ভারত কি নিজের পায়ে কুড়াল মারল?

১০ মে, ২০২৫ | ১১:১২ অপরাহ্ণ
ডেস্ক নিউজ , ডোনেট বাংলাদেশ

চলমান উত্তেজনা প্রশমিত করে ভারত ও পাকিস্তান হঠাৎই একটি পূর্ণাঙ্গ ও তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে। আর এ ঘোষণাটি এসেছে স্বয়ং মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছ থেকে। শনিবার নিজের ট্রুথ সোশ্যালে দেওয়া এক ঘোষণায় ট্রাম্প বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় রাতভর দীর্ঘ আলোচনার পর ভারত ও পাকিস্তান একটি পূর্ণাঙ্গ ও তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে। সাধারণ বুদ্ধিমত্তা ও দুরদৃষ্টির জন্য দুই দেশকেই শুভেচ্ছা!’ অন্যদিকে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও নিশ্চিত করেছেন, দুই দেশ একটি নিরপেক্ষ স্থানে আলোচনায় বসতে রাজি হয়েছে। একই সঙ্গে তিনি গত ৪৮ ঘণ্টায় ভারত ও পাকিস্তানের শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে কথা বলেছেন বলেও উল্লেখ করেন। এদিকে চলমান উত্তেজনা প্রশমিত করে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে একটি পূর্ণাঙ্গ ও তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতির ঘোষণা আন্তর্জাতিক মহলে রীতিমত আলোড়ন তুলেছে। বিশ্লেষকরা বলেছেন, পাকিস্তানের সঙ্গে আলোচনায় রাজি হওয়াটা ভারতের জন্য গুরুত্বপূর্ণভাবে পিছু হটার ঘটনা, যা দেশটির জন্য চ্যালেঞ্জিং হয়ে উঠতে পারে। এ বিষয়ে এসওএএস ইউনিভার্সিটি অব লন্ডনের সাউথ এশিয়ান ইনস্টিটিউটের পরিচালক সুবীর সিনহা বলেছেন, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সম্পূর্ণ যুদ্ধবিরতির ঘোষণা অবশ্যই স্বাগতযোগ্য। বিশেষ করে সীমান্ত অঞ্চলের সাধারণ মানুষের জন্য, যারা গত কিছুদিন ধরে অবিরাম গোলাবর্ষণের শিকার হয়েছেন। তবে সামনে যেই বৃহত্তর দ্বিপাক্ষিক আলোচনা আসতে চলেছে, যে আলোচনার কথা মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন—তা ভারতের জন্য রাজনৈতিক ও কূটনৈতিকভাবে খুবই কঠিন একটা পথ হতে পারে। কারণ ভারত এতদিন ধরে এ ধরনের প্রক্রিয়া স্পষ্টভাবে প্রত্যাখ্যান করে আসছিল। সিনহার ভাষায়, ‘নরেন্দ্র মোদির সরকারের কথিত ‘শক্ত অবস্থান’ নীতির একটি বড় অংশ ছিল, পাকিস্তানের সঙ্গে আর কোনো বিস্তৃত ও দীর্ঘমেয়াদি আলোচনার সুযোগ নেই’। তিনি আরও বলেন, ‘এই নীতি কূটনীতি নয়, বরং সামরিক প্রস্তুতি এবং নতুন অস্ত্র কেনা ও তা প্রদর্শনের মাধ্যমে শক্তি প্রদর্শনের ওপর ভিত্তি করে তৈরি হয়েছিল’। দক্ষিণ এশিয়াভিত্তিক এই রাজনৈতিক বিশ্লেষকের মতে, এমন প্রেক্ষিতে সেই আলোচনায় ফিরে যাওয়াটা ভারতের পূর্বেকার অবস্থান থেকে একটি নির্দিষ্টভাবে পিছু হটার ইঙ্গিত দেয়। একই সঙ্গে ভারতের উগ্রপন্থি রাজনৈতিক মহলে—যারা দীর্ঘদিন ধরেই পাকিস্তানকে আক্রমণ করার দাবি জানিয়ে আসছিল—তাদের মধ্যে এটা অসন্তোষ ও রাজনৈতিক চাপ সৃষ্টি করতে পারে। সিনহা আরও বলেন, ভবিষ্যৎ আলোচনার ভিত্তি হিসেবে সিন্ধু পানি চুক্তি (Indus Waters Treaty) ও সিমলা চুক্তি (Simla Agreement)—যেগুলো ভারত সম্প্রতি