সোনার বাংলার পথে দেশ

৬ জানুয়ারি, ২০২৩ | ৮:৩৪ পূর্বাহ্ণ
অনলাইন নিউজ ডেস্ক , ইউ এস বাংলা ২৪

দুর্নীতি, সন্ত্রাস, মাদক ও জঙ্গীবাদ সম্পূর্ণরূপে নির্মূলের মাধ্যমে শোষণমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বাঙালি জাতিকে আরও ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। তিনি বলেন, নতুন প্রজন্মের জন্য একটি নিরাপদ, সুখী, সুন্দর ও উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ দেয়া আমাদের পবিত্র কর্তব্য। দেশের অগ্রযাত্রাকে বেগবান করতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আর জাতির পিতার আদর্শকে ধারণ করে বঙ্গবন্ধু কন্যার নেতৃত্বে জাতি এগিয়ে যাক ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত, আত্মমর্যাদাশীল বঙ্গবন্ধুর ‘সোনার বাংলা’ গড়ার পথে। বৃহস্পতিবার (৫ জানুয়ারি) একাদশ জাতীয় সংসদের ২০২৩ সালের প্রথম অধিবেশনে প্রদত্ত ভাষণে রাষ্ট্রপতি আরও বলেন, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবিসংবাদিত নেতৃত্বে একটি রক্তক্ষয়ী জনযুদ্ধের মাধ্যমে আমরা অর্জন করেছি স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। স্বাধীন সার্বভৌম এ দেশে জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস এবং তাদের সকল প্রত্যাশার কেন্দ্রবিন্দু মহান জাতীয় সংসদ। আপনারা জনপ্রতিনিধি, তাই জনস্বার্থকে সবকিছুর উর্ধ্বে স্থান দিতে হবে। চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ থেকে ২০৪১ সালে স্মার্ট বাংলাদেশে রূপান্তরের লক্ষ্যে মাস্টার প্ল্যান, আইন, নীতিমালা ও স্ট্র্যাটেজি প্রণয়নসহ বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। বৃহস্পতিবার (৫ জানুয়ারি) বিকেল ৪ টায় স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদ অধিবেশন শুরু হয়। রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বিকেল সাড়ে চারটায় সংসদ অধিবেশনে প্রবেশ করেন। এ সময় অক্রেস্টায় জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন করা হয়। সবাই দাঁড়িয়ে রাষ্ট্রপতিকে সম্মান জানান। এরপর রাষ্ট্রপতি তাঁর বক্তব্যের শুরুতেই সময় সাশ্রয়ের জন্য তাঁর পুরো ভাষণের সংক্ষিপ্ত আকারে পাঠ করেন। তাঁর পুরো ভাষণটি পঠিত বলে গণ্য করে তা কার্যবিবরণীতে অন্তর্ভূক্ত করার জন্য স্পীকারকে অনুরোধ জানান রাষ্ট্রপতি। প্রায় ৩০ মিনিটের মিনিটের ভাষণে রাষ্ট্রপতি বর্তমান সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন, সফলতা ও অগ্রগতিগুলো তাঁর ভাষণের মাধ্যমে তুলে ধরেন। দ্বিতীয় মেয়াদে রাষ্ট্রপতি হিসেবে এটিই ছিল মো. আবদুল হামিদের সংসদ অধিবেশনে দেওয়া শেষ ভাষণ। ভাষণ শেষ হলে রাষ্ট্রপতি স্পীকারের বাম পাশে স্থাপিত চেয়ারে বসেন। এরপর জাতীয় সংসদে আগমণ এবং মূল্যবান ভাষণের জন্য রাষ্ট্রপতিকে ধন্যবাদ জানিয়ে স্পীকার বলেন, মহামান্য রাষ্ট্রপতির পূর্ণ ভাষণটি পঠিত বলে গণ্য হবে এবং তা কার্যবিবরণীতে অন্তর্ভূক্তি করা হবে। এরপর রাষ্ট্রপতি জাতীয় সঙ্গীতের পর ৫টা ২ মিনিটে অধিবেশন কক্ষ ত্যাগ করেন। এরপর স্পীকার সংসদ অধিবেশন আগামী রবিবার বিকেল সোয়া চারটা পর্যন্ত মুলতবি ঘোষণা করেন। রাষ্ট্রপতির ভাষণের সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিরোধী দলের নেতা বেগম রওশন এরশাদসহ সরকার ও বিরোধী দলের সংসদ সদস্য মাঝে মধ্যেই টেবিল চাপড়িয়ে