‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করা হবে

২৩ ডিসেম্বর, ২০২২ | ৮:৩৪ পূর্বাহ্ণ
অনলাইন নিউজ ডেস্ক , ইউ এস বাংলা ২৪

আওয়ামী লীগের ২২তম জাতীয় সম্মেলন আগামীকাল শনিবার। ইতোমধ্যে সম্মেলনের সার্বিক প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। দলের নেতাকর্মীসহ দেশবাসী এখন সেই মাহেন্দ্রক্ষণের অপেক্ষায়। সকাল সাড়ে ১০টায় ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শান্তির প্রতীক পায়রা উড়িয়ে সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জাতীয় পতাকা ও দলীয় পতাকা উত্তোলন শেষে কেন্দ্রীয় নেতারা মঞ্চে আসার পর আধঘণ্টা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করা হবে। এরপর শোক প্রস্তাব উত্থাপন করবেন দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া। সম্মেলনে সাধারণ সম্পাদকের প্রতিবেদন উপস্থাপন করবেন ওবায়দুল কাদের। স্বাগত বক্তব্য দেবেন অভ্যর্থনা কমিটির আহ্বায়ক শেখ ফজলুল করিম সেলিম। সভাপতি শেখ হাসিনার বক্তব্যের মধ্য দিয়ে সম্মেলনের প্রথম অধিবেশন শেষ হবে। এবারের জাতীয় সম্মেলনে ২০৪১ সালের মধ্যে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করা হবে। বিষয়টি সামনে রেখেই সম্মেলনের স্লোগান নির্ধারণ করা হয়েছে ‘উন্নয়ন অভিযাত্রায় দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের উন্নত, সমৃদ্ধ ও স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়’। সারা দেশ থেকে প্রায় সাত হাজার কাউন্সিলর এবং লক্ষাধিক ডেলিগেটসহ অন্যান্য নেতাকর্মী অংশ নেবেন। সম্মেলনের প্রথম পর্ব শেষ হওয়ার পর নামাজ ও খাবার বিরতি শেষে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে শুরু হবে কাউন্সিল অধিবেশন। এই অধিবেশনে আওয়ামী লীগের নতুন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচন করা হবে। সম্মেলনের নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার জন্য আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও প্রবীণ আইনজীবী ইউসুফ হোসেন হুমায়ুনকে চেয়ারম্যান করে তিন সদস্যের নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়েছে। কমিশনের অপর দুই সদস্য হচ্ছেন প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমান এবং উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সাহাবুদ্দিন চুপ্পু। ব্যালট পেপার, স্বচ্ছ ব্যালট ও নির্বাচন কমিশন সব প্রস্তুত। তবে এবারও এর ব্যবহারের সম্ভাবনা কম। কারণ অন্যান্যবারের মতো এবারও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাই থাকবেন। কাউন্সিলররা সর্বসম্মতি দিয়ে তাকেই যে টানা দশমবারের মতো আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত করবেন, সেটা মোটামুটি নিশ্চিত। তাকেই দায়িত্ব দেবেন সাধারণ সম্পাদকসহ অন্যান্য নেতা নির্বাচনের। রেওয়াজ অনুযায়ী, নির্বাচন কমিশন আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব গ্রহণের আগেই বর্তমান কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ বিলুপ্ত ঘোষণা করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর তিনি সভাপতির আসন ছেড়ে কাউন্সিলরদের জন্য নির্ধারিত আসনে গিয়ে বসবেন। এরপর নির্বাচন কমিশন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থিতা ঘোষণা করবেন। প্রথমে দলটির দুজন প্রবীণ নেতা সভাপতি পদে নাম প্রস্তাব ও সমর্থন করবেন। একাধিক প্রার্থী না থাকলে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সভাপতি নির্বাচিত ঘোষণা করা হবে। একই প্রক্রিয়ায় নির্বাচন করা হবে সাধারণ সম্পাদক। