তানভীরকে কেন গ্রেফতার করা হচ্ছে না, সমালোচনার ঝড়

২৪ এপ্রিল, ২০২৫ | ৫:০৯ পূর্বাহ্ণ
ডেস্ক নিউজ , ডোনেট বাংলাদেশ

জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) থেকে অব্যাহতি পাওয়া গাজী সালাউদ্দিন তানভীরের বিরুদ্ধে কোটি কোটি টাকার তদবির বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। জেলা প্রশাসক নিয়োগে প্রভাব বিস্তার এবং সরকারি প্রতিষ্ঠানে কেনাকাটায় কমিশন বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ আছে তানভীরের বিরুদ্ধে। এর পরিপ্রেক্ষিতে এনসিপি থেকে সাময়িক অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে তাকে। দল থেকে তার বিরুদ্ধে ঘটনা তদন্তের নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। এদিকে সালাউদ্দিন তানভীরের অপকর্ম গণমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার পর ‘টক অব দ্য কান্ট্রি’তে পরিণত হয়েছে। পাশাপাশি সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়লে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় বইছে। এত স্পর্শকাতর অভিযোগ প্রকাশ্যে আসার পরও তানভীরকে এখনো কেন গ্রেফতার করা হচ্ছে না- এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে। একইসঙ্গে তানভীরকে আইনের আওতায় এনে জিজ্ঞাসাবাদ করে দুর্নীতিতে জড়িত ক্যাডার কর্মকর্তাদের চিহ্নিত করার দাবি তুলেছেন নেটিজেনরা। ফজলুল হক নামের একজন ফেসবুকে লিখেছেন, ‘এই কমিশন বাণিজ্যর সঙ্গে কারা জড়িত, সচিবালয়ের মতো এত স্পর্শকাