জবুথবু উত্তরাঞ্চল, শীতের তীব্রতা আরও কয়েক দিন

২ জানুয়ারি, ২০২৩ | ৮:৫৯ পূর্বাহ্ণ
অনলাইন নিউজ ডেস্ক , ইউ এস বাংলা ২৪

হিম হাওয়ার সঙ্গে বৃষ্টির ফোঁটার মতো ঝরছে কুয়াশা। হাড়কাঁপানো শীত গ্রাস করেছে রংপুর, গাইবান্ধা, রাজশাহী, পঞ্চগড়, কুড়িগ্রাম, নওগাঁসহ বেশ কয়েক জেলা। শীতজনিত নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধরা। দেশের উত্তর ও পশ্চিমাঞ্চলের বেশিরভাগ জেলায় আগামী দুই থেকে তিন দিন মৃদু থেকে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। গতকাল রোববার দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল তেঁতুলিয়ায় ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ঢাকায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। হিমালয়ের হিম বাতাসে কাহিল হয়ে পড়েছে রংপুরসহ উত্তরের জনজীবন। পৌষের মাঝামাঝি ঘন কুয়াশাসহ জেঁকে বসেছে শীত। বিশেষ করে সন্ধ্যার পর থেকে এই শীতের দাপট থাকছে সকাল পর্যন্ত। প্রতিদিনই নামছে তাপমাত্রা। রাতভর ঝরছে কুয়াশা-বৃষ্টি। দিনের বেলায়ই যান চলাচল করছে হেডলাইট জ্বালিয়ে। এতে শ্রমজীবীসহ নদীপাড়ের মানুষ পড়েছেন চরম দুর্ভোগে। গত দু'দিন ধরে রংপুর অঞ্চলে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১০ থেকে ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে ওঠানামা করছে। গতকাল রোববার সকালে রংপুরে ১১ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলেও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত নামছে উত্তরের সীমান্তবর্তী জেলা পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায়। এদিকে শীতের প্রকোপ থেকে বাঁচতে খড়কুটা জ্বালিয়ে উষ্ণতা পেতে গিয়ে দগ্ধ রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। গত শনিবার রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে পাঁচজন দগ্ধ রোগী ভর্তি হয়েছেন। এ ছাড়া গত কয়েক দিনে আগুনের উত্তাপ নিতে গিয়ে দগ্ধ হয়ে মারা গেছেন দুই নারী। হাসপাতালের বার্ন ইউনিট সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে ওই ইউনিটে ৫৮ জন আগুনে পোড়া রোগী রয়েছেন। এর মধ্যে শীত থেকে রক্ষা পেতে খড়কুটা জ্বালিয়ে উত্তাপ নেওয়ার সময় রংপুর ও আশপাশ এলাকার অগ্নিদগ্ধ হয়ে ৩২ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে দু'জন নারী মারা গেছেন। বার্ন ইউনিটের প্রধান ডা. এমএ হামিদ জানান, প্রতিবছরই আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণ করতে গিয়ে দগ্ধ হয়ে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে। এজন্য জনগণের সচেতনতা প্রয়োজন। অন্যদিকে, জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, এখন পর্যন্ত রংপুর জেলার জন্য ৫৫ হাজার পিস কম্বল বরাদ্দ হয়েছে। ইতোমধ্যে প্রতি ইউনিয়নে ৪৯০টি করে বিভিন্ন উপজেলায় ৩৮ হাজার ৭১০টি কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। সিটি করপোরেশন এলাকার জন্য রয়েছে ১৬ হাজার ২৯০টি কম্বল। ঘন কুয়াশা ও হালকা বাতাসে রাজশাহী অঞ্চলে শীতের তীব্রতা বেড়েছে। রোববার দিনের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। শীতের প্রকোপে ছিন্নমূল, পথশিশু, বৃদ্ধরা বেশি ভুগতে থাকেন। মানুষজন প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হননি। রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের উচ্চ পর্যবেক্ষক দেবল কুমার মৈত্রেয় জানান, শীতের এ তীব্রতা আগামী কয়েক দিন আরও বাড়বে। গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলায় রোববার দিনে কিছু সময় সূর্যের মুখ দেখা গেলেও বিকেলের পরপর আবার কুয়াশায় ঢেকে যাচ্ছে চারপাশ। প্রচণ্ড শীতে বেশি ভোগান্তি পড়েছেন বয়স্ক ও শিশুরা। উপজেলার ফজলুপুর ইউনিয়নের চর খাটিয়ামারী গ্রামের নৌকার মাঝি হাফিজুর রহমান বলেন, 'শীতের জন্যে সকালবেলা নদীতে নাও নিয়া বাইর হবার মোনায় না। নদীর মধ্যে খুব ঠাণ্ডা বাতাস। হাত-পা শিটকা নাগি আসে। কুয়াশার জন্যে আগের দিকি দেখা যায় না। এবার ক্যামা খুব শীত নাগবার নচো। পেটের দায়ে নাও নিয়া বাই হছি।'