অনিয়মের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষমতা চায় ইউজিসি

১৩ জানুয়ারি, ২০২৩ | ৮:৩৫ পূর্বাহ্ণ
অনলাইন নিউজ ডেস্ক , ইউ এস বাংলা ২৪

বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে ওঠা অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) তদন্ত করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন দাখিল করে। কিন্তু সংস্থাটির সুপারিশ অনেকাংশে বাস্তবায়ন হয় না। যেসব অভিযোগ তদন্ত করা হয়ে থাকে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো-শিক্ষকসহ বিভিন্ন নিয়োগে অনিয়ম, অতিরিক্ত শিক্ষার্থী ভর্তি, সনদ বাণিজ্য, আর্থিক অনিয়ম ও উন্নয়ন প্রকল্পে অনিয়ম। যেহেতু প্রমাণিত বিষয়েও ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষেত্রে ঘাটতি আছে, তাই ইউজিসির এ বিষয়ে (ব্যবস্থা নেওয়ার) ক্ষমতা থাকা অতীব জরুরি। পাশাপাশি প্রতিবেদনের সুপারিশ বাস্তবায়নের ক্ষমতাও ইউজিসিকে দিতে সরকার পদক্ষেপ নিতে পারে। ইউজিসির সর্বশেষ বার্ষিক প্রতিবেদনে এই সুপারিশ করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর চ্যান্সেলর ও রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের কাছে প্রতিবেদনটি হস্তান্তর করা হয়েছে। এ সময় ইউজিসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. কাজী শহীদুল্লাহর নেতৃত্বে ৯ সদস্যের প্রতিনিধি দল উপস্থিত ছিল। প্রতিবেদনে ১৭টি সুপারিশ আছে। জানতে চাইলে ইউজিসির সদস্য বিশ্বজিৎ চন্দ বলেন, ‘প্রতি বছর বার্ষিক প্রতিবেদন প্রণয়ন এবং তা রাষ্ট্রপতির কাছে হস্তান্তরের পাশাপাশি সংসদে উপস্থাপনের ব্যাপারে ইউজিসির বাধ্যবাধকতা আছে। তারই অংশ হিসাবে এবারের প্রতিবেদনে উচ্চশিক্ষার মান বাড়াতে বিভিন্ন সুপারিশ করা হয়েছে। সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন করা গেলে মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত এবং বিশ্ব র‌্যাংকিংয়ে বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সম্মানজনক জায়গা অর্জন করতে পারবে বলে মনে করি।’ প্রতিবেদনে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিচালিত সান্ধ্য, উইকঅ্যান্ড বা এক্সিকিউটিভ কোর্স বন্ধের সুপারিশ করে বলা হয়েছে, ‘এসব কোর্সের কারণে মূলধারার শিক্ষার্থীদের স্বার্থ লঙ্ঘিত হচ্ছে। বিষয়টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈশিষ্ট্য ও ভাবমূর্তির পরিপন্থি। তাই এসব কোর্স বন্ধ হওয়া জরুরি। তবে সুনির্দিষ্ট নীতিমালার ভিত্তিতে ও দক্ষ জনবল সৃষ্টির পর ইউজিসির পূর্বানুমোদনের ভিত্তিতে চালানো যেতে পারে।’ সুপারিশে আরও বলা হয়, বিভিন্ন পদ, কাজ ও কমিটিতে দায়িত্ব পালনের নামে সম্মানি গ্রহণে বিশ্ববিদ্যালয় ভেদে পার্থক্য আছে। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আর্থিক ব্যবস্থাপনায় জটিলতা ক্রমেই বাড়ছে। তাই এ ক্ষেত্রে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় অভিন্ন আর্থিক নীতিমালা ও আর্থিক ম্যানুয়াল প্রণয়ন জরুরি। এজন্য সরকার ও ইউজিসি উদ্যোগ নিতে পারে। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাবরক্ষণ ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতে নিরীক্ষা ব্যবস্থা জোরদার করা জরুরি। এতে আরও বলা হয়, বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ক্যাম্পাস স্থাপনে ২০১৪ সালের বিধিমালা সংশোধনের উদ্যোগ দ্রুত বাস্তবায়ন করা দরকার। সুপারিশে বলা হয়, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সিন্ডিকেট, একাডেমিক কাউন্সিল, বোর্ড অব ট্রাস্টিজ, অর্থ কমিটিসহ অন্যান্য কমিটি ও সংস্থার বৈঠক নিয়মিত হয় না। অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রপতি নিযুক্ত উপাচার্য, উপ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ নেই। এছাড়া আয়-ব্যয়ের হিসাব নিরীক্ষার মাধ্যমে দাখিল না করা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যাও কম নয়। এভাবে নানা প্রক্রিয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ২০১০ সালের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন লঙ্ঘন করছে। সুপারিশে বলা হয়, মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিতে সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে জাতীয় পর্যায়ে দেশীয় র‌্যাংকিং করা জরুরি। দেশের আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপট সামনে রেখে আন্তর্জাতিক ব্যাংকিং ব্যবস্থার অনুকরণে সরকার এ উদ্যোগ নিতে পারে। প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি কৌশলগত গবেষণা পরিকল্পনা থাকা জরুরি। গবেষণা শিল্প খাত-বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ে পরিচালিত হবে এবং গবেষণার ফল বাণিজ্যিকীকরণে উদ্যোগ নেওয়া যাবে। ইউনিভার্সিটি টিচার্স ট্রেনিং একাডেমি করা জরুরি। পাশাপাশি উন্নতমানের গবেষণার জন্য সেন্ট্রাল রিসার্চ ল্যাবরেটরি ও ন্যাশনাল রিসার্চ কাউন্সিল করা প্রয়োজন। এ লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় বরাদ্দ দেওয়া যেতে পারে। সরকারি বিধান অনুসরণের আহ্বান : বৃহস্পতিবার ইউজিসিতে ‘পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের বাজেট প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন’ শীর্ষক কর্মশালা হয়। ভার্চুয়ালি আয়োজিত দিনব্যাপী এই কর্মশালায় প্রধান অতিথি ছিলেন ইউজিসি চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. কাজী শহীদুল্লাহ। তিনি বলেন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থ ব্যয়ে সরকারি বিধি-বিধান যথাযথভাবে অনুসরণ করতে হবে। প্রতিষ্ঠানের আর্থিক অনিয়ম সরকারের এখন বড় মাথাব্যথার কারণ। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থিক অনিয়ম রোধে এবং অডিট আপত্তি শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনতে হবে। কোনো ব্যক্তি আর্থিক বিষয়ে ছাড় দিলে অপরাধের দায়ভার তাকে নিতে হবে। চেয়ারম্যান আরও বলেন, কিছু পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে ভয়াবহ আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ গণমাধ্যমে প্রকাশিত হচ্ছে। তদারকির দায়িত্বে থাকায় ইউজিসিকেও এর দায় নিতে হচ্ছে। এ নিয়ে সংশ্লিষ্ট সংসদীয় স্থায়ী কমিটি ও কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেলের অফিস থেকেও অপ্রিয় কথা শুনতে হচ্ছে। ইউজিসি সদস্য প্রফেসর ড. মো. আবু তাহেরের সভাপতিত্বে কর্মশালায় আরও বক্তব্য দেন অতিরিক্ত পরিচালক রেজাউল করিম হাওলাদার ও শিক্ষা অডিট অধিদপ্তরের উপপরিচালক শাকিলা জামান। কর্মশালায় ৪৮টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ ও হিসাব বিভাগের প্রধান এবং অডিট সেল/অডিট শাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা অংশ নেন।