গাজা যুদ্ধ হয়ে উঠেছে ফিলিস্তিনিদের জাগরণের প্রতীক

১৩ মে, ২০২৫ | ৫:৫২ পূর্বাহ্ণ
ডেস্ক নিউজ , ডোনেট বাংলাদেশ

গাজা যুদ্ধ হয়ে উঠেছে ফিলিস্তিনিদের জাগরণের প্রতীক। পৃথিবী আর সব দেশ যখন যুদ্ধের সময় থমকে যায়, বিপর্যয়ে ভেঙে পড়ে, ফিলিস্তিনিরা সেখানে ফিনিক্স পাখির মতো জেগে ওঠে। কয়েকটা উদাহরণ দিই- এ যুদ্ধের শিশু হিন্দ রজবকে হত্যার মধ্য দিয়ে গড়ে উঠেছে হিন্দ রজব ফাউন্ডেশন। গণহত্যায় অংশ নেওয়া ইসরাইলি সৈন্যরা যেই দেশেই যাচ্ছে, আন্তর্জাতিক আদালতের সমন নিয়ে সেই দেশের আদালতে মামলা ঠুকে দিচ্ছে তারা ওই সৈন্যকে ওয়ার ক্রিমিনাল আখ্যা দিয়ে। ফলে ইসরাইলি সৈন্যটিকে তৎক্ষণাৎ সে-দেশ ছেড়ে পালাতে হচ্ছে। হিন্দ রজব ফাউন্ডেশন বিশ্বজুড়ে ইসরাইলি সৈন্যদের জন্য এক আতঙ্কের নাম, ইসরাইলিদের জন্য পৃথিবী সঙ্কীর্ণ করে ফেলেছে তারা। দুই শতাধিক সাংবাদিক শহিদ হয়েছেন গাজা যুদ্ধে। এমনকি বিদেশি সংবাদমাধ্যম প্রতিনিধি পাঠানোর মতো কর্মী খুঁজে পায়নি। কিন্তু ফিলিস্তিনি সাংবাদিকদের সারা বিশ্বে সংবাদ পাঠিয়ে গেছেন। ফলে এর মধ্য দিয়ে আল-জাজিরার এজে প্লাস ভ্লগের বিসান আওদা পেয়েছেন অ্যামি অ্যাওয়ার্ড; যা চলচ্চিত্রের অস্কার বা সঙ্গীতের গ্র্যামি অ্যাওয়ার্ডের সমতুল্য। শুধু তাই না, ওয়ায়েল দাহদুহ, আল-জাজিরা আরবির ব্যুরো চিফ; যার ছেলে ও স্ত্রীসহ বহু সদস্য নিহত হয়েছেন গাজা যুদ্ধে, নিজে আহত হয়েছেন তিনি, তারপরও গাজায় সংবাদকর্ম অব্যাহত রেখেছেন, তিনি পেয়েছেন ওয়াশিংটন থেকে ন্যাশনাল প্রেস ক্লাবের ‘প্রেস ফ্রিডম‘ সম্মাননা। কয়েকদিন আগে আমেরিকায় সাহিত্য-সাংবাদিকতার সবচেয়ে সম্মানজনক পুরস্কার ‘পুলিৎজার‘ পেয়েছেন গাজার খ্যাতিমান কবি নিউইয়র্কারের লেখক মোসাব আবু তোহা; যিনি জীবন নিয়ে মিসর সীমান্ত থেকে কোনোমতে বের হতে পেরেছেন এবং প্রতিনিয়ত ইংরেজি ভাষায় গাজার পরিস্থিতি বিশ্বের সামনে তুলে ধরছেন। ইসরাইলি কারাগারে বসে বই লিখেছেন বাসিম খন্দকজি ‘কিনা বিলাওনিস সামা‘; সেই বইয়ের জন্য কারাগারে থাকতেই তিনি আরবের বুকার-খ্যাত আরব সাহিত্যের শ্রেষ্ঠ পুরস্কার ‘ইন্টারন্যাশনাল প্রাইজ ফর অ্যারাবিক ফিকশন‘ জিতেছেন। এদিকে গাজা যুদ্ধ যত বেড়েছে তত ইসরায়েলি সেটলারদের হামলাও বেড়েছে পশ্চিম তীরের মাসাফের ইয়াত্তায়। ফিলিস্তিনি দুই যুবক পুরোটা ডকুমেন্টেড করেছেন। তারা সঙ্গে নিয়েছেন তাদের সমমনা দুই ইসরাইলি বন্ধুকে। সেই ডকুমেন্টারি ‘নো আদার ল্যান্ড‘ এবার ফিলিস্তিনের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো অস্কার এনে দিয়েছে। যেদিন তাদের হাতে অ্যাওয়ার্ড তুলে দেওয়া হয়, সেদিন চার পরিচালক একজন হামদান অনুপস্থিত, কারণ ইসরাইলি সেটলাররা শুনেই তার ওপর হামলা করে তাকে রক্তাক্ত করেছে এবং সৈন্যরা তাকে ধরে নিয়ে জেলে পুড়েছে। সম্প্রতি আরেকটা ডকুমেন্টরি রিলিজ হয়েছে শহিদ সাংবাদিক শিরিন আবু আকলেহর ওপর ‘হু কিল্ড শিরিন‘; যার পর এই প্রথমবারের মতো সাবেক প্রেসিডেন্ট বাইডেন স্বীকার করেছেন যে, শিরিনকে ইসরাইলি সৈন্যরাই হত্যা করেছে। এরই সঙ্গে এটাও জানা দরকার যে, গাজা যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর ইউরোপে ফিলিস্তিনিদের অ্যাক্টিভিটি বৃদ্ধি পেয়েছে, বেশ কয়েকটি ইউরোপীয় রাষ্ট্র ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিয়েছে, আরও কয়েকটি রাষ্ট্র দেবে। কানাডা ইতোমধ্যে ঘোষণা করেছে স্বীকৃতির প্রক্রিয়াতে আছে তারা। একই সময় প্রথমবারের মতো জাতিসংঘে পর্যবেক্ষক রাষ্ট্রের সঙ্গে ফিলিস্তিন এখন জেনারেল অ্যাসেমব্লিতে যোগ দেওয়ার স্ট্যাটাস পেয়েছে। প্রথমবারের মতো ইসরাইলের রাষ্ট্রপ্রধান ও মন্ত্রীদের আইসিসিতে ওয়ার ক্রিমিনাল হিসেবে রায় দেওয়া হয়েছে এবং অ্যারেস্ট ওয়ারেন্ট জারি করা হয়েছে, একই সঙ্গে জাতিসংঘের আদালত বলেছে ‘এটা গণহত্যা‘। গাজা যুদ্ধ শুরুর পর গত দুই বছরে পরাধীন ফিলিস্তিনিরা যা পেরেছে, আমরা ৫০ বছর আগে স্বাধীন হয়েও তার সিংহভাগ হাসিল করতে পারি নাই।