আজ বিএনপির গণমিছিল

৩০ ডিসেম্বর, ২০২২ | ৭:৩১ পূর্বাহ্ণ
অনলাইন নিউজ ডেস্ক , ইউ এস বাংলা ২৪

যুগপৎ কর্মসূচির অংশ হিসেবে ঢাকায় আজকের গণমিছিলে লাখো মানুষের সমাগমের প্রস্তুতি নিয়েছে বিএনপি। শুক্রবার দুপুরের পর নয়াপল্টন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে গণতন্ত্র পুনর্প্রতিষ্ঠায় ঘোষিত ১০ দফা দাবিতে দলটির মিছিল শুরু হবে। পাশাপাশি জামায়াত, এলডিপি, গণতন্ত্র মঞ্চ এবং জাতীয়তাবাদী সমমনা ১১ দলীয় জোটের নেতাকর্মীরাও পৃথক কর্মসূচিতে অংশ নেবেন। এই মিছিলকে কেন্দ্র করে চোরাগুপ্তা হামলা ও সংঘাতের শঙ্কা রয়েছে। একইসঙ্গে সরকারি দল আওয়ামী লীগও বিএনপি গণমিছিলের নামে যদি সহিসংতা করে তবে তা প্রতিহতের ঘোষণা দিয়েছে। শুক্রবারের কর্মসূচিকে ঘিরে বিএনপি ও সমমনা দলগুলোর সঙ্গে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে টান টান উত্তেজনা বিরাজ করছে। গণমিছিল সম্পর্কে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বিএনপি গণমিছিলের নামে সহিংসতা করবে। আমরা কি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ললিপপ খাব? আমরা সতর্ক পাহারায় থাকব। বিএনপির পূর্ব ঘোষিত ৩০ ডিসেম্বরের গণমিছিলের দিন আওয়ামী লীগ সতর্ক পাহারায় থাকবে। ১০ তারিখের মতো আমরা সারাদেশে সতর্ক পাহারায় থাকব। ওইদিন যেমন ছিলাম একই অবস্থানে থাকব। গণমিছিলকে সফল করতে সমমনা জোট ও দলের সঙ্গে আলাদা আলাদা বৈঠক করেছে লিয়াজোঁ কমিটি। বুধবার অনুষ্ঠিত এসব বৈঠকে যুগপৎ আন্দোলনকে এগিয়ে নিতে কৌশল নির্ধারণসহ আগামীতে কী ধরনের কর্মসূচি আসতে পারে, সেসব নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ করেন নেতারা। বৈঠকে বিভিন্ন জোট ও দলের নেতাদের মতামত গ্রহণ করেন বিএনপি নেতারা। তবে এখন পর্যন্ত নতুন কর্মসূচির বিষয়ে চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। পূর্ব ঘোষণা অনুসারে শুক্রবার দুপুরের পর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে কাকরাইল মোড়, শান্তিনগর-মালিবাগ-মৌচাক-মগবাজার চৌরাস্তা ঘুরে ফের নয়াপল্টনে গিয়ে গণমিছিলটি শেষ হবে। এই গণমিছিল চলবে দুপুর ২টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত। একই দাবিতে রাজধানীর উত্তরা এলাকায় গণমিছিল করবে জামায়াত। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে জামায়াতে ইসলামী এখনও মিছিলের অনুমতি পায়নি। কর্নেল অলির এলডিপি কাওরানবাজার রেলগেট এলাকা থেকে মগবাজার ও মালিবাগ এলাকায় গণমিছিল করবে। গণতন্ত্র মঞ্চ জাতীয় প্রেসক্লাবে সমাবেশ শেষে জিপিও হয়ে বায়তুল মোকাররম মসজিদের সামনে দিয়ে আবারও পল্টন মোড়ে এসে মিছিল শেষ করবে। পল্টনের বিজয়নগর পানি ট্যাঙ্কের সামনে থেকে কাকরাইল এলাকায় মিছিল করবে ১২ দলীয় জোটের নেতারা। ১১ দলীয় জোটের নেতারা একই স্থান থেকে মিছিল শুরু করে শান্তিনগর-মালিবাগ-মৌচাক-মগবাজার হয়ে বাংলামোটর গিয়ে শেষ করবে। ইতোমধ্যে বিএনপি এই কর্মসূচিতে তিনটি জোট ও পৃথকভাবে আরও তিনটি দল মিলিয়ে এখন পর্যন্ত ৩৩টি দল সমর্থন জানিয়েছে। একই দিন তারাও পৃথকভাবে এ কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছে। এর মধ্যে গণতন্ত্র মঞ্চের সাতটি দল, ১২ দলীয় জোটের বারোটি দল, ১১ দলীয় জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের এগারো দল এবং জামায়াত, এলডিপি, গণফোরাম (মন্টু) রয়েছে। এর বাইরে আরও বেশ কয়েকটি দল নিজেদের মতো করে ওই কর্মসূচি পালন করবে। তবে জামায়াত মিছিলের অনুমতি পায়নি বলে দলটির সূত্রে জানা গেছে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও যুগপৎ আন্দোলনে অংশ নেওয়া দলগুলোর সঙ্গে কর্মসূচি সমন্বয়ের জন্য গঠিত লিয়াজোঁ কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর দিনের ভোট রাতে হয়েছে। এই দিনটিকে তারা ভোট ডাকাতি দিবস হিসেবে পালন করে আসছেন। এবারও তারা একদিকে সরকার পতনের আন্দোলনে ১০ দফা দাবি আদায়ে কর্মসূচি পালন করবেন, তেমনি ভোট ডাকাতির দিবসও পালন করছেন। গণমিছিলের মাধ্যমে এটি করা হচ্ছে। আগামীতে আরও নতুন কর্মসূচি আসছে। বিএনপি ও সমমনা দলগুলোর নেতাকর্মীর সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, শুক্রবারের গণমিছিল কর্মসূচি সফল করতে বিএনপির পক্ষ থেকে বড় ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। তাদের শান্তিপূর্ণ এই মিছিলে কয়েক লাখ লোকের সমাগম ঘটবে। শুধু দলীয় নেতাকর্মী নন, ছুটির দিন থাকায় অনেক সাধারণ মানুষও তাদের কর্মসূচিতে অংশ নেবেন বলে আশা করছেন তারা। ঢাকায় লোক সমাগমের জন্য এরই মধ্যে