ডায়েরিতে বাবার ছবি আঁকতেন লামিয়া, লিখেছেন নিজের স্বপ্নের কথা

৩০ এপ্রিল, ২০২৫ | ৯:২০ পূর্বাহ্ণ
ডেস্ক নিউজ , ডোনেট বাংলাদেশ

বাবাকে বড্ড ভালোবাসতেন লামিয়া। মৃত্যুর আগে মন খারাপের সময় ডায়েরিতে বাবার ছবি এঁকে, সেই ছবির সঙ্গে কথা বলতেন তিনি। জুলাইয়ের আন্দোলনে শহিদ হওয়া পিতা জসীমউদ্দিন পাশেই চিরনিদ্রায় শায়িত হয়েছেন লামিয়া। সম্প্রতি দুমকি উপজেলার পাঙ্গাশিয়া ইউনিয়নের আলগী গ্রামে গিয়ে জানা যায়, নানা বাড়িতে থেকেই পড়াশোনা করতেন লামিয়া। তার ছোট্ট পড়ার টেবিলে সাজানো বইয়ের পাশেই পাওয়া যায় একটি ডায়েরি। যেখানে বাবাকে হারানোর ২৬ দিন পরই লেখা শুরু করেন নিজের অভিমানি জীবনের স্বপ্নের কথা। ডায়েরিতে লামিয়া লিখেছেন, ‘আমার জীবনের ছোট একটি স্বপ্ন হলো নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করা। বাবা মারা গেছেন ২৬ দিন। তার ভিতরেই দেখা যাইতেছে কে কত দূর ভালোবাসেন। বাবা যতদিন ছিল ততদিন সবার কাছ থেকে আদর পাইছি। তাও খুব কম। আমার বাবায় মানুষকে খাওয়াইতে পারত তখন তারা আমাদের প্রতি ভালোবাসা দেখাইত। আর এখন আমরা অসহায় দেইখা তারা আমাদের প্রতি অবহেলা করেন। তাই আমি চাই নিজেকে এমন করে প্রতিষ্ঠিত করতে যেন, যারা আজ অবহেলা করে, তারা আমি প্রতিষ্ঠিত হবার পর আমাদের কাছে অনুতাপ প্রকাশ করে। নিজের জীবনের লক্ষ্য শুধু পরিবারকে নিয়ে। ভাই-বোন প্রতিষ্ঠিত করা, সম্পূর্ণ লেখাপড়া শেষ করা ও ভাইয়ের ভবিষ্যৎ গড়া। ভাইকে মানুষের মতো মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা। যেদিন এগুলো সব পূরণ করতে পারব সেদিন থেকে আমার জীবন ভালো কাটবে। আব্বু দোয়া কইরো এগুলো যেন সব পূরণ করতে পারি। আম্মুকে সুখ দিতে পারি। আম্মুর সব দুঃখ যেন বুঝতে পারি। পরিবারকে নিয়ে সুখে থাকতে পারি। এর পরেই কলম দিয়ে বাবার ছবি এঁকেছেন লামিয়া। এভাবেই মনের ভেতর লুকিয়ে রাখা কথাগুলো বাবার কাছে বলতেন। এদিকে পাঙ্গাশিয়ার রাজগঞ্জ গ্রামে লামিয়ার কবরের পাশে বসে কথা হয় তার দাদা সোবাহান হাওলাদারের সঙ্গ। তিনি বলেন, ‌‘নাতনি তাকে বলেছিলেন- রোববার ঢাকা থেকে বাড়িতে ফিরবেন। কিন্তু আসলো লাশ হয়ে। কেন যে এমনটি হলো বুঝতে পারছেন না তিনি।’ পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, স্বামী ও সন্তানকে হারিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন লামিয়ার মা রুমা বেগম। স্যালাইন চলছে। চিকিৎসা চলার কারণে তার সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। উল্লেখ্য, শনিবার রাত ৯টায় ঢাকার শেখেরটেক ৬ নম্বর রোডের বি/৭০ নম্বর বাড়িতে আত্মহত্যা করেন লামিয়া। এর আগে গত ১৮ মার্চ সন্ধ্যায় পটুয়াখালীর দুমকি উপজেলার পাঙ্গাসিয়া ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডে বাবা জুলাই শহিদ জসীম উদ্দিনের কবর জিয়ারত শেষে নানাবাড়ি একই ইউনিয়নের আলগী গ্রামে ফেরার পথে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হন লামিয়া।