এবার পরমাণু অস্ত্র ব্যবহারের হুঁশিয়ারি পাকিস্তানি দূতের

ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে চলমান উত্তেজনা বেড়েই চলেছে। ভারতশাসিত কাশ্মীরে ভয়াবহ হামলায় পাকিস্তান জড়িত দাবি করে দেশটির বিরুদ্ধে একের পর এক ব্যবস্থা নিয়ে যাচ্ছে ভারত। পাল্টা পদক্ষেপ নিচ্ছে পাকিস্তানও। সেই সঙ্গে টানা দশম দিনের মতো কাশ্মীরে নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর দেশ দুটির বাহিনীর মধ্যে গুলিবিনিময় হয়েছে। এমন অবস্থায় ভারতকে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন রাশিয়ায় নিযুক্ত পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত মুহাম্মদ খালিদ জামালি। তিনি বলেছেন, ভারত যদি পাকিস্তানে হামলা চালায় বা পাকিস্তানে পানি সরবরাহে বিঘ্ন ঘটায়, তাহলে ইসলামাবাদ পরমাণু অস্ত্রসহ পূর্ণ সামরিক শক্তি ব্যবহার করতে পারে। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির খবরে বলা হয়েছে, গত শনিবার রুশ সম্প্রচারমাধ্যম আরটিকে এক সাক্ষাৎকার দেন মস্কোতে নিযুক্ত পাকিস্তানের খালিদ জামালি। তিনি বলেন, ‘ইসলামাবাদের কাছে বিশ্বাসযোগ্য গোয়েন্দা তথ্য রয়েছে, ভারত পাকিস্তানের ভূখণ্ডে সামরিক হামলার পরিকল্পনা করছে। ফাঁস হওয়া কিছু নথিতে উল্লেখ আছে, পাকিস্তানের কিছু নির্দিষ্ট অঞ্চলে হামলা চালানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তাই আমাদের ধারণা, এটি (হামলা) ঘটতে চলেছে এবং এটি আসন্ন। এমনটি হলে আমরা আমাদের প্রচলিত ও পারমাণবিক উভয় ক্ষমতার পূর্ণ শক্তি ব্যবহার করব।’ চলমান উত্তেজনাসহ সাম্প্রতিক বছরগুলোয় ভারতের বিরুদ্ধে একজন ঊর্ধ্বতন পাকিস্তানি কর্মকর্তার পরমাণু অস্ত্র ব্যবহারের সবচেয়ে স্পষ্ট হুমকিগুলোর মধ্যে এটি অন্যতম। ভারতের সিন্ধু পানিচুক্তি স্থগিতের বিষয়ে জামালি বলেন, নিম্ন অববাহিকায় পানিপ্রবাহ আটকে দেওয়া বা ভিন্ন দিকে প্রবাহিত করার যে কোনো প্রচেষ্টা পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধের শামিল হবে। এবং এর জবাব পূর্ণ শক্তি দিয়ে দেওয়া হবে। গত ২২ এপ্রিল জম্মু-কাশ্মীরের পেহেলগামে বন্দুকধারীর হামলায় ২৬ জন নিহত হন। ভারত এ হামলার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করলেও দেশটি জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করেছে। এর আগে গত শুক্রবার পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, চুক্তি লঙ্ঘন করে ভারত সিন্ধু নদের ওপর কোনো অবকাঠামো নির্মাণ করলে তাতে হামলা চালাবে পাকিস্তান। পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম জিও টিভির খবরে বলা হয়েছে, পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে পাকিস্তান নিজেদের সব বন্দরে ভারতীয় পতাকাবাহী জাহাজ নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। এর আগে ভারতের পক্ষ থেকেও একই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল। পাকিস্তানের বন্দর ও নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের এক নির্দেশনায় বলা হয়, ভারতীয় পতাকাবাহী জাহাজগুলো পাকিস্তানি বন্দরগুলোয় প্রবেশ করতে পারবে না, একইভাবে পাকিস্তানি জাহাজগুলোও ভারতের বন্দরে যেতে পারবে না। তবে কোনো ব্যতিক্রম হলে তা ‘কেস বাই কেস’ ভিত্তিতে বিবেচনা করা হবে। এর আগে শনিবার ভারত জানায়, পাকিস্তানি পতাকাবাহী জাহাজগুলো আর ভারতের কোনো বন্দরে ভিড়তে দেওয়া হবে না। পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় পাকিস্তানও একই ধরনের নিষেধাজ্ঞা জারি করে। এদিকে, রাজস্থানের ভারত-পাকিস্তান আন্তর্জাতিক সীমান্ত থেকে এক পাকিস্তানি রেঞ্জারকে আটক করেছে ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ। বিভিন্ন নিরাপত্তা সূত্রের বরাত দিয়ে এ তথ্য জানিয়েছে এনডিটিভি। একজন রেঞ্জার সাধারণত আইন প্রয়োগকারী বা সামরিক/ আধাসামরিক বাহিনীর একজন সদস্য, যিনি একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলে টহল দেওয়ার ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ। একে ‘রেঞ্জিং’ বা ‘স্কাউটিং’ বলা হয়। এর আগে ২৩ এপ্রিল বিএসএফের কনস্টেবল পূর্ণম কুমার সাউ ভুলবশত সীমান্ত পার হয়ে পাকিস্তানে ঢুকে পড়লে তাঁকে আটক করে পাকিস্তানি রেঞ্জাররা। পাকিস্তান এখনও পূর্ণম কুমারকে ফেরত দেয়নি। সাধারণত এমন ঘটনা দুই পক্ষের ফ্ল্যাগ মিটিংয়ের মাধ্যমে দ্রুত সমাধান হয়ে থাকলেও এবার পরিস্থিতি ভিন্ন। পাকিস্তানি রেঞ্জারকে আটকের দাবি করার পর কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণরেখায় (এলওসি) পাকিস্তান ও ভারতের সেনাদের মধ্যে আবারও গুলিবিনিময় হয়েছে। এ নিয়ে টানা দশম দিনের মতো শনিবার রাতে দুই দেশের বাহিনীর মধ্যে গোলাগুলির ঘটনা ঘটল।