রাষ্ট্রপতিকে উৎসাহিত করেন। রাষ্ট্রপতি বলেন, একাদশ জাতীয় সংসদের ২০২৩ সালের প্রথম অধিবেশনে ভাষণ দেয়ার সুযোগ পাওয়ায় তিনি পরম করুণাময় আল্লাহ’র কাছে শোকরিয়া আদায় করেন এবং স্পীকার, সকল সংসদ সদস্য এবং প্রিয় দেশবাসীকে ইংরেজি নববর্ষের শুভেচ্ছা জানান। করোনা মহামারী এবং রাশিয়া-ইউক্রেণ যুদ্ধ পরবর্তী বৈশ্বিক সঙ্কটের কথা তুলে ধরে রাষ্ট্রপতি বলেন, জাতীয় জীবনের এক গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণ আমরা অতিবাহিত করছি। ২০২২ সাল আমাদের জন্য ছিল চ্যালেঞ্জের একটি বছর। সমগ্র বিশ্বই পার করছে এক কঠিন সময়। করোনা অতিমারি আমরা সফলভাবে মোকাবেলা করে অর্থনীতির গতিশীলতা বজায় রাখতে সক্ষম হলেও রাশিয়া এবং ইউক্রেনের যুদ্ধ আমাদের এই অগ্রযাত্রাকে শ্লথ করেছে। তারপরও ২০২১-২২ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের তুলনায় ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাজেট ১৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ৬ লক্ষ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। তিনি বলেন, ২০২১-২২ অর্থবছরের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক দুই-পাঁচ শতাংশে দাঁড়িয়েছে, যা সামগ্রিক বিশ্ব অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় ইতিবাচক। মাথাপিছু জাতীয় আয় পূর্ববর্তী অর্থবছর থেকে ২৩৩ মার্কিন ডলার বৃদ্ধি পেয়ে ২ হাজার ৮২৪ মার্কিন ডলারে দাঁড়িয়েছে। পূর্ববর্তী অর্থবছরের তুলনায় ২০২১-২২ অর্থবছরে রপ্তানি আয় বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ৬০ দশমিক নয়-সাত বিলিয়ন ডলার এবং বৈদেশিক বিনিয়োগের পরিমাণ ৩ দশমিক চার-চার বিলিয়ন ডলারে। রাষ্ট্রপতি বলেন, করোনার অভিঘাত মোকাবেলায় বিভিন্ন প্রণোদনা প্যাকেজের কার্যকর বাস্তবায়নের ফলে আমাদের অর্থনীতিতে গতিশীলতা ধরে রাখা সম্ভব হয়েছে। সরকার ঘোষিত ১ লক্ষ ৮৭ হাজার ৬৭৯ কোটি টাকার কৃষি, গার্মেন্টসসহ ২৮টি প্রণোদনা প্যাকেজের সরাসরি উপকারভোগী প্রপায় ৭ কোটি ৩২ লক্ষ ব্যক্তি ও প্রায় ২ লক্ষ প্রতিষ্ঠান। তিনি বলেন, সরকার কর্তৃক কৃষি উৎপাদনকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে বিগত অর্থবছরে মোট ১৫ হাজার ১৭২ দশমিক সাত-নয় কোটি টাকা ভরতুকি এবং ৩৯ হাজার কোটি টাকা সরল সুদে কৃষিঋণ বিতরণ করা হয়েছে। বিশেষ প্রণোদনার আওতায় কৃষকদের মধ্যে ৫০০ কোটি টাকার বীজ, সার এবং কীটনাশক বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়েছে। রাষ্ট্রপ্রধান বলেন, হর্টিকালচার, মৎস্য চাষ, পোল্ট্রি, ডেইরি ও প্রাণিসম্পদ খাতে পর্যাপ্ত ঋণ প্রবাহ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বিশেষ প্রণোদনামূলক পুনঃঅর্থায়ন স্কিমের আওতায় এ পর্যন্ত ১ লক্ষ ৮৭ হাজারের অধিক সুবিধাভোগীর অনুকূলে স্বল্প সুদে প্রায় ২ হাজার ৭৮৬ কোটি টাকার বেশি ঋণ বিতরণ করা হয়েছে। সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় মাছ ধরা বন্ধকালীন ২০২১-২২ অর্থবছরে ১২ লক্ষ ৪৫ হাজারের অধিক জেলে পরিবারকে প্রায় ৯৬ হাজার ৫৫০ মেট্রিক টনের অধিক খাদ্যশস্য ভিজিএফ হিসাবে প্রদান করা হয়েছে। পাশাপাশি ৮ লক্ষের অধিক মৎস্যচাষি/খামারিকে প্রায় ৯০৩ কোটি টাকা নগদ এবং উৎপাদন উপকরণ সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। বৈশ্বিক অর্থনীতির অস্থিতিশীলতা সত্ত্বেও