ঢাকা মহানগরের প্রত্যেক থানা, ওয়ার্ড এমনকি ইউনিট পর্যায়ের নেতাকর্মীদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। দলের প্রত্যেক অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরাও নিজেদের মতো করে প্রস্তুতি নিয়েছেন। এর বাইরে ঢাকার আশপাশের এলাকা থেকেও অনেক নেতাকর্মী আসবেন বলে আয়োজক নেতাদের অনেকে জানিয়েছেন। নিজ দলের মধ্যে ব্যাপক প্রস্তুতির পাশাপাশি জাতীয়তাবাদী মতাদর্শে বিশ্বাসী ও সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোকেও একই দিন, একই সময়ে মাঠে নামানোর কৌশল নিয়েছে বিএনপি। রাজধানীতে যুগপৎ আন্দোলনের প্রথম কর্মসূচি গণমিছিলের মধ্য দিয়ে ঐক্যের যাত্রাকে দৃঢ় করতে চায় বিএনপিসহ সরকারবিরোধী বিভিন্ন দল ও জোট। পাশাপাশি এই কর্মসূচির পর নতুন কর্মসূচি নিয়েও আলোচনা শুরু করেছেন বিএনপির লিয়াজোঁ কমিটির নেতারা। এরই অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবারে ১২ দলীয় জোট ও জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট নেতাদের সঙ্গে আলাদা বৈঠক করেন বিএনপির লিয়াজোঁ (সমন্বয়) কমিটির নেতারা। বুধবার দুপুরে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে গণতন্ত্র মঞ্চের লিয়াজোঁ কমিটির সঙ্গে এবং বিকেলে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এলডিপির সঙ্গে পৃথক বৈঠক করেন বিএনপি নেতারা। বিএনপি ও গণতন্ত্র মঞ্চের লিয়াজোঁ কমিটির প্রথম বৈঠকে বিএনপির পক্ষে অংশ নেন ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু ও বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল। অন্যদিকে গণতন্ত্র মঞ্চের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাইফুল হক, গণসংহতি আন্দোলনের জোনায়েদ সাকি, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের হাসনাত কাইয়ুম, জেএসডির শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন, নাগরিক ঐক্যের শহীদুল্লাহ কায়সার, ভাসানী অনুসারী পরিষদের সদস্য সচিব হাবিবুর রহমান বিজু, গণঅধিকার পরিষদের রাশেদ খান। গণতন্ত্র মঞ্চের অন্যতম নেতা সাইফুল হক বলেন, আমরা কিভাবে যুগপৎ আন্দোলনের ভিত্তিতে এক জায়গায় আসব তা নিয়ে আলোচনা করেছি। দ্বিতীয়ত আমরা শুক্রবারের কর্মসূচিতে কোন দল কোথায় থাকব তা নিয়ে কথা বলেছি। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে আজ গণতন্ত্র মঞ্চ বেলা সাড়ে ১০টায় প্রেসক্লাবের সামনে অবস্থান করবে ও দুপুর ২ টায় বিএনপি তাদের নয়াপল্টন কার্যালয়ের সামনে অবস্থান করবে। গণতন্ত্র মঞ্চের অন্যতম নেতা জোনায়েদ সাকি বলেন, আমরা বুধবারের বৈঠকে দুই দলের যৌথ দাবিগুলো নিয়ে আলোচনা করেছি। এর ভিত্তিতে যুগপৎ আন্দোলন এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কথা হয়েছে। এদিকে গণমিছিলের জন্য ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কাছে অনুমতি চেয়েছে জামায়াতে ইসলামী। গত রবিবার ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক বরাবর আবেদন করেন মহানগর দক্ষিণ জামায়াতের অফিস সেক্রেটারি মোকাররম হোসাইন খান। তবে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত অনুমতি পায়নি জামায়াত। বিএনপির নেতারা কে কোথায় থাকবেন? শুক্রবারের গণমিছিলে দলটির সিনিয়র নেতৃবৃন্দ ও বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের জন্য স্থান নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান নির্দেশনা অনুযায়ী এ তালিকা করা হয়েছে বলে জানান গণমিছিলের প্রধান সমন্বয়কারী ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন। দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের দুপুর আড়াইটার মধ্যে স্ব-স্ব স্থানে থেকে সার্বিক সহযোগিতার অনুরোধ জানান তিনি। গণমিছিলের মূল ট্রাকে থাকবেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, বেগম সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর বীর উত্তম, মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বীর বিক্রম, মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি ইশতিয়াক আজিজ উলফাত। গণমিছিলে সার্বিক সহযোগিতা ও সমন্বয়ের দায়িত্বে থাকবেন ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, আমান উল্লাহ আমান, অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, বেনজীর আহমেদ টিটো, তাইফুল ইসলাম টিপু, আমিরুল ইসলাম খান আলিম, নবী উল্লাহ নবী, রফিকুল আলম মজনু, আমিনুল হক, হাবিবুর রশীদ হাবিব, বেলাল আহমেদ, আমিরুজ্জামান খান শিমুল প্রমুখ।