আস্থাহীনতায় কাজে লাগানো যাচ্ছে না সুনীল অর্থনীতি

২২ ডিসেম্বর, ২০২২ | ১০:০২ অপরাহ্ণ
অনলাইন নিউজ ডেস্ক , ইউ এস বাংলা ২৪

সুনীল অর্থনীতির বিপুল সম্ভাবনা কাজে লাগানো যাচ্ছে না। এক্ষেত্রে রয়েছে নানা চ্যালেঞ্জ। বিশ্বাস ও আস্থাহীনতায় এ খাতে বিনিয়োগ করছে না বেসরকারি উদ্যোক্তারা। শুধু সরকারি বিনিয়োগ দিয়ে সমুদ্রের সম্পদ পুরোপুরি কাজে লাগানো সম্ভব হবে না। এজন্য সব বাধা দূর করে বেসরকারি বিনিয়োগ নিয়ে আসা জরুরি। বৃহস্পতিবার ‘প্রমোট সাসটেইনেবল ব্ল– ইনভেস্টমেন্ট ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক জাতীয় কর্মশালায় বক্তারা এমন অভিমত ব্যক্ত করেন। পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ (জিইডি), ইউএনডিপি এবং জাতিসংঘের পরিবেশ সংক্রান্ত কর্মসূচি (ইউএনইপি) যৌথভাবে এ কর্মশালার আয়োজন করে। সাভারের বিরুলিয়ায় ব্র্যাক সিডিএম সম্মেলন কক্ষে এটি অনুষ্ঠিত হয়। কর্মশালায় প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক জুয়েনা আজিজ। বিশেষ অতিথি ছিলেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব জিয়াউল হাসান, বেসামরিক বিমান পরিবহণ ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মোকাম্মেল হোসেন এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মেরিটাইম অ্যাফেয়ার্স ইউনিটের সচিব রিয়াল অ্যাডমিরাল (অব.) খোরশেদ আলম। অতিথি ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেরিটাইম ইউনিভার্সিটির উপাচার্য রিয়াল অ্যাডমিরাল (অব.) এম খালিদ ইকবাল এবং জিইডির সদস্য (সচিব) ড. মো. কাউসার আহাম্মদ। সভাপতিত্ব করেন ইউএনডিপির সহকারী আবাসিক প্রতিনিধি আনোয়ারুল হক। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ইউএনডিপি বাংলাদেশের চিফ টেকনিক্যাল অ্যাডভাইজার ফকরুল আহসান ও সংস্থাটির অর্থনীতিবিদ জোবায়ের হোসেন। বক্তারা বলেন, সমুদ্রসীমায় আমাদের আহরণযোগ্য সম্পদের পরিমাণ প্রায় ২৪ ট্রিলিয়ন ডলার হবে। আমরা এখন পর্যন্ত আহরণ করি সামান্য সম্পদ। সারা বিশ্বে সমুদ্র দিয়ে প্রায় দেড় লাখ জাহাজ যাতায়াত করে। এগুলো প্রায় ১৮ বিলিয়ন টন মালামাল এক দেশ থেকে আরেক দেশে পরিবহণ করে। সেখানে বাংলাদেশের জাহাজ আছে মাত্র ৮০টি। বাংলাদেশে যে পরিমাণ আমদানি হয় এতে বছরে প্রায় ৫ হাজার জাহাজ লাগে। এগুলোর পেছনে জাহাজ ভাড়া দিতেই খরচ হয় প্রায় ৯ বিলিয়ন ডলার। এখনো আমাদের একটিও সমুদ্র বন্দর নেই। চট্টগ্রাম বন্দরকে সমুদ্রবন্দর বলা হলেও সেটি আসলে নদীবন্দর। এখন মাতারবাড়ীতে কেবল একটি সমুদ্র বন্দর তৈরি হচ্ছে। সমুদ্রে বড় জাহাজের অভাবে কাছাকাছি এলাকাতেই মাছ আহরণ করা হচ্ছে। তবে গভীর সমুদ্রে বড় বড় মাছ থাকলেও সেগুলো আহরণ সম্ভব হচ্ছে না। সমুদ্রের ২২টি ব্লকে এখনো কোনো সিসমিক সার্ভেই হয়নি। ফলে তেল ও গ্যাস উত্তোলন বা মজুদের বিষয়ে কোনো তথ্য জানা যাচ্ছে না। সমুদ্র পর্যটনেও অনেক পেছনে রয়েছে বাংলাদেশ। এক্ষেত্রে বিপুল সম্ভাবনা কাজে লাগানো যাচ্ছে না। সমুদ্রে যে সম্পদের ভান্ডার রয়েছে সেগুলোর কার্যকর ব্যবহারে বেসরকারি বিনিয়োগ প্রয়োজন। কিন্তু সমুদ্র অর্থনীতি কাজে লাগানোর ক্ষেত্রে রয়েছে নানা চ্যালেঞ্জ। এগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো- মেরিটাইম সম্পর্কে পর্যাপ্ত জ্ঞানের অভাব, প্রশিক্ষণের অভাব, সমুদ্রে নিরাপত্তার অভাব, সমুদ্রবিজ্ঞানে কম জ্ঞান, সঠিক তথ্যের অভাব, গবেষণা না থাকা, পর্যাপ্ত বরাদ্দ না থাকা এবং বেসরকারি খাতের বিশ্বাস ও আস্থাহীনতার অভাব। জুয়েনা আজিজ বলেন, টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হলে দেশের অর্থনীতিকেও টেকসই করতে হবে। সেক্ষেত্রে উন্নত দেশে যেতে হলে নিজস্ব সম্পদের ব্যবহার বাড়াতে হবে। এক্ষেত্রে সমুদ্র অর্থনীতির যে বিপুল সম্ভাবনা আছে সেটি কাজে লাগাতে চায় সরকার। এজন্য সবার সমন্বিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন। ড. কাউসার আহাম্মদ বলেন, উন্নত দেশে যেতে হলে প্রবৃদ্ধির সঙ্গে পরিবেশকে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। সমুদ্র গবেষণা ও সম্পদ কাজে লাগানোর বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার। এ নিয়ে নানা উদ্যোগ থাকলেও সেটি আরও জোরদার করা প্রয়োজন।