বুদ্ধিজীবী-জ্ঞানী-গুণী পরিচয়দানকারীদের কাছে প্রধানমন্ত্রীর প্রশ্ন

১৮ ডিসেম্বর, ২০২২ | ৭:০৫ পূর্বাহ্ণ
অনলাইন নিউজ ডেস্ক , ইউ এস বাংলা ২৪

আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এখানে গণতন্ত্রের অভাবটা কোথায়? নাকি যারা এ কথা বলেন, তাদের ভালো লাগে যখন জরুরি অবস্থার সরকার হয়। সামরিক শাসক আসে, তাদের একটু কদর বাড়ে। খোশামোদি-তোষামোদি করে। তিনি আরও বলেন, ওইটুকু পাওয়ার লোভে, ব্যক্তিস্বার্থের জন্য তারা দেশের গণতান্ত্রিক পদ্ধতিটাই ধ্বংস করতে চায়। তবে আমি বিশ্বাস করি- জনগণের শক্তিটাই বড় শক্তি। তাদের বিশ্বাস ও আস্থাটাই বড় শক্তি। আসন্ন আওয়ামী লীগের ২২তম সম্মেলনকে সামনে রেখে শনিবার সন্ধ্যায় গণভবনে দলটির জাতীয় কমিটির সভায় সূচনা বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের দেশের কিছু মানুষ যারা নিজেদের বুদ্ধিজীবী, জ্ঞানী-গুণী বলে পরিচয় দেয়। তাদের মুখেও শুনি- দেশে গণতন্ত্র নাকি আনতে হবে। আমার প্রশ্ন হচ্ছে- সামরিক শাসকরা মার্শাল ল’ দিয়ে রাষ্ট্র চালিয়েছিল, সেটাকেই কি তারা গণতন্ত্র বলতে চান নাকি? ওইটাই কি তাদের গণতান্ত্রিক ধারা? তারা কি খোলাসা করে সেটা বলতে পারে? সেটা তো করে না। নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তোলা ব্যক্তিদের সমালোচনা করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, স্বচ্ছ ব্যালেট বাক্স, ছবিযুক্ত ভোটার তালিকা, জনগণের ভোট দেওয়ার অধিকার নিশ্চিত করেছে কে? আওয়ামী লীগ সরকার। আমরা আসার পর এবং আমাদের দলীয় প্রস্তাবে এগুলো ছিল। খালেদা জিয়া এক কোটি ২৩ লাখ ভুয়া ভোটার তালিকা দিয়ে ২০০৬ সালে ভোট করতে চেয়েছিল। এটা কেউ ভুলে যাননি। তিনি বলেন, ভুয়া ভোটার তালিকা দিয়ে ভোট করা মানে হলো ভোট চুরির চেষ্টা করা। আমার কাছে মনে হয় ওটাই তাদের কাছে গণতন্ত্র। জনগণের ভোট চুরি, অর্থ চুরি, দুর্নীতি, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, এগুলো থাকলেই তাদের কাছে গণতন্ত্র। না হলে গণতন্ত্র খুঁজতে যাবে কেন তারা। ভোটের অধিকার কেড়ে নিলে মানুষ মেনে নেয় না : নির্বাচন ইস্যুতে বিএনপি ও খালেদা জিয়ার সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের মানুষ, কেউ তাদের ভোটের অধিকার কেড়ে নিলে বাংলাদেশের মানুষ মেনে নেয় না। ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে খালেদা জিয়া ভোট চুরি করেছে মানুষ তা মেনে নেয়নি। এরপর ২০০১-এ সরকার গঠন করে বিএনপি ভুয়া ভোটার তালিকা তৈরি করেছিল, জনগণ মেনে নেয়নি। সেটাও বাতিল হয়েছে। বিএনপি, খালেদা জিয়াকে দু-দুবার ভোট চুরির অপরাধে সরে যেতে হয়েছে। শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ যখন থেকে এই দেশে সরকার গঠন করেছে। তখন থেকেই এই দেশে গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রয়েছে। আওয়ামী লীগ দেশের জনগণের অধিকার রক্ষা করা, ভাতের অধিকার রক্ষা করা, দেশের মানুষের আর্থসামাজিক উন্নতি করা। দেশের মানুষের কল্যাণে কাজ করা। আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় ছিল