পদ্মায় রেলসহ ২৫৮ প্রকল্প সমাপ্তির লক্ষ্য নির্ধারণ

২১ মে, ২০২৫ | ৯:০৬ পূর্বাহ্ণ
ডেস্ক নিউজ , ডোনেট বাংলাদেশ

পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগসহ ২৫৮ প্রকল্পের কাজ শেষ হচ্ছে আগামী অর্থবছর। এর মধ্যে উত্তরা থেকে কমলাপুর পর্যন্ত মেট্রোরেল, দোহাজারী-রামু-কক্সবাজার-গুনদুম পর্যন্ত ডুয়েলগেজ ট্রাক নির্মাণ প্রকল্পও আছে। এ কারণে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) এসব প্রকল্পে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া প্রকল্পগুলোর কার্যক্রম যাতে কোনোভাবেই বাধাগ্রস্ত না হয় এবং বাধ্যতামূলকভাবে শেষ করা যায় সেজন্য নির্দেশনা দিয়েছে এনইসি (জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ)। রোববার প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠক থেকে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়। তবে অতীতে কোনো অর্থবছরই প্রকল্প শেষ করার ক্ষেত্রে বেঁধে দেওয়া লক্ষ্য পূরণ করতে পারেনি মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের। জানতে চাইলে সাবেক পরিকল্পনা সচিব মামুন-আল-রশীদ মঙ্গলবার বলেন, লক্ষ্য নির্ধারণের পর যদি পূরণ না হয় তবে এজন্য দায়ীদের জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে। জবাবদিহিতা নিশ্চিত না হলে এ রকম ঘটনা ঘটতেই থাকবে। সময়মতো প্রকল্প শেষ না হলে মেয়াদ ও ব্যয় বাড়ে এবং প্রকল্পে কাঙ্ক্ষিত ফল সময়মতো পাওয়া যায় না। এ ব্যাপারে আরও কঠোর হওয়া উচিত। এনইসি বৈঠকে বলা হয়েছে, কাজ শেষ করার লক্ষ্য বেঁধে দেওয়া প্রকল্পে প্রয়োজনীয় বরাদ্দ নিশ্চিত করা হয়েছে। সুতরাং এসব প্রকল্পের কাজ ২০২৬ সালের জুনের মধ্যেই শেষ করতে হবে। আগামী অর্থবছর শেষ হবে এমন ২৫৮টি প্রকল্পের মধ্যে ২১২টি রয়েছে বিনিয়োগ প্রকল্প। বাকি ১১টি সম্ভাব্যতা সমীক্ষা এবং ১৭টি স্বায়ত্তশাসিত সংস্থার নিজস্ব অর্থায়নের প্রকল্প। এদিকে চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (আরএডিপি) ৩১১টি প্রকল্প শেষ করার প্রতিশ্রুতি দেয় মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো। সে অনুযায়ী অর্থ বরাদ্দসহ আনুষঙ্গিক সব সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা হয়। আরএডিপি অনুমোদনের জন্য গত ৩ মার্চ অনুষ্ঠিত এনইসি বৈঠকে বাধ্যতামূলকভাবে এসব প্রকল্প শেষ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। সেই সঙ্গে বলা হয়ছিল এই তালিকায় থাকা কোনো প্রকল্পের মেয়াদ আর বাড়ানো হবে না। কিন্তু এত কঠোর অবস্থানের পরও ২৩টি প্রকল্পের কাজ শেষ করা যাচ্ছে না। এগুলো আগামী অর্থবছরের এডিপিতে বরাদ্দসহ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। আগামী অর্থবছরে শেষ হতে যাওয়া প্রকল্পগুলোর মধ্যে সাধারণ সরকারি সেবা খাতের রয়েছে দুটি প্রকল্প। এছাড়া জনশৃঙ্খলা ও সুরক্ষা খাতের দুটি, শিল্প ও অর্থনৈতিক সেবা খাতে ১৬টি, কৃষি খাতের ৩৯টি এবং বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের আটটি প্রকল্প আছে। আরও আছে পরিবহণ খাতের ৪১টি, স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন খাতের ১১টি, পরিবেশ-জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানিসম্পদ খাতের ২৫টি, গৃহায়ন ও কমিউনিটি সুবিধাবলি খাতের ২৩টি, স্বাস্থ্যের দুটি, ধর্ম-সংস্কৃতি ও বিনোদন খাতের ছয়টি, শিক্ষার ১৪টি এবং সামাজিক সুরক্ষার নয়টি এবং বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি খাতের ১১টি প্রকল্প। শেষ হতে যাওয়া প্রকল্পগুলোর কয়েকটি হলো-বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু নির্মাণ, আখাউড়া থেকে লাকসাম পর্যন্ত ডুয়েলগেজ ডবল লাইন রেলপথ নির্মাণ, বুড়িগঙ্গা-তুরাগ-শীতলক্ষ্যা ও বালু নদীর তীর ভূমিতে পিলার স্থাপন এবং মোংলা বন্দরের জন্য সহায়ক জলযান সংগ্রহ প্রকল্প। এছাড়া আপগ্রেডেশন অব মোংলা পোর্ট, ময়মনসিংহ কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎকেন্দ্রে গ্যাস সরবরাহের জন্য ধনুয়া থেকে ময়মনসিংহ পর্যন্ত গ্যাস পাইপলাইন নির্মাণ, পূর্বাঞ্চলীয় গ্রিড নেটওয়ার্কে পরিবর্ধন এবং বাখরাবাদ-মেঘনাঘাট-হরিপুর গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন নির্মাণ প্রকল্প। আরও আছে কক্সবাজার-টেকনাফ সড়ক উন্নয়ন, ভুয়াপুর লিংক সড়ক নির্মাণ, রেলওয়ের মিটারগেজ ডিজেল ইলেকট্রিক লোকোমোটিভ এবং ১৫০টি মিটারগেজ যাত্রীবাহী ক্যারেজ সংগ্রহ, বিআইডব্লিউটিসির জন্য ৩৫টি বাণিজ্যিক ও ৮টি সহায়ক জলযান সংগ্রহ, সিম্যান্স হোটেল কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণ এবং হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সম্প্রসারণ প্রকল্প। এছাড়া বহুমুখী দুর্যোগ আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ, গোপালগঞ্জ জেলার গুরুত্বপূর্ণ পল্লী অবকাঠামো উন্নয়ন, বৃহত্তর চট্টগ্রামের গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন এবং জলবায়ু উদ্বাস্তু পুনর্বাসন প্রকল্প। বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি) জানায়, ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রকল্প সমাপ্ত করার লক্ষ্য ছিল ৩৭৭টি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বাস্তবায়ন হয়েছিল ২৬৪টি প্রকল্প। এছাড়া ২০২১-২২ অর্থবছরে শেষ করার লক্ষ্য ছিল ৩৫৫টি, কিন্তু শেষ হয়েছিল ২৯৪টি প্রকল্প। ২০২০-২১ অর্থবছরে লক্ষ্য ছিল ৪৩৯টি, কিন্তু শেষ হয়েছিল ২৩৬টি প্রকল্প।