করোনা টিকার চতুর্থ ডোজ ক্যাম্পেইনে সাড়া নেই

২১ ডিসেম্বর, ২০২২ | ৫:১১ পূর্বাহ্ণ
অনলাইন নিউজ ডেস্ক , ইউ এস বাংলা ২৪

দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে প্রথমবারের মতো চতুর্থ ডোজ ক্যাম্পেইন শুরু হয়েছে। এ ধাপে ষাটোর্ধ্ব, দীর্ঘমেয়াদি রোগে ভোগা ব্যক্তি এবং সম্মুখ যোদ্ধাসহ ৮০ লাখ মানুষ টিকা পাবে। তবে কর্মসূচির প্রথম দিন টিকা গ্রহণে মানুষের আগ্রহ একেবারেই কম দেখা গেছে। মঙ্গলবার রাজধানীর একাধিক কেন্দ্র ঘুরে এমন চিত্র দেখা যায়। এমন পরিস্থিতি সম্পর্কে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও টিকাদান সংশ্লিষ্টরা কাছে দাবি করেন বেশিরভাগ মানুষ তিন ডোজ টিকা নিয়েছেন। কাজেই চতুর্থ ডোজ নিয়ে আগ্রহ কমেছে। এছাড়া শুরুতে ষাটোর্ধ্ব ও সম্মুখসারির যোদ্ধাসহ ক্যাটাগরি ভাগ করে দেওয়ায় এমনটা হয়েছে। এজন্য প্রচার প্রচারণাসহ প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া হবে। সরেজমিন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের টিকা কেন্দ্রে দুপুর ১টা ৩৮ মিনিটে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায় মাত্র ৪২ জন চতুর্থ ডোজ নিয়েছে। বিকালে মোবাইল ফোনে ওই কেন্দ্রের টিকাদানে নিয়োজিত নার্সিং অফিসার জাহিদ হাসান বলেন, ১৮ জন প্রথম ডোজ, ২৭ জন দ্বিতীয় ডোজ, ৪৪ জন তৃতীয় এবং ৪৩ জন চতুর্থ ডোজ নিয়েছেন। সব মিলে ক্যাম্পেইনের প্রথম দিন ১৪৯ জন করোনাভাইরাসের টিকা নিয়েছে। তিনি আরও বলেন, আজ শুরু হলেও বিএসএমএমইউ উপাচার্য আগামীকাল কার্যক্রম উদ্বোধন করবেন। তখন টিকাগ্রহীতা বাড়বে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের টিকা কেন্দ্রে দায়িত্বে থাকা সিনিয়র স্টাফ নার্স ওয়াহিদা খাতুন দুপুর ২টায় বলেন, সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ২২ জন চতুর্থ ডোজ নিয়েছে। টিকা গ্রহীতাদের বেশিরভাগই ঢামেকের চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মী। একই সময়ে অন্যান্য টিকা নিয়েছেন ২৭ জন। বিকালে বাংলাদেশ শিশু হাসপাতালের এপিডিওমোলজিস্ট মাহফুজুর রহমান মামুন বলেন, সারাদিনে মাত্র ৫ পুরুষ ও ৪ নারীসহ মোট ৯ জন চতুর্থ ডোজ নিয়েছেন। এছাড়া প্রথম ডোজ ৭, দ্বিতীয় ডোজ ৮ এবং তৃতীয় বা বুস্টার ডোজ নিয়েছেন ১২ জন। এছাড়া জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে সকাল ৯টা থেকে ১১টা পর্যন্ত দুই ঘণ্টায় চতুর্থ ডোজ টিকা নেন মাত্র চারজন। টিকাদানে দায়িত্বরত একজন নার্স বলেন, ‘প্রচারণা মাসের শুরু থেকে চললেও আজ যে শুরু হয়েছে, সেটা হয়ত অনেকের জানা নেই, তাই উপস্থিতি কম। শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতালে আগের তিন ডোজ কার্যক্রমের শুরুতে উপচেপড়া ভিড় থাকত। কিন্তু চতুর্থ ডোজের বেলায় উলটো চিত্র দেখা গেছে। কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায় একেবারে ফাঁকা। টিকা গ্রহীতার অপেক্ষায় বসে আছেন দুই নার্স। বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত আড়াই ঘণ্টায় মাত্র দুজন চতুর্থ ডোজের টিকা নিয়েছেন। একইভাবে মুগদা মেডিকেল, শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল ঘুরে সেখানে কেন্দ্রগুলো প্রায় ফাঁকা দেখা যায়। তবে যারা টিকা নিতে এসেছেন তারা ভোগান্তি ছাড়াই নিয়েছেন। শেষ সময়েও টিকা নিতে পেরে অনেকে সন্তুষ্টির কথা জানিয়েছেন। কম উপস্থিতি সম্পর্কে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের টিকা বিতরণ কর্মসূচির সদস্য সচিব ডা. শামসুল হক বলেন, বেশির ভাগ মানুষ বুস্টারসহ তিন ডোজ টিকা গ্রহণ করেছেন। এখন মানুষ জানবে, কেউ ছুটির দিনে নেবে। দু-একদিন পরই বাড়তে থাকবে। আর সবাইকে তো দেওয়াও হবে না। অনেকে নিতেও চাইবে না। শুরুতে ষাটোর্ধ্ব ও সম্মুখসারির যোদ্ধাদের অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। তাছাড়া চতুর্থ ডোজের জন্য কাউকে এসএমএসও দেওয়া হয়নি। এক্ষেত্রে গণমাধ্যমকে আরও এগিয়ে আসা উচিত। এর আগে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবীর মঙ্গলবার সকালে ঢাকার কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে টিকার চতুর্থ ডোজ কার্যক্রম উদ্বোধন করেন। এ সময় তিনি বলেন, করোনাভাইরাসের টিকার অ্যান্টিবডি বেশি দিন থাকে না। সেজন্য চতুর্থ ডোজ দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বুস্টার ডোজ বা তৃতীয় ডোজ নেওয়ার চার মাস পেরিয়েছে, এমন ব্যক্তিদের চতুর্থ ডোজ দেওয়া হচ্ছে। শুরুতে পরীক্ষামূলকভাবে নির্দিষ্ট কয়েকটি স্থানে চতুর্থ ডোজ দেওয়ার কার্যক্রম চালুর কথা থাকলেও এখন দেশজুড়েই চতুর্থ ডোজ দেওয়া শুরু হয়েছে। সিটি করপোরেশন, জেলা, উপজেলা ও পৌরসভা পর্যায়ে অবস্থিত বিশেষায়িত হাসপাতাল, সরকারি মেডিকেল কলেজ, ৫০০, ২৫০ ও ১০০ শয্যার হাসপাতাল, জেলা সদর হাসপাতাল, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্থায়ী কেন্দ্রে টিকা দেওয়া হচ্ছে। চতুর্থ ডোজ হিসেবে ফাইজার-বায়োএনটেকের তৈরি টিকা দেওয়া হচ্ছে।