মোহনগঞ্জে ভিজিডি কার্ড করতে ঘুস, মেম্বারের অডিও ফাঁস

২০ ডিসেম্বর, ২০২২ | ৫:১৫ অপরাহ্ণ
অনলাইন নিউজ ডেস্ক , ইউ এস বাংলা ২৪

নেত্রকোনার মোহনগঞ্জে অতিদরিদ্রদের ভিজিডি কার্ড করার জন্য টাকা নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে এক ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে। কার্ডপ্রতি সাড়ে তিন হাজার টাকা চাওয়ার অভিযোগ এনে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযাগ দিয়েছেন কয়েকজন ভুক্তভোগী। এমন অভিযোগ উঠেছে ওই উপজেলার মাঘান-শিয়াধার ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য রনক মিয়ার বিরুদ্ধে। মোহনগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ছাব্বির আহমেদ আকুঞ্জি মঙ্গলবার অভিযোগ প্রাপ্তির বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, এ বিষয়টি তদন্ত করতে মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এর আগে গত বুধবার এ ঘটনায় অভিযোগ দেওয়া হয়। এর মধ্যে টাকা চাওয়ার বিষয়ে মেম্বার রনক মিয়া ও তার সহযোগী বাদশা মিয়ার কল রেকর্ড ফাঁস হয়েছে। ওই কল রেকর্ডে— ‘মেম্বার তার সহযোগী বাদশাকে প্রতি ভিজিডি কার্ডে পাঁচ হাজার টাকা নেওয়ার জন্য বলে দিচ্ছেন। এত টাকা মানুষ দিতে চায় না— বাদশার এমন জবাবে মেম্বার বলেন, তা হলে সাড়ে তিন হাজারের কম নিস না।’ অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি মাঘান-শিয়াধার ইউনিয়নের (ইউপি) ৬ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার রনক মিয়া এলাকার লোকজনের কাছে ভিজিডি কার্ড করে দেওয়ার জন্য পাঁচ হাজার করে টাকা চেয়েছেন। কারও কারও কাছে মেম্বার তার সহযোগী বাদশা মিয়ার মাধ্যমে টাকা চেয়েছেন। পরে তিনি সবাইকে কার্ডপ্রতি সাড়ে তিন হাজার টাকা দিলেই হবে বলে জানিয়েছেন। এ ঘটনায় বিচার চেয়ে সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের কুড়েরপার গ্রামের সুজন মিয়া, বিনা আক্তার, হেলেনা আক্তার, পুতুলা আক্তার, রাজিয়াসহ বেশ কয়েকজন ইউএনওর কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, অতিদরিদ্রদের জন্য ভিজিডি কার্ড দেওয়া হচ্ছে। প্রতি কার্ডের বিপরীতে একজন দরিদ্র মানুষ প্রতি মাসে ৩০ কেজি চাল পাবেন বিনামূল্যে। যাচাই-বাচাই করে এ তালিকা ফাইনাল করেন সংশ্লিষ্ট মেম্বার। অভিযোগকারী মাঘান ইউপির ৬ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. সুজন মিয়া জানান, আমার এক আত্মীয়ের জন্য ভিজিডি কার্ড বানাতে গিয়েছিলাম মেম্বারের কাছে। মেম্বার বলেছেন, পাঁচ হাজার টাকার কমে কার্ড করা যাবে না। এভাবেই অন্য সবার কাছে কারও কাছে পাঁচ হাজার, কারও কাছে সাড়ে তিন হাজার টাকা চেয়েছে। আমার কাছে টাকা চাওয়ার প্রমাণ আছে। ইউপি সদস্যের সহযোগী সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের কুরপাড় গ্রামের বাসিন্দা বাদশা মিয়া বলেন, কল রেকর্ডে মেম্বারের সঙ্গে কথোপকথনকারী ব্যক্তি আমিই। মেম্বার আমাকে ভিজিডি কার্ড করে নেওয়ার জন্য মানুষের কাছ থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকা করে নিতে বলেছিল। কিন্তু পরে আমি আর এ কাজ করিনি। মাঘান ইউপির ৬ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার অভিযুক্ত রনক মিয়া বলেন, এ অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট। আমি ভিজিডি কার্জ করতে কারও কাছে কোনো টাকা চাইনি। অভিযোগকারী সুজনের সঙ্গে আমার পুরনো বিরোধ আছে, তাই সে এ বিষয়টিকে কাজে লাগিয়ে মিথ্যা অভিযোগ করেছে। তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নির্বাচনে পরাজিত আমার প্রতিপক্ষের লোকজন। আমার ওয়ার্ডে মাত্র ১২টি ভিজিডি কার্ড দেওয়া হয়েছে। কল রেকর্ড সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, তার সঙ্গে অন্য বিষয়ে কথা হয়েছে। ভিজিডি কার্ডের টাকার বিষয়ে নয়। তবে এ বিষয়ে আর কোনো জবাব না দিয়ে বিষয়টি এড়িয়ে যান তিনি। অভিযোগ তদন্তের দায়িত্বে থাকা উপজেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা রুমানা রহমান বলেন, এ বিষয়ে গত রোববার আমি তদন্তের দায়িত্ব পেয়েছি। এখনো কাজ শুরু করিনি। কাল-পরশু দুই পক্ষকে ডেকে তাদের কাছে তথ্যপ্রমাণ চাইব। পরে এ বিষয়ে তদন্ত করে প্রতিবেদন দেব। মোহনগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ছাব্বির আহমেদ আকুঞ্জি বলেন, তদন্ত প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার পর সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।