শীতে কাঁপছে দেশ

৫ জানুয়ারি, ২০২৩ | ৭:০৫ পূর্বাহ্ণ
অনলাইন নিউজ ডেস্ক , ইউ এস বাংলা ২৪

পৌষের শেষে এসে শীতে কাঁপছে সারাদেশ। উত্তরের জনপদে বইছে কনকনে বাতাস। রাতে বৃষ্টির মতো ঝরছে শিশির। শ্রীমঙ্গলে বয়ে যাচ্ছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। সঙ্গে রয়েছে ঘন কুয়াশাও। তীব্র শীত ও ঘন কুয়াশায় ব্যাহত হচ্ছে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। বুধবার সকাল থেকে সূর্যের দেখা মেলেনি দেশের অধিকাংশ স্থানে। ঘন কুয়াশার কারণে জেলার অধিকাংশ সড়কে যানবাহনগুলো হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাচল করছে। কুয়াশায় ব্যাহত হচ্ছে বিমান চলাচল। ফলে দুর্ভোগের পড়ছেন যাত্রীরা। ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিমানবন্দরে অপেক্ষা করে যেতে হচ্ছে নির্দিষ্ট গন্তব্যে। প্রচ- শীতে বেশি কষ্ট পাচ্ছে বৃদ্ধ ও শিশুরা। শীতে হাসপাতালগুলোতে ঠান্ডাজনিত রোগীর সংখ্যা অস্বাভাবিক বাড়ছে। ফসলের বীজতলা ঠিকমতো পরিচর্যা করা যাচ্ছে না। কুয়াশায় চারা ও পান বরজ নষ্ট হওয়ায় কৃষকরা বিপাকে পড়েছেন। ঢাকা শহর এতদিন ছিল অনেকটাই ব্যতিক্রম। ক’দিন ধরে নগরীতে শীত অনুভূত হলেও এর প্রভাব ছিল মূলত রাতে। দিন থেকেছে রৌদ্রকরোজ্জ্বল। ফলে শীতটা সেভাবে টের পাওয়া যায়নি। কিন্তু মঙ্গলবার রাত থেকে রাজধানীতেও কনকনে শীত অনুভূত হচ্ছে। একদিনের ব্যবধানে ঢাকায় তাপমাত্রা ৬ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমে যাওয়ায় এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। কুয়াশা ও মেঘের কারণে রোদের দেখা মিলছে না। এতে কমে গেছে দিন ও রাতের তাপমাত্রার ব্যবধান, একই সঙ্গে উত্তরে ঠান্ডা হাওয়ায় জেঁকে বসেছে শীত। ঢাকার তাপমাত্রা ১৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলেও ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মতো শীত অনুভূত হচ্ছে। এ পরিস্থিতি আগামী ৪ থেকে ৫ দিন অব্যাহত থাকতে পারে বলেও জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা। তবে শীত বাড়লেও দেশে কোনো শৈত্যপ্রবাহ নেই বলে জানিয়েছেন তারা। তারা বলেছেন, এক দিনে তাপমাত্রা ৪ থেকে ৬ ডিগ্রি কমে যাওয়ায় মানুষের অনভ্যস্ততার কারণে শীত বেশি মনে হচ্ছে। বুধবার সকাল থেকে কুয়াশাচ্ছন্ন ছিল গোটা রাজধানী। দুপুর পর্যন্ত সূর্যের দেখা মেলেনি। বেলা গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে নগরীর পথঘাটে মানুষের চলাচলও কমে আসে। কাজ না থাকলে মানুষ খুব একটা ঘরের বাইরে বের হচ্ছেন না। শীতের প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় রাজধানীর বিভিন্ন বিপণি বিতান ও ফুটপাতে শীতবস্ত্রের দোকানগুলোতে ভিড় জমাচ্ছেন ক্রেতারা। আর চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন বিক্রেতারা। সূর্যের দেখা মেলেনি দুপুরেও ॥ বুধবার সূর্যোদয় হয়েছে সকাল ৬টা ৪২ মিনিটে। কিন্তু সূর্যের দেখা মেলেনি বেলা দেড়টাতেও। ঘন কুয়াশায় আচ্ছন্ন ছিল চার পাশ। মঙ্গলবার ভোরে রাজধানীতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৪ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সেটি বুধবার আরও খানিকটা কমে দাঁড়িয়েছে ১৪ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দুপুরে পারদে ওঠে ১৫ দশমিক ৪ ডিগ্রি। আগের দিন একই সময়ে যা ছিল ১৮ দশমিক ৬ ডিগ্রি। সোমবার এই তাপ ছিল ২৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তবে তাপমাত্রার অনুভূতি হচ্ছে আরও কম। ১২ ডিগ্রির কাছাকাছি। কুয়াশার চাদরে ঢাকা চার পাশে বাতাসের ঝাঁপটা বাড়িয়ে দিয়েছে শীতের অনুভূতি। শীতের অনুভূতির আরও একটি কারণ আছে। ঢাকায় সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তামপাত্রার মধ্যে ব্যবধান বেশ কম। সর্বোচ্চ তামপাত্রা রেকর্ড হয়েছে ১৯ দশমিক ৬ ডিগ্রি। ফলে দেশের অন্যান্য অঞ্চলের মতো ঢাকায়ও শীত তীব্র অনুভূত হয়েছে। বুধবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত মেঘ-কুয়াশায় ঢেকে ছিল ঢাকার আকাশ, সঙ্গে ছিল উত্তরের হিমেল হাওয়া। আবহাওয়া অধিদপ্তরের কর্মকর্তা তরিফুল কবির নেওয়াজ বলেন, ‘এক দিনে তাপমাত্রা ৪ থেকে ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমে যাওয়ায় মানুষের অনভ্যস্ততার কারণে শীত বেশি মনে হচ্ছে। এই অবস্থা আরও তিন থেকে চার দিন থাকবে।’ শীত বাড়লেও শৈত্যপ্রবাহ নেই ॥ সারাদেশে শীত বাড়লেও দেশে কোনো শৈত্য প্রবাহ নেই। আবহাওয়াবিদ হাফিজুর রহমান বলেন, ‘এখন শৈত্যপ্রবাহ নেই। রাতের তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নামলে তাকে বলে শৈত্যপ্রবাহ। শৈত্যপ্রবাহ নেই, তার পরও কিন্তু তীব্র শীত অনুভূত হচ্ছে। এর কারণটা হলো দিন ও রাতের তাপমাত্রার পার্থক্যটা কমে এসেছে।’ এ আবহাওয়াবিদ বলেন, ‘আপাতত শৈত্যপ্রবাহের আশঙ্কা নেই।’ হঠাৎ করে তাপমাত্রা এতটা কমে যাওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করে আবহাওয়াবিদ ওমর ফারুক বলেন, ‘ভারতের দিল্লি, উত্তর প্রদেশ ও বিহার অঞ্চলে একটা কুয়াশা অঞ্চল ছিল। সেটি ধীরে ধীরে বাংলাদেশে প্রবেশ করছে। এ জন্য শৈত্যপ্রবাহ না থাকলেও বেশি শীত অনুভূত হচ্ছে।’ আগামী ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত উল্লেখযোগ্য মাত্রার কোনো শৈত্যপ্রবাহের আলামত নেই বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। তবে বিচ্ছিন্নভাবে দেশের কোথাও কোথাও তাপমাত্রা কমতে পারে। জানুয়ারি মাসে এক থেকে দুটি মাঝারি ও তীব্র শৈত্যপ্রবাহের পূর্বাভাস থাকলেও সেটি অনুভূত হবে আরও পরে। ঢাকা অবশ্য দেশের সবচেয়ে শীতল জায়গা নয়। আগের দিনের মতো এই ‘মুকুট’ আজও উঠেছে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের মাথায়। আগের দিনের চেয়ে শূন্য দশমিক ৫ ডিগ্রি বাড়লেও ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা সেখানে কাঁপুনি ধরাচ্ছে গায়ে। সেখানে অবশ্য সর্বোচ্চ আর সর্বনিম্ন তাপমাত্রার মধ্যে ব্যবধান বিস্তর। চা বাগান ঘেরা জনপদে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে ২৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যে কারণে তীব্র শীত ॥ তাপমাত্রা খুব বেশি নিচে নামেনি। কিন্তু সারাদেশেই এখন তীব্র শীত অনুভূতি। আবহাওয়াবিদ হাফিজুর রহমান বলেন, এর কারণটা হলো দিন ও রাতের তাপমাত্রার পার্থক্যটা কমে এসেছে।’ তিনি বলেন, ‘আগে কোনো স্থানে হয়তো সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১০ ডিগ্রি, আর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সেখানে পার্থক্য ছিল ১৫ ডিগ্রি, এখন সেখানে পার্থক্য কমে ১০ ডিগ্রির নিচে নেমে গেছে। ঢাকায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৪ দশমিক ১ ডিগ্রি, আর সর্বোচ্চ ১৯ দশমিক ৬ ডিগ্রি। পার্থক্য ৫ ডিগ্রির মতো, কিন্তু আগে সেখানে ১৫ ডিগ্রির মতো পার্থক্য ছিল। এ জন্য বেশি শীত অনুভূত হচ্ছে।’ ঘন কুয়াশায় ফ্লাইট ওঠানামায় বিপত্তি ॥ ঘন কুয়াশার কারণে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্রায় প্রতিদিনই বিমান ওঠানামায় বিঘিœত হচ্ছে। মধ্যরাত থেকে দিনের অনেকটা সময় দেশের সবচেয়ে বড় বিমানবন্দরটিতে নামতে পারছে না বিমান। উড্ডয়নের ক্ষেত্রেও বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে ঘন কুয়াশা। এর ফলে দেরিতে ফ্লাইট ছাড়ায় যাত্রীদের দুর্ভোগ যেমন বাড়ছে, তেমনি সময়মতো গন্তব্যে পৌঁছাতেও বিলম্ব হচ্ছে। ক’দিন ধরেই এমন অবস্থা বিরাজ করছে শাহজালাল বিমানবন্দরে। ঢাকা ছাড়াও দেশের অন্যান্য বিমানবন্দরেও একই অবস্থা বিরাজ করছে। কুয়াশা যতদিন থাকবে ততদিন পর্যন্ত এই সমস্যার সমাধান হবে না বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা। ঘন কুয়াশার কারণে বুধবার ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে একটি আন্তর্জাতিক ফ্লাইট অবতরণ করতে পারেনি। বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন কামরুল ইসলাম বলেন, রানওয়ের ভিজিবিলিটি কম হওয়ায় রিয়াদ থেকে সৌদিয়ার একটি ফ্লাইট হায়দরাবাদ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ঘুরিয়ে দেওয়া হয়েছে। কুয়াশার কারণে বুধবার টানা চতুর্থ দিনের মতো হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ফ্লাইট চলাচল ব্যাহত হয়েছে। কামরুল ইসলাম বলেন, একটি আন্তর্জাতিক ফ্লাইট ডাইভার্ট হওয়ার পাশাপাশি আরও ৭টি ফ্লাইটে বিলম্ব হয়েছে। জাজিরা এয়ারওয়েজ, ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স, এয়ার এরাবিয়া, ফ্লাই দুবাই, কাতার এয়ারওয়েজ, ওমান এয়ার এবং ইন্ডিগো এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট ঘন কুয়াশার কারণে কয়েক ঘণ্টা বিলম্বিত হয়েছে। এ ছাড়া ঢাকা বিমানবন্দর থেকে বিভিন্ন অভ্যন্তরীণ গন্তব্যের ফ্লাইটও কয়েক ঘণ্টা বিলম্বিত হয়েছে। শাহজালাল বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন কামরুল ইসলাম