মেঘনায় ছড়িয়ে পড়েছে জ্বালানি তেল, মৎস্য ও জীববৈচিত্র্য বিপর্যয়ে

২৭ ডিসেম্বর, ২০২২ | ৭:৪২ পূর্বাহ্ণ
অনলাইন নিউজ ডেস্ক , ইউ এস বাংলা ২৪

ভোলার মেঘনা নদীতে ১১ লাখ লিটার জ্বালানি তেলসহ ডুবে যাওয়া এমভি সাগর নন্দিনী-২ নামে কার্গে জাহাজটি ডুবে যাওয়ার ২ দিন পর সোমবার বিকাল পর্যন্ত উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। তবে জাহাজটি উদ্ধারের জন্য দুইটি জাহাজ ঘটনা স্থলে বিকালে এসে পৌছেছে। এদিকে ডুবে যাওয়া জাহাজটি উত্তোলন করতে না পারায় রবিবার থেকে মেঘনা নদীতে তেল ছড়িয়ে পড়ায় পরিবেশ বিপর্যয়ের আশংকা দেখা দিয়েছে। হুমকির মুখে পড়েছে মেঘনা নদীর মৎস্য সম্পদসহ জীব ও বৈচিত্র। জ্বালানি তেলসহ কার্গে জাহাজ ডুবির ঘটনায় পদ্মা অয়েল কোম্পানীর পক্ষ থেকে ৪ সদস্যের একটি তদন্ত টিম গঠন করা হয়েছে। সোমবার বিকালে ওই তদন্ত টিমের আহবায়ক উপ মহা ব্যবস্থাপক (পরিচালন ) আসিফ মালিকসহ টিমের সদস্যরা ঘটনা স্থল পরিদর্শন করে তাদের কার্যক্রম শুরু করেছে। কিন্তু কোন সময় এর উদ্ধার কাজ শুরু হবে তা নিশ্চিত করা হয়নি। তেলবাহী জাহাজ ডুবির ঘটনায় ভোলা মডেল থানায় একটি সাধারণি জিডি করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, চট্টগ্রাম বন্দর থেকে শনিবার বিকাল ৩টার দিকে ৯ লাখ লিটার ডিজেল এবং দুই লাখ ৩৪ হাজার লিটার অকটেন লোড করে এমভি সাগর নন্দিনী-২ নামের একটি জাহাজ চাঁদপুরের উদ্দেশ্যে রওনা হয়। রবিবার ভোর রাতের দিকে ভোলা সদর উপজেলার তুলাতুলি সংলগ্ন মাঝের চরের কাছে মেঘনা নদীতে ঘন কুয়াশার মধ্যে অপর একটি কার্গো জাহাজের সঙ্গে সংর্ঘষে তেলবাহী জাহাজটির ইঞ্জিন রুমের কাছে দিয়ে তলা ফেটে ডুবে যায়। এ সময় স্থানীয়দের সহায়তায় জাহাজে থাকা ১২জনকে উদ্ধার করা হয়। কিন্তু রবিবার সকালে জাহাজ থেকে জ্বালানি তেল মেঘনা নদীতে ছড়িয়ে পড়লে নদীতে থাকা শত শত জেলেরা সেই তেল নিতে হুমড়ি খেয়ে পড়ে। হাড়ি পাতি থেকে শুরু করে বোতল ও কনটেইনার করে এসব তেল সংরক্ষণ করে জেলেরা। এছাড়া ভোরের দিকে বহু জেলে কার্গোর ভেসে থাকা অংশ থেকে তেল লুটপাট করা হয়েছে বলেও কার্গো জাহাজের মাস্টার অভিযোগ করেন। এদিকে জাহাজ ডুবির পর মুহুর্তের মধ্যে ঘটনা স্থলের কয়েক কিলোমিটার এলাকায় ছড়িয়ে পড়ায় পরিবেশ বিপর্যয়ের আশংকা দেখা দিয়েছে। স্থানীয়রা জাানান, নদীতে গোসল করা থেকে শুরু করে নদীর পানি ব্যবহারকারীরা বিপাকে পরেন। তেল ছড়িয়ে পড়ায় নদীর পানি দূষণ হয়ে মৎস্য খাতে এর প্রভাব পড়বে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা। এ ব্যাপারে ভোলা সরকারি কলেজের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের বিভাগীয় প্রধান মো. মাহবুব আলম সাংবাদিকদের জানান, নদীর পানিতে দীর্ঘক্ষন জ¦ালানী তেলের আস্তরণ থাকলে জলজ প্রাণীর ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে। পানির ওপর তেলের আস্তরণ থাকলে পানির অক্সিজেনের মাত্রা কমে যায়। এতে জলজ প্রাণী ও উদ্ভিদের খাদ্য সংকট হয়ে মারা যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ভোলা সদর উপজেলার সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মো. জামাল হোসাইন জানান, তেল অপসারণ করা না হলে নদীর পানির স্বাভাবিক যে ইকোসিস্টেম আছে সেটি নষ্ট হয়ে যাবে। এর ফলে মাছের উৎপাদন ব্যাহতসহ মাছের সংকট দেখা দিবে। যা পরবর্তী প্রকট আকার ধারণ করবে। তাই যত দ্রুত সম্ভব এ তেল অপসারণের ব্যবস্থা নেয়া জরুরি। তেলবাহী কার্গো জাহাজ ডুবির ঘটনায় তদন্ত টিমের আহবায়ক পদ্মা অয়েল কোম্পানির উপ মহা ব্যবস্থাপক (পরিচালন) আসিফ মালিককে আহবায়ক করে ৪ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত টিম গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটির বাকী সদস্যরা হলেন, পদ্মা অয়েল কোম্পানরি সহকারি মহাব্যবস্থাপক (পরিচালন) মো. আনোয়ার হোসেন, চাঁদপুরের উপ ব্যবস্থাপক (পরিচালন) ইমরানুল হাসান চৌধুরী, বরিশাল বিভাগের বিপণন কর্মকর্তা শফিউল ইসলাম বিশ্বাস। আগামী চার কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত কমিটিকে কি কারনে এই ঘটনা ঘটেছে তার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিবে। এদিকে তদন্ত কমিটির সদস্যরা সোমবার বিকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে তাদের তদন্ত কার্যক্রম শুরু করেছে। তদন্ত কমিটির আহবায়ক আসিফ মালিক জানান, তদন্ত কমিটির সদস্যদের নিয়ে তিনি ঘটনাস্থলে এসেছেন। ডুবে যাওয়া জাহাজ উদ্ধার, জাহাজে থাকা তেল অপসারণ ও কিভাবে জাহাজটি ডুবে গেল সব কিছুই তদন্তের মধ্যে রয়েছে। প্রথামিকভাবে জাহাজটি উদ্ধারই এখন মূল কাজ। উদ্বারকারী ২টি জাহাজ ঘটনা স্থলে এসে না পৌছা পর্যন্ত নিশ্চিত করে বলা সম্ভব নয় কত সময় লাগবে জাহাজটি উদ্ধার করতে। অপর তদন্ত কর্মকর্তা পদ্মা অয়েল কোম্পানরি সহকারি মহাব্যবস্থাপক (পরিচালন) মো. আনোয়ার হোসেন জানান, ডুবে যাওয়া তেলের মূল্য প্রায় ১২ কোটি টাকা। জাহাজটি উদ্ধারের পর বলা যাবে মোট ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কতো। ঘটনা স্থলে উপস্থিত বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডবি্লউটিএ) যুগ্ম পরিচালক মো. আবদুস সালাম সাংবাদিকদের জানান, নদীতে তেল ছড়িয়ে পড়ে যাতে পরিবশের ক্ষতি না হয় সে জন্য কোস্ট গার্ডের সহায়তায় নদীতে ছড়িয়ে পড়া তেল নিস্কাশনের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এখনো জাহাজে ভিতর প্রচুর তেল রয়েছে। জাহাজের মালিক পক্ষের সঙ্গে কথা বলা হয়েছে। খালি জাহাজটির ওজন রয়েছে ৩৩০ মেট্রিকটন। এরপরও জাহাজে তেল ও পানি রয়েছে। কিন্তু বিআইডব্লিউটিএর উদ্ধারকারী জাহাজের উত্তোলনের ধারণ ক্ষমতা আছে ২৫০ মেট্রিক টন। তাই জাহাজটি উদ্ধার করা সম্ভব না। এখন জাহাজের মালিক পক্ষের সাথে বিষয়টি নিয়ে আলাপ হয়েছে। এখন বেসকারিভাবে দুইটি জাহাজের মাধ্যমে ডুবে যাওয়া জাহাজ উদ্ধারের সিদ্ধান্ত হয়েছে। ডুবে যাওয়া তেলবাহী জাহাজ এমভি সাগর নন্দিনী-২ এর মাস্টার মো. মাসুদুর রহমান বেলাল সাংবাদিকদের জানান, দুই জাহাজ একত্রে মিলে ও ডুবুরিদের সহায়তা নিমজ্জিত জাহাজটি উদ্ধারের চেষ্টা করা হবে। এতোও কাজ না হলে পরবর্তীতে ক্রেনের বিষয়ে চিন্তা করা হবে। তবে জাহাজের যে ওজন রয়েছে এতে ক্রেনের মাধ্যমে উদ্ধার করা কতটুকু সম্ভব হবে সেটি নিয়ে চিন্তিত তিনি। ভোলা কোস্টগার্ড দক্ষিণ জোনের স্টাফ অফিসার (অপারেশন) লে. হাসান মেহেদী আরিফ জানান, তারা পরিবেশে বির্পযয় রোধে রবিবার বিকাল থেকে অত্যাধুনিক মেশিনের সাহায্যে নদীতে থেকে তেল উত্তোলন করা শুরু করেছেন। এ পর্যন্ত প্রায় ২ লাখ লিটার তেল উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছে কোস্ট গার্ড। বর্তমানে তারা জাহাজটির নিরাপত্তার দায়িত্বে ঘটনা স্থলে তাদের টিম নিয়োজিত রয়েছে। ভোলা মডেল থানার ওসি শাহিন ফকির জানান, মেঘনায় তেলবাহী জাহাজ ডুবির ঘটনায় রবিবার রাতে এমভি সাগর নন্দিনী-২ এর পক্ষ থেকে মাষ্টার মো. মাসুদুর রহমান বেলাল হোসেন ঘটনা অবহিত করে একটি জিডি করেছে। তবে সেখানে কোন জাহাজের সঙ্গে সংর্ঘষের ঘটনা ঘটেছে তা উল্লেখ করেনি।