র কাছে ৪৫০ কোটি ডলারের ঋণ চেয়েছে। এ জন্য ২৭ অক্টোবর থেকে ৮ নভেম্বর পর্যন্ত আইএমএফ’র একটি মিশন বাংলাদেশ সফর করেছে। ওই সময়ে আইএমএফ বাংলাদেশকে ঋণ দিতে নীতিগতভাবে সম্মত হয়। এখন শুধু আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হচ্ছে। এদিকে রোববার রাতে স্থানীয় একটি হোটেলে আইএমএফ’র ডিএমডির সম্মানে অর্থমন্ত্রী নৈশভোজের আয়োজন করেন। ওই সময়ে তাদের মধ্যে একটি বৈঠক হয়। এতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।