‘আর কত নোংরামি করবে মোদি সরকার?’

‘দেশ জুড়ে মিথ্যা মুসলিম বিদ্বেষ সৃষ্টি করতেই বিজেপি কাশ্মীরে জঙ্গি হানা করিয়েছে! আর কতো নোংরামি করবে মোদি সরকার?’ কাশ্মীর ইস্যুতে এমন মন্তব্য করেছেন দীপক ব্যাপারি নামের এক ভারতীয় নাগরিক। বৃহস্পতিবার নিজের ফেসবুক আইডিতে দেওয়া এক পোস্টে এ মন্তব্য করেন তিনি। দীপক ব্যাপারি পশ্চিমবঙ্গের কলকাতার বাসিন্দা। ডিজিটাল মিডিয়া ফেডারেশনের সহপ্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতির দায়িত্বে রয়েছেন। দীপক ব্যাপারি বলেন, কাশ্মীরে সন্ত্রাসবাদী হানায় ২৬ জন পর্যটকের মৃত্যু, দেশজুড়ে আবারও সাম্প্রদায়িকতা খেলবে বিজেপি! এরকম বাতেলাবাজ প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী থাকলে শুধু হিন্দু নয়, কেউই সুরক্ষিত নয় ! বিজেপি হাটাও, দেশ বাঁচাও! এত ন্যাকামো না করে বিজেপি সরকারকে প্রশ্ন করুন। প্রশ্ন করবেন কিভাবে? সেটা করতে তো মাথার মধ্যে একটা মগজ লাগে আবার বুকের মধ্যে একটা হৃদপিন্ড লাগে। যাই হোক যে প্রশ্নগুলো উঠে এসেছে আপাতত সেগুলো নিয়েই চর্চা হোক। তিনি বলেন, কাশ্মীরে বর্তমানে ৬ লাখ সেনা মোতায়েন রয়েছে। ৫০ মিটার পর পর এক একজন সেনা অত্যাধুনিক হাতিয়ার নিয়ে সজাগ থাকেন। প্রতি দশ জন কাশ্মীরির পিছনে একজন সেনা বরাদ্দ। কিন্তু সেদিন পেহেলগাম এ সেনা ছিল না কেন? পেহেলগাম একটি পর্যটকপূর্ণ স্থান। সেখান থেকে সেনা বা পুলিশ তুলে নেওয়ার আদেশ কে দিয়েছিল? ভারতীয় নাগরিক বলেন, ঠিক ঐ সময়ে সেখানে কোনো সেনা থাকবে না এটা জঙ্গিরা জানল কিভাবে? জঙ্গিরা সেখানে এক ঘণ্টা ধরে হত্যা লীলা চালাল। পুলিশ কিংবা সেনা সেখানে পৌঁছতে পারল না কেন? তিনি বলেন, লাইন অব কন্ট্রোল থেকে পেহেলগামের দূরত্ব প্রায় ৩০০ কি.মি। গোয়েন্দা, সেনা, বিএসএফ, পুলিশ সবাইকে ফাঁকি দিয়ে এত দূর পথ অতিক্রম করে পাকিস্তানি জঙ্গিরা সেখানে পৌঁছল কিভাবে? ১৯ শে এপ্রিল প্রধানমন্ত্রীর কাশ্মীর সফর বাতিল করা হলো কেন? তার মানে, তিনি জানতেন কাশ্মীরে কিছু ঘটতে যাচ্ছে? তারপরেও কেন্দ্র সরকার ব্যবস্থা নিল না কেন? দীপক বলেন, পুলওয়ামা ঘটনা ঘটানোর আগে সেখানে চেকপোস্ট তুলে দেওয়া হয়েছিল যেন কোনো গাড়ির তল্লাশি না করা হয়। এখানেও তেমন কিছু করা হয়নি তো? জঙ্গিরা নাকি বেছে বেছে হিন্দু পুরুষদের হত্যা করেছে। নারী এবং শিশুদের ছাড় দিয়েছে। জঙ্গিরা এত দয়ালু হয় কিভাবে? জঙ্গি হানায় জঙ্গিরা কী এতো সময় পায়? ভারতীয় এই নাগরিক বলেন, কাশ্মীরে এটা কী প্রথম জঙ্গি হামলা? আমি তো জানি ১৯৪৭ সাল থেকে সেখানে জঙ্গি আন্দোলন শুরু হয়েছে এবং প্রায় ১ লাখ কাশ্মীরি মানুষ সেখানে নিহত হয়েছে তার মধ্যে মুসলমান হিন্দু সবাই আছে। এমনকি জঙ্গি দমন করতে গিয়ে প্রচুর সংখ্যক সেনাও শহিদ হয়েছে। কীসের জন্য জঙ্গিরা লড়াই করছে সেটা আলাদা প্রশ্ন কিন্তু এই ঘটনাকে থেকে মুসলিম বিদ্বেষ ছড়ানো হচ্ছে কেন? তাহলে কী এটা পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড? যে যাই বলুক এই হত্যাকাণ্ডকে মেনে নেওয়া যায় না, তাকে কোনো প্রকার ভাবে জাস্টিফাই করা যায় না। একযোগে এর বিরুদ্ধে লড়াই করতে হবে। কিন্তু অনুরোধ হিন্দু মুসলিম করবেন না। বিজেপি সরকার অপরাধীদের বের করে যেদিন তাদের মৃত্যুদণ্ড দিতে পারবে, সেদিন আমি বিজেপির প্রশংসা করব। প্রসঙ্গত, ভারতশাসিত কাশ্মীরের পেহেলগামে মঙ্গলবার ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটেছে। ২০১৯ সালের পর থেকে সবচেয়ে মারাত্মক জঙ্গি হামলা হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে। ওই হামলায় কমপক্ষে ২৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ২৫ জন ভারতীয় এবং একজন নেপালী বলে জানা গেছে। ভারতের অন্যতম মনোরম এই উপত্যকায় ছুটি কাটাতে আসা বেসামরিক নাগরিক ছিলেন নিহতরা। এদিকে ‘দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট’ (টিআরএফ) নামের স্বল্প পরিচিত একটি গোষ্ঠী এই হামলার দায় স্বীকার করেছে। তবে ভারত মনে করছে, এই গোষ্ঠী আসলে পাকিস্তানভিত্তিক লস্কর-ই-তৈয়বা বা এমনই অন্য কোনো সন্ত্রাসী সংগঠনের ছদ্মনাম। এর পরিপ্রেক্ষিতে হামলার পরপরই পাকিস্তানকে অভিযুক্ত করে ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং বলেন, এর ‘কড়া ও স্পষ্ট জবাব’ দেওয়া হবে। অন্যদিকে এই হামলায় কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই বলে দাবি করেছে পাকিস্তান। জঙ্গিদের কোনো ধরনের সহায়তা দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তবে তারা বলছে, কাশ্মীরিদের ‘স্বায়ত্তশাসনের দাবিকে’ তারা নৈতিকভাবে সমর্থন করে। এই ইস্যুতে আবারও ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে বর্তমানে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। হামলার দায় একজন আরেকজনকে চাপাচ্ছে। হামলায় জড়িত নিয়ে জনমনে ধোঁয়াশা সৃষ্টি হয়েছে।