কঠোর আন্দোলনের বার্তা দিতে চায় বিএনপি

৯ জানুয়ারি, ২০২৩ | ৬:৩৬ পূর্বাহ্ণ
অনলাইন নিউজ ডেস্ক , ইউ এস বাংলা ২৪

শুরু হয়েছে নির্বাচনি বছর। তবে মাঠের বিরোধী দল বিএনপির কাছে বছরটি আন্দোলনের। সরকারবিরোধী যুগপৎ আন্দোলনের দ্বিতীয় কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামছেন তারা। ১১ জানুয়ারি বিভাগীয় শহরে পালিত হবে গণঅবস্থান। ওইদিন সকাল ১১টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত চার ঘণ্টা ধরে চলবে এ কর্মসূচি। তবে এদিন জামায়াত নামবে কিনা সে বিষয়ে তারা কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ঢাকা মহানগর বিএনপির উদ্যোগে এ কর্মসূচি পালন করা হবে। বছরের প্রথম এ কর্মসূচিতেই সবার নজর কাড়তে চায় বিএনপি। ওইদিন রাজপথে নামার ব্যাপক প্রস্তুতি নিচ্ছে তারা। ইতোমধ্যে কেন্দ্রীয় নেতাদের সমন্বয়ে বিভাগীয় টিম করেছে বিএনপি। কারা কোন বিভাগীয় টিমে থাকবে তার তালিকাও তৈরি। ব্যাপক উপস্থিতির মধ্য দিয়ে সরকার পতনের চূড়ান্ত আন্দোলনের একটা বার্তা দিতে চায় বিএনপি। গণঅবস্থান থেকেই নতুন কর্মসূচি দেওয়া হতে পারে। এ বিষয়ে প্রাথমিক আলোচনাও হয়েছে। এদিকে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসের জামিন হওয়ায় নেতাকর্মীদের মধ্যে স্বস্তি ফিরেছে। সবকিছু ঠিক থাকলে আজকালের মধ্যে মুক্তি পেতে পারেন তারা। কারাগার থেকে বের হওয়ার পর প্রথম কর্মসূচিতে অংশ নেবেন মির্জা ফখরুল। তাই নেতাকর্মীরা এ কর্মসূচি সফলে অধিক গুরুত্ব দিচ্ছে। বিএনপি ঘোষিত ১০ দফা ও রাষ্ট্র মেরামতের ২৭ দফা নিয়ে দেশব্যাপী নানা কর্মসূচি পালন করছে বিএনপি। কয়েকদিন ধরে ধারাবাহিকভাবে এ কর্মসূচি চলছে। এর মধ্য দিয়ে নেতাকর্মীদের সক্রিয় ও ঐক্যবদ্ধ করা হচ্ছে। এটাকে গণঅবস্থান কর্মসূচির পূর্বপ্রস্তুতি হিসাবেই ধরে নিচ্ছেন নীতিনির্ধারকরা। বিএনপির পাশাপাশি যুগপৎ আন্দোলনে থাকা দলগুলোও আলাদাভাবে কর্মসূচি পালনে প্রস্তুতি নিচ্ছে। অবিলম্বে সরকারের পদত্যাগ, সংসদ বিলুপ্ত করা, নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠনসহ ১০ দফা দাবি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে যুগপৎ আন্দোলনের কর্মসূচি পালন করছে বিরোধী দলগুলো। যুগপৎ আন্দোলনের প্রথম কর্মসূচি হিসাবে গত ৩০ ডিসেম্বর ঢাকা ও রংপুর বিভাগে এবং ২৪ ডিসেম্বর সারা দেশে শান্তিপূর্ণ প্রথম গণমিছিল করেছে বিএনপি। এসব কর্মসূচিতে প্রথমবারের মতো রাজপথে নামে জামায়াতে ইসলামীও। তবে ১১ জানুয়ারি গণঅবস্থান কর্মসূচিতে জামায়াতের মাঠে নানা নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে। নতুন কর্মসূচি ঘোষণার পর সব দল ও জোটের পক্ষ থেকে গণঅবস্থান কর্মসূচির ঘোষণা দেওয়া হয়। কিন্তু জামায়াতে ইসলামী এখনো কোনো কর্মসূচি ঘোষণা করেনি। জামায়াতের একটি সূত্র জানায়, বিএনপির সঙ্গে আমরা যুগপৎ আন্দোলনে নামার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। প্রথম কর্মসূচি হিসাবে আমরা গণমিছিল করেছি। সেখানে আমাদের অনেক নেতাকর্মী আটক হয়েছে। প্রথম কর্মসূচি পালনের পর বিএনপির পক্ষ থেকে আমাদের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করা হয়নি। যুগপৎ কর্মসূচি মানে এই নয় যে, কোনো দল একটি কর্মসূচি ঘোষণা করল আর সবাই তাতে সম্মতি