দেশের খাদ্য নিরাপত্তা সুরক্ষিত রয়েছে উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেন, বর্তমান সরকার ‘শেখ হাসিনার বাংলাদেশ, ক্ষুধা হবে নিরুদ্দেশ’-স্লোগান নিয়ে ‘খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি’র আওতায় ৫০ লক্ষ ১০ হাজারের অধিক নিম্নআয়ের পরিবারকে ১৫ টাকা কেজি দরে মাসে ৩০ কেজি চাল এবং ২৪ টাকা দরে ৫ কেজি আটা বিতরণ করছে। খোলা বাজারে খাদ্য বিক্রয় (ওএমএস) চালু আছে দেশের সকল উল্লেখযোগ্য হাট-বাজারে। এছাড়া, সরকার টিসিবি’র মাধ্যমে এক কোটি পরিবারকে সাশ্রয়ীমূল্যে সয়াবিন তেল, চিনি ও মসুর ডাল সরবরাহ করছে। তিনি বলেন, এখন প্রত্যন্ত গ্রামেও একজন দিনমজুরের বেতন দিনে কমপক্ষে ৭০০ টাকা। একইসঙ্গে বেড়েছে জাতীয় উৎপাদন। বৈশ্বিক অর্থনীতির অস্থিতিশীলতা সত্ত্বেও দেশের খাদ্য নিরাপত্তা সুরক্ষিত রয়েছে এবং বর্তমানে দেশে খাদ্যশস্য মজুদের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৬ দশমিক এক-চার লক্ষ মেট্রিক টন, যা সন্তোষজনক। এছাড়াও, এবারে দেশব্যাপী আমন ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। রাষ্ট্রপতি তাঁর ভাষণে আরও বলেন, অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন জোরদার করার লক্ষ্যে অর্থনৈতিক বৈষম্য হ্রাসে প্রতিবছর সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কর্মসূচির বাজেট বৃদ্ধি করা হচ্ছে যার পরিমাণ ১ লক্ষ ১৩ হাজার ৫৭৬ কোটি টাকা। বর্তমানে বয়স্ক ভাতাভোগীর সংখ্যা প্রায় ৫৭ লক্ষ, বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা মহিলা ভাতাভোগীর সংখ্যা প্রায় ২৫ লক্ষ, প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষা উপবৃত্তির উপকারভোগীর সংখ্যা ১ লক্ষ এবং প্রতিবন্ধী ভাতাভোগীর সংখ্যা প্রায় ২৪ লক্ষ জন। ২০২২-২৩ অর্থবছর থেকে ৬০ বছরের উর্ধ্বে দেশের সকল নাগরিকের জন্য পেনশন ব্যবস্থা চালুর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, বিগত অর্থবছরে ভিজিডি চক্রে সারাদেশে ১০ লক্ষ ৪০ হাজার উপকারভোগীকে প্রতি মাসে খাদ্য সহায়তার পাশাপাশি প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। মা ও শিশু সহায়তা কর্মসূচির উপকারভোগী ১২ লক্ষ ৫৪ হাজার জনকে মাসিক ৮০০ টাকা হারে ভাতা প্রদান করা হয়েছে। তিনি বলেন, সরকারের যুগোপযোগী ও নারীবান্ধব কর্মসূচি গ্রহণের ফলে বাংলার নারীরা দেশে-বিদেশে বাংলাদেশের নাম উজ্জ্বল করছে। ২০২২ সালে সাফ ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপে শিরোপা অর্জনের মাধ্যমে নারীরা দেশের জন্য এক অনন্যসাধারণ গৌরব বয়ে এনেছে। তথ্যপ্রযুক্তিতে প্রবেশাধিকার এবং তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক সেবা প্রদানের মাধ্যমে ১ কোটি ১০ লক্ষ গ্রামীণ নারীদের তথ্যপ্রযুক্তিতে ক্ষমতায়ন করা হয়েছে। সকল নারী উদ্যোক্তাকে ই-কমার্সে অন্তর্ভুক্ত করার লক্ষ্যে ই-কমার্স মার্কেটপ্লেস ‘লালসবুজ ডটকম’ এবং ‘ই-জয়িতা’ চালু করা হয়েছে। রাষ্ট্রপতি বলেন, সরকার দেশের ৬৪ জেলার ৫০০টি উপজেলায় বেকার যুবদের প্রশিক্ষণ ও ঋণ প্রদানের মাধ্যমে আত্মকর্মী তৈরি করছে। সামাজিক ক্ষেত্রে অসাধারণ অবদানের জন্য ২০২২ সালে প্রধানমন্ত্রী ১২ জন যুবকে ‘শেখ হাসিনা ইয়ুথ ভলান্টিয়ার অ্যাওয়ার্ড’-২০২২ প্রদান করেছেন। দেশের একটি মানুষ গৃহহীন থাকবে না জানিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিশ্রুতি ‘বাংলাদেশের একজন মানুষও গৃহহীন থাকবে না’এ লক্ষ্যে আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে ১৯৯৭ সাল থেকে ২০০১ এবং ২০০৯ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ৭ লক্ষ ৫৮ হাজার ৫২৫টি পরিবারের প্রায় ৩৫ লক্ষ গৃহহীন মানুষকে পুনর্বাসন করা হয়েছে। পাশাপাশি জাতির সূর্য সন্তান অস্বচ্ছল বীর মুক্তিযোদ্ধা, বীরাঙ্গনা, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা, প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধাদের স্ত্রী ও সন্তানদের মুজিববর্ষ এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসাবে ত্রিশ হাজার বাসস্থান ‘বীর নিবাস’ দেয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, করোনা অতিমারি মোকাবেলায় টিকাদান এবং সামাজিক তৎপরতার ওপর ভিত্তি করে ‘নিক্কেই কোভিড-১৯ রিকোভারি সূচক’-এ বিশ্বের ১২১টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ পঞ্চম এবং দক্ষিণ এশিয়ায় শীর্ষে অবস্থান করছে। ইতোমধ্যে সরকার প্রায় ১৫ কোটি জনগণকে কোভিড টিকাদান কর্মসূচির আওতায় এনেছে। বর্তমানে চতুর্থ ডোজ টিকা প্রদান কার্যক্রম শুরু হয়েছে। রাষ্ট্রপতি বলেন, শিক্ষাক্ষেত্রে অগ্রগতি অব্যাহত রয়েছে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিশুদের নিট ভর্তি হার ৯০ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ৯৭ দশমিক চার-দুই শতাংশে উন্নীত হয়েছে। প্রাথমিক শিক্ষায় ‘ঝরে পড়ার হার’ ৪৯ শতাংশ থেকে হ্রাস পেয়ে ১৪ দশমিক এক-পাঁচ শতাংশে নেমে এসেছে। সম্প্রতি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৩৭ হাজার ৫৭৪ জন সহকারি শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়েছে, যা স্বাধীনতার পর এক আদেশে সর্বোচ্চ সংখ্যক। তিনি বলেন, ২০২৩ শিক্ষাবর্ষের শুরুতে সারাদেশে ৪ কোটি ৯ লক্ষ ১৫ হাজারের অধিক শিক্ষার্থীর মধ্যে ৩৩ কোটি ৯১ লক্ষ ১২ হাজারের অধিক কপি পাঠ্যপুস্তক বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়েছে। সকল স্তরের শিক্ষার্থীদের মধ্যে গত অর্থবছরে ১ হাজার ৯৬৬ কোটি ২০ লক্ষ টাকার অধিক উপবৃত্তি প্রদান করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী এ পর্যন্ত ৩৫৫টি বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও ৩২৫টি বেসরকারি কলেজ সরকারিকরণ করা হয়েছে। পদ্মা সেতুকে বাংলাদেশের সক্ষমতা ও গর্বের প্রতীক আইকনিক সেতু হিসেবে উল্লেখ করে নিজস্ব অর্থায়নে এটি নির্মাণের জন্য প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেন, নিজস্ব অর্থায়নে নির্মিত বাংলাদেশের সক্ষমতা ও গর্বের প্রতীক আইকনিক পদ্মা সেতু গত ২৫ জুন ২০২২ তারিখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধন করেন। এর মাধ্যমে দেশের ৩ কোটিরও অধিক জনগণ প্রত্যক্ষভাবে উপকৃত হবে। কর্ণফুলী নদীর তলদেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বহুলেন টানেলের দক্ষিণ টিউবের নির্মাণকাজ সমাপ্ত হয়েছে। আমি আশাবাদী যে দ্রæতই টানেলটি জনসাধারণের ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া সম্ভব হবে। মেট্টোরেল প্রসঙ্গে তিনি বলেন, অত্যাধুনিক গণপরিবহন হিসাবে ৬টি মেট্রোরেল সমন্বয়ে একটি শক্তিশালী নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার লক্ষ্যে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত প্রথম উড়াল মেট্রো ট্রেন চালু হওয়ায় প্রধানমন্ত্রীকে আমি আন্তরিক অভিনন্দন জানাচ্ছি। সরকারের সময়াবদ্ধ কর্মপরিকল্পনার মাধ্যমে ২০৩০ সালের মধ্যে ৬টি এমআরটি’র মাধ্যমে স্বয়ংসম্পূর্ণ যোগাযোগ নেটওয়ার্ক গড়ে উঠবে। রাষ্ট্রপতি বলেন, দেশের ক্রমবর্ধমান যাত্রী চাহিদা ও পর্যটনশিল্পের উন্নয়নে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালের নির্মাণকাজ এবং কক্সবাজার বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করার কার্যক্রম দ্রæতগতিতে এগিয়ে চলছে। এছাড়াও, পর্যটন বিষয়ক সকল কর্মকাণ্ড এবং প্রচার-প্রচারণার লক্ষ্যে পর্যটনের কান্ট্রি ব্র্যান্ডনেম ‘মুজিব বাংলাদেশ’ নির্ধারণ করা হয়েছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ রেলওয়েকে আধুনিক, আরামদায়ক, সাশ্রয়ী গণপরিবহন মাধ্যম হিসাবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে সরকার ৬৫০ দশমিক ১১ কিলোমিটার নতুন রেল লাইন, ৭৩২টি সেতু এবং ১২৬টি স্টেশন ভবন নির্মাণ করেছে। ২০৪১ সালে স্মার্ট বাংলাদেশে রূপান্তর হবে জানিয়ে রাষ্ট্রপতি তাঁর ভাষণে বলেন, বাংলাদেশের প্রথম স্যাটেলাইট ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১’ মহাকাশে উৎক্ষেপণ করা হয়েছে এবং ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২’ উৎক্ষেপণের বিষয়টি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ থেকে ২০৪১ সালে স্মার্ট বাংলাদেশে রূপান্তরের লক্ষ্যে মাস্টার প্ল্যান, আইন, নীতিমালা ও স্ট্র্যাটেজি প্রণয়নসহ বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। তিনি বলেন, সবার জন্য বিদ্যুত সুবিধা নিশ্চিত করার মাধ্যমে ‘শেখ হাসিনার উদ্যোগ-ঘরে ঘরে বিদ্যুত’ বাস্তবায়ন করা হয়েছে। বিদ্যুতের স্থাপিত ক্ষমতা ক্যাপটিভ ও নবায়নযোগ্য জ্বালানিসহ ২৫ হাজার ৮২৬ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে এবং বিদ্যুত সুবিধাভোগী জনসংখ্যা ৪৭ থেকে ১০০ ভাগে উন্নীত হয়েছে। রাষ্ট্রপতি বলেন, সুশাসন প্রতিষ্ঠায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে যুগোপযোগী করার লক্ষ্যে সরকার সদা তৎপর। ২০২২-২৩ অর্থবছরে জননিরাপত্তা বিভাগে প্রায় ২৪ হাজার ৫৯৪ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে যা বিগত ১২ বছরের তুলনায় প্রায় ৪ গুণ বেশি। বাংলাদেশের সকল থানায় ‘নারী, শিশু, বয়স্ক ও প্রতিবন্ধী সার্ভিস ডেস্ক’ স্থাপন করা হয়েছে। সারাদেশে সড়ক দুর্ঘটনা সংক্রান্ত তথ্য সংরক্ষণ, মনিটরিং ও প্রতিরোধ ব্যবস্থা গ্রহণে সফট্ওয়্যারভিত্তিক কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর ‘ফোর্সেস গোল-২০৩০’- এর আলোকে বাংলাদেশে সেনাবাহিনীর বিভিন্ন সেনানিবাসে ২০২২ সালে বিভিন্ন কোরের ৪টি ইউনিট নতুনভাবে গঠন এবং একটি পদাতিক ব্রিগেড ও চারটি পদাতিক ব্যাটালিয়নকে মেকানাইজড হিসাবে রূপান্তর করা হয়েছে। নৌ ঘাঁটি ‘বানৌজা শের-ই-বাংলা’ ও সাবমেরিন ঘাঁটি ‘বানৌজা শেখ হাসিনা’ নির্মাণকাজ চলমান রয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর নয়টি গর-১৭ হেলিকপ্টার এবং একটি ঈ-১৩০ পরিবহন বিমান কঙ্গোতে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে উড্ডয়ন পরিচালনা করছে। জমির নামজারি, কর ও পর্চা সরবরাহ ডিজিটাইজড প্রসঙ্গে রাষ্ট্রপতি তাঁর ভাষণে বলেন, জনগণের ভোগান্তি হ্রাস