এনসিপির প্রতিনিধির ওপর হামলা, হাজিরা দিতে গিয়ে প্রধান আসামি কারাগারে

৪ মে, ২০২৫ | ১১:০৩ অপরাহ্ণ
ডেস্ক নিউজ , ডোনেট বাংলাদেশ

ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের উপজেলা সমন্বয়ক ও জাতীয় নাগরিক কমিটির (এনসিপির) উপজেলা প্রতিনিধির ওপর হামলার ঘটনায় মামলা হয়। তবে পাঁচ দিন পরও পুলিশ কোনো আসামি গ্রেফতার করতে পারেনি। এদিকে রোববার অভিযুক্তরা আদালতে হাজির হয়ে জামিন প্রার্থনা করলে এ মামলার প্রধান অভিযুক্ত রাব্বি মোড়লকে কারাগারে পাঠিয়ে অন্যদের জামিন মঞ্জুর করেন আদালত। থানায় দায়ের করা মামলার বিবরণ সূত্রে জানা যায়, উপজেলার ১১নং খারুয়া ইউপির খারুয়া গ্রামের জালাল উদ্দিন মণ্ডলের ছেলে আশেক আলী মণ্ডল (২৪) বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একজন সমন্বয়ক। তাদের পাশের গ্রাম ফুলবাড়িয়ার শহীদুল্লাহ মোড়ল, তার ছেলে রাব্বি মোড়ল (২১) ও তার স্বজনরা খারাপ প্রকৃতির লোক। রাব্বি মোড়ল এলাকায় একটি কিশোর গ্যাং পরিচালনা করে আসছেন। রাব্বির ওই সব কু-কর্মের প্রতিবাদ করলে তার সঙ্গে শত্রুতার সৃষ্টি হয় বাদীর। এসব কারণে আশেক মণ্ডলকে বিভিন্নভাবে বিভিন্ন হুমকি দিয়ে আসছিলেন রাব্বি। গত ৩০ এপ্রিল বেলা সোয়া ১১টার দিকে তিনি স্থানীয় খারুয়া বাজারে জুনায়েদের চা স্টলে বসে চা পান করছিলেন আশেক মণ্ডল। এমন সময় সেখানে রাব্বিসহ তার পিতা শহীদুল্লাহ মোড়ল, হবি মোড়ল ও বিল্লাল গিয়ে হাজির হন। তারা সবাই আশেক মণ্ডলকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকেন। এক পর্যায়ে রাব্বি তার হাতে থাকা কাঠের চেলা দিয়ে আশেক মণ্ডলকে প্রহার করতে থাকে। অন্যরা রড দিয়ে কেউবা ঘুসি মেরে তাকে রক্তাক্ত জখম করে। তখন ডাক চিৎকারে লোকজন ছুটে এলে হামলাকারীরা তাকে খুন করার হুমকি দিয়ে চলে যায়। পরে স্থানীয়রা তাকে নান্দাইল উপজেলা হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করান। রোববার সরেজমিন খারুয়া বাজারে গিয়ে দেখা যায় ঘটনাস্থলে জুনায়েদের চা স্টলটি বন্ধ। পাশের চা দোকানদার শহীদ জানান, ঘটনার সময় তিনি দোকানে ছিলেন না।তবে পরে এসে মারামারির ঘটনাটি শুনেছেন। প্রতিবেশী আক্তার হোসেন ঘটনার বিবরণ দিয়ে জানান, প্রায় দুইমাস পূর্বে চা দোকানি জুনায়েদের একটি ছাগল চোরেরা ইজিবাইকে করে চুরি করে নিয়ে যাচ্ছিল। লোকজন ধাওয়া করে পাশের কালিয়াপাড়া বাজারে গিয়ে ইজিবাইকসহ চোরদের আটক করতে সক্ষম হয়। পরে কালিয়াপাড়া বাজারের লোকজন ছাগলসহ চোরদের বিচারের জন্য খারুয়া বাজারে পাঠানোর উদ্যোগ নেন। কিন্তু সেখানে উপস্থিত আশেক মণ্ডল ইজিবাইকসহ ছাগলও চোরদের থানায় পাঠানোর পরামর্শ দেন। এ নিয়ে সেখানে ঝগড়া শুরু হলে আশেক মণ্ডলের মোবাইল ফোনটি খোয়া যায়। প্রতিপক্ষ রাব্বি বিষয়টি নিয়ে আশেককে জড়িয়ে তার (রাব্বির) মোবাইলে একটি পোস্ট দেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে আশেক মণ্ডল তখন থানায় একটি মামলা করেন। সেই মামলায় অন্যদের সঙ্গে রাব্বিকেও আসামি করা হয়। ধারণা করা হয়েছে সেই ক্ষোভেই রাব্বি মোড়ল আশেক আলী মণ্ডলের ওপর হামলা করেছে। কয়েকজন এলাকাবাসী জানান, ঘটনার পরপর উপজেলা নির্বাহী অফিসার, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আসেন। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রাব্বি মোড়লের পিতা শহীদুল্লাহ মোড়ল আওয়ামী লীগ দলীয় রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন এবং ছাত্রলীগের সঙ্গে জড়িত ছিলেন রাব্বি। নান্দাইল উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) সারমিনা সাত্তার জানান, খবর পাওয়ার পরপরই তিনি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে নিয়ে ঘটনাস্থলে যান। আহত আশেক আলী মণ্ডলের সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করার পাশাপাশি জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতারের নির্দেশ প্রদান করেছেন। রোববার বিকালে যোগাযোগ করলে নান্দাইল মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আনোয়ার হোসেন জানান, মামলার পর আসামিদের গ্রেফতারের জন্য বিভিন্ন জায়গায় সাঁড়াশি অভিযান চালানো হয়। এতে বিপদ বুঝে আসামিরা রোববার আদালতে হাজির হয়ে জামিন প্রার্থনা করে। আদালত বাকি তিনজনের জামিন মঞ্জুর করলেও রাব্বি মোড়লের জামিন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।