দক্ষিণ এশিয়া বিনাশী ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ

১ মে, ২০২৫ | ৫:০৪ পূর্বাহ্ণ
ডেস্ক নিউজ , ডোনেট বাংলাদেশ

তথ্য সংগ্রহের উদ্দেশ্যে মঙ্গলবার অবৈধভাবে পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীরের আকাশে প্রবেশ করা একটি ভারতীয় কুয়াডকপ্টার গুলি করে ভূপাতিত করা হয়েছে। গত কয়েকদিন ধরে মধ্যরাতের পর থেকে ভোর পর্যন্ত সীমান্তের নিয়ন্ত্রণ রেখার দু’পাশ থেকে উভয় পক্ষের সেনারা গোলাগুলি করে চলেছে। পাকিস্তানের বেলুচিস্তানে অন্তত তিনটি সন্ত্রাসবাদী হামলা ব্যর্থ করে দিয়েছে পাকিস্তানের সন্ত্রাসবাদ নির্মূল বাহিনী। গত একটি দশকে আফগানিস্তানে পাকিস্তান সীমান্ত বরাবর ভারতের কমপক্ষে ১৮টি কনস্যুলেট খোলা হয়েছে। এই কার্যক্রমকে পাকিস্তান তার অভ্যন্তরে সন্ত্রাসবাদী হামলা চালানোর আয়োজন বলে অভিযোগ করে। পাকিস্তানের বেলুচিস্তানের বেলুচ লিবারেশন ফ্রন্ট প্রকাশ্যে দাবি করে এসেছে যে তারা ভারতের কাছে নিয়মিত অস্ত্র-প্রযুক্তি, প্রশিক্ষণ ও অর্থ পেয়ে থাকে। সাম্প্রতিক সেখানে একটি ট্রেন হাইজ্যাকের ঘটনায় প্রশিক্ষিত সামরিক বাহিনীর প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে। আফগানিস্তান থেকে হাইজ্যাকারদের নির্দেশনা দেওয়ার কথোপকথন ধরা পড়েছে বলে জানিয়েছে পাকিস্তানের সামরিক জনসংযোগ দপ্তর। ভারতীয় প্রাচীন সমর কৌশলবিদ চাণক্য উল্লেখ করেছিলেন, শত্রু রাজ্যের অপরপাশের রাজ্যের সঙ্গে বন্ধুত্ব স্থাপন করতে হবে; যাতে যুদ্ধকালে সেই রাজ্য থেকে শত্রুর ওপর আঘাত হানা যায়। সম্প্রতি ভারতীয় প্রতিনিধিদলকে আফগানিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করতে দেখা গেছে। বেলুচিস্তানে সন্ত্রাসীগোষ্ঠীর পক্ষে কাজ করার সময় ভারতীয় গোয়েন্দা কর্মকর্তা কুল্ভূষণ যাদব গ্রেফতার হয়ে পাকিস্তানের কারাগারে রয়েছেন। বেলুচিস্তানে সন্ত্রাসীরা বাস কিংবা গণপরিবহণে হামলা চালানোর সময় যাত্রীদের পরিচয় জিজ্ঞেস করে। পাঞ্জাবি যাত্রীদের আলাদা করে হত্যা করে। সম্প্রতি ভারত অধিকৃত কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ের পর্যটকদের পরিচয় জিজ্ঞেস করে হিন্দুদের আলাদা করে হত্যার প্যাটার্ন ধরা পড়েছে। ভারত ও পাকিস্তানের ইতিহাসে উভয় দেশের গোয়েন্দা সংস্থা একে অপরের দেশে সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালানোর প্রবণতা ধরা পড়েছে। সামরিক বাজেট বৃদ্ধি ও গোয়েন্দা সংস্থার প্রাসঙ্গিকতা ধরে রাখতে এরকম ধারাবাহিক শত্রুতার প্রয়োজন পড়ে; এমন অভিমত রাখেন অনেক পর্যবেক্ষক। ভারত ও পাকিস্তান উভয়েই একে অন্যের দেশে ঢুকে অনাসৃষ্টি করে। কিন্তু ভারতের মিডিয়ায় শতমুখে কথা বলে ‘দশ চক্রে ভগবান ভূত’ কিংবা ‘একটি মিথ্যা একশবার বলে তা সত্য বলে প্রমাণের’ দক্ষতা রয়েছে; ফলে দীর্ঘকাল ধরে ভারত শান্তিপ্রিয় আর পাকিস্তান সন্ত্রাসী এমন একটি বয়ান প্রায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আমেরিকা ও কানাডায় ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা কর্তৃক শিখ হত্যার অভিযোগ ও ইউরোপে মিথ্যা প্রচারণায় ব্যবহৃত ভারতীয় ফেইক ওয়েবসাইট স্ক্যান্ডাল পশ্চিমাদের মাঝে ভারতের ইমেজের ক্ষতি করেছে। ফলে পহেলগাঁওয়ে হামলার দশ মিনিটের মাঝে থানায় অভিযোগ দায়ের; অথচ অকুস্থলে সেনা পৌঁছাতে বেশ দেরি হওয়া; হামলার পর দ্রুততার সঙ্গে হামলাকারীদের স্কেচ প্রকাশের দক্ষতা, অথচ ভারতীয় সেনা অধ্যুষিত কাশ্মীরে এতো বড় হামলার গোয়েন্দা তথ্য না থাকা; যে উপত্যকায় এই মৌসুমে প্রতিদিন কমপক্ষে দুই হাজার পর্যটক আসেন, সেখানে পুলিশ কিংবা সেনা অনুপস্থিতি; নানারকম প্রশ্নের উদ্রেক করেছে। সে কারণেই পশ্চিমা মিডিয়া ভারতীয় মিডিয়ার ন্যারেটিভকে গ্রহণ করেনি। সুনির্দিষ্ট তথ্য প্রমাণ ছাড়া আরোপ কোনো পেশাদার মিডিয়ার কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। যেহেতু আন্তর্জাতিক সব মিডিয়ার সাংবাদিকরা পাকিস্তানে রয়েছেন; তারা প্রত্যক্ষ করেছেন, ২০১৪ সালে পেশাওয়ারে ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুলে ইসলামের নামে সন্ত্রাসী হামলায় শিশু হত্যার পরে জনদাবির মুখে পাকিস্তানে সন্ত্রাসবাদী নির্মূল অভিযান শুরু হয়। ফ্রান্সভিত্তিক অর্থনৈতিক সংস্থা এফএটিএফ-এর শর্ত পূরণ করতে পাকিস্তানে মাদ্রাসাগুলোতে সরকারি মনিটরিং ও তাদের আয়-ব্যয়ের হিসাবে স্বচ্ছতা আনা হয়। এফএটিএফ এতে সন্তুষ্ট হয়ে গ্রে লিস্ট থেকে পাকিস্তানকে সরালে তবে আইএমএফ-এর ঋণ পায় তারা। গত দু’বছরে অর্থনৈতিক পুনর্গঠনে পাকিস্তান সরকারের দৃষ্টি নিবদ্ধ রয়েছে। রাজনীতিতে ইসলামপন্থি দলগুলোর জনপ্রিয়তা তলানিতে। ফলে গত দুটি নির্বাচনে তারা একটি-দুটির বেশি আসন পায়নি। জনপরিসরে ইসলামের নামে সন্ত্রাসবাদ ঘৃণিত বিষয় হিসাবে সমালোচিত। জনপ্রিয় নেতা ইমরান খানকে কারাগারে রাখার পেছনে এস্টাবলিশমেন্টে হাত রয়েছে; এমন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে পাকিস্তানের সেনা প্রধান ও গোয়েন্দা সংস্থা তীব্র জনসমালোচনার মুখে। পাকিস্তানের অভ্যন্তরে ঘটে যাওয়া এই পরিবর্তন সম্পর্কে পশ্চিমা মিডিয়া অবহিত। ফলে ভারতের অভ্যন্তরে কোনো সন্ত্রাসী হামলা হলেই প্রমাণ ছাড়া ভারতীয় মিডিয়ার আরোপ ক্লিশে ডিফেমেশন হিসাবে বিবেচিত। সে কারণে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ ভারতের কথিত অভিযোগের ব্যাপারে আন্তর্জাতিক তদন্ত চেয়েছেন। পহেলগাঁও হামলার পরেই ভারত একপেশেভাবে সিন্ধু নদী চুক্তি বাতিল করে দেওয়ার পেছনেও রয়েছে ভিন্ন অঙ্ক। গত দশ বছর ধরে ভারত এই চুক্তির কিছু শর্ত পুনর্বিবেচনার দাবি জানাচ্ছে। অন্যদিকে চেনাব ও ঝিলাম নদীতে ভারতীয় হাইড্রোইলেকট্রিক প্রজেক্টের বিরুদ্ধে অভিযোগ নিয়ে পাকিস্তান হেগের আন্তর্জাতিক আদালতে গেছে। বিশ্বব্যাংকের অভিভাবকত্বে ১৯৬০ সালে স্বাক্ষরিত সিন্ধু নদী চুক্তির শর্ত পরিবর্তনে পাকিস্তানকে চাপ দিয়ে কোনো ফল না হওয়ায় পহেলগাঁও হামলাকে ইস্যু করে ভারত সিন্ধু নদী চুক্তি একপেশেভাবে বাতিল করেছে; এমন অভিযোগ করছে পাকিস্তান। জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিবেশ বিপর্যয়ের বাতাবরণে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ হবে ‘পানি’ নিয়ে; এমন ধারণা ছিল পরিবেশ বিশেষজ্ঞদের। ভারত-পাকিস্তানের যৌথ নদীর পানি বণ্টন নিয়ে সেরকম একটি যুদ্ধের দামামা বেজে উঠেছে। সিন্ধু নদীতে বাঁধ নির্মাণ করে পানি আটকে পাকিস্তানের মরুকরণের হুমকি পারমাণবিক শক্তিধর দুটি দেশকে যুদ্ধাবস্থায় নিয়ে গেছে। আন্তর্জাতিক মহল এখনই সমঝোতার উদ্যোগ না নিলে দক্ষিণ এশিয়া বিনাশী এই আত্মঘাতী যুদ্ধ যে অত্যাসন্ন তা মোটামুটি নিশ্চিত।