আমিন নূরকে আসামি করায় জনশক্তি রপ্তানিতে শর্ত

১৬ মে, ২০২৫ | ৫:০১ অপরাহ্ণ
ডেস্ক নিউজ , ডোনেট বাংলাদেশ

মালয়েশিয়ায় বন্ধ থাকা শ্রমবাজার পুনরায় উন্মুক্ত করতে দেশটি কিছু শর্তারোপ করেছে। এর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ শর্ত হিসাবে সামনে আনা হয়েছে প্রায় ১০০ এজেন্সির মালিকের বিরুদ্ধে করা একটি মামলা। ঢাকার পল্টন থানায় মামলাটির তদন্ত চলছে। মালয়েশিয়াসহ মধ্যপ্রাচ্যে জনশক্তি রপ্তানিকারকদের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হিসাবে পরিচিত আমিন নূরকে এ মামলায় আসামি করায় জনশক্তি রপ্তানিতে প্রভাব পড়ে। জনশক্তি রপ্তানিকারকদের মধ্যে আলোচনার বিষয় এখন এ মামলা। মালয়েশিয়ার প্রশাসনিক কেন্দ্র পুত্রজায়ায় বৃহস্পতিবার দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও মানবসম্পদমন্ত্রীর সঙ্গে যৌথ সভায়ও মামলাটি আলোচিত হয়। বাংলাদেশের প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল, প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক সম্পর্কবিষয়ক বিশেষ দূত লুৎফি সিদ্দিকি জনশক্তি রপ্তানি সংক্রান্ত এ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। গত বছরের ৩ সেপ্টেম্বর পল্টন থানায় আলোচিত এ মামলাটি করেন আলতাফ খান। তিনি পুরানা পল্টনে অবস্থিত জনশক্তি রপ্তানিকারক হিসাবে ‘আফিয়া ওভারসিজ’ পরিচালনা করেন। প্রতারণা, টাকা আত্মসাৎ, চাঁদা দাবিসহ মানব পাচার প্রতিরোধ আইনে এ মামলাটি করা হয়। ৩২ কোটি ৫৬ লাখ টাকা ক্ষতির অভিযোগ আনা হয়েছে। মামলাটি তদন্ত করছে সিআইডি। মামলাটির বাদী আলতাফ বৃহস্পতিবার বলেন, আমিন নূরকে আমার মামলায় আসামি করা হয়নি। তিনি আসামি হয়েছেন সাবেক প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রী ইমরান আহমেদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী। পুলিশ তাকে (আলতাফ) গ্রেফতারের পর জিজ্ঞাসাবাদে আমিন নূরকে মালয়েশিয়া জনশক্তি রপ্তানিকারক সিন্ডিকেট পরিচালনাকারী হিসাবে উল্লেখ করা হয়। তিনি বলেন, প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব আহমেদ মনিরুস সালেহীনসহ ১০০ জনকে এ মামলায় আসামি করা হয়। দুই দেশের সরকার প্রতিনিধিদের সঙ্গে মালয়েশিয়ায় বৃহস্পতিবার যে আলোচনা হয়, সেখানে এ মামলার শর্তারোপ বিস্ময়কর। এই আলতাফ খানের বিরুদ্ধেও মালয়েশিয়ায় বড় ধরনের অভিযোগ রয়েছে। অবৈধভাবে লোক পাচারের অভিযোগে মালয়েশিয়া ইমিগ্রেশন তার বিরুদ্ধে মামলা করে। ইতোমধ্যে তার পাসপোর্ট জব্দ করা হয়েছে। মালয়েশিয়ায় প্রভাবশালী ব্যক্তি হিসাবে পরিচিত আমিন নূরের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। তিনি প্রবাসী বাংলাদেশি হিসাবে মালয়েশিয়ায় এসে এ দেশের নাগরিকত্ব পেয়েছেন। মালয়েশিয়ায় তার ব্যাপক প্রভাব রয়েছে। মালয়েশিয়ায় নাগরিকত্ব পাওয়ার পর উপাধি যুক্ত হয়ে তার নাম হয়েছে দাতশ্রী আমিন নূর। মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রপ্তানি সংক্রান্ত ওই বৈঠকে বলা হয়, ‘মালয়েশিয়া সরকার কর্তৃক নির্ধারিত বিগত ১০০ এজেন্সির সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশে মানব পাচার ও অর্থ পাচারের মতো কিছু বিতর্কিত স্পর্শকাতর অভিযোগে মামলা হয়েছে, যা মালয়েশিয়া সরকারের অভিবাসন প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা ও গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। ২০২২ সালের আগস্ট থেকে ২০২৪ সালের মে মাস পর্যন্ত ৪ লাখ ৭৬ হাজার বাংলাদেশি শ্রমিক ডিজিটাল পদ্ধতিতে সম্পূর্ণ অভিবাসন নীতিমালা মেনে মালয়েশিয়া প্রবেশ করেছেন, তাই এখানে মানব পাচারের অভিযোগ অবান্তর। অভিবাসন প্রক্রিয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ করা এরূপ মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি বা প্রত্যাহার করার আহ্বান জানিয়েছে মালয়েশিয়া।’ মালয়েশিয়া সরকার জোর দিয়ে বলেছে, এসব মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি বা প্রত্যাহারের মাধ্যমে অভিবাসনব্যবস্থার স্বচ্ছতা ফিরিয়ে আনা জরুরি। একই সঙ্গে তারা শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, অভিবাসন ব্যয় কমানো এবং সহযোগী এজেন্সি (অ্যাসোসিয়েট বেয়ারার) পদ্ধতি পরিহারের ওপর গুরুত্বারোপ করেছে। পাশাপাশি শ্রমিকের নিরাপত্তা ও স্বার্থ সংরক্ষণ করে, অভিবাসন ব্যয় কমানোর লক্ষ্যে সহযোগী এজেন্সি প্রথা বাদ দেওয়া ইত্যাদি। অনেক ক্ষেত্রে সরকার সব এজেন্সিকে সুযোগ করে দিতে গিয়ে সহযোগী এজেন্সিকে সঙ্গে নিতে বলে। কোনো শ্রমিক দুই লাখ টাকার মধ্যে মালয়েশিয়া যেতে পারলে তার অভিবাসন ব্যয় কম হবে এবং ওই শ্রমিক প্রতারিত হওয়ার আশঙ্কা থাকে না। বৃহস্পতিবারের সভা শেষে মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাইফুদ্দিন নাসুশন ইসমাইল ও মানবসম্পদ মন্ত্রী স্টিভেন সিম চি কেও’র উপস্থিতিতে শ্রমিক প্রেরণ সংক্রান্ত একটি চুক্তি সই হয়। এ চুক্তির আওতায় বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত, নেপাল, মিয়ানমার ও পাকিস্তান থেকেও শ্রমিক নেওয়া হবে। সংশ্লিষ্টরা বলেন, রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর অযৌক্তিক অতিরিক্ত ফি আদায়ের সুযোগ থাকলে শ্রমবাজারে বাণিজ্যিক অপব্যবহারের ঝুঁকি বাড়ে। অভিবাসন ব্যয় কম থাকলে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় না। সহযোগী এজেন্সি ব্যবস্থাও অভিবাসন ব্যয় বৃদ্ধি করে। সরকারের উচিত এমন একটি কাঠামো গড়ে তোলা, যাতে শ্রমিকরা ২ লাখ টাকার মধ্যে মালয়েশিয়ায় যেতে পারেন, এতে তাদের প্রতারিত হওয়ার আশঙ্কা কমে যাবে। মালয়েশিয়া আগামী কয়েক বছরে প্রায় ১২ লাখ শ্রমিক নিয়োগ দিতে যাচ্ছে, যা বাংলাদেশের জন্য একটি বড় সুযোগ। বিশেষজ্ঞরা জানান, মালয়েশিয়ায় সাধারণ শ্রমিকদের বেতন মধ্যপ্রাচ্যের তুলনায় দ্বিগুণ বা এরও বেশি। কিছু প্রশাসনিক জটিলতায় বিগত এক বছর এ শ্রমবাজার ঝুলে থাকলেও বর্তমানে তা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয়েছে। এ বিশাল শ্রমবাজার পুনরায় চালু হলে বাংলাদেশ এবং অভিবাসী কর্মী-দুপক্ষই উপকৃত হবে। এতে দেশের রেমিট্যান্স প্রবাহ উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়বে। বাংলাদেশের কুয়ালালামপুর দূতাবাসের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, যদি বাংলাদেশ পর্যাপ্ত সংখ্যক শ্রমিক মালয়েশিয়ায় পাঠাতে পারে, তবে বছরে ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অতিরিক্ত রেমিট্যান্স অর্জিত হতে পারে। তারা বলেন, আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত-কে পাঠাচ্ছে বা কোন এজেন্সি পাঠাচ্ছে তা নয়, বরং শ্রমিকদের কম খরচে নিরাপদ অভিবাসন নিশ্চিত করা।