বলেন, ‘কয়েকদিন ধরেই এমন ঘটছে। সকালের দিকে ঘন কুয়াশার কারণে ভিজিবিলিটি কম থাকায় ফ্লাইট ওঠানামা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। ফলে সকাল থেকে কয়েক ঘণ্টা করে ফ্লাইট উড্ডয়ন ও অবতরণ বন্ধ রাখা হচ্ছে। সমস্যাটা বেশি হচ্ছে ভোরবেলায়। বিশেষ করে রাত সাড়ে তিনটা থেকে পাঁচটার মধ্যে যাদের ফ্লাইট তারা বেশি এই সমস্যায় পড়ছেন। কবিরুল ইসলাম নামে একজন সম্প্রতি পরিবার নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে গেছেন। তিনি জানান, রাত সাড়ে তিনটায় তার ফ্লাইট ছিল। কিন্তু টানা ৫ ঘণ্টা তাকে বিমানবন্দরে ঠান্ডার মধ্যে স্ত্রী ও সন্তানকে নিয়ে বসে থাকতে হয়। কিছুই করার ছিল না বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের। দীর্ঘ অপেক্ষার পর সকালে ফ্লাইট ছেড়ে যায়। শীতে কাঁপছে সারাদেশ ॥ জেলা সংবাদদাতাদের পাঠানো তথ্যে দেখা যায়, শুধু ঢাকা শহরই নয়, শীতে কাঁপছে সারাদেশ। বাগেরহাট ॥ প্রচ- শীতে বেশি কষ্ট পাচ্ছে বৃদ্ধ ও শিশুরা। শীতে হাসপাতালগুলোতে ঠান্ডাজনিত রোগীর সংখ্যা অস্বাভাবিক বাড়ছে। হাড় কাঁপানো শীতে রীতিমতো জবুথবু অবস্থা। গায়ে গরম কাপড় ও টুপি পরে মানুষ শীতের তীব্রতা থেকে রক্ষা পাওয়ার চেষ্টা করছেন। দরিদ্র মানুষ কাগজ-খড়কুটো পুড়িয়ে একটু উষ্ণতা পাওয়ার চেষ্টা করছেন। গত ৩ দিনে বাগেরহাট জেলার প্রত্যন্ত এলাকা থেকে আসা শীতাক্রান্ত রোগীর সংখ্যা জেলা ২৫০ শয্যা হাসপাতালে বাড়ছে। এ হাসপাতালের বহির্বিভাগে এখন প্রতিদিন প্রায় ৯শ’ থেকে হাজার রোগীর চিকিৎসা নিচ্ছেন। এর সঙ্গে রয়েছে ভর্তি রোগীর চাপ। হাসপাতালে ধারণক্ষমতার তিনগুণের বেশি রোগী ভর্তি রয়েছে। অতিরিক্ত রোগীর সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসকরা। সিরাজগঞ্জ ॥ যমুনা নদীর তীরবর্তী জেলা সিরাজগঞ্জে তীব্র শীত, হিমেল বাতাস ও ঘন কুয়াশায় ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া ও শ্বাসকষ্টজনিত রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলছে। এক সপ্তাহে জেলা সদর হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে ৪২০ জন ডায়রিয়া ও ৬৪ জন নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত রোগী ভর্তি হয়েছেন। প্রতিদিনই ভর্তি হচ্ছেন শিশুসহ নানা বয়সী রোগী। আক্রান্ত ব্যক্তিদের বেশিরভাগই শিশু ও বৃদ্ধ। অতিরিক্ত রোগীর চাপ হওয়ায় হিমশিম খেতে হচ্ছে চিকিৎসকদের। এতে শয্যা খালি না থাকায় অনেকে মেঝেতে চিকিৎসা নিচ্ছেন। অভিভাবকরা সচেতন হলে এই রোগ থেকে শিশুদের সহজে রক্ষা করা সম্ভব বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন। রাজবাড়ী ॥ ঘন কুয়াশায় ফেরি চলাচল সাময়িক সময়ের জন্য বন্ধ। সাড়ে ৬ ঘণ্টার পর আবারও ফেরি চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে বলে জানান বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি) কর্তৃপক্ষ। চুয়াডাঙ্গা ॥ চুয়াডাঙ্গায় দু’দিন সূর্যের দেখা মেলেনি। সকাল থেকে ঘন কুয়াশায় অন্ধকারাচ্ছন্ন চারদিক। সড়কে যানবাহনগুলো হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাচল করছে। হাসপাতালে বাড়ছে ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত রোগীর চাপ। হবিগঞ্জ ॥ হবিগঞ্জের পাহাড়, গ্রাম ও বস্তিতে শীতের তীব্রতা বেড়েই চলেছে। শীতবস্ত্রের অভাবে ছিন্নমূলদের মাঝে দেখা দিয়েছে দুর্ভোগ। সেই সঙ্গে শীতের তীব্রতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে গরম কাপড় বিক্রির ধুম পড়েছে। জেলা শহরের পুরনো বাসস্ট্যান্ড এলাকায় গড়ে ওঠা পুরনো কাপড়ের মার্কেটে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের লোকজন শীতবস্ত্র কিনছেন। বিত্তবানরা যাচ্ছেন বিপণি বিতান ও মার্কেটগুলোতে। এ ছাড়া উপজেলা শহরের বিভিন্ন হাট-বাজারে গরম কাপড় বিক্রির ধুম লেগেছে। শ্রীমঙ্গল ॥ কুয়াশায় ঢেকে আছে চা বাগানসহ চারপাশ। দেখা মিলছে না সূর্যের। দুই দিন ধরে মৌলভীবাজার জেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। বুধবার চা বাগান অধ্যুষিত মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গলে দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এদিকে মঙ্গলবারও সেখানকার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৮ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছিলো। ফলে একদিনের ব্যবধানে তাপমাত্রার তেমন তারতম্য হয়নি। সেই সঙ্গে জেলার ওপর দিয়ে বইছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। কনকনে ঠান্ডা বাতাস আর ঘন কুয়াশায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। রাজশাহী ॥ রাজশাহীতে একদিনের ব্যবধানে তাপমাত্রা ২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমে শীতের তীব্রতা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। তীব্র শীতে চরম অসহনীয় হয়ে উঠেছে রাজশাহীর মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। টানা দুদিন ধরে সূর্যের দেখা মিলছে না রাজশাহী অঞ্চলে। রাজশাহী আবহাওয়া অফিস জানায়, দিনের সর্বনি¤œ তাপমাত্রার পাশাপাশি কমছে সর্বোচ্চ তাপমাত্রাও। সর্বনি¤œ ও সর্বোচ্চ তাপমাত্রার ব্যবধান কমায় বেড়েছে শীতের তীব্রতা। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে দুর্ভাগে পড়েছেন ছিন্নমূল মানুষ। পথে-প্রান্তরে তারা সীমাহীন কষ্টের মধ্যে দিয়ে দিনাতিপাত করছেন। এরই মধ্যে রাজশাহীজুড়ে শীতার্ত মানুষের জন্য শীতবস্ত্র নিয়ে এগিয়ে আসছেন অনেকেই। তবে তা চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল। নওগাঁ ॥ গত দু’দিন ধরে নওগাঁর আকাশে সূর্যের দেখা মেলেনি। সারাদিন আকাশ থাকছে কুয়াশার চাদরে ঢাকা। সেইসঙ্গে চলছে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ। তীব্র শীতে কাহিল হয়ে পড়েছে জনজীবন। ঘরেও ঠান্ডা, বাইরেও ঠান্ডা। শীতের তীব্রতায় যেন ঠক ঠক করে কাঁপছে। শীতের তীব্রতায় জনজীবন যেন থেমে গেছে। খড়কুটো জ্বালিয়েও মানুষজন শীত নিবারণের ব্যর্থ চেষ্টা করছে। কৃষক মাঠে বোরো আবাদে নামতে পারছে না। দিনমজুররাও ঘর থেকে বাইরে যেতে পারছেন না। কুয়াশায় ঢাকা রাস্তাঘাটে যানবাহন চলছে হেড লাইট জ্বালিয়ে। মুন্সীগঞ্জ ॥ মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগরে পৌষের কনকনে শীতের তীব্রতা বাড়ায় গরম কাপড় বিকিকিনির হিড়িক পড়েছে। স্থানীয় হাট-বাজারের মার্কেট ও বিভিন্ন ফুটপাতের দোকানগুলোতে শীতের গরম কাপড় কিনতে ভিড় জামাচ্ছেন নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ। রংপুর ॥ গত কয়েকদিন থেকে রংপুর অঞ্চলে শীতের তীব্রতা বেড়েছে। প্রচ- শীতে কাহিল হয়ে পড়েছে উত্তর জনপদের মানুষ। শিশু ও বৃদ্ধরা শীতের কামড়ে সবচেয়ে বেশি কষ্ট পাচ্ছে। শীতের কারণে নিয়মিত কাজে যেতে পারছে না শ্রমজীবী মানুষ। প্রচ- ঠান্ডায় বাড়ছে শীতজনিত রোগে আক্রান্তের সংখ্যা। বিশেষ করে শিশুরা নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া, শ্বাসকষ্ট, জ্বর, সর্দিসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে। শিশুদের পাশাপাশি আক্রান্ত হচ্ছেন প্রবীণরা। শীত নিবারণে আগুন পোহাতে গিয়ে দগ্ধ হয়েছেন অনেকে। শীতজনিত রোগী ও অগ্নিদগ্ধ রোগীর চাপ বৃদ্ধি পাওয়ায় হিমশিম খেতে হচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে। গত এক সপ্তাহে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ (রমেক) হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ড ও বার্ন ইউনিটে ভর্তি হয়েছে তিন শতাধিকের বেশি রোগী। ভর্তি হওয়া এসব রোগীর মধ্যে সাতদিনে ১৫ শিশু ও নবজাতকের মৃত্যু হয়েছে। যাদের সবার বয়স ১ মাস থেকে চার বছরের মধ্যে। এ ছাড়া শীতে আগুন পোহাতে গিয়ে অগ্নিদগ্ধ দুই নারী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। বুধবার দুপুরে রমেক হাসপাতালের তৃতীয় তলায় শিশু ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা গেছে, প্রতিটি শয্যায় একাধিক শিশু চিকিৎসা নিচ্ছে। কোনো শয্যায় দুজন, কোথাও তিনজন। শয্যা না পেয়ে অনেক শিশুকে মেঝেতে বিছানা পেতে রাখা হয়েছে। নারায়ণগঞ্জ ॥ পাঁচটি উপজেলা নারায়ণগঞ্জ সদর, বন্দর, সোনারগাঁ, আড়াইহাজার ও রূপগঞ্জে শীতের প্রকোপ দেখা দিয়েছে। বুধবার সকাল থেকে ঘন কুয়াশার কারণে সূর্যের দেখা মেলেনি। শীত উপেক্ষা করেই জীবিকার তাগিদে জেলার শত শত গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিসহ অফিস-আদালতের চাকরিজীবি লোকজন তাদের স্ব-স্ব প্রতিষ্ঠানে গেছেন। শীতে থেমে থাকেননি স্কুল-কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্র্থীরাও। হতদরিদ্র ও নি¤œ আয়ের লোকজন শীতবস্ত্রের অভাবে এবং শীতের দাপটে কাহিল হয়ে পড়েছেন। শীতে জেলার বস্তি, ফুটপাত ও রেলস্টেশনের খোলা জায়গায় হতদরিদ্র ছিন্নমূল মানুষের কষ্টের সীমা নেই। পাড়া-মহল্লা ও রাস্তাঘাটের লোকজন আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন।