ডাণ্ডাবেড়ি নিয়ে মায়ের জানাজায় বিএনপি নেতা

২১ ডিসেম্বর, ২০২২ | ১০:২০ পূর্বাহ্ণ
অনলাইন নিউজ ডেস্ক , ইউ এস বাংলা ২৪

গাজীপুরে বিএনপি নেতা আলী আজম হাতকড়া আর ডাণ্ডাবেড়ি নিয়ে মায়ের জানাজায় অংশ নিয়েছেন। তিনি কালিয়াকৈর উপজেলার বোয়ালী ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি। মায়ের মৃত্যুসংবাদ পেয়ে মঙ্গলবার সকালে জেলা কারাগার থেকে প্যারোলে মুক্তি পেয়ে তিনি নিজ বাড়ি কালিয়াকৈরের পাবরিয়াচালা এলাকায় জানাজায় অংশ নেন। আলী আজমের মা সাহেরা বেগম (৬৭) বার্ধক্যের কারণে রোববার বিকেলে মারা যান। স্বজনেরা জানান, শেষবার মাকে দেখতে ও মায়ের জানাজা নিজে পড়াতে আইনজীবীর মাধ্যমে আলী আজম সোমবার বিকেলে জেলা প্রশাসকের কাছে প্যারোলে মুক্তির আবেদন করেন। কিন্তু ওই দিন দাপ্তরিক কাজ শেষ না হওয়ায় মঙ্গলবার তিন ঘণ্টার জন্য প্যারোলে মুক্তি মিলে বিএনপির এই নেতার। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, প্যারোলে মুক্তি পেয়ে মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে নিজ বাড়ির পাশে মায়ের জানাজাস্থলে উপস্থিত হন আলী আজম। বেলা ১১টায় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। মায়ের দাফন শেষে আবার কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয় তাকে। পুরোটা সময় হাতকড়া ও ডান্ডাবেড়ি পরা অবস্থায় ছিলেন আলী আজম। এ সময় উপস্থিত ছিলেন উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি কাজী সাইয়েদুল আলম বাবুল, উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক পারভেজ আহমেদসহ উপজেলা বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। আলী আজমের ভাই আতাউর রহমান বলেন, জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদন করলে তার ভাইকে প্যারোলে মুক্তি দেওয়া হয়। জানাজা পড়ানোর সময় তার হাতকড়া ও ডান্ডাবেড়ি খুলে দিতে বলা হয়েছিল। কিন্তু পুলিশ খুলে দেয়নি। জানাজার সময়ও আলী আজমের হাতকড়া ও ডান্ডাবেড়ি খুলে না দেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন জানাজায় উপস্থিত লোকজন। এ অবস্থায় আলী আজমের একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে এলাকায় ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়। উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক পারভেজ আহমেদ বলেন, মায়ের মৃত্যুর খবরে আলী আজমকে প্যারোলে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু দুঃখের বিষয় জানাজার সময়ও তার হাতকড়া ও ডান্ডাবেড়ি খুলে দেওয়া হয়নি। গাজীপুর জেলা প্রশাসক আনিসুর রহমানের মোবাইল ফোনে তিনবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। এ বিষয়ে গাজীপুর জেলা কারাগারের সুপার মোহাম্মদ বজলুর রশিদ বলেন, আলী আজমকে নয়জন পুলিশ সদস্যসহ তার বাড়িতে পাঠানো হয়েছিল। সরকারের উচ্চ পর্যায়ের নির্দেশনা অনুযায়ী এবং জেল আইন অনুযায়ী তাকে বাড়ি পাঠানো হয়েছিল। কালিয়াকৈর উপজেলার চন্দ্রা ত্রিমোড় এলাকায় গত ২৯ নভেম্বর আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে হামালার অভিযোগে বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে করা মামলায় ২ ডিসেম্বর গ্রেফতার করা হয় আলী আজমকে। এ মামলায় আলী আজমসহ ১১ জনের নাম উল্লেখ করা হয়। অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয় আরও ১৫০ জনকে। স্থানীয় আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের অফিস সহকারী আবদুল মান্নান শেখকে মামলাটির বাদী করা হলেও ওই সময় তিনি বলেছিলেন, ঘটনা ও মামলার বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না। তিনি আরও বলেছিলেন, ‘কসম, আমি ঘটনাস্থলে ছিলাম না। এখানে আলাউদ্দিন এসআই ছিল। ওই স্যার আমারে বারবার ফোন দিয়া অস্থির কইরা ফেলছে। আমি বলছি, স্যার, আমি দাওয়াতে আছি। আমি দাওয়াতে থাইক্যা মামলা করালাম কীভাবে? আমি ছিলামও না, দেখিও নাই।আমি কইছিলাম, স্যার, আমারে আপনারা ঝামেলায় ফালাইয়েন না। জানাজার সময়ও আলী আজমের হাতকড়া ও ডান্ডাবেড়ি খুলে না দেওয়ার বিষয়ে বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার কালিয়াকৈর উপজেলা শাখার সভাপতি শাহজাহান মিয়া বলেন, ‘মানবিক দৃষ্টিতে বিষয়টি খুবই দৃষ্টিকটু। তিনি কোনো দাগী আসামি নন বলে শুনেছি। তাই তাকে শুধু হাতকড়া পরিয়ে জানাজায় অংশগ্রহণ করার সুযোগ দিতে পারতেন।’