চুক্তির তিন বছর পর শুরু হচ্ছে বহুমাত্রিক জরিপ

৪ জানুয়ারি, ২০২৩ | ১০:১০ পূর্বাহ্ণ
অনলাইন নিউজ ডেস্ক , ইউ এস বাংলা ২৪

বঙ্গোপসাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে বহুমাত্রিক জরিপ (মাল্টিক্লায়েন্ট সার্ভে) শুরু করতে যাচ্ছে আন্তর্জাতিক কোম্পানি টিজিএস-স্লামবার্জার। মঙ্গলবার সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে টিজিএস। বঙ্গোপসাগরের ২৬ ব্লকে মাল্টিক্লায়েন্ট সার্ভের জন্য ২০২০ সালের মার্চে পেট্রোবাংলার সঙ্গে টিজিএস-স্লামবার্জারের চুক্তি হয়। এর প্রায় তিন বছর পর এই ঘোষণা এলো। ঘাটতি পূরণে চড়া দামে গ্যাস আমদানি করছে বাংলাদেশ। বিপরীতে সাগরের তেল-গ্যাসের অনুসন্ধানই শুরু করতে পারছে না। কারণ মাল্টিক্লায়েন্ট সার্ভের তথ্য না থাকায় সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে বাংলাদেশের আহ্বানে সাড়া দিচ্ছে না বহুজাতিক কোম্পানিগুলো। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ভূতত্ত্ববিদ বদরূল ইমাম বলেন, ভারত ও মিয়ানমার তাদের সমুদ্রসীমায় বিপুল গ্যাস সম্পদের খোঁজ পেয়েছে। মিয়ানমার বাংলাদেশের সীমান্ত থেকে গ্যাস তুলছে এবং তা রপ্তানি করছে চীনে। কিন্তু বাংলাদেশ এখনও জরিপ-ই শুরু করতে পারেনি। টিজিএসের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, শুরুতে প্রায় ১১ হাজার লাইন কিলোমিটার আধুনিক টুডি সার্ভে চালানো হবে। পুরো প্রকল্পে ৩২ হাজার লাইন কিলোমিটার মাল্টিক্লায়েন্ট সিসমিক সার্ভে চালানো হবে। টিজিএসের সিইও ক্রিস্টিয়ান জোহানসেন মন্তব্য করেছেন, 'আমরা এই মাল্টিফেজ সিসমিক কর্মসূচিটি শুরু করতে পেরে আনন্দিত, যা বঙ্গোসাগরের তলদেশের সম্পদের বিষয়ে বোঝার জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় কার্যক্রম। বিশ্বে এটি বিস্তৃত অনাবিস্কৃত সীমান্ত অববাহিকাগুলোর মধ্যে একটি হিসাবে বিবেচিত হয়। ২০২৪ সালের প্রথমদিকে জরিপের ফল পাওয়া যেতে পারে।' আন্তর্জাতিক আদালতে ২০১২ সালে মিয়ানমার ও ২০১৪ সালে ভারতের সঙ্গে সমুদ্র সীমানা বিরোধ নিষ্পত্তির পর ১ লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গকিলোমিটারের বেশি সমুদ্র অঞ্চলের ওপর মালিকানা প্রতিষ্ঠিত হয় বাংলাদেশের। এর পর বঙ্গোপসাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে আন্তর্জাতিক দরপত্রে ভালো সাড়া না মেলায় সরকার পুরো সমুদ্রসীমায় একটি পূর্ণাঙ্গ বহুমাত্রিক জরিপ পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেয়। মাল্টিক্লায়েন্ট সার্ভে নাম দিয়ে ২০১৫ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করে পেট্রোবাংলা। দরপত্র মূল্যায়নে নরওয়ের কোম্পানি টিজিএস এবং ফ্রান্সের স্লামবার্জার কনসোর্টিয়াম যোগ্য বলে নির্বাচিত হয়। এর পর পেট্রোবাংলা প্রস্তাব চূড়ান্ত করে চুক্তিপত্র অনুমোদনের জন্য মন্ত্রিসভা কমিটির সায় নিতে জ্বালানি বিভাগে ফাইল পাঠায়। কিন্তু সেই প্রক্রিয়া অজ্ঞাত কারণে বাতিল করে আবার দরপত্র আহ্বানের জন্য পেট্রোবাংলাকে নির্দেশনা দেওয়া হয়। অভিযোগ উঠেছে, একটি স্বার্থান্বেষী মহলের পছন্দের কোম্পানি কাজ না পাওয়ায় দর প্রক্রিয়া ঝুলে যায়। পরে ২০১৫ সালের ১২ ডিসেম্বর পুনঃদরপত্র আহ্বান ও ২০১৬ সালের ৩১ জানুয়ারি দরপত্র খোলা হয়। এবারও পাঁচটি প্রস্তাব জমা পড়ে। এবারও দরপত্র প্রক্রিয়ায় টিজিএস-স্লামবার্জার কনসোর্টিয়াম প্রথম হয়। এর পর চুক্তির প্রস্তাবনা জ্বালানি বিভাগের মাধ্যমে ২০১৬ সালের ৩ আগস্ট অনুষ্ঠিত অর্থনৈতিক বিষয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে উত্থাপন করা হয়। সেখানে একজন প্রভাবশালী মন্ত্রী দর প্রক্রিয়া সঠিক হয়নি বলে আপত্তি জানান। পরে দরপত্র মূল্যায়নের যথার্থতা যাচাইয়ের জন্য আইনমন্ত্রী আনিসুল হককে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটি ২০১৭ সালে এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন মন্ত্রিসভা কমিটির কাছে পাঠায়। এর পরও দীর্ঘদিন এই প্রস্তাব আটকে রাখা হয়। ওই প্রভাবশালী মহলের পছন্দের কোম্পানি ছিল এসপিইসি পার্টনার্স, যাদের মাল্টিক্লায়েন্ট সার্ভে-সংক্রান্ত যোগ্যতা এবং সক্ষমতা খুবই কম। কোম্পানিটি দর প্রক্রিয়াতেই বাতিল হয়েছিল। সরকারের ওপর মহলের হস্তক্ষেপে ২০২০ সালের মার্চে টিজিএস-স্লামবার্জার কনসোর্টিয়ামের সঙ্গে চূড়ান্ত চুক্তি করে পেট্রোবাংলা। বঙ্গোপসাগরের অগভীর ও গভীর অংশকে মোট ২৬টি ব্লকে ভাগ করা হয়। এর মধ্যে অগভীর অংশে ব্লক ১১টি। গভীর সমুদ্রে ব্লক ১৫টি। বর্তমানে শুধু অগভীর সমুদ্রের ৪ ও ৯ নম্বর ব্লকে কাজ করছে ভারতের তেল-গ্যাস কোম্পানি ওএনজিসি।