অনুমোদনহীন হাসপাতালের দৌরাত্ম্য সংকটে রোগীরা

২০ ডিসেম্বর, ২০২২ | ১২:৪৩ অপরাহ্ণ
অনলাইন নিউজ ডেস্ক , ইউ এস বাংলা ২৪

দফায় দফায় অভিযান পরিচালিত হয় এসব হাসপাতালের বিরুদ্ধে। কিন্তু কিছুতেই যেন কিছু হয় না। কোনোভাবেই কমে না অনুমোদনহীন বেসরকারি হাসপাতালের দৌরাত্ম্য। রাজধানীসহ দেশের আনাচে-কানাচে এসব হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের পড়তে হয় জীবন-মরণ সংকটে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হুঁশিয়ারি-অভিযান সত্ত্বেও কিভাবে এসব হাসপাতাল নিজেদের কার্যক্রম পরিচালনা করছে, তা নিয়ে প্রশ্ন সাধারণ মানুষের মাঝে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, দেশজুড়ে মোট নিবন্ধিত বেসরকারি হাসপাতাল রয়েছে ১৩ হাজার ৬১১টি। লাইসেন্স নবায়নের জন্য আবেদন করেছে আরও ২২ হাজার ৪৭২টি। এছাড়া নতুন করে হাসপাতাল তৈরির জন্য আবেদন রয়েছে ১৮ হাজার ৬৮৫টির। কিন্তু এর বাইরেও অন্তত কয়েক হাজার বেসরকারি হাসপাতাল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অনুমোদনের তোয়াক্কা না করেই চিকিৎসা চালিয়ে যাচ্ছে। যেগুলোর বেশিরভাগেরই নেই পর্যাপ্ত দক্ষ চিকিৎসক, উন্নতমানের চিকিৎসা যন্ত্রপাতি। এর অনেক হাসপাতালেই করা হয় গুরুত্বপূর্ণ অস্ত্রোপচারও, যার খেসারত দিতে হয় রোগীদের। এমনকি, কাউকে কাউকে জীবনও হারাতে হচ্ছে। সম্প্রতি হাতের অপারেশন করতে আসা পাঁচ বছরের শিশু মাইশার পেট কাটার ঘটনায় আলোচনায় আসে রাজধানীর মিরপুর রূপনগরের আলম মেমোরিয়াল হাসপাতালটি। ওই ঘটনায় মর্মান্তিক মৃত্যু হয় শিশু মাইশার। পরে জানা যায়, এই হাসপাতালটির বিএমডিসি সনদ নেই। নিয়মবহির্ভূতভাবেই চালানো হচ্ছিল এ হাসপাতাল। এসব অভিযোগের ভিত্তিতে গত ৪ ডিসেম্বর হাসপাতালটি বন্ধ করে দেয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এ সময় অধিদপ্তরের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, অধিদপ্তরের পরিদর্শন কার্যক্রমের চলমান প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে আলম মেমোরিয়াল হাসপাতালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানটি নিয়মানুগভাবে নিবন্ধিত নয়, যা সম্পূর্ণ বেআইনি। এছাড়া পরিদর্শন দল প্রতিষ্ঠানে কর্মরতদের মৌখিকভাবে এ অবৈধ কাজ তথা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করার নির্দেশনা দিয়েছেন। কিন্তু এক আলম মেমোরিয়াল হাসপাতাল বন্ধ ঘোষণা করা হলে কী হবে, রাজধানীর আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে মানুষের জীবন নিয়ে এমন ছিনিমিনি খেলছে হাজারো অনুমোদনহীন বেসরকারি হাসপাতাল। এমনই আরেকটি হাসপাতাল রাজধানীর ডেমরা আমুলিয়ার আইচি হাসপাতাল। স্কাইভিউ ফাউন্ডেশন কর্তৃক পরিচালিত এমন একটি সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে হাসপাতালটির সামনে, যেখানে ইমার্জেন্সিতে ডাক্তারের ভিজিট মাত্র ৫০ টাকা। আর বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক রোগী দেখেন মাত্র ২০০ টাকায়। ডেমরার আমুলিয়ার মেন্দিপুরের (মাইক্রোস্ট্যান্ড) এ হাসপাতালটির এমন প্রলুব্ধকরণ বিজ্ঞাপনে আকষ্ট হয়ে অসহায় সাধারণ রোগীরা একটু সুস্থতার আশায় চিকিৎসা নিতে যান সেখানে। আর তখনই শুরু হয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের পৈশাচিক আচরণ। গত সেপ্টেম্বরে এমনই এক রোগী মোছাম্মৎ সেলিনা বেগম অভিযোগ করেন, জরায়ুর টিউমার অপারেশনের জন্য হাসপাতালটিতে ভর্তি হলে হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. সুলতানা পারভীন নানা ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করানোর পরামর্শ দেন। চার রকমের আলট্রাসনোগ্রামই করানো হয় মোছাম্মৎ সেলিনা বেগমের। সব কিছু চূড়ান্ত করার পরই নেওয়া হয় তাকে অপারেশন থিয়েটারে। পরিকল্পনা মতো শুরু হয় অস্ত্রোপচারও। কিন্তু আধা ঘণ্টা পর অপারেশন থিয়েটারের বাইরে এসে ডা. সুলতানা পারভীন সেলিনা বেগমের পরিবারকে জানায়, ‘আমরা রোগীর পেট কেটেছি। কিন্তু এই অপারেশন আমার পক্ষে সম্ভব না। সেলাই করে দিচ্ছি। সেলাই শুকালে অন্য জায়গায় নিয়ে অপারেশন করান।’ হতবিহ্বল সেলিনার স্বামী আব্দুল মজিদের তখন দিশেহারা অবস্থা! পেট কাটার পর বলছে অপারেশন করা যাবে না! এও হয় পৃথিবীর কোথাও? এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের খারাপ আচরণের শিকার হতে হয় এই প্রতিবেদককে। কুমিল্লা থেকে সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হয়ে পায়ের হাড় ভেঙে রাজধানীর জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে (পঙ্গু হাসপাতাল) ভর্তি হতে আসেন রিক্সাচালক তয়মুজদ্দিন। কিন্তু ডাক্তারের রাউন্ড শেষ হয়ে যাওয়ায় ওই দিনের মতো কোনো সিট খালি নেই বলে জানায় জরুরি বিভাগ থেকে। পরিবার নিয়ে হাসপাতালের বারান্দায় যখন কিংকর্তব্যবিমূঢ় অবস্থায় বসে ছিলেন, তখনই যেন আশার আলো হয়ে সামনে আসেন শিকদার হোসেন নামের এক ব্যক্তি। বলেন, এখানে সিট নেই তো কী হয়েছে। চলুন আমার পরিচিত এক হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছি। খুবই কম টাকায় চিকিৎসা করাতে পারবেন ওখানে। বলে পাশেই একটা হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে ভর্তি করায় তয়মুজদ্দিনকে। কিন্তু ভর্তির পরপরই অস্ত্রোপচার করার কথা বলে লম্বা একটি বিল ধরিয়ে দেয় তয়মুজদ্দিনের পরিবারকে। যার ব্যয় মেটানোর টাকা সঙ্গে থাকা তো দূরের কথা, গ্রামের বসতবাড়ি বিক্রি করেও মেটাতে পারবে কি না সন্দেহ। এসব হাসপাতালে চিকিৎসার নামে গলাকাটা তো হয়-ই, কিন্তু তবুও নেই জীবনের নিশ্চয়তা। কি বলছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ॥ নিবন্ধনবিহীন বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনিস্টক সেন্টার বন্ধে গত ২৬ মে দেশজুড়ে অভিযান শুরু করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। ৭২ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়ে তিনদিনে দেশজুড়ে ৫৩৮টি অবৈধ বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধ করা হয়। এর মধ্যে রাজধানীতেই রয়েছে ১৬৪টি। দ্বিতীয় ধাপের অভিযানে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ৮৫০টি অবৈধ বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ব্লাড ব্যাংক বন্ধ করে দেয়। এই অভিযানের দ্বিতীয় ধাপ শুরু হয় গত ২৯ আগস্ট। বন্ধ হওয়া হাসপাতালগুলোর মধ্যে রাজধানীতেই রয়েছে ২০টি। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) আহমেদুল কবীর বলেন, প্রতারণা বন্ধে আমাদের নানা ধরনের উদ্যোগ চলমান। অবৈধ প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযান ও সাইনবোর্ডে লাইসেন্স নম্বর লেখা বাধ্যতামূলক করা সেই উদ্যোগেরই অংশ। তিনি বলেন, এর আগে অবৈধ ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোকে আমরা তিনদিন সময় দিয়েছিলাম। তবে এখন পর্যন্ত অভিযান অব্যাহত রয়েছে। অনিবন্ধিত ও অনিয়মের দায়ে দণ্ডিত প্রতিষ্ঠানগুলো আবার যেন গড়ে না ওঠে, সে জন্য অভিযান চলমান রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমরা। এক সড়কেই শতাধিক বেসরকারি হাসপাতাল ॥ এটিকে বলে হাসপাতাল পাড়া। শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল, জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান (পঙ্গু হাসপাতাল), জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটট ও হাসপাতালসহ রাজধানীর শেরেবাংলানগরে রয়েছে ১০ থেকে ১৫টি সরকারি হাসপাতাল। এই হাসপাতালগুলোকে কেন্দ্র করে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের সামনে থেকে শুরু করে শ্যামলী স্কয়ার পর্যন্ত আধা কিলোমিটার রাস্তায় গড়ে উঠেছে শতাধিক বেসরকারি হাসপাতাল। এসবের বেশিরভাগেরই নেই স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অনুমোদন। সরকারি হাসপাতালগুলো থেকে দালালের মাধ্যমে রোগী ভাগিয়ে এনে ফায়দা লোটাই এসব হাসপাতালের মূল কাজ। সরেজমিনে দেখা যায়, বাবর রোড, খিলজি রোড, টিবি হাসপাতাল রোড ঘিরে এসব হাসপাতালের রমরমা ব্যবসা চলছে। আধা কিলোমিটার রাস্তায় বেবি কেয়ার হসপিটাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক, ট্রমা সেন্টার অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক, অ্যানালাইসিস ফিজিওথেরাপি হাসপাতাল, আশিক মাল্টি স্পেশালাইজড, সিগমা মেডিক্যাল, মনমিতা মানসিক হাসপাতাল, শেফা হাসপাতাল, লাইফ কেয়ার নার্সিং হোম, এলিট ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক, চেস্ট কেয়ার, শিশু নিরাময়, মক্কা মদিনা জেনারেল হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক, প্লাজমা মেডিক্যাল সার্ভিস অ্যান্ড ক্লিনিক, আল মারকাজুল ইসলামি হাসপাতাল, নিউ ওয়েল কেয়ার হাসপাতাল, জয়িতা মেডি ল্যাব, জনসেবা নার্সিং হোম, মুন ডায়াগনস্টিকসহ অসংখ্য বেসরকারি হাসপাতালকে কেন্দ্র করে শত শত রোগী আর দালালে গিজগিজ করে পুরো এলাকা। জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, ঢাকা শিশু হাসপাতাল, জাতীয় কিডনি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্স, শহীদ সোহ্রাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল এবং জাতীয় বাতজ্বর ও হৃদরোগ নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রসহ এই এলাকায় সরকারি হাসপাতালগুলোকে ঘিরে দালালদের দৌরাত্ম্যের কথা স্বীকার করেছে খোদ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরও। শুধুই এই দুইটি হাসপাতালই নয়, মোহাম্মদপুর, শ্যামলী এলাকায় এ রকম বৈধ-অবৈধ শতাধিক বেসরকারি হাসপাতাল থাকার কথাটি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নজরেও রয়েছে উল্লেখ করে ডা. আহমেদুল কবির বলেন, আমরা এসব এলাকায় নিয়মিতই অভিযান পরিচালনা করি। কিন্তু সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে অভিযান পরিচালনা করতে আমাদের সুবিধা হয়। কি বলছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা ॥ মানুষের জীবন-মৃত্যুর বিষয় যেখানে জড়িত, সেখানে এসব অবৈধ-অনিবন্ধিত প্রতিষ্ঠান এভাবে চলতে পারে না বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলামবলেন, যদিও আমাদের নিয়মিত অভিযান চলমান রয়েছে। কিন্তু কিছু কিছু হাসপাতাল রয়েছে, যারা বলছে তারা লাইসেন্সের জন্য আবেদন করেছে। কিন্তু এখনো লাইসেন্স পাইনি। কিন্তু সরেজমিনে গেলে দেখা যায়, এরা অপারেশন থিয়েটার থেকে আইসিইউ সেবা পর্যন্ত দিচ্ছে। সব জায়গাতেই অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ। এগুলো সত্যি জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকিস্বরূপ। এগুলো পর্যায়ক্রমে বন্ধ করে দেওয়ার লক্ষ্যেই আমরা কাজ করছি। তবে অবৈধ হাসপাতালে যে সব চিকিৎসক রোগী দেখেন বা চিকিৎসা দেন, তাদেরকেও দায়িত্বশীল হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ। তিনি বলেন, অবৈধ এসব হাসপাতালে বিএমডিসির রেজিস্ট্রেশনভুক্ত কোনো চিকিৎসক যদি রোগী দেখেন, তাহলে বিএমডিসির উচিত হবে তাদের বিরুদ্ধে আইননানুগ ব্যবস্থা নেওয়া। এর আগে রাজধানীতে বন্ধ যে সব হাসপাতাল ॥ দেশজুড়ে অবৈধ হাসপাতালের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনাকালে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হাসপাতাল ও ক্লিনিক শাখা রাজধানীর খিলগাঁও, উত্তরা, যাত্রাবাড়ী, চকবাজার, লালবাগ, কচুক্ষেত ও বনানীতে অভিযান পরিচালনা করে ঢাকা জেনারেল হাসপাতাল, খিলগাঁও জেনারেল হাসপাতাল, সেন্ট্রাল বাসাবো জেনারেল হাসপাতাল, মাতুয়াইল কনক জেনারেল হাসপাতাল, শনির আখড়া সালমান হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার, বকশিবাজার খিদমাহ লাইফ কেয়ার ডায়াগনস্টিক সেন্টার, বনানী হেয়ার ট্রান্সপ্লান্ট কসমেটিক সার্জারি কনসালটেন্সি অ্যান্ড ডায়গানস্টিক সেন্টার, ঢাকা পেইন স্পাইন সেন্টারসহ ১৬৪টি অবৈধ হাসপাতাল বন্ধ করা হয়। সমাধানের পথ ॥ এসব অবৈধ হাসপাতালে অভিযান পরিচালনার বিষয়ে সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগনিয়ন্ত্রণ বিভাগের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. বেনজির আহমেদ বলেন, দেশের বেসরকারি হাসপাতাল, ডায়াগনস্টিক সেন্টার, ক্লিনিক, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হাসপাতাল ও ক্লিনিক শাখার যে লোকবল আছে, তা দিয়ে এত বড় সেক্টর সামলানো সম্ভব না। এক সময় তো দেশে মাত্র কয়েকশ’ বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ছিল। এখন তো ছোট-বড় হিসাব করলে অর্ধলাখ হবে। এ জন্য আলাদা একটি অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠা করতে হবে। তিনি বলেন, সারাদেশে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা ও তদারকির জন্য প্রচুর লোকবল দরকার। সেই সঙ্গে যুযোপযোগী আইন লাগবে। আইনে সর্বোচ্চ ক্ষমতা অধিদপ্তরকে দিতে হবে। তারা যেন দ্রুত ব্যবস্থা নিতে পারেন। অনুমোদন ছাড়া বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিক চালু করার শাস্তি দীর্ঘমেয়াদি কারাবরণ করতে হবে। দু’-চার বছর জেল খেটে যেন বেরিয়ে আসতে না পারে। কারণ, তারা মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে। তিনি বলেন, আইন সংশোধন, সক্ষমতা বৃদ্ধি আর প্রচুর অর্থ বরাদ্দ দিতে হবে। কারণ, শুধু ঢাকা নয়, সারাদেশে এই অধিদপ্তরকে চষে বেড়াতে হবে। ভালো গাইড লাইন তৈরি করতে হবে। পরিকল্পনা মাফিক কাজ করতে হবে। এর বাইরে আর কোনো সমাধান নেই। এসব অবৈধ-নিবন্ধনহীন ক্লিনিক-হাসপাতাল বন্ধে নানা সময় অভিযান পরিচালিত হলেও কাজের কাজ না হলেও চলমান অভিযানের ফলে পরিস্থিতির কিছুটা পরিবর্তন হচ্ছে বলে দাবি করেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবীর। তিনি বলেন, আমরা একটা আলোড়ন সৃষ্টি করেছি। এটি আগে নানা সময়ে হলেও এবার যে ঝাঁকুনি তৈরি হয়েছে, তা দৃষ্টান্তমূলক। এই ধারা অবশ্যই চলতে থাকবে।