কেন্দ্রে সমঝোতা, ছাড় দিতে নারাজ স্থানীয় আওয়ামী লীগ

২ জানুয়ারি, ২০২৩ | ৯:০২ পূর্বাহ্ণ
অনলাইন নিউজ ডেস্ক , ইউ এস বাংলা ২৪

বিএনপির পদত্যাগে সংসদের শূন্য ছয়টি আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও তাদের শরিক দলগুলোর পাশাপাশি প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টিসহ অন্যরা মিলে প্রার্থীসংখ্যা ৫০ ছাড়িয়ে যাচ্ছে। এর মধ্যে আওয়ামী লীগ তিনটি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে। ওয়ার্কার্স পার্টি ও জাসদকে একটি করে আসনে সমর্থন করবে। এদিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল ও আশুগঞ্জ) আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য গতকাল মনোনয়ন ফরম তুলেছেন বিএনপি থেকে সদ্য পদত্যাগী আবদুস সাত্তার ভুঁইয়া। তিনি গত ১১ ডিসেম্বর দলীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সংসদ থেকে পদত্যাগ করলেও বৃহস্পতিবার বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টার পদ থেকে পদত্যাগ করেন। এরপর উপনির্বাচনে প্রার্থী হতে তিনি মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেন। এ নিয়ে স্থানীয়ভাবে নানা গুঞ্জন শুরু হয়েছে। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের গতকাল রাতে প্রেস ব্রিফিংয়ে জানান, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে ১৪ দলীয় জোটের প্রার্থী থাকছে না। এ কারণে স্থানীয়রা মনে করছেন, আওয়ামী লীগের সঙ্গে সমঝোতার অংশ হিসেবেই আবদুস সাত্তার ভুঁইয়া আবারও এ আসনে প্রার্থী হতে যাচ্ছেন। এদিকে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টি সবক'টি আসনে প্রার্থী মনোনয়ন দিতে যাচ্ছে। জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বলেছেন, উপনির্বাচনে তাঁরা আওয়ামী লীগের সঙ্গে আসন ভাগাভাগিতে যাচ্ছেন না। তবে সংশ্নিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, বগুড়া-৬ ও ঠাকুরগাঁও-৩ আসনে ছাড় দেওয়া নিয়ে আওয়ামী লীগের সঙ্গে জাতীয় পার্টির এক ধরনের সমঝোতা হয়েছে। ঢাকায় শরিকদের সঙ্গে আসন বণ্টন নিয়ে সমঝোতা হলেও স্থানীয় আওয়ামী লীগের মনোভাব পুরোপুরি উল্টো। ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে আওয়ামী লীগের ১৭ নেতাকর্মী প্রার্থী হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। জাতীয় পার্টি রেজাউল ইসলাম ভুঁইয়াকে মনোনয়ন দিয়েছে। তবে তাঁর শ্বশুর জাতীয় পার্টির সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক জিয়াউল হক মৃধাও নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের ভোটে এ আসনে নৌকার প্রার্থী ছিল না। মহাজোটের প্রার্থী ছিলেন রেজাউল ইসলাম ভুঁইয়া। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ছিলেন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সহসভাপতি মঈনউদ্দিন মঈন ও জিয়াউল হক মৃধা। তবে মহাজোটের প্রার্থী রেজাউল ইসলাম ভুঁইয়া তাঁর শ্বশুর জিয়াউল হক মৃধাকে সমর্থন জানিয়ে নির্বাচন থেকে সরে যান। ওই ভোটে মূল লড়াই হয়েছিল বিএনপির প্রার্থী আবদুস সাত্তার ভুঁইয়া ও মঈনউদ্দিনের মধ্যে। তিনটিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী যাঁরা :বগুড়া-৬ আসনে রাগেবুল আহসান রিপু, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনে জিয়াউর রহমান এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনে আবদুল ওদুদ আওয়ামী লীগের প্রার্থী। ১৪ দলের দুই শরিক দল বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টিকে ঠাকুরগাঁও-৩ এবং জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলকে (জাসদ) বগুড়া-৪ আসনে ছাড় দিয়েছে ক্ষমতাসীন দলটি। গতকাল প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে আওয়ামী লীগের সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন। পরে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের বলেন, আগে থেকেই ঠাকুরগাঁও-৩ আসনে ওয়ার্কার্স পার্টি এবং বগুড়া-৪ আসনে জাসদ ছাড় চাচ্ছিল। এর মধ্যে ২০১৮ সালের নির্বাচনে ১৪ দলীয় জোটের প্রার্থী হিসেবে ওয়ার্কার্স পার্টির অধ্যাপক ইয়াসিন আলী ঠাকুরগাঁও-৩ এবং জাসদের একেএম রেজাউল করিম তানসেন বগুড়া-৪ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বিএনপির প্রার্থীর কাছে হেরে যান। দু'জনই ১৪ দলের হয়ে আগের দুটি নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে নির্বাচিত হয়েছিলেন। চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহি। এর আগে তিনি নানিবাড়ি রাজশাহী-১ (তানোর-গোদাগাড়ী) আসন থেকে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার কথা জানিয়েছিলেন। কিন্তু বিএনপির এমপি আমিনুল ইসলামের পদত্যাগের পর চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনে গণসংযোগ শুরু করেছিলেন। তাঁর সমর্থনে আওয়ামী লীগের স্থানীয় তরুণ কর্মীরা এগিয়ে এলেও দলের বড় একটি অংশ তা ভালোভাবে নেয়নি। এই অবস্থায় মাহির স্বামী রাকিব সরকার সাংবাদিকদের জানান, আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পেলেও নৌকার প্রার্থীর হয়ে গণসংযোগ চালিয়ে যাবেন মাহি। চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ (সদর) আসনে আওয়ামী লীগের পাঁচজন, জাতীয় পার্টির একজন এবং জাসদের (ইনু) একজন প্রার্থী নির্বাচনে অংশ নিতে চাচ্ছেন। জাসদ নেতা মনিরুজ্জামান মনির নাগরিক কমিটির ব্যানারে প্রার্থী হওয়ার চেষ্টা করছেন। ঠাকুরগাঁও-৩ আসনে আগ্রহী প্রার্থী ২০: ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি জানান, আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি ও ওয়ার্কার্স পার্টির প্রায় ২০ জন প্রার্থী নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। অনেকে নির্বাচনী এলাকায় প্রচারও শুরু করেছেন। সাবেক সংসদ সদস্য সেলিনা জাহান লিটা সাংবাদিকদের বলেন, ঠাকুরগাঁও-৩ আসন আওয়ামী লীগের ঘাঁটি। এখানে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক অবস্থানও অনেক ভালো। সেই কারণে এই আসনে ছাড় দিতে রাজি নন তাঁরা। জেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক রেজাউর রাজি স্বপন চৌধুরী বলেন, এই আসনে তাঁরা লড়বেন। ওয়ার্কার্স পার্টির সদস্য অধ্যক্ষ তাজুল ইসলাম বলেন, এই আসনে তাঁদের দলীয় অবস্থান অনেক ভালো। পরপর দু'বার আসনটিতে এমপি হয়েছেন ওয়ার্কার্স পার্টির প্রার্থী। বগুড়ার দুই আসনে মনোনয়ন ফরম নিয়েছেন ১৫ জন: বগুড়া ব্যুরো অফিস জানায়, বগুড়া-৪ ও বগুড়া-৬ আসনে ১৫ জন মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। এর মধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচিত-সমালোচিত আশরাফুল হোসেন আলম ওরফে হিরো আলম দুটি আসন থেকেই মনোনয়নপত্র তুলেছেন। বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) আসনে মনোনয়নপত্র সংগ্রহকারীরা হলেন- জাতীয় পার্টির রাজশাহী বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শাহীন মোস্তফা ফারুক, জাসদের (ইনু) জেলা কমিটির সভাপতি একেএম রেজাউল করিম তানসেন, নন্দীগ্রাম পৌরসভার মেয়র কামরুল হাসান সিদ্দিকী জুয়েল, নন্দীগ্রাম উপজেলার কুন্দারহাট ইনসান আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক গোলাম মোস্তফা, নন্দীগ্রাম থালতা মাঝগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট ইলিয়াস আলী ও কাহালু উপজেলার কাপড় ব্যবসায়ী আব্দুল জোব্বার প্রামাণিক। বগুড়া-৬ সদর আসন থেকে জেলা জাতীয় পার্টির সদস্য সচিব ও সাবেক এমপি নুরুল ইসলাম ওমর, আওয়ামী লীগ থেকে অব্যাহতি দেওয়া আব্দুল মান্নান আকন্দ ওরফে ফেম মান্নান, জাসদের (ইনু) কেন্দ্রীয় সদস্য অ্যাডভোকেট ইমদাদুল হক ইমদাদ, বগুড়া জেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ কবির আহম্মেদ মিঠু, গণফ্রন্টের জেলা নেতা আফজাল হোসেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা মাসুদার রহমান হেলাল ও ব্যবসায়ী রাকিব হাসান। আগামী ১ ফেব্রুয়ারি এই ছয়টি আসনে ভোট গ্রহণ করা হবে।