হুগাউতি লেকে মন কাড়া অতিথি পাখি সারি সারি জারুল

২৫ ডিসেম্বর, ২০২২ | ৭:৪৯ পূর্বাহ্ণ
অনলাইন নিউজ ডেস্ক , ইউ এস বাংলা ২৪

হাওড় বেষ্টিত বনের মধ্য দিয়ে বয়ে চলা হুগাউতি লেক। সবুজের চাদরে আচ্ছাদিত জালি ও মূর্তা বেত বাগান। এর পেছনে মাথা উঁচু করে আছে সারি সারি জারুল, হিজল আর করচ বন। ভেতর দিয়ে বয়ে চলা লেক আলাদা সৌন্দর্য এনে দিয়েছে বনটিকে। কুয়াশার চাদরে ডাকা হুগাউতি লেকে এসেছে অতিথি পাখিরা। বনের ভেতর দিয়ে বয়ে যাওয়া লেকে চলে পাখির ডুবো খেলা। লেকের পূর্বে গোয়াইনঘাট উপজেলার ফুলতৈলছ গ্রাম আর পশ্চিমে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা পানিচাপড়া হাওড়। দুই উপজেলার সীমান্ত লেক গার্ডেন হুগাউতি। অ্যামাজনের মতোই গাছ-গাছালির বেশিরভাগ অংশই বছরে চার থেকে সাত মাস থাকে পানির নিচে। বর্ষা মৌসুমের প্রায় সব সময়ই পানি থাকে বনে (মে-সেপ্টেম্বর)। শীতকালে অবশ্য সেটা হয়ে যায় আর দশটা বনের মতোই-পাতা ঝরা শুষ্ক ডাঙ্গা। আর ছোট ছোট খালগুলো হয়ে যায় পায়ে চলা মেঠো পথ। এখন জলজ প্রাণী কুলের আশ্রয় লেকে। বর্ষায় বড়ই অদ্ভুত এই জলের রাজ্য। কোনো গাছের কোমর পর্যন্ত ডুবে আছে পানিতে। একটু ছোট যেগুলো, সেগুলো আবার শরীরের অর্ধেকই ডুবিয়ে আছে জলে। কোথাও চোখে পড়বে মাছ ধরার জাল পেতেছে জেলেরা। ঘন হয়ে জন্মানো গাছ-পালার কারণে অন্ধকার পুরো বনটা। মাঝে মধ্যেই গাছের ডালপালা আটকে দেবে পথ। হাত দিয়ে ওগুলো সরিয়ে পথ চলতে হয়। তবে বর্ষায় এ বনে চলতে হবে খুব সাবধানে। কারণ হুগাউতি হচ্ছে সাপের আখড়া। সাপের মধ্যে রয়েছে গুঁইসাপ, গোখরা, জলধুড়াসহ বিষাক্ত অনেক প্রজাতি। বর্ষায় পানি বাড়লে সাপেরা ঠাঁই নেয় গাছের ওপর। মূলত প্রাকৃতিক বন হলেও বেত, কদম, হিজল, মূর্তাসহ নানা জাতের পানি সহিষ্ণু গাছ রয়েছে। বিশাল এ বনে রয়েছে জল সহিষ্ণু প্রায় বিভিন্ন প্রজাতির উদ্ভিদ। পাখিদের মধ্যে আছে সাদাবক, কানাবক, মাছরাঙ্গা, টিয়া, বুলবুলি, পানকৌড়ি, ঘুঘু, চিল ও বাজ। শীতে মাঝে মধ্যে আসে বিশালাকার সব শকুন। আর লম্বা পথ পাড়ি দিয়ে ঘাঁটি গাড়ে বালিহাঁসসহ হরেক জাতের পাখি। শুকনো মৌসুমে পায়ে হেঁটে ভেতরে গেলে ঝাঁকে ঝাঁকে পাখি আপনাকে উড়ে সরে গিয়ে পথ করে দেবে। এ দৃশ্য আসলেই দূর্লভ! পরিকল্পনা করে, একটু যত্ন নিয়ে সাজালে হুগাউতি সিলেটের রাতারগুলের মতো উল্লেখযোগ্য দর্শনীয় স্থান হতে পারে বলে মনে করেন দর্শনার্থীরা। হুগাউতিতে পর্যটক বান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি করতে কার্যকর পদক্ষেপ নেবে কর্তৃপক্ষ, এমন প্রত্যাশা স্থানীয়দের। এ বন ও লেকটিকে ট্যুরিজম হিসাবে গড়ে তুলতে প্রচারণা ও দর্শনার্থীদের স্বাচ্ছন্দ্যে ভ্রমণের প্রয়োজনীয় অবকাঠামো গড়ে তুলতে সিলেট জেলা প্রশাসন এবং সংশ্লিষ্ট দপ্তরের উদ্যোগ বেশি জরুরি বলে মনে করেন সিলেট ট্যুরিজম ক্লাবের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক সোহেল রানা। সারা বছরই স্থানীয় পর্যটকের সমাগম ঘটে এখানে।