করার লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে জমির নামজারি, ভূমি উন্নয়ন কর প্রদান এবং পর্চা সরবরাহ কার্যক্রম ডিজিটাইজড করা হয়েছে। ডিজিটাইজেশনের পাশাপাশি ভূমি সংক্রান্ত বেশ কিছু নতুন আইন, বিধি-বিধান তৈরি এবং পুরাতন আইনের সংশোধনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। বিচার ব্যবস্থার ডিজিটাইজেশনের লক্ষ্যে এভিডেন্স এ্যাক্ট, ১৮৭২ সংশোধনীর মাধ্যমে যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। এভিডেন্স এ্যাক্ট, ২০২২-এর মাধ্যমে ডিজিটাল রেকর্ড ও ফরেনসিক পদার্থ বা বস্তুসমূহকে সাক্ষ্য হিসাবে গ্রহণ সংক্রান্ত বিধান সংযোজন করা হয়েছে। তিনি বলেন, অর্থনৈতিক উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রেখে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত অভিযোজনমূলক কার্যক্রম বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ন্যাশনাল এ্যাডাপটেশন প্লাণ প্রণয়ন করা হয়েছে। ‘বাংলাদেশ ব-দ্বীপ পরিকল্পনা ২১০০’-এর আওতায় ৬৪টি জেলায় প্রায় ৫ হাজার দুইশত তেষট্টি কিলোমিটার নদী, খাল এবং জলাশয় পুনঃখননের কাজ চলমান রয়েছে। ফলে ১০৯টি ছোটো নদী, ৫৩৩টি খাল ও ২৬টি জলাশয় পুনরুজ্জীবিত হবে। এছাড়া, প্রধান প্রধান নদীসমূহে ড্রেজিং ও নদী ব্যবস্থাপনা কার্যক্রমের প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি অটুট রয়েছে উল্লেখ করে মো. আবদুল হামিদ বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগে স্বাক্ষরিত ‘পার্বত্য শান্তিচুক্তির’ ৭২টি ধারার মধ্যে ৬৫টি ধারা ইতোমধ্যে সম্পূর্ণ বাস্তবায়িত হওয়ায় অনগ্রসর পার্বত্য অঞ্চল জাতীয় উন্নয়নে সংযুক্ত হয়েছে। জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকলের মধ্যে সৌহার্দ্য বিরাজ করছে এবং দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি অটুট রয়েছে। তিনি বলেন, বাঙালি সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে বিশ্বে পরিচিতির লক্ষ্যে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের সঙ্গে সাংস্কৃতিক বিনিময় কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। তথ্যপ্রবাহ ও সৃজনশীলতার ধারা অব্যাহত রাখার জন্য সরকার আইন, বিধি ও নীতিমালা প্রণয়ন করছে। সরকার কর্তৃক সংবাদকর্মীদের কল্যাণার্থে সাংবাদিক ও সাংবাদিক পরিবারের সদস্যদের মধ্যে ২০২১-২২ অর্থবছরে প্রায় ১০ কোটি টাকা অনুদান প্রদান করা হয়েছে। রাষ্ট্রপতি তাঁর ভাষণে বলেন, বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের মানবিক সাহায্য প্রদান, নারীর ক্ষমতায়ন এবং জলবায়ুর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় প্রধানমন্ত্রীর বলিষ্ঠ নেতৃত্ব বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত হচ্ছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পররাষ্ট্রনীতির মূলমন্ত্র ‘সবার সাথে বন্ধুত্ব, কারও সাথে বৈরিতা নয়’-এ নীতির ওপর ভিত্তি করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল এবং দূরদর্শী নেতৃত্বে পরিবর্তিত বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে প্রতিবেশী দেশসমূহের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক জোরদারকরণ, ব্যবসা-বাণিজ্য ও শ্রমবাজার সম্প্রসারণে সরকার নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।