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে একাধিক কোনো প্রার্থী না থাকলে প্রস্তাবিত দুজনকেই সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচিত ঘোষণা করবেন নির্বাচন কমিশন। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচনের পর নবনির্বাচিত নতুন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক মূল মঞ্চে উঠে পরবর্তী কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া শুরু করবেন। এরপর বাকি পূর্ণাঙ্গ কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব নির্বাচনের দায়িত্ব কাউন্সিলররা সভানেত্রী শেখ হাসিনার ওপরই অর্পণ করবেন। তাই কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব গঠনের চাবিকাঠি দলের প্রধানের হাতেই থাকছে। অনুমাননির্ভর নানাজনের নাম এলেও নীতিনির্ধারকরা বলছেন, প্রবীণ-নবীনের সংমিশ্রণে নতুন নেতৃত্ব গঠিত হবে। তবে এবারের সম্মেলনে বড় ধরনের চমক থাকছে না। শনিবারের কাউন্সিল অধিবেশনেই অধিকাংশ পদে মনোনীত নেতাদের নাম ঘোষণা করতে পারেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এদিকে সম্মেলন ঘিরে ঘুম হারাম অবস্থা বর্তমান কেন্দ্রীয় নেতাদের। অনেকেই ভুগছেন পদ হারানোর আতঙ্কে। আবার অনেকে রয়েছেন পদোন্নতির আশায়। দলের সভাপতিমণ্ডলীতে কিছু নতুন মুখ আসতে পারে এবং সম্পাদকমণ্ডলী ও সদস্যপদে সামান্য কিছু রদবদলের সম্ভাবনা আছে বলে দলের গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন সূত্র থেকে আভাস পাওয়া গেছে। তবে দলটির সূত্রগুলো বলছে, নবীন ও প্রবীণের সম্মিলনে আওয়ামী লীগে নতুন নেতৃত্ব আসবে। এতে প্রবীণদের অভিজ্ঞতার পাশাপাশি সংগঠনকে গতিশীল করতে কমিটিতে তারুণ্যের নতুন রক্ত সঞ্চালন করা হবে। এদিকে বৃহস্পতিবার দুপুরে সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, মঞ্চ সাজসজ্জাসহ আনুষঙ্গিক সব কাজ প্রায় শেষ। চলছে শেষ মুহূর্তের ঘষামাজার কাজ। রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে পদ্মা সেতুর ওপরে নৌকার আদলে তৈরি ৮০ ফুট দৈর্ঘ্য, ৪৪ ফুট প্রস্থের মঞ্চ তৈরির কাজ শেষ পর্যায়ে। মূল মঞ্চের উচ্চতা হবে ৭ ফুট। সাংস্কৃতিক পর্বের জন্য তৈরি হচ্ছে আলাদা মঞ্চ। মূল মঞ্চে চার লেয়ারে চেয়ার সাজানো হবে। প্রথমে দলের সভাপতি শেখ হাসিনা এবং সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বসবেন। দ্বিতীয়টিতে উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, সিনিয়র নেতা ও সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য, বাকি দুটিতে কেন্দ্রীয় নেতারা। মূল মঞ্চে মোট ১২০টি চেয়ার রাখা হবে। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার কারণে কিছুটা কৃচ্ছ সাধনের লক্ষ্যে সম্মেলনে সাদামাটা আয়োজনের জন্য এ বছর বিদেশিদের দাওয়াত দেওয়া হয়নি। তবে সম্মেলনে কেন্দ্রীয় ১৪ দল, জাতীয় পার্টি, বিএনপিসহ নিবন্ধিত সব রাজনৈতিক দলকে দাওয়াত দিয়েছে আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনের বেশির ভাগই দুই দিনব্যাপী হয়েছে। এবার তা একদিনে নামিয়ে আনা হয়েছে খরচ কমাতে। ২০১৯ সালে সর্বশেষ সম্মেলন হয়েছিল ২০ ও ২১ ডিসেম্বর। সর্বশেষ সম্মেলনের বাজেট ছিল ৩ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। এবারের সম্মেলনের জন্য বাজেট ৩ কোটি ১৩ লাখ টাকা অনুমোদন করেছে আওয়ামী লীগের জাতীয় কমিটি।