কিয়েভে রাশিয়ার ‘সবচেয়ে বড়’ হামলা, ‘ভ্লাদিমির স্টপ’ বললেন ট্রাম্প

রুশ সেনাবাহিনী বুধবার গভীর রাতে ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভসহ বিভিন্ন অঞ্চলে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। এতে অন্তত ১২ জন নিহত ও ৯০ জন আহত হয়েছে। বৃহস্পতিবার রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। সেই সঙ্গে, ‘চলতি বছরে এটিই কিয়েভে রাশিয়ার সবচেয়ে বড় হামলা’ বলেও দাবি করা হয়েছে। এদিকে রাশিয়ার সর্বশেষ এই হামলার পর এক বিরল প্রতিক্রিয়ায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সরাসরি রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে উদ্দেশ করে বলেছেন, ‘ভ্লাদিমির, স্টপ!’ ট্রাম্প বলেন, এই হামলার ‘প্রয়োজন ছিল না’ এবং এটি ‘খুবই খারাপ সময়ে’ ঘটেছে। (বিশেষ করে যখন তিনি শান্তিচুক্তির জন্য চাপ দিয়ে আসছেন)। মার্কিন প্রেসিডেন্ট এদিন তার ট্রুথ সোশ্যালে লিখেছেন, ‘আমি কিয়েভে রাশিয়ার হামলায় সন্তুষ্ট নই। এটি অপ্রয়োজনীয় এবং খুব খারাপ সময়ে ঘটেছে। ভ্লাদিমির, থামো! প্রতি সপ্তাহে ৫ হাজার সৈন্য মারা যাচ্ছে। চলো আগে শান্তিচুক্তি সম্পন্ন করি!’ ট্রাম্প যেখানে পুতিনের প্রতি নরম সুরে আহ্বান জানাচ্ছেন, সেখানে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কিকে তিনি আগেই ‘ডিকটেটর’ বলে উল্লেখ করেছেন। হামলার ভয়াবহতা এদিকে রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে, তারা ইউক্রেনের সামরিক-শিল্প স্থাপনার বিরুদ্ধে একটি ‘বড় ধরনের হামলা’ চালিয়েছে। হামলায় বিমান, স্থল ও নৌপথ থেকে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন ব্যবহার করে পুরোপুরি নির্ভুলভাবে আঘাত হানা হয়েছে। ভায়বহ এ হামলার পর কিয়েভে ১৩টি স্থানে উদ্ধার তৎপরতা চালানো হচ্ছে। আগুন জ্বলছে ৪০টি জায়গায়। ধ্বংসস্তূপের নিচে এখনো মোবাইল ফোন বেজে চলেছে। কিয়েভ সামরিক প্রশাসনের প্রধান তিমুর তেকাচেঙ্কো জানিয়েছেন, ‘সাভিয়াটোশিনস্কি জেলায় ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে আরও দুটি লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এ নিয়ে এখন পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা ১২‘। ইউক্রেনীয় সামরিক সূত্র জানায়, কিয়েভে যে আবাসিক ভবনে হামলা হয়েছে, সেখানে ব্যবহৃত ক্ষেপণাস্ত্র ছিল উত্তর কোরিয়ার KN-23 (KN-23A) ব্যালিস্টিক মিসাইল। এদিকে ইউক্রেনের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আন্দ্রিই সিবিহা এক্সে এক বার্তায় বলেন, ‘এই বর্বর হামলাগুলোই প্রমাণ করে—শান্তির পথে মূল বাধা রাশিয়া, ইউক্রেন নয়’। অন্যদিকে দক্ষিণ আফ্রিকা সফররত জেলেনস্কি এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘আমার বিশ্বাস, ইউক্রেন ও পশ্চিমা মিত্রদের মধ্যে গতকালের আলোচনার ভিত্তিতে তৈরি একটি প্রস্তাব ট্রাম্পের টেবিলে রয়েছে’। তিনি সাফ জানিয়ে দেন, ‘আমাদের সংবিধান ও মূল্যবোধের বিরুদ্ধে কিছুই কোনো শান্তিচুক্তিতে থাকতে পারবে না’। এদিকে হোয়াইট হাউস থেকে সতর্ক বার্তা এসেছে—শিগগিরই অগ্রগতি না হলে যুক্তরাষ্ট্র তাদের প্রচেষ্টা থেকে সরে আসতে পারে। হামলার পরিণতি রয়টার্স জানিয়েছে, হামলার সময় কিয়েভবাসীর অনেকেই পোশাক পরারও সুযোগ পাননি। এ বিষয়ে ভিক্টোরিয়া বেকাল নামে কিয়েভের এক বাসিন্দা বলেন, ‘একের পর এক বিস্ফোরণ হচ্ছিল, সব জানালা উড়ে গেছে, আমার স্বামী ও ছেলেকে বিস্ফোরণ ছিটকে ফেলে দিয়েছে’। ইউক্রেনীয় বিমানবাহিনী জানিয়েছে, রাশিয়া ১৪৫টি ড্রোন ও ৭০টি ক্ষেপণাস্ত্র ছুঁড়েছে, যার মধ্যে ১১টি ছিল ব্যালিস্টিক মিসাইল। এসবের মধ্যে ১১২টি ভূপাতিত করা হয়েছে। হামলা শুধু কিয়েভেই সীমাবদ্ধ ছিল না—খারকিভ, জিতোমির ও ডিনিপ্রোপেত্রোভস্ক অঞ্চলেও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া গেছে। তবে ভয়াবহ এই হামলা এবং ট্রাম্পের প্রতিক্রিয়া রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের এক নতুন জটিল পর্বের দিকে ইঙ্গিত করছে—যেখানে শান্তির আহ্বান মূলত হামলার শব্দে হারিয়ে যাচ্ছে।