মিয়ানমারের গরু-মহিষে সয়লাব কক্সবাজার

১৪ জানুয়ারি, ২০২৩ | ৮:৪৭ পূর্বাহ্ণ
অনলাইন নিউজ ডেস্ক , ইউ এস বাংলা ২৪

মিয়ানমার থেকে অবৈধভাবে ও চোরাই পথে আসা গরু-মহিষে সয়লাব হয়ে গেছে কক্সবাজারের চকরিয়াসহ একাধিক উপজেলায়। তবে অবৈধভাবে আসা এসব গরু-মহিষের অধিকাংশ রাখা হচ্ছে চকরিয়া উপজেলার মানিকপুর, ফাঁসিয়াখালী ও ডুলাহাজারাসহ নানা স্থানে। রীতিমত মিয়ানমারের পশুর হাঁট বসে গেছে ওই এলাকায়। ফলে সরকার হারাচ্ছে রাজস্ব এবং দেশীয় গরুর খামারিরা পড়েছেন দারুণ বিপাকে। দীর্ঘদিন ধরে প্রশাসনের সামনে এসব অবৈধ পশু হাঁট বসলেও অদৃশ্য কারণে চুপসে ছিল সংশ্লিষ্টরা। কিন্তু দিন দিন বেড়ে যাওয়ায় এসব অবৈধ পশুর হাঁট বন্ধ করতে উপজেলা প্রশাসন ইতোমধ্যে একটি সভাও করেছে। এই সভায় অবৈধ পশুর হাঁট এবং মিয়ানমার থেকে গরু-মহিষ আসা বন্ধ করতেও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ারও সিদ্ধান্ত হয়। চকরিয়া উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে অবৈধভাবে মিয়ানমার থেকে পশু আসা বন্ধ এবং চোরাচালান প্রতিরোধে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জেপি দেওয়ানের সভাপতিত্বে ও উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) রাহাত উজ্জামানের পরিচালনায় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন কক্সবাজার-১ (চকরিয়া-পেকুয়া) আসনের সংসদ সদস্য ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জাফর আলম। এছাড়াও সভায় উপজেলা বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ এবং সাংবাদিকরা বক্তব্য রাখেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত বছর কুরবানির ঈদের আগে থেকে চোরাচালানের মাধ্যমে থাইল্যান্ড ও মিয়ানমার থেকে প্রতিদিন হাজার হাজার গরু-মহিষ দেশে প্রবেশ করেছে। এসব গবাদি পশু অবৈধভাবে প্রবেশ করার জন্য পথ হিসেবে আলীকদম ও নাইক্ষ্যংছড়িকে বেছে নেয় চোরাকারবারিরা। অন্তত অর্ধশতাধিক পথে মিয়ানমারের এসব গবাদি পশু ঢুকছে দেশে। তবে এসব গবাদি পশু পাচার কাজের সঙ্গে সব রাজনৈতিক দলের নেতারা জড়িত বলে অভিযোগ ওঠেছে। রাজনৈতিকভাবে তারা একে-অপরের চরম শত্রু হলেও ব্যবসার ক্ষেত্রে তারা মূলত একাট্টা। বেচা-বিক্রি থেকে প্রশাসন নিয়ন্ত্রণ করার কাজও করছে বেশ কয়েকটি চোরাচালান সিন্ডিকেট। আরও জানা গেছে, মিয়ানমারের সীমান্তবর্তী পার্বত্য জেলা বান্দরবানের আলীকদম-লামা এবং নাইক্ষ্যংছড়ি হয়ে অবৈধভাবে আসা গবাদি পশুর হাঁট বসেছে চকরিয়ার মানিকপুর বাজার, ফাঁসিয়াখালীর হাঁসের দীঘি ও ডুলাহাজারার রংমহল এলাকায়। এখান থেকে প্রতিদিন হাজার হাজার গবাদি পশু দেশের বিভিন্ন এলাকায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। সম্প্রতি বিজিবি অভিযান চালিয়ে বান্দরবান জেলার লামা, আলীকদম, নাইক্ষ্যংছড়ি এবং চকরিয়ার মানিকপুর থেকে শতাধিক গরু-মহিষ জব্দ করে। এছাড়াও নাইক্ষ্যংছড়ির নিয়ন্ত্রণাধীন তীরডেপা বিজিবি ক্যাম্প মানিকপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে ২৫টি গরু জব্দ করে। পরে জব্দকৃত গরু চকরিয়া থানায় হস্তান্তর করে উন্মুক্ত নিলামের মাধ্যমে বিক্রি করে ওই টাকা সরকারি কোষাগারে জমা করা হয়। সুরাজপুর-মানিকপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আজিমুল হক আজিম বলেন, মিয়ানমার থেকে অবৈধভাবে আসা এসব গবাদি পশুর কারণে দেশীয় খামারিরা মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। আগামী কুরবানির ঈদের আগে যদি এসব গবাদি পশু আনা বন্ধ করা না হয়, তাহলে খামারি ও কৃষকরা দারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। স্থানীয় খামারি জামাল উদ্দিন বলেন, বর্তমান বাজারে পশু খাদ্যের বেশ দাম। তারপরও বেশি দামে খাদ্য কিনে গবাদি পশু লালন-পালন করছি। কিন্তু মিয়ানমার থেকে চোরাইপথে গবাদি পশু আসার কারণে বাজারে দাম পাচ্ছি না। লোকসান গুনতে হচ্ছে। তাছাড়াও মিয়ানমার থেকে যেসব গবাদি পশু দেশে আসছে, সেগুলো খুবই রোগাক্রান্ত। এসব বিষয়ে জানতে চাইলে চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জেপি দেওয়ান জানান, মিয়ানমার থেকে অবৈধভাবে গরু-মহিষ আসা বন্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এ বিষয়ে ইতোমধ্যে সভাও হয়েছে। যেসব জায়গায় মিয়ানমারের পশুর হাঁট বসেছে, সেসব হাঁটে অভিযান চালানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে।