দেশে শীতের তীব্রতা আরও বেড়েছে

৬ জানুয়ারি, ২০২৩ | ৬:৪৬ পূর্বাহ্ণ
অনলাইন নিউজ ডেস্ক , ইউ এস বাংলা ২৪

দেশে শীত পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটেছে। গত কয়েকদিন বিচ্ছিন্নভাবে দেশের দু-এক স্থানে শৈত্যপ্রবাহ ছিল। কিন্তু বৃহস্পতিবার একযোগে আট অঞ্চলে শৈত্যপ্রবাহ শুরু হয়েছে। শুধু তাই নয়, ঢাকায় তাপমাত্রা একদিনেই দুই ডিগ্রি কমেছে। শীত পরিস্থিতির এই অবনতি আরও দু-একদিন অব্যাহত থাকতে পারে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর (বিএমডি)। কনকনে ঠান্ডায় গরিব, অসহায়, ছিন্নমূল মানুষ খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন। অনেকে ছুটছেন পুরোনো কাপড়ের দোকানে। দেখা দিয়েছে ঠান্ডাজনিত নানা রোগবালাই। এদিকে শীতের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে কুয়াশার প্রকোপও অব্যাহত আছে। আগের দুদিনের মতো বৃহস্পতিবারও রাজধানীসহ প্রায় সারা দেশ কুয়াশায় ঢাকা ছিল। তবে দুপুরের পর ঢাকাসহ দেশের দু-এক জায়গায় সূর্যের মুখ দেখা গেছে। ফলে কুয়াশা খানিকটা কেটে যায়। কিন্তু মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত সারা দেশে মাঝারি বা ঘন কুয়াশা পড়তে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে বিএমডি। সংস্থাটি আরও বলছে, এই কুয়াশা দেশের কোথাও কোথাও দুপুর পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। বিএমডির তথ্য অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার রাজশাহী, পাবনা, দিনাজপুর, পঞ্চগড়, নীলফামারী, যশোর, চুয়াডাঙ্গা ও কুষ্টিয়া অঞ্চলের ওপর দিয়ে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যায়। এই শৈত্যপ্রবাহ আরও কয়েকদিন অব্যাহত থাকতে পারে। মঙ্গল ও বুধবার দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল শ্রীমঙ্গলে। বৃহস্পতিবার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড চলে যায় যশোরে। শ্রীমঙ্গলের মতোই যশোরে বৃহস্পতিবার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এদিন ঢাকায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১২ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস আর সর্বোচ্চ ২০ ডিগ্রি। তাপমাত্রার পার্থক্য দাঁড়ায় ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ফলে শৈত্যপ্রবাহ না থাকলেও শীতের অনুভূতি ছিল তীব্র। বিএমডির আবহাওয়াবিদ ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক বলেন, তীব্র শীত ও শৈত্যপ্রবাহের অন্যতম কারণ হলো বাতাসের গতি এবং সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ তাপমাত্রার পার্থক্য ১০ ডিগ্রির নিচে নেমে যাওয়া। এছাড়া কুয়াশার প্রকোপ, সূর্যের স্বল্পস্থায়ী কিরণকাল কিংবা একেবারেই সূর্যের মুখ দেখতে না পাওয়ার ওপরও শীতের তীব্রতা নির্ভর করে। বাতাসের গতি বেশি থাকলেও শীতের অনুভূতি বেশি মনে হয়। আবহাওয়া অধিদপ্তরের সবশেষ বার্তায় বলা হয়, উপমহাদেশীয় উচ্চ চাপবলয়ের বর্ধিতাংশ ভারতের পশ্চিমবঙ্গ এবং এর কাছাকাছি বাংলাদেশের পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থান করছে। মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে। যার বর্ধিতাংশ উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। সংস্থাটির পূর্বাভাসে আরও বলা হয়েছে, সারা দেশে রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। দিন ও রাতের তাপমাত্রায় পার্থক্যের কারণে দেশের উত্তর, উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল ও মধ্যাঞ্চলে মাঝারি থেকে তীব্র শীতের অনুভূতি অব্যাহত থাকতে পারে। ব্যুরো ও প্রতিনিধিদের খবর- যশোর : বৃহস্পতিবার দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে যশোরে। নিম্ন-আয়ের মানুষ গরম পোশাকের সন্ধানে পুরোনো কাপড়ের দোকানে ছোটেন। বিকালে সরেজমিনে যশোর শহরের জেলা পরিষদ মার্কেট ও কালেক্টরেট মার্কেট ঘুরে দেখা যায় পুরোনো কাপড়ের দোকানগুলোয় ক্রেতাদের ভিড়। জ্যাকেট, সোয়েটার, হুডি, টুপি, মাফলার বিক্রির হিড়িক পড়েছে। মানভেদে ৫০ থেকে ২০০ টাকায় স্বল্প ও নিম্ন-আয়ের মানুষ শীতবস্ত্র ক্রয় করছেন। রাকিবুল নামে এক ক্রেতা বলেন, এখানে কম দামে পছন্দের শীতবস্ত্র পাওয়া যায়। রহিমা নামে আরেক ক্রেতা বলেন, কম দামের মধ্যে বাচ্চাদের জন্য জ্যাকেট, সোয়েটার কিনলাম। শেরপুর : জেলার সীমান্তবর্তী পাহাড়ি এলাকা ও চরাঞ্চলের মানুষ শীতে সীমাহীন কষ্ট পাচ্ছে। অনেকে শীত উপেক্ষা করে কাজের সন্ধানে বের হলেও কাজ পাচ্ছেন না। গরিব, অসহায়, ছিন্নমূল শ্রমজীবী মানুষ খড়কুটো ও আবর্জনায় আগুন ধরিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন। শীতের কারণে ঠান্ডাজনিত বিভিন্ন রোগবালাই বেড়ে গেছে। বরিশাল : বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে ১২.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গত কয়েকদিন ধরেই বরিশালে বিরূপ আবহাওয়া বিরাজ করায় জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। দুপুর পর্যন্ত সূর্যের দেখা পাওয়া যায় না। শীতে শ্রমজীবী মানুষ কাজে যেতে হিমশিম খাচ্ছে। চুনারুঘাট (হবিগঞ্জ) : শীতে বৃদ্ধ ও শিশুরা কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন। উপজেলার স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মোজাম্মেল হোসেন জানান, মানুষ ডায়রিয়াসহ ঠান্ডাজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। বিশেষ করে বৃদ্ধ ও শিশুরা এতে বেশি ভুগছেন। প্রতিদিন হাসপাতালে এসব রোগী আসায় উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ উদ্বিগ্ন বলেও তিনি জানান। মেহেরপুর : কনকনে শীতের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে পিপিআর রোগ। গত এক মাসে প্রায় অর্ধশত ছাগল মারা গেছে এ রোগে। এতে শঙ্কিত ছাগল খামারি ও কৃষক। চিকিৎসায় সুস্থ না হওয়ায় যে কোনো দামে আক্রান্ত ছাগল বিক্রি করে দিচ্ছে ছাগল পালনকারীরা। জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগের দাবি, পরিস্থিতি মোকাবিলায় আগেভাগেই ২ লাখ ৩৪ হাজার ছাগল-ভেড়াকে ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে। রাজবাড়ী : দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে ঘন কুয়াশার কারণে ৮ দিনে ৫০ ঘণ্টা ফেরি চলাচল বন্ধ ছিল। এতে নৌরুটে চলাচলকারী যাত্রী ও পরিবহণ শ্রমিকদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। পাটুরিয়া বিআইডব্লিটিসির ঘাট কার্যালয়ের সহ-ব্যবস্থাপক (মেরিন) মো. সাদেকুর রহমান বিষয়টি জানিয়েছেন।