তখনই মানুষের অধিকার নিশ্চিত হয়েছে। বিএনপি কোন মুখে ২০১৪ এবং ২০১৮-এর নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন করে : আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ২০০৮ সালের নির্বাচনে ফলাফল কী? বিএনপি পেয়েছিল ৩০টা সিট (আসন)। এটা সবার মনে রাখা উচিত। ওই নির্বাচন নিয়ে তো কেউ প্রশ্ন করতে পারে না। আর আওয়ামী লীগ দুই-তৃতীয়াংশ মেজরিটি পায়। তাহলে পরবর্তী ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচন নিয়ে বিএনপি কোন মুখে প্রশ্ন তোলে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ উন্নয়ন কাজের মাধ্যমে জনসমর্থন বাড়িয়েছে। জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করেছে। জনগণের কল্যাণ সাধন করেছে। আজকে বাংলাদেশে দীর্ঘদিন গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত আছে বলেই উন্নতি হয়েছে। শেখ হাসিনা বলেন, আমি জানি না যারা এখনো গণতন্ত্রের খোঁজ করেন, মনে হয় যেন দুরবিন দিয়ে ওনারা গণতন্ত্র দেখতেছেন। তাদের আমি জিজ্ঞাসা করব, জাতির পিতার সাড়ে তিন বছর ও আওয়ামী লীগের আমল ছাড়া কবে গণতন্ত্র ছিল? ক্ষমতা তো ছিল সেনানিবাসে বন্দি। জিয়া, খালেদা জিয়া সবই তো সেনানিবাসে বন্দি। সেনানিবাস থেকে চালানো হতো দেশ। তাহলে গণতন্ত্র বা জনগণের শক্তিটা কোথায়? জনগণের শক্তি ছিল না। তা ছিল খালেদা জিয়া বা জিয়ার হাতে। জনগণ তো সেখানে অবাঞ্ছিত, শক্তি ছিল না। যারা এই ১৪ বছর নিয়ে কথা বলেন তাদের বলব- এর আগের বাংলাদেশটা দেখেন, আর এখন বাংলাদেশটা দেখেন। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে দিয়েছি। প্রতি ঘরে বিদ্যুৎ দিয়েছি। সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছি। বিএনপির মুখে গণতন্ত্রের সবক মানায় না : প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ বাদ দিয়ে যেসব দল সেনাশাসকের পকেট থেকে গঠিত হয়েছে। দুর্ভাগ্যের বিষয় হচ্ছে তারা এবার গণতন্ত্রের কথা বলে। যাদের জন্ম হয়েছে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে, সামরিক শাসনের মধ্য দিয়ে। তারা আবার আমাদের গণতন্ত্রের সবক দেয়, পরামর্শ দেয়, গণতন্ত্র নাকি আবার প্রতিষ্ঠিত করবে। সরকারের উন্নয়ন-অগ্রগতির কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশকে গড়ে তুলেছি বলেই বাংলাদেশ আজ উন্নতি করেছে। যে বাংলাদেশ সন্ত্রাসী, দুর্বৃত্ত, দুর্নীতি, দুর্বৃত্তায়নের ছিল। আজকে সে দেশ গণতন্ত্র, উন্নয়ন ও বিশ্বে উন্নয়নের বিস্ময়। আওয়ামী লীগ একটানা ১৪ বছর ক্ষমতায় আছে বলেই সেই পরিবর্তন আনতে পেরেছি। সূচনা বক্তব্যের পরে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে সভা শুরু হয়। সভা পরিচালনা করেন দলের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। গণভবনের ভেতরে ফাঁকা জায়গায় পৃথক প্যান্ডেল করে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় জাতীয় কমিটির সদস্যসহ দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।