ঈদে সংবাদপত্রে ৪ দিন ছুটি ও অনলাইনকর্মীদের আর্থিক প্রণোদনা দাবি

পবিত্র ঈদুল আজহায় সংবাদপত্রের কর্মীদের অন্তত ৪ দিন ছুটি আর অনলাইনের কর্মীদের আর্থিকভাবে প্রণোদনা দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমান। বৃহস্পতিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) শফিকুল কবির মিলনায়তনে ‘গণমাধ্যম সংস্কার: সমস্যা ও করণীয়’ শীর্ষক সেমিনারে তিনি এ দাবি জানান। জার্নালিস্ট কমিউনিটি অব বাংলাদেশ এই সেমিনারের আয়োজন করে। সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় মাহমুদুর রহমান বলেন, ঈদের ছুটি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। যেহেতু আমরা এখন ডিজিটাল যুগে বাস করছি, সেজন্য অনলাইনটা চালাতেই হয়। এটার কোনো বিকল্প নাই। এটার বিকল্প হচ্ছে অনলাইনে যারা কাজ করছে, তাদের আর্থিকভাবে পুষিয়ে দিতে হবে। এটা বন্ধ করা যেহেতু সম্ভব না। আমার হাতে তো ক্ষমতা নাই। কিন্তু আমার যদি ক্ষমতা থাকত- আগামী ঈদে ১০ দিন সরকারি ছুটি থাকবে, আমি অন্ততপক্ষে সাংবাদিকদের জন্য চার দিন করে দিতাম। আর অনলাইনের ক্ষেত্রে আর্থিকভাবে পুষিয়ে দেওয়া উচিত। চলমান সংস্কার নিয়ে তিনি বলেন, আপনারা এই সরকারের কাছে দাবি করছেন কী কী সংস্কার করতে হবে। আগামী রাজনৈতিক সরকার এসে যদি বলে এই সংস্কার আমরা মানি না। আমরা আমাদের মতো করে রাষ্ট্র চালাব। সেক্ষেত্রে আপনারা কী করবেন, সেটা নিয়ে মনে হয় একটু আগাম পরিকল্পনা করে রাখা দরকার। এ সময় সম্পাদক পরিষদ এবং নোয়াবের সমালোচনা করেন মাহমুদুর রহমান। তিনি বলেন, এই দুটি সংগঠন হলো এলিটদের সংগঠন। আর আমরা হলাম অচ্ছুত। আমাদেরকে ইসলামপন্থি পত্রিকা হিসেবে ধরা হয়। বাংলাদেশে তো ইসলামপন্থি হওয়া তো অপরাধ। অন্তত মিডিয়াতে তো বড় অপরাধ এবং সারা দেশের মিডিয়া ইসলামবিদ্বেষীদের দখলে। বিজ্ঞাপন যারা দেয়, সেই সংগঠনগুলো প্রধানত ইসলামবিদ্বেষী। তিনি বিজ্ঞাপনকে সরকার কর্তৃক বিরোধী মতের পত্রিকাকে দমন করার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার না করার আহ্বান জানান। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জার্নালিস্ট কমিউনিটি অব বাংলাদেশের সদস্য সচিব মিয়া হোসেন। তিনি গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের কাছে ১৬ দফা দাবি পেশ করেন। ১৬ দফা দাবির মধ্যে রয়েছে- ১. গণমাধ্যমকে রাষ্ট্রের ৪র্থ স্তম্ভ হিসেবে সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। ২. তথ্য জানার অধিকার ও ইন্টারনেট ব্যবহারের অধিকারকে সংবিধানের মৌলিক অধিকার হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। ৩. সাংবাদিক ও গণমাধ্যমের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। ৪. সব গণমাধ্যমকে একটি বেতন কাঠামোতে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। ৫. সব গণমাধ্যমকে মিডিয়া তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। ৬. সাংবাদিকদের অ্যানরোলমেন্ট নিশ্চিত করে একটি প্রেস আইডি নাম্বার প্রদান করতে হবে। ৭. স্থায়ীভাবে অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড নিশ্চিত করতে হবে। ৮. চলচ্চিত্রের মতো জাতীয় গণমাধ্যম ও সাংবাদিক পুরস্কার প্রদান করতে হবে। ৯. রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম পরিচালনা বোর্ড গঠন করতে হবে। ১০. গণমাধ্যম ও সাংবাদিকদের স্বাধীনতা এবং অধিকার নিশ্চিত করতে আইন প্রণয়নের মাধ্যমে স্বাধীন প্রেস কমিশন গঠন করতে হবে। ১১. স্যাটেলাইট টেলিভিশন, রেডিও ও অনলাইন গণমাধ্যম ডিক্লারেশনের জন্য সুনির্দিষ্ট আইন প্রণয়ন করতে হবে। ১২. পেশাগত মান উন্নয়নে সব সাংবাদিককে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষনের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। ১৩. সরকারিভাবে সাংবাদিকদের জন্য পেনশন ও রেশনিং ব্যবস্থা চালু করতে হবে। ১৪. সব সাংবাদিকের আবাসন ও চিকিৎসা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। ১৫. বিদেশি গণমাধ্যমকে বিশেষভাবে সহযোগিতা দেওয়ার জন্য নীতিমালা করতে হবে। ১৬. সোশ্যাল মিডিয়াকে নিবন্ধনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। ডিআরইউর সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হাসান সোহেলের সঞ্চালনায় সেমিনারে আরও বক্তব্য দেন- ফিনান্সিয়াল এক্সপ্রেসের সম্পাদক শামসুল হক জাহিদ, বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম. আবদুল্লাহ, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি শহিদুল ইসলাম, যুগ্ম সম্পাদক দিদারুল আলম দিদার, সাংবাদিক আসিফ শওকত কল্লোল প্রমুখ।