তৃতীয় সাবমেরিন ক্যাবল প্রকল্প অনুমোদন

২২ ডিসেম্বর, ২০২২ | ১০:২৫ পূর্বাহ্ণ
অনলাইন নিউজ ডেস্ক , ইউ এস বাংলা ২৪

দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য, প্রশাসনিক কাজ, শিক্ষাসহ সর্বত্রই উচ্চগতির ইন্টারনেটের ব্যবহার প্রতিনিয়ত বাড়ছে। গত কয়েক বছরে নেট ব্যবহার বৃদ্ধির এ হার ৭০ শতাংশের বেশি। এ বর্ধনশীল ব্যবহারকারীদের চাপ সামাল দিয়ে ইন্টারনেট সেবার উচ্চ গতি ধরে রাখতে তৃতীয় সাবমেরিন ক্যাবল স্থাপন করছে সরকার। যার মাধ্যমে বিদ্যমান চাহিদা সামাল দিয়ে ফাইভ জি চালু হওয়ার পরবর্তী সময়ে ব্যাপক চাহিদা সামাল দেওয়ারও সক্ষমতা সৃষ্টি হবে। সম্প্রতি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি বা একনেক সভায় তৃতীয় সাবমেরিন ক্যাবল স্থাপনের প্রকল্পটি ব্যয় বৃদ্ধিসহ আনুমোদন করা হয়েছে। ৩৬২ কোটি টাকা ব্যয় বৃদ্ধি করায় প্রকল্পটিতে মোট ব্যয় হবে একহাজার ৫৫ কোটি টাকা। ২০২৫ সালের জুন মাসের মধ্যে কাজ শেষ করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে সরকারি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবল কোম্পানি লিমিটেড (বিএসসিসিএল)। প্রকল্পটির মাধ্যমে দেশে আন্তর্জাতিক মানের কার্যকরী ও নির্ভরযোগ্য টেলিযোগাযোগ অবকাঠামো গড়ে তোলা হবে। কক্সবাজার থেকে একদিকে সিঙ্গাপুর ও অন্যদিকে ফ্রান্স পর্যন্ত বিস্তৃত একটি ক্যাবল রুট তৈরি করা হবে। যার ফলে প্রতি সেকেন্ডে ১৩ টোরাবিট গতি পাওয়া যাবে। ফলে দেশের বিভিন্ন জায়গায় ‘স্মার্ট শহর’ ও ‘স্মার্ট কৃষি’ প্রচলন করা সম্ভব হবে। এ সাবমেরিন ক্যাবলটির মেয়াদ হবে ২০ বছর । প্রকল্পটির পরিচালক ও বাস্তবায়নকারী সংস্থার ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা মির্জা কামাল আহমেদ বলেন, আমাদের বর্তমান গতি যেখানে ৬ দশমিক ৫ টোরাবাইট সেখানে আমরা পাব ১৩ দশমিক ২ টোরাবাইট। বর্তমানে যে চাহিদা বাড়ছে সেটা পূরণ করার জন্যই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। আর এসব সাবমেরিন ক্যাবল বসানো অনেক সময় সাপেক্ষ এবং অনেকগুলো দেশ একসঙ্গে মিলিত হয়ে কাজ করতে হয় বলে জানান তিনি। তাই এখন সুযোগ আসায় সবার (কয়েকটি দেশ) সঙ্গে মিলে এটা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। প্রকল্পটি গ্রহণের যৌক্তিকতার বিষয়ে বলা হয়, দেশের একমাত্র রাষ্ট্রীয় কোম্পানি হিসাবে বিএসসিসিএল সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে ব্যান্ডউইথ সেবা প্রদান করে আসছে। কক্সবাজার ও কুয়াকাটায় ল্যান্ডিং স্টেশনের মাধ্যমে এ সেবা প্রদান করছে সংস্থাটি। তবে গত কয়েক বছরে দেশের বার্ষিক ব্যান্ডউইথ ব্যবহার বৃদ্ধির হার প্রায় ৭০ শতাংশ ছাড়িয়েছে। বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ব্যান্ডউইথ এর এই ঊর্ধ্বমুখী ব্যবহারের প্রবণতা পরবর্তী কয়েক বছর অব্যাহত থাকবে। তাছাড়া ৫-জি সেবা বৃহৎ পরিসরে চালু হলে দেশে ব্যান্ডউইথ এর চাহিদা আরও বৃদ্ধি পাবে। এদিকে দেশের প্রথম সাবমেরিন ক্যাবলটি ২০০৫ সালে এবং দ্বিতীয় ক্যাবলটি ২০১৭ সালে চালু করা হয়েছিল। প্রথমটির মেয়াদ ২০ বছর বিবেচনায় আগামী ২০২৫ সালে এই ক্যাবলের কার্যক্ষমতা শেষ হয়ে যাবে। দ্বিতীয় সাবমেরিন ক্যাবলটি প্রায় ১৫ বছরের পুরানো হওয়ায় রক্ষণাবেক্ষণের কারণে সেবা বিঘিœত হওয়ার হার বেশি। তুলনামূলক পুরনো প্রযুক্তির কারণে এই ক্যাবলের সংযোগ গ্রহণে ব্যবহারকারীরাও কম আগ্রহী। এমতাবস্থায় তৃতীয় সাবমেরিন ক্যাবল স্থাপন করা জরুরি হয়ে পড়ায় প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়েছে। প্রকল্পের প্রধান কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে- এক সেট সাবমেরিন ক্যাবল ও সংশ্লিষ্ট সরঞ্জাম স্থাপন করা। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৯৬৬ কোটি টাকা। ৫ কোটি ৩৩ লাখ টাকায় বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম সংযুক্ত করা হবে। আবাসিক ও অন্যান্য ভবন নির্মাণে ৬ কোটি টাকার বেশি ব্যয় হবে। চলতি অর্থবছরে প্রকল্পটিতে ব্যয় করা হবে ৫৯৪ কোটি টাকা। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবে উপযোগী শিল্পাঞ্চল, অর্থনৈতিক অঞ্চল, রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা (ইপিজেড) ও এসএমই প্রতিষ্ঠান-সমৃদ্ধ এলাকাগুলোয় উচ্চগতির ইন্টারনেট সংযোগ স্থাপন করা যাবে। তাছাড়া আইওটি, ক্লাউড পরিষেবা এবং এআই-ভিত্তিক বিশ্লেষণ প্ল্যাটফর্ম সহজলভ্য হবে। প্রকল্পটির মাধ্যমে কক্সবাজার ক্যাবল ল্যান্ডিং স্টেশন থেকে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ব্যান্ডউইথ সরবরাহ করা হবে। ফলে দেশের সকল এলাকায় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ প্রভাব থাকবে। সিঙ্গাপুর হতে ফ্রান্স পর্যন্ত সংযুক্ত সাবমেরিন ক্যাবলটি ভারত মহাসাগর, আরব সাগর, লোহিত সাগর হয়ে ভূ-মধ্য সাগর পর্যন্ত বিস্তৃত হবে। ক্যাবলটির কোর ল্যান্ডিং স্টেশন হবে সিঙ্গাপুর, ভারত, জিবুতি, মিসর ও ফ্রান্সে। বাংলাদেশের ব্রাঞ্চটি বঙ্গোপসাগর হয়ে কক্সবাজারস্থ ক্যাবল ল্যান্ডিং স্টেশন পর্যন্ত বিস্তৃত হবে। প্রকল্পটির বিষয়ে গত সেপ্টেম্বর মাসে পরিকল্পনা কমিশনের বাস্তবায়ন কমিটির সভা হয়। সেখানে বর্তমান ডলার সংকটের সময়ে প্রয়োজনীয় অর্থায়ন নিশ্চিত করতে এবং ডলার রেট নির্ধারণে সংস্থার পরিচালনা পর্ষদের সভায় সিদ্ধান্ত নিতে বলা হয়। পরবর্তীতে দেশের বর্তমান চাহিদা বৃদ্ধি ও ভবিষ্যৎ প্রয়োজনীয়তা বিবেচনায় প্রকল্পটি বাস্তবায়নের সুপারিশ করে পরিকল্পনা কমিশন। উল্লেখ্য, দেশের সকল ইউনিয়নে উচ্চ গতির ইন্টারনেট সংযোগ স্থাপনের ব্যবস্থা করেছে সরকার। আগামী দিনের মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হতে প্রযুক্তিকে একটি অন্যতম অনুসঙ্গ হিসেবে বিবেচনা করছে সরকার। তাই ইন্টারনেটের গতি বৃদ্ধির মাধ্যমে অর্থনীতির গতি বাড়াতে এ প্রকল্পটি নেওয়া হয়েছে বলছেন সংশ্লিষ্টরা।