বাতিল করার হুমকি দিয়েছিল—এগুলোকে আবার পুনর্বিবেচনা করে আলোচনার ভিত্তি হিসেবে পুনর্গঠন করতে হতে পারে। সেক্ষেত্রে এখন নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে, ভারত কি শেষমেশ নিজের পায়েই কুড়াল মারল? কেননা, গত কয়েক সপ্তাহের উত্তেজনায় ও সামরিক হস্তক্ষেপে এরইমধ্যে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির মুখোমুখি হয়েছে দেশটি। জিও নিউজের এক নিবন্ধে বলা হয়েছে, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার সাম্প্রতিক সংঘর্ষ দুই দেশকেই বিপুল অর্থনৈতিক ক্ষতির মুখে ফেলেছে। চার সপ্তাহের সামরিক ও অর্থনৈতিক বিশ্লেষণে দেখা গেছে, যুদ্ধের মোট ব্যয় ৫০০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে। এর মধ্যে— ভারতীয় বিমানবাহিনী (আইএএফ) প্রতিদিন প্রায় ১০০টি যুদ্ধাভিযান পরিচালনা করছে। যেখানে রাফাল, মিরাজ ২০০০, সু-৩০এমকেআই ও তেজসের মতো যুদ্ধবিমান ব্যবহার হয়েছে। প্রতিটি অভিযানের গড় ব্যয় প্রায় ৮০ হাজার ডলার, আর ৩০-৪০টি নির্ভুল নির্দেশিত অস্ত্র ব্যবহারের মাধ্যমে মাসব্যাপী ব্যয় দাঁড়িয়েছে প্রায় ৬ বিলিয়ন ডলার। ড্রোন অভিযানে প্রতিদিন প্রায় ৩০টি হারোপ, হারোন, সার্চারসহ নজরদারি ও ইলেকট্রনিক যুদ্ধ সরঞ্জাম ব্যবহারে ব্যয় হচ্ছে দৈনিক ১০০ মিলিয়ন ডলার। যা নিয়ে চার সপ্তাহে ব্যয় প্রায় ৩ বিলিয়ন ডলার। এছাড়া প্রতিদিন ১০টি ব্রাহ্মোস এবং ১০-২০টি প্রলয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র বা নির্ভুল এমএলআরএস ব্যবহারে খরচ হচ্ছে প্রায় ১৫০ মিলিয়ন ডলার, মাস শেষে মোট ব্যয় দাঁড়াচ্ছে ৪.৫ বিলিয়ন ডলার। উচ্চমাত্রার সামরিক প্রস্তুতি বজায় রাখতে প্রতিদিন সেনা মবিলাইজেশন, জ্বালানি, আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা (এস-৪০০, আকাশ, বারাক-৮), এবং নৌবাহিনীর তৎপরতার জন্য প্রায় ১১০ মিলিয়ন ডলার খরচ হচ্ছে, চার সপ্তাহে যা পৌঁছেছে ৫.৪ বিলিয়ন ডলারে। অন্যদিকে, পাকিস্তানের দাবি অনুযায়ী, ভারতের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার জবাবে দেশটির পাঞ্জাবের আদমপুরে ‘বুনইয়ানুম মারসুস’ নামে একটি বৃহত্তর সামরিক অভিযান চালিয়েছে পাকিস্তান। এ অভিযানে ভারতের এস-৪০০ আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংস হয়েছে বলে দাবি করেছে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী। এর আগে, ৮ ও ৯ মে’র মাঝরাতে ভারতের ৩৬টি স্থানে প্রায় ৩০০-৪০০টি ড্রোন ব্যবহার করে হামলা চালিয়েছে পাকিস্তান। শুক্রবার এমন অভিযোগ করেছে ভারত। তার আগে বৃহস্পতিবার (৭ মে) রাতে ‘অপারেশন সিদুঁর’ চালিয়ে পাকিস্তান এবং আজাদ কাশ্মীরের ৯টি লক্ষ্যবস্তুতে সামরিক হামলা চালায় ভারত। পাকিস্তান জানিয়েছে, এ সময় তারা ভারতের পাঁচটি যুদ্ধবিমান ধ্বংস করেছে, যার মধ্যে তিনটি অত্যাধুনিক রাফাল যুদ্ধবিমান রয়েছে। এছাড়া পাকিস্তানের আকাশসীমায় অনুপ্রেবশকারী ইসরাইলের তৈরি ২৫টিসহ ভারতের মোট ৭৭টি ড্রোন ভূপাতিত করার দাবি করেছে পাকিস্তান। সূত্র: আল-জাজিরা ও জিও নিউজ