দ্রুত মামলা নিষ্পত্তির সঙ্গে স্বচ্ছতাও নিশ্চিত করুন

২৭ ডিসেম্বর, ২০২২ | ৭:৪৬ পূর্বাহ্ণ
অনলাইন নিউজ ডেস্ক , ইউ এস বাংলা ২৪

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের প্রতিটি মানুষের জন্য আইনের শাসন, ন্যায়বিচার এবং মামলার দ্রুত নিষ্পত্তি নিশ্চিত করতে বিচারকদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, দ্রুত বিচার ও রায় কার্যকরে সন্ত্রাসবাদ, নারী ও শিশু নির্যাতন, মানবপাচারের মতো অপরাধ কমে আসবে। আমি চাই দ্রুত মামলা নিষ্পত্তির পাশাপাশি স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার মাধ্যমেই সবাই যেন ন্যায়বিচার পায়। আমি যতক্ষণ আছি, এটুকু বলব, বাংলাদেশে মানুষ যেন অন্তত আইনের শাসন পায়, সঠিক বিচার পায়। তাদের স্বার্থে এই জুডিসিয়াল সার্ভিসের জন্য যা যা করণীয়, তা আমরা করে দেব। সোমবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র্র (বিআইসিসি)তে আয়োজিত বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন (বিজেএসএ)’র ৫৯তম বার্ষিক কাউন্সিলে প্রধান অতিথির বক্তব্য প্রদানকালে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, তারা (সংসদ সদস্য) জনগণের নিরাপত্তা ও কল্যাণ নিশ্চিতের লক্ষ্যে আইন প্রণয়নের পাশাপাশি আইন সংশোধন করেন এবং বিচারকরা ওই আইন প্রয়োগের মাধ্যমে সকলের জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিত করেন। আমি ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে দেশের বিচার ব্যবস্থার উন্নয়নে প্রয়োজনীয় সবকিছুই করেছি-যাতে করে আইনের শাসন ও জনগণের ন্যায়বিচার নিশ্চিত হয়। ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার প্রত্যয় ব্যক্ত করে এবং স্মার্ট বাংলাদেশের পরিকাঠামো কি হবে তা নিয়ে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, সর্বক্ষেত্রে ডিভাইস ব্যবহার করে আধুনিক প্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন স্মার্ট বাংলাদেশ আমরা ২০৪১ সালের মধ্যে গড়ে তুলব। বাংলাদেশের মানুষ যেন উন্নত জীবন পায়, সেই বাংলাদেশ আমরা গড়ে তুলব। বিশ্বের কাছে মাথা উঁচু করে চলব, কারও কাছে হাত পেতে বা মাথানত করব না। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়কমন্ত্রী আনিসুল হক ও আইন সচিব গোলাম সারওয়ার। স্বাগত বক্তব্য রাখেন জুডিসিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এএইচএম হাবিবুর রহমান ভুঁইয়া প্রমুখ। অনুষ্ঠানে জুডিসিয়াল সার্ভিস কমিশনের ৫৯তম বার্ষিক কাউন্সিল উপলক্ষে একটি ভিডিও ডকুমেন্টারি প্রদর্শন করা হয়। আইনের শাসন ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে বিচারকদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, আমি চাই, সব মানুষই যেন ন্যায়বিচারটা পায়। দ্রুত মামলাগুলো যেন নিষ্পত্তি হয়। একটা স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা যেন সৃষ্টি হয়। সেই পরিবেশটা যেন থাকে। সেটাই আমরা চাই। মানুষের ন্যায়বিচার নিশ্চিতে বিভিন্ন আইন প্রণয়নের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা তো আইন প্রণয়ন করি। আপনারা (বিচারক) আইন ব্যবহার করেন। কাজেই সেখানেও যখন যেটা হয়, আমরা সংশোধন করি, আরও উন্নত করি। যা-ই করি, মানুষের কল্যাণে, মানুষের উন্নয়নে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবারের সদস্যদের হত্যা মামলার রায়ের মধ্য দিয়ে দেশে বিচারহীনতার সংস্কৃতি দূর হয়েছিল উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সেদিন জজ সাহেবরা এই যে সাহসী পদক্ষেপ নিয়েছিলেন, বাংলাদেশে যে বিচারহীনতার যে সংস্কৃতি চালু হয়েছিল, এর ফলে তা দূর হয়েছিল। ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার ধারা প্রবর্তন করা সম্ভব হয়েছিল এই রায়ের মধ্য দিয়ে। ঐতিহাসিক এই রায়ের দিনের কথা স্মৃতিচারণ করে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমার মনে আছে, বিচারের রায় যেদিন দেওয়ার কথা, গোলাম রসুল সাহেবের (মরহুম বিচারক কাজী গোলাম রসুল) আদালতে। তিনি যেদিন এই রায় দেবেন, সেদিন ছিল ১৯৯৮ সালের ৮ নভেম্বর। সেদিন বিএনপি-জামায়াত হরতাল ডেকেছিল; যাতে জজ সাহেব কোর্টে যেতে না পারেন, রায় দিতে না পারেন। তাছাড়াও তার ওপর অনেক জুলুম-অত্যাচার করারও চেষ্টা করা হয়েছিল।’ এই বিচারকের সাহসের প্রশংসা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তিনি অত্যন্ত সাহসী একজন ব্যক্তি ছিলেন, তিনি কোনো কিছু মানেননি। সেই রায় কিন্তু গোলাম রসুল সাহেব দিয়ে যান। যাতে বিচারটা না হয়, তারা (বিএনপি-জামায়াত) বাধা দিয়েছিল। আমি বলব, এই যে সাহস দেখানো, এটাই ছিল বড় কথা, তিনি সেই রায়টা দিয়ে যান।’ পরবর্তীকালে উচ্চ আদালতে এই বিচারের প্রসঙ্গ তুলে তিনি বলেন, ২০০৯ সালে আমরা যখন সরকার গঠন করি, আবার সেই বিচার যখন শুরু হয়, তখনো অনেক বাধা ছিল। কিন্তু যাই হোক, আল্লাহর রহমতে সেই বিচার করে রায় আমরা পেয়েছি, রায় কার্যকর করা হয়েছে। জজ সাহেব রায় দিয়েছিলেন বলেই আমরা সেটা (রায়) কার্যকর করতে সক্ষম হয়েছিলাম। বিচার কাজ দ্রুত সম্পন্নের আহ্বান জানিয়ে এবং এর সুফল তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের মোট সংখ্যা ১০১টি। এছাড়া ৭টি মানবপাচার অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনালও স্থাপন করা হয়েছে। এগুলো এজন্য করা হয়েছে এ বিচারগুলো যত দ্রুত হবে, রায়গুলো যত তাড়াতাড়ি কার্যকর হবে, তত এ অপরাধগুলো কমে আসবে। সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ দমন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সন্ত্রাস বিরোধী আইনে দ্রুত বিচার সম্পন্ন হলে যারা সন্ত্রাসের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয় তা আর হবে না। সারাদেশে ই-জুডিসিয়ারি বাস্তবায়ন করা গেলে মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি করা যাবে এমন আশাবাদ ব্যক্ত করে সরকারপ্রধান বলেন, ই-জুডিসিয়ারি চালু করা গেলে মামলা ব্যবস্থাপনায় আরও গতি আসবে। বিচারকদের জন্য আন্তর্জাতিক মানের জুডিসিয়াল একাডেমি প্রতিষ্ঠা আমরা করে দেব। সে সঙ্গে একটা আইনি বিশ্ববিদ্যালয় আমরা প্রতিষ্ঠা করব। আমি মনে করি যে, সর্বক্ষেত্রে ট্রেনিংটা একান্তভাবে দরকার। প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে দ্রুত বিচার ও রায় কার্যকরে সন্ত্রাসবাদ, নারী ও শিশু নির্যাতন, মানবপাচারের মতো অপরাধগুলো কমে আসবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, সবচেয়ে দুর্ভাগ্য সন্ত্রাসীদের আক্রমণ থেকে আমাদের আদালতগুলোও রেহাই পায়নি। ঝালকাঠিতে বোমা মারলো, গাজীপুরে বোমা মারলো। জুডিসিয়াল অফিসারকে হত্যা করল। কেউ কেউ আহত হলেন। অনেক সময় গাড়িতে আক্রমণ করা হয়। এসব ঘটনার পর বিচারকদের নিরাপত্তায় ব্যবস্থা নেওয়ার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বিচারকদের উদ্দেশে বলেন, রায় দিয়ে যখন ঘরে ফিরতে যান যেকোনো সময় তাদের ওপর হামলা হতে পারে। তা যেন না হয়, সেজন্য কি কি ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে, কিছু ব্যবস্থা নিয়েছি ও আরও ব্যবস্থা নেব। যাতে সবাই নিরাপদে থাকেন। সন্ত্রাসের অপরাধের ধরনের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জঙ্গিবাদ বা সন্ত্রাসের কার্যক্রমের ধরন পাল্টে যাচ্ছে। এখানেও সাইবার ক্রাইমের ধরন বেশি। তার জন্য আমরা আইন করেছি। অনেকে এর বিরুদ্ধে অনেক কথা বলে। কিন্তু বাস্তবতা হলো এটা একান্তভাবে প্রয়োজন এই কারণে, এখন আগের মতো আর মল্লযুদ্ধতো হয় না, এটাও বোতাম টিপে হয়। আর এখন তো ডিজিটাল পদ্ধতিতে হচ্ছে। যুদ্ধও ডিজিটাল পদ্ধতিতে, ক্রাইমগুলোও এ পদ্ধতিতে হয়ে যায়। অনলাইনেও ট্রেনিং দেওয়া হয় কিভাবে বোমা বানাবে, কিভাবে মানুষ খুন করবে, সেগুলো শেখানো হয়। তাই সন্ত্রাসবিরোধী ব্যবস্থা নিয়েছি। সন্ত্রাসবিরোধী আইনে দ্রুত বিচার সম্পন্ন হলে যারা সন্ত্রাসের সঙ্গে সম্পৃক্ত হচ্ছে তারা আর হবে না। সরকারপ্রধান আরও বলেন, বর্তমানে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের মোট সংখ্যা ১০১টি। এছাড়া ৭টা মানবপাচার অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনালও স্থাপন করা হয়েছে। এ বিচারগুলো যত দ্রুত হবে, রায়গুলো তত তাড়াতাড়ি কার্যকর হবে। ফলে এসব অপরাধ কমে আসবে। জুডিসিয়াল সার্ভিসে কর্মরত সবার প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, চলুন সবাই মিলে বাংলাদেশের মানুষের জীবনে যেন আইনের শাসন নিশ্চিত হয় সেই ব্যবস্থা করি। তারা যেন উন্নত জীবন পায় এবং এই স্বাধীন বাংলাদেশ জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ হবে; সেই বাংলাদেশ আমরা গড়ে তুলি। বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতুতে দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছিল, সে বিষয়ে সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা বলেন, ‘বহু চ্যালেঞ্জ এসেছিল সেগুলো মোকাবিলা করেছি। কিন্তু পদ্মা সেতু নিয়ে যখন দুর্নীতির অভিযোগ এনেছে, সেটা আমি সহ্য করতে পারিনি। এটাও প্রমাণ হয়েছে কোনো দুর্নীতি হয়নি। কানাডার ফেডারেল কোর্ট রায় দিয়ে বলেছে, বিশ্ব ব্যাংকের সব অভিযোগ মিথ্যা এবং ভুয়া। তারপরও বিশ্ব ব্যাংকের কাছ থেকে টাকা নেইনি। আমি বলেছিলাম নিজেদের অর্থে এই পদ্মা সেতু করব। ইনশাআল্লাহ আমরা করেছি। এই একটা সিদ্ধান্তে সারাবিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি পরিবর্তন হয়ে গেছে। শেখ হাসিনা আরও বলেন, জাতির পিতা ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণে বলেছিলেন, আমাদের কেউ দাবায়া রাখতে পারবা না।’ তারা এখন সবাই জানে বাঙালিকে কেউ দাবায়ে রাখতে পারবে না। আমরা এগিয়ে যাচ্ছি, এগিয়ে যাব। এই জুডিসিয়াল সার্ভিসের জন্য যা যা করণীয় আমরা তা করে দেব।