জানাল। প্রত্যেকটি দলের নিজস্ব কিছু বিষয় থাকে। সূত্রটি আরও জানায়, বিএনপি অফিসে হামলা ও মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গ্রেফতার হওয়ার পর জামায়াতের পক্ষ থেকে নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দেওয়া হয়। কিন্তু জামায়াতের আমির গ্রেফতার হওয়ার পর বিএনপির পক্ষ থেকে কোনো বিবৃতি দেওয়া হয়নি। এমনকি আমাদের কোনো নেতার সঙ্গেও বিষয়টি নিয়ে কথা বলেনি। এতে দলের মধ্যে একটা ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। সবাই একই কথা বলছেন, বিএনপির সঙ্গে চূড়ান্ত বোঝাপড়া করেই পরবর্তী কর্মসূচির ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। গণঅবস্থান কর্মসূচি প্রসঙ্গে জামায়াতের এক নেতা বলেন, যেহেতু এখনো আমরা কর্মসূচি ঘোষণা করিনি। তাই ওইদিন আমাদের মাঠে নামা অনিশ্চিত। বিএনপির সঙ্গে আলোচনার পরই এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে। সূত্র জানায়, ১১ জানুয়ারির গণঅবস্থান থেকে নতুন কর্মসূচি দেওয়া হতে পারে। তবে হরতাল অবরোধের মতো কঠোর কর্মসূচি দেওয়ার সম্ভাবনা কম। লংমার্চ, রোডমার্চ, হিউম্যান চেইনসহ গণতান্ত্রিক কর্মসূচি নিয়েই চলছে আলোচনা। এ ব্যাপারে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা দলগুলোর মতামত নেওয়া হবে। লিয়জোঁ কমিটি এ ব্যাপারে আজকালের মধ্যেই আলোচনায় বসবে। সমমনা দলগুলোর মতামত নিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আলোচনা করে সেখানেই চূড়ান্ত করা হবে পরবর্তী কর্মসূচি। এ প্রসঙ্গে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, মামলা-হামলা ও আদালতের রায়ের মাধ্যমে আন্দোলনকে দমিয়ে রাখার কৌশল নিয়েছে সরকার। কিন্তু মানুষ সব ভয়ভীতি উপেক্ষা করে রাজপথে নেমে এসেছে। এর চূড়ান্ত পরিণতি না দেখে তারা ঘরে ফিরবে না। তিনি বলেন, সরকার পতনসহ আমরা ১০ দফা দাবি দিয়েছি। তাতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল সমর্থন দিয়ে রাজপথে পৃথকভাবে কর্মসূচি পালন করছে। রাজনৈতিক দলের পাশাপাশি বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষও চায় এ সরকারের পতন। সে লক্ষ্যে তারা আমাদের কর্মসূচিতে অংশও নিচ্ছে। ১১ জানুয়ারি গণঅবস্থান কর্মসূচিতেও সবাই অংশ নেবে বলে আশা করি। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও চট্টগ্রাম বিভাগের দলনেতা মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, সরকারের পতনের লক্ষ্যে নতুন বছরে প্রথম কর্মসূচি নিয়ে আমরা মাঠে নামছি। ১১ জানুয়ারির গণঅবস্থান সফলে আমরা বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছি। এজন্য বিভাগের নেতাকর্মীদের নিয়ে প্রস্তুতি সভা করেছি। আশা করি আমাদের এ কর্মসূচিতে সাধারণ মানুষও সম্পৃক্ত হবেন। তিনি বলেন, চট্টগ্রামে বিভাগীয় এ কর্মসূচি পালনে লালদীঘির ময়দান বা কাজীর দেউড়ির সামনে স্থান চাওয়া হয়েছে। আশা করি সরকার এতে অনুমতি দেবে। জানতে চাইলে বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ বলেন, শীতের কারণে আমাদের কর্মসূচি এক ঘণ্টা পেছানো হয়েছে। আগে সকাল ১০টায় শুরু হয়ে ২টায় শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তা পরিবর্তন করে সকাল ১১টায় শুরু হয়ে ৩টায় শেষ হবে। বছরের প্রথম কর্মসূচি পালনে ব্যাপক প্রস্তুতি রয়েছে। ১০ বিভাগের দায়িত্বে কেন্দ্রীয় নেতারা : বছরের প্রথম কর্মসূচি সফলে কেন্দ্রীয় নেতাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এ ক্ষেত্রে তাদের সঙ্গে কর্মসূচি পালনে সমন্বয় করবেন সাংগঠনিক সম্পাদক, সহসাংগঠনিক সম্পাদক। সদস্য হিসাবে থাকবেন সংশ্লিষ্ট বিভাগের অধিবাসী জাতীয় নির্বাহী কমিটির নেতারা, সাবেক এমপি, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি/আহ্বায়ক, সাধারণ সম্পাদক/সদস্য সচিব, জেলা/মহানগর বিএনপির সভাপতি/আহ্বায়ক, সাধারণ সম্পাদক/সদস্য সচিব/প্রথম যুগ্ম আহ্বায়ক। কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে কুমিল্লা বিভাগের দলনেতা বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লাহ বুলু, চট্টগ্রাম বিভাগের দলনেতা মো. শাহজাহান, ময়মনসিংহ বিভাগের দলনেতা আবদুল আউয়াল মিন্টু, ঢাকা বিভাগের দলনেতা ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, খুলনা বিভাগের দলনেতা শামসুজ্জামান দুদু, রাজশাহী বিভাগের দলনেতা বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনু, ফরিদপুর বিভাগের দলনেতা বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মজিবুর রহমান সরোয়ার, সিলেট বিভাগের দলনেতা যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, বরিশাল বিভাগের দলনেতা বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবিব-উন-নবী খান সোহেল এবং রংপুর বিভাগের দলনেতা দলের যুগ্ম মহাসচিব হারুন-অর-রশিদ। স্থায়ী কমিটির সদস্যরা বিভাগীয় কর্মসূচিতে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত থাকবেন। মাঠে থাকবে সরকারবিরোধী ৩০টির অধিক দল : সরকারবিরোধী যুগপৎ আন্দোলনের দ্বিতীয় কর্মসূচি পালনেও ব্যাপক প্রস্তুতি নিচ্ছে সমমনা দল ও জোট। সাতদলীয় জোটের সমন্বয়ে গঠিত গণতন্ত্র মঞ্চ, ১২ দলীয় জোট, ১১ দলীয় জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, এলডিপি পৃথকভাবে গণঅবস্থান কর্মসূচি পালন করবে। পুরানা পল্টন মোড়ে গণঅবস্থান কর্মসূচি পালন করবে ১১ দলের জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট। ১২ দলীয় জোটের উদ্যোগে বিজয়নগর পানির ট্যাঙ্কের সামনে, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এ কর্মসূচি পালন করবে গণতন্ত্র মঞ্চ। কর্মসূচি পালনে কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে দায়িত্ব বণ্টন করেছেন এলডিপি প্রেসিডেন্ট ডক্টর কর্নেল অলি আহমদ বীরবিক্রম। রোববার এলডিপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে প্রেসিডিয়াম সদস্যদের সঙ্গে বৈঠকের পর কে কোন বিভাগে গণঅবস্থান কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করবে তা বণ্টন করা হয়। বিএনপির যুগপৎ আন্দোলনে এবার শরিক থাকবে মোস্তফা মহসীন মন্টুর নেতৃত্বাধীন গণফোরাম। মতিঝিলের ইডেন কমপ্লেক্সের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে প্রধান সড়কে এ কর্মসূচি পালন করা হবে। রোববার দলের নির্বাহী পরিষদের এক সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়। এছাড়া রোববার ১৫টি সংগঠন নিয়ে গঠিত সমমনা গণতান্ত্রিক জোটও এ যুগপৎ আন্দোলনে অংশ নেবে।