ভর্তি বন্ধের ঝুঁকিতে ১৬ বিশ্ববিদ্যালয়

২৯ ডিসেম্বর, ২০২২ | ৯:৫৫ পূর্বাহ্ণ
অনলাইন নিউজ ডেস্ক , ইউ এস বাংলা ২৪

ভাড়া বাড়ি থেকে পাততাড়ি গুটিয়ে স্থায়ী ক্যাম্পাসে কার্যক্রম শুরু করতে চতুর্থ দফা আলটিমেটামও পাত্তা পেল না। মার্চে ২৩ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে এই আলটিমেটাম দিয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে নিজস্ব ক্যাম্পাসে কার্যক্রম শুরুর নির্দেশনা ছিল। ব্যর্থ হলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে নতুন শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধ করে দেওয়া হবে। সেই ক্ষেত্রে শুধু আগে থেকে ভর্তি করা ছাত্রছাত্রীরা লেখাপড়া শেষ করবেন। এরপর বন্ধ হয়ে যাবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর দরজা। আলটিমেটাম শেষ হবে ২ দিন পর। কিন্তু মাত্র ৭টি প্রতিষ্ঠান সরকারি নির্দেশনা প্রতিপালন করেছে। এ দফায়ও ১৬টি বিশ্ববিদ্যালয় ব্যর্থ হয়েছে। শুধু তাই নয়, তারা সর্বনিম্ন ৩ মাস থেকে সর্বোচ্চ ৩ বছর সময় চাচ্ছে এখনো। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, ২০১২ সাল থেকে এসব প্রতিষ্ঠানকে আলটিমেটাম দিচ্ছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। আগে তিনবার ব্যর্থ হলেও কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে সতর্কতা বাস্তবায়ন করেনি ইউজিসি। তবে এবার নতুন শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধের সিদ্ধান্ত কার্যকর করা হতে পারে। এ লক্ষ্যে আজ ইউজিসিতে একটি অভ্যন্তরীণ সভা ডাকা হয়েছে। ইউজিসি সূত্র আরও জানায়, যে ১৬টি প্রতিষ্ঠান শেষবারের আলটিমেটামও লঙ্ঘন করেছে সেগুলোর মধ্যে কয়েকটির ব্যাপারে নমনীয় সিদ্ধান্ত আসতে পারে। এ ক্ষেত্রে ওইসব প্রতিষ্ঠানের কাজের অগ্রগতি এবং আন্তরিকতা ও প্রতিশ্রুতি বিবেচনার চিন্তা করছে সংস্থাটি। আর যেসব প্রতিষ্ঠান গত এক দশক ধরে একই ধরনের কথা বলে আসছে, সেগুলোর ব্যাপারে কঠোর সিদ্ধান্ত আসতে পারে। আইন অনুযায়ী ১২ বছরের মধ্যে স্থায়ী ক্যাম্পাসে কার্যক্রম শুরুর বাধ্যবাধকতা আছে। কিন্তু এসব প্রতিষ্ঠানের কোনোটির বয়স ২৬ বছর হয়েছে। জানতে চাইলে সংস্থাটির পরিচালক (বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়) মো. ওমর ফারুখ বুধবার বলেন, ‘আলটিমেটামপ্রাপ্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ব্যাপারে করণীয় নির্ধারণে কাল (আজ) দাপ্তরিক সভা আছে। কী সিদ্ধান্ত আসবে তা আগাম বলা সম্ভব নয়। তবে আমাদের কাছে সর্বশেষ আলটিমেটাম প্রাপ্ত সব বিশ্ববিদ্যালয়ের অগ্রগতি প্রতিবেদন আছে। সেটার আলোকেই পরবর্তী সিদ্ধান্ত আসতে পারে।’ ২৭ মার্চ ইউজিসিতে অনুষ্ঠিত এক সভায় উল্লিখিত চতুর্থ আলটিমেটাম দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সেটি অনুযায়ী পরে ৩ থেকে ৫ দিনের সময় দিয়ে শোকজ করা হয়েছিল। ওই শোকজের জবাব পর্যালোচনার পরই আলটিমেটাম দেওয়া হয়েছিল। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এখন ভাড়া বাড়ি থেকে ক্যাম্পাস গুটিয়ে নিতে না পারা প্রতিষ্ঠানের ব্যাপারে ‘পরবর্তী ব্যবস্থা’র অনুমোদন চেয়ে চ্যান্সেলর তথা রাষ্ট্রপতির কাছে সুপারিশ দাখিল করবে ইউজিসি। ২০১০ সালের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইনের ৩৫(৭) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, কোনো কারণে কোনো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে অচলাবস্থা দেখা দিলে কিংবা এর স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত ও শিক্ষার্থীদের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিলে, উক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রম অব্যাহত রাখার স্বার্থে, কমিশন ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সুপারিশক্রমে চ্যান্সেলর প্রয়োজনীয় আদেশ ও নির্দেশ দিতে পারবেন। এ বিষয়ে চ্যান্সেলরের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে গণ্য হবে। সূত্র জানায়, এই অনুচ্ছেদ অনুযায়ীই এখন ব্যবস্থা নেবে ইউজিসি। ইতোমধ্যে এই অনুচ্ছেদ ব্যবহার করে নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয় এবং মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির বোর্ড অব ট্রাস্টিজের (বিওটি) ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আলটিমেটাম পাওয়া ২৩টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে একটি ছিল ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি চিটাগং (ইউএসটিসি)। এরআগে এই প্রতিষ্ঠানটি ইউজিসির শোকজের কোনো জবাবই দেয়নি। তবে প্রতিষ্ঠানটি স্থায়ী ক্যাম্পাসে গেছে বলে জানায় ইউজিসি। ২০০২ সালে অনুমোদন পাওয়া ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি আশুলিয়ায় স্থায়ী ক্যাম্পাস গড়ার পরও ঢাকার শুক্রাবাদে ২টি ক্যাম্পাস চালু রেখেছিল। এ প্রতিষ্ঠানটিও সম্পূর্ণরূপে কার্যক্রম গুটিয়ে নিয়েছে স্থায়ী ক্যাম্পাসে। একইভাবে নর্দার্ন, শান্ত মারিয়াম, ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস, ইউনিভার্সিটি অব সাউথ এশিয়া স্থায়ী ক্যাম্পাসে গেছে। কিন্তু এখনো বিভিন্ন মেয়াদে সময় চাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর একটি ১৯৯৬ সালে প্রতিষ্ঠিত পিপলস ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ। এটি আরও ২ থেকে ৩ বছর সময় চাচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটির দাবি, নরসিংদীতে স্থায়ী ক্যাম্পাসের জন্য কেনা জমি সড়ক ও জনপথ বিভাগ অধিগ্রহণ করে ফেলেছে। তাই তারা যেতে পারছে না। ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ২ মাস সময় চেয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি ঢাকার সাতারকুলে স্থায়ী ক্যাম্পাস বানাচ্ছে। সম্প্রতি সরকারি উদ্যোগে মালিকানা পরিবর্তন হওয়া মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ১ বছর সময় চেয়েছে। ২০০১ সালে প্রতিষ্ঠিত ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় ৬ মাস সময় চেয়েছে। মেরুল বাড্ডা এলাকায় নির্মিত প্রতিষ্ঠানটির ভবন নির্মাণ শেষে এখন সেখানে ডেকোরেশনের কাজ চলছে। এজন্য তারা এই সময় চায়। বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটিও ৬ মাস সময় চেয়েছে। কিন্তু ২ বছর সময় চেয়েছে ইউনিভার্সিটি অব ডেভেলপমেন্ট অলটারনেটিভ (ইউডা)। আর সাউথইস্ট বিশ্ববিদ্যালয় চাচ্ছে ৩ মাস। স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় এখনো ৩ বছর সময় চায় স্থায়ী ক্যাম্পাসে কার্যক্রম শুরুর জন্য। স্টেট ইউনিভার্সিটি চায় ২ বছর। প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটি ২০০৩ সালে প্রতিষ্ঠিত। তারা ২০২৪ সালে যেতে চায় স্থায়ী ক্যাম্পাসে। আশা ইউনিভার্সিটি প্রতিষ্ঠার অনুমোদন পেয়েছে ২০০৬ সালে। তারা ২০২৫ সালে স্থায়ী ক্যাম্পাসে যাবে বলে জানিয়েছে। উত্তরা ইউনিভার্সিটি বলছে, আগামী বছরের জুনে তারা স্থায়ী ক্যাম্পাসে যাবে। ভিক্টোরিয়া ইউনিভার্সিটি সময় চায় ২০২৫ সাল পর্যন্ত। রয়েল ইউনিভার্সিটি অব ঢাকাও আগামী মার্চ পর্যন্ত সময় চাচ্ছে। গ্রিন ইউনিভার্সিটি সময় চায় আরও এক বছর। দ্য মিলেনিয়াম ইউনিভার্সিটি মতিঝিলে অপর্যাপ্ত ও ফাউন্ডেশনের নামে রেজিস্ট্রিকৃত জমিতে গড়া ক্যাম্পাসে চালাচ্ছে কার্যক্রম। তারা ইউজিসিকে বলছে যে, ফাউন্ডেশনের নামে রেকর্ডকৃত জমি বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে পরিবর্তনের চেষ্টা করছে তারা। একই কথা আগেও বলেছিল। অগ্রগতি নেই তহবিল লুটপাটের শিকার প্রাইম এশিয়া ইউনিভার্সিটির। আর পান্থপথে ক্যাম্পাস চালানো সিটি ইউনিভার্সিটি অঙ্গীকার করেছে, ভর্তিকৃত শিক্ষার্থীদের তারা পাশ করিয়ে সেটি বন্ধ করে দেবে। এরপর আশুলিয়ায় নির্মিত স্থায়ী ক্যাম্পাসেই কার্যক্রম চালাবে। দেশে সরকার অনুমোদিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ১০৯টি। কিন্তু বর্তমানে ৯৯টির কার্যক্রম চলছে, যারমধ্যে ২০১০ সালের আগের আইনে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ৫২টি। এগুলোর মধ্যে দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয় উচ্চ আদালতে এক মামলার রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৪ সালে সরকার বন্ধ করে দেয়। অবশিষ্ট ৫১টির মধ্যে ৩৫টি স্থায়ী ক্যাম্পাসে কার্যক্রম শুরু করেছে। সর্বশেষ তৃতীয় দফায় দেওয়া আলটিমেটাম অনুযায়ী ২০১৭ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে স্থায়ী ক্যাম্পাসে কার্যক্রম শুরু করতে বলেছিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়। তখনও নির্দেশ পালনে ব্যর্থ প্রতিষ্ঠানের ভর্তি বন্ধ করে দেওয়ার কথা ছিল। এরআগে ২০১২ এবং ২০১৪ সালে দুই দফা আলটিমেটাম দেওয়া হয়।