১০ মিলিয়ন ডলারের চেক হাতে নাচলেন মেসি

২০ ডিসেম্বর, ২০২২ | ৮:২৮ পূর্বাহ্ণ
অনলাইন নিউজ ডেস্ক , ইউ এস বাংলা ২৪

রাতের নীরবতা ভেঙে মিছিলে রূপ নেওয়া একেকটি জটলা কোরাসে গাইছে-মেসি, তুমি চ্যাম্পিয়ন। আর্জেন্টিনা, অভিনন্দন। বেশিরভাগেরই গায়ে নীল-সাদা জার্সি। যেন জার্সি নয়, জোনাকি। রোববারের রাতে হঠাৎ জেগে ওঠা ঢাকার রাজপথ, অলিগলির সঙ্গে দোহার খুব বেশি অমিল ছিল বলে মনে হয় না। লুসাইলে মেসির মিসাইলে ভূপাতিত হয়েছে ফ্রান্স। কাতার বিশ্বকাপ শেষ হয়েছে হিচককের কোনো থ্রিলারধর্মী সিনেমার শ্বাসরুদ্ধকর সাসপেন্স নিয়ে। ২০২২ ফিফা বিশ্বকাপের ফাইনালে যা যা ঘটেছে তা কী সত্যি, নাকি মায়াবী বিভ্রম। এমবাপ্পের হ্যাটট্রিক, মেসির জোড়া গোলের পরেও এই ম্যাচের চিত্রনাট্যকার শেষ দৃশ্যে সংযোজন করলেন টাইব্রেকার। সেখানে গোলপ্রহরী এমিলিয়ানো মার্তিনেজের বীরত্বে চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনা। আর্জেন্টিনার দীর্ঘ ৩৬ বছরের খরা ঘুচল এক পশলা শিরোপাসিক্ত বৃষ্টিতে। আর লিওনেল মেসির ক্যারিয়ার ভরে গেল কানায় কানায়। যে ট্রফি কায়মনোবাক্যে চেয়েছিলেন জাদুকর, সেটিও পেয়ে গেলেন। তার আকাঙ্ক্ষার চৌবাচ্চা এখন পূর্ণ। এতদিন একটা অপূর্ণতাই শুধু পোড়াচ্ছিল তাকে। সেই বিশ্বকাপ ট্রফি জেতার মধ্য দিয়ে পূর্ণতা পেল তার খেলোয়াড়ি জীবন। আর কোনো চাওয়া নেই। পাওয়ারও কিছু নেই। কাতার দুই হাত ভরে দিয়েছে আর্জেন্টাইন ফুটবলের বরপুত্রকে। দি মারিয়া খুব করে চেয়েছিলেন মেসির শেষটা যেন হয় তার প্রথম বিশ্বজয়ের মধ্য দিয়ে। আরও একজন হয়তো চেয়েছিলেন-দিয়েগো ম্যারাডোনা। দূরে কোথাও থেকে হয়তো তিনিও দেখেছেন অনুজের গরিমা। গোটা ফুটবলবিশ্ব দেখেছে সোনালি ট্রফি নিয়ে মাঠে মেসির পাগলপারা উদ্যাপন। দেখেননি শুধু সাজঘরে ফিরে মেসির নাচ। আরেক আর্জেন্টাইন লিজেন্ড সের্হিও আগুয়েরো একটি ভিডিওচিত্র তুলেছেন অন্দরমহলের উৎসবের। তাতে দেখা যাচ্ছে, মাঠ ছাড়ার পর ড্রেসিংরুমে ফিরে দি মারিয়া, দিবালারা দিওয়ানা হয়ে গেছেন। আর মেসি? রবিবাসরীয় রজনীর মহানায়ক। ১০ মিলিয়ন ডলারের চেক নিয়ে নাচছেন। আর হয়তো ভাবছেন, এভাবেও স্বপ্ন সত্যি হয়। নেপথ্যে বাজছে লাতিন সংগীত। কে গাইছেন, কী গাইছেন তাতে কার কী এসে-যায়। উৎসবের রাতে আনন্দটাই মুখ্য। আর সব গৌণ। মেসি সাজঘরে প্রবেশ করেন সোনালি ট্রফি হাতে নিয়ে। টেবিলে উঠে লাফাতে শুরু করেন। কোচ লিওনেল স্কালোনির গায়েও আর্জেন্টিনার জার্সি। খেলোয়াড়রা তাকে বিয়ারে ভিজিয়ে দেন। টাইব্রেকারে ৪-২ গোলের জয়ে আর্জেন্টিনার স্বপ্নপূরণের পর এই উন্মাদনা, উৎসব প্রত্যাশিত। মেসির জন্য এটি রাজ্য ও রাজকন্যা দুই-ই জয়ের সমতুল্য। মধুরেণ সমাপয়েৎ একেই বলে। ট্রফিতে চুমু দিয়ে আর্জেন্টাইন অধিনায়ক বলেন, ‘সারা জীবন এই ট্রফিই চেয়েছি আমি। এটি আমার শৈশবের স্বপ্ন। আজ তা পূর্ণ হলো। এটা পাগলামো। ট্রফিটাকে দেখুন। কী দারুণ দেখতে। অপূর্ব সুন্দরী। আমি এটি চেয়েছিলাম মনেপ্রাণে। জানতাম, একদিন এই সোনালি ট্রফি আমার হবে। ট্রফিটি ক্রমশ কাছে আসতে আসতে শেষ পর্যন্ত ধরা দিয়েছে।’ লাতিন সংগীতের মতো লাতিন ফুটবলেও এক ধরনের তন্ময়তা রয়েছে। কাতার বিশ্বকাপ ফাইনালে যা দি মারিয়া, মেসিদের খেলায়ও খুঁজে পাওয়া গেছে। ধ্যানমগ্ন ঋষির মতো মেসিরা একমেবাদ্বিতীয়ম হয়ে সবুজ গালিচায় স্বপ্নের সুরভি ছড়িয়েছেন। তাতে মুগ্ধ হয়ে ফুটবল-বিধাতা সাঁঝবেলায় মেসিকে বিমুখ করতে কুণ্ঠাবোধ করেছেন। পূর্ণতা ও অপূর্ণতার দুটি পাত্রের একটি পেয়েছেন মেসি, আরেকটি এমবাপ্পে। একেই হয়তো বলে ন্যায়বিচার।