জাল দলিলে শত কোটি টাকার জমি জালিয়াতি

২২ ডিসেম্বর, ২০২২ | ৮:১১ পূর্বাহ্ণ
অনলাইন নিউজ ডেস্ক , ইউ এস বাংলা ২৪

কুষ্টিয়ায় জাল দলিলে প্রতিবছর শত কোটি টাকার জমি হাতিয়ে নিচ্ছে একটি জালিয়াত চক্র। এ চক্রের দৌরাত্ম্যে রেকর্ডীয় সাধারণ জমির মালিকরা চরম আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। প্রতিকার চেয়ে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন একাধিক ভুক্তভোগী। তারা বলছেন, চক্রটি দীর্ঘদিন ধরে পরিকল্পিতভাবে আইনের ফাঁক গলে ভূমি অফিস ও সদর সাবরেজিস্ট্রি অফিসের যোগসাজশে নিজেরাই দাতা-গ্রহীতা সেজে একের পর এক জাল দলিল করছে। অনুসন্ধানে চলতি বছরেই এমন ছয়টি জাল দলিলের সন্ধান মিলেছে। এসব জমির বাজারমূল্য প্রায় শত কোটি টাকা। এসব অপকর্মের সিংহভাগের সঙ্গেই কুষ্টিয়া সদর সাবরেজিস্ট্রার জড়িত বলে দাবি করেন ক্ষতিগ্রস্তরা। তবে সদর সাবরেজিস্ট্রার সুব্রত রায় সিংহ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, জমির প্রকৃত মালিক এবং জালিয়াত চক্রের লোককে ভেরিফাই করার কোনো ব্যবস্থা না থাকায় চক্রটি এ ধরনের জালিয়াতিতে জড়িয়ে পড়ছে। পদ্ধতিগত ভুলের সুযোগ নিয়ে করা জালিয়াতি বন্ধ করার কোনো সুযোগ সাবরেজিস্ট্রারের হাতে নেই। কুষ্টিয়া মডেল থানা ও পিবিআইয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানান, অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী জোবায়দা নাহার শেখ ও তার বোন সরকারি কর্মকর্তা জামিলা নাহার শেখের প্রায় ১০ কোটি টাকার ভূ-সম্পত্তি কুক্ষিগত করে একটি চক্র। এমন অভিযোগে ৯ ডিসেম্বর কুষ্টিয়া মডেল থানায় ৯ জনের নামোল্লেখসহ অজ্ঞাত পরিচয় আরও ৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন ভুক্তভোগী। এ মামলায় এজাহার নামীয় আসামি এক ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তাসহ তিনজনকে গ্রেফতার করে আদালতে সোপর্দ করে পিবিআই। কুষ্টিয়া দেওয়ানি আদালতের কৌঁসুলি অ্যাডভোকেট আ আ স ম আকতারুজ্জামান মাসুম জানান, গত ১০ মাসে জাল দলিলে জমি দখলের প্রতিকার চেয়ে দেওয়ানি আদালতে অন্তত ডজনখানেক মামলা হয়েছে। সেগুলো এখনো বিচারাধীন। এসব জাল দলিলের সবই কুষ্টিয়া সদর সাবরেজিস্ট্রি অফিস থেকে হয়েছে। জানা যায়, কুষ্টিয়া শহরের প্রাণকেন্দ্রে কালিশংপুর মার্কাজ মসজিদের পাশে অবস্থিত প্রায় ৬৪ শতক অন্যের জমি বিক্রি করে দিয়েছে জালিয়াত চক্র। প্রথমে এনআইডি জালিয়াতির মাধ্যমে কুষ্টিয়া সদর সাবরেজিস্ট্রি অফিস থেকে ৬৫৩৫নং আমমোক্তারনামা দলিল তৈরি করে চক্রটি। পরে রেজিস্ট্রি অফিস থেকে ১২২৪৬/২২ ও ১২২৪৭/২২নং জাল দলিল সস্পাদনের মাধ্যমে দৌলতপুর উপজেলার হোসেনাবাদ মাজদিয়ার গ্রামের মোকাদ্দেস আলী এবং একই উপজেলার কামালপুরের পিয়ারপুর গ্রামের নুরুল ইসলামের মেয়ে নুরুন্নাহার খাতুনের কাছে বিক্রয় করেন। জমিটির প্রকৃত বাজার মূল্য ১০ কোটি টাকা হলেও দলিল গ্রহীতারা জালিয়াত চক্রের অন্যতম হোতা দলিল দাতা কুষ্টিয়া শহরের মজমপুর এলাকার আসাদুর রহমান বাবুকে এক কোটি এক লাখ টাকা দিয়ে দলিল করেন। অপর দলিল জালিয়াতির ঘটনায় সাবরেজিস্ট্রি অফিস থেকে কমিশন করে এক অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী জোবায়দা নাহার শেখ ও তার বোন সরকারি কর্মকর্তা জামিলা নাহার শেখের প্রায় ১০ কোটি টাকার জমি বিক্রি করে দেয় চক্র। চলতি বছরেই তিনটি জাল দলিলের মাধ্যমে এ সম্পত্তি রেজিস্ট্রি করে নেয় জালিয়াত চক্রটি। ১১ মার্চ ১৫নং কমিশন কেসের মাধ্যমে ২৫৩৩/২০২২ দলিল সম্পাদন করা হয়। দুই নারীকে জোবায়দা নাহার শেখ ও তার বোন জামিলা নাহার শেখ সাজিয়ে দাতা দেখানো হয় এবং গ্রহীতা শাহ মো. মেজবাহুর রহমান। দলিলে জমির মূল্য দেখানো হয় এক কোটি ৯ লাখ ৭০ হাজার টাকা। একই দিন ১৬নং কমিশন কেসের মাধ্যমে ২৫৩৪/২০২২নং দলিল রেজিস্ট্রি করা হয়। এই দলিলের দাতাও দেখানো হয় সাজানো জোবায়দা নাহার শেখ ও তার বোন জামিলা নাহার শেখকে। আর গ্রহীতা শাহ মো. মেজবাহুর রহমান, শামসুল ইসলাম, ইউসুফ হাসাইন ও মো. সাদ্দম খা। এই দলিলে জমির মূল্য দেখানো হয় ১৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। একই ভাবে চলতি বছরের ৪ ফেব্রুয়ারি ১০নং কমিশন কেসের মাধ্যমে ১১৪৮/২০২২ নং দলিল রেজিস্ট্রি হয়। যার দাতাও ছিলেন সাজানো জামিলা নাহার শেখ ও জোবায়দা নাহার শেখ এবং গ্রহীতা শামসুল ইসলাম। চার লাখ টাকায় এই দলিল সম্পাদন করেন। এ বিষয়ে দলিল লেখক শাহ মো. খলিলুর রহমান বলেন, কেউ যদি জাতীয় পরিচয়পত্র নিয়ে এসে নিজেকে ‘ছলিমদ্দি বা কলিমদ্দি’ বলে দাবি করে দলিল লিখে দিতে বলেন আমরা সেটাই করে দেব। এখানে বৈধ না অবৈধ সেটা যাচাই করার দায়িত্ব আমার নয়, ওটা দেখার দায়িত্ব সাবরেজিস্ট্রারের।