গারো পাহাড়ে মিষ্টি আনারস চাষে ভাগ্য বদলের হাতছানি চাষীদের

শেরপুরের গারো পাহাড়ে কৃষিতে সম্ভাবনার নতুন দিগন্ত উন্মোচিত করেছে মিষ্টি আনারস চাষ। বন্য হাতির আক্রমণে ধানসহ অন্যান্য ফসলে বারবার ক্ষতির মুখে পড়ে পাহাড়ি এলাকার কৃষকরা। ফলে তারা বিকল্প পথ খুঁজতে গিয়ে এখন ঝুঁকছেন আনারস চাষে। গারো পাহাড়ে পরীক্ষামূলক বাণিজ্যিকভাবে এই রসালো ও মিষ্টি আনারসের চাষাবাদে সফলতার মুখ দেখেছেন কৃষকরা। জলডুবি জাতের এ আনারস রসালো ও সুস্বাদু হওয়ায় বাজারে রয়েছে এর ব্যাপক চাহিদা। স্থানীয় চাহিদা পূরণ করে এ আনারস এখন দেশের বিভিন্ন জেলায় নিয়ে যাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। স্থানীয় কৃষি বিভাগ ও অন্যান্য একাধিক সূত্রে জানা গেছে, দুই বছর আগে টাঙ্গাইলের মধুপুরের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠির গারো সম্প্রদায়ের পিটার ডালবট নামে এক আনারস চাষী শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার সীমান্তবর্তী গারো পাহাড়ের উত্তর বাঁকাকূড়া গ্রামে তার শ্বশুর হালদ্রা সাংমার ৬ একর জমিতে বাণিজ্যিকভাবে এ আনারস চাষ শুরু করেন। প্রথম অবস্থায় একটু চিন্তায় পড়লেও পরবর্তীতে ফলন দেখে আশায় বুক বাঁধেন পিটার। আনারস যখন পাকা শুরু হয় তখন দেখেন মধুপুরের চেয়ে অনেক বেশি সুস্বাদু ও রসালো হয়েছে। ওই বাগানের রক্ষণাবেক্ষণ, সেচ, সার, পরিচর্যা বাবদ খরচ হয় প্রায় ১১ লাখ টাকা। পুরো বাগানের সোয়া লাখ পিস আনারস ১৬ লাখ টাকায় বিক্রিও করেন তিনি। এর পর থেকেই আশপাশের অনেকেই এ বাগান দেখে এবং চাষাবাদে আগ্রহী হয়ে এবার বাণিজ্যিকভাবে আনারস চাষ করেছেন। স্থানীয় কৃষি উদ্যোক্তা আশরাফুল আলম বলেন, গত বছর আমি আনারস চাষে লাভবান হয়েছি। এবার আট একর জমিতে দ্বিতীয়বারের মতো আনারস চাষ করেছি। আমি এবার প্রায় দুই লাখ চারা রোপণ করেছি। এতে আমার খরচ হয়েছে প্রায় ১৬ লাখ টাকা। ধান বা অন্যান্য ফসল বন্য হাতির আক্রমণে ধ্বংস হয়ে যায়, কিন্তু আনারস তুলনামূলকভাবে নিরাপদ ও লাভজনক। গতবারের মতো এবারও ভালো মুনাফার প্রত্যাশা করছি। ঝিনাইগাতী উপজেলার পশ্চিম বাকাকুড়া গ্রামের কৃষক জমশন ম্রং বলেন, এবার ২০ হাজার আনারসের চারা রোপণ করেছি। এতে আমার খরচ হয়েছে প্রায় দেড় লাখ টাকা। এবারও দ্বিগুণ লাভ হবে। তার দাবি আগামীবার আরও বড় পরিসরে চাষাবাদ করবেন। তিনি বলেন, সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো আমার আনারস বিক্রির জন্য বাজারে নিতে হয়নি। সব ক্ষেতেই বিক্রি হয়ে গেছে। জেলা শহর থেকে বেড়াতে আসা কলেজ শিক্ষক মফিদুল ইসলাম বলেন, আমাদের জেলায় আনারস চাষ হয় আমি প্রথম দেখলাম। এতো মিষ্টি আনারস আমাদের শেরপুরের খেয়ে না দেখলে বিশ্বাস করতাম না। আমি নিজের হাতে বাগান থেকে কেটে খেলাম। মধুর মতো মিষ্টি। আমি চাই আমাদের শেরপুরের গারো পাহাড়ে অনেক অনাবাদি জমি আছে। সেই জমিগুলোতে যেন আরও বড় পরিসরে আনারস চাষ করা হয়। গারো পাহাড়ে বেড়াতে আসা ব্যবসায়ী মাসুম মিয়া ও শিক্ষার্থী লুৎফর আনারস খেয়ে বলেন, আনারসের সাইজ ছোট হলেও প্রচুর মিষ্টি। গারো পাহাড়ের বাণিজ্যিকভাবে চাষ করা এখন সময়ের দাবি। শেরপুরে ব্যাপকভাবে এই আনারস চাষ হলে আমরা হাতের নাগালে সুমিষ্ট আনারস অল্প দামে পাবো। এতে প্রত্যন্ত সীমান্তবর্তী পাহাড়ি এলাকার আনারস চাষীরা অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হবেন। শেরপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মুহাম্মদ সাখাওয়াত হোসেন বলেন, শেরপুরে সীমান্তবর্তী এই অঞ্চলের মাটি ও আবহাওয়া আনারস চাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। ঝিনাইগাতীর সফলতা দেখে এখন নালিতাবাড়ী এবং শ্রীবরদীতেও এই চাষ ছড়িয়ে পড়ছে। তবে বন্য হাতির আক্রমণ প্রতিরোধের ব্যবস্থা নেওয়া হলে এ অঞ্চল শিগগিরই দেশের অন্যতম প্রধান আনারস উৎপাদন অঞ্চলে রূপ নিতে পারে।