চিকিৎসাকেন্দ্র থাকলেও কাঙ্ক্ষিত সেবা মিলছে না

২৪ ডিসেম্বর, ২০২২ | ৬:৫৫ পূর্বাহ্ণ
অনলাইন নিউজ ডেস্ক , ইউ এস বাংলা ২৪

নানামুখী সমস্যায় জর্জরিত চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) স্বাস্থ্য বিভাগ দিন দিন নগরবাসীর আস্থা হারাচ্ছে। এসব স্বাস্থ্যকেন্দ্র করোনাকালে কোনো ভূমিকা রাখতে পারেনি, আবার সাধারণ রোগের চিকিৎসাও করতে পারছে না। এরইমধ্যে মশাবাহিত ডেঙ্গি রোগে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। ডেঙ্গি চিকিৎসার জন্য রোগীদের সরকারি অথবা বেসরকারি হাসপাতালে ছুটতে হয়েছে। যদিও কর্তৃপক্ষ বলছে, নভেম্বরে চসিক পরিচালিত নগরীর ৫৬টি চিকিৎসাকেন্দ্রে ২৫ হাজারের বেশি রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। চসিক পরিচালিত চারটি মাতৃসদন হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোর বেশিরভাগ ভবন জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। লিফট ও জেনারেটর বিকল। বিদ্যুৎ ও পানির সংকটের সমাধানও মিলছে না। প্রশাসনিক কার্যালয়, হাসপাতাল ও ইপিআই কেন্দ্রগুলোতে যানবাহন সমস্যা রয়েছে। চসিক পরিচালিত সেবাকেন্দ্রে চিকিৎসা না পেয়ে নগরবাসী চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে ভিড় করছেন। চমেক হাসপাতালের বহির্বিভাগে প্রতিদিন তিন হাজারের বেশি রোগী চিকিৎসা নেন। সাধারণ রোগ নিয়ে হাসপাতালটিতে ভিড় করায় জটিল ও কঠিন রোগে আক্রান্তদের সেবা দিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নানা ধরনের ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। বৃহস্পতিবার জ্বর, সর্দি ও কাশি নিয়ে চমেক হাসপাতালের বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিতে যান নগরীর ৩০নং পূর্ব মাদারবাড়ী ওয়ার্ডের বাসিন্দা আবু সোলায়মান। তিনি বলেন, চমেক হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়াতে হয়। অনেক ধরনের ভোগান্তিও পোহাতে হয়। এরপরও চসিকের স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চেয়ে ভালো চিকিৎসা পাওয়া যায়। এমন অবস্থা চলতে থাকলে চসিকের স্বাস্থ্যকেন্দ্র আছে-এটিই নগরবাসী ভুলে যাবে। জানা গেছে, চসিকের স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলো পরিচালনার জন্য প্রতি বছর ৩০ কোটি টাকা ব্যয় হয়। এর মধ্যে সংস্থাটি ১৩ কোটি টাকা ভর্তুকি দেয়। স্বাস্থ্যসেবার বিপরীতে কিছু আয় হয়। এদিকে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় অথবা অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে কোনো অর্থ বরাদ্দ না পাওয়ায় চিকিৎসাকেন্দ্রে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সংকটসহ নানা ধরনের দৈনতা রয়েছে। জানতে চাইলে চসিকের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ ইমাম হোসেন রানা বলেন, চসিকের স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতে টেকনিক্যাল পদে জনবল সংকটসহ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, নার্স ও মিডওয়াইফ সংকট রয়েছে। কেন্দ্রগুলোতে ওষুধ ও মেডিকেল সার্জিক্যাল পণ্য বা ক্লিনিক্যাল যন্ত্রপাতির স্বল্পতাও রয়েছে। এ কারণে কাঙ্ক্ষিত সেবা দেওয়া যাচ্ছে না। ‘লোকাল গভর্নমেন্ট কোভিড-১৯ রেসপন্স অ্যান্ড রিকভারি প্রজেক্ট’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় ৩৭টি স্বাস্থ্যকেন্দ্রের রক্ষণাবেক্ষণ ও পুনঃসংস্কার করা হবে। চসিকের স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্র জানায়, নভেম্বরে চসিক পরিচালিত হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতে ২৫ হাজার ৪৯৯ জন রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। এরমধ্যে নগরীর মেমন মাতৃসদন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছে ২ হাজার ৭১১ জন, চসিকের জেনারেল হাসপাতালে ৫৯৩ জন, মোস্তফা হাকিম সিটি করপোরেশন মাতৃসদন হাসপাতালে ৯৮৫ জন, নুরুল ইসলাম বিএসসি সিটি করপোরেশন মাতৃসদন হাসপাতালে (বহির্বিভাগ) ৪০১ জন, হাজী ওয়াইজ খাতুন সিটি করপোরেশন মাতৃসদন হাসপাতালে (বহির্বিভাগ) ৩৪৬ জন, নগরীর ১৮টি দাতব্য চিকিৎসালয়ে ৭ হাজার ৪৫৬ জন, ২২টি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ৮ হাজার ৬৫৩ জন, ডা. জাকির হোসেন হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে ৩০১ জন এবং নগরীর ১০টি হোমিওপ্যাথিক দাতব্য চিকিৎসালয়ে ৪ হাজার ৫৩ জন রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। এছাড়া নগরীর ৪১টি ওয়ার্ডকে সাতটি জোনে বিভক্ত করে ইপিআই (সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচি) সেবা দেওয়া হয়। এসব কেন্দ্রের মাধ্যমে এক মাসে ৫২ হাজার ৩১২ জনকে টিকা দেওয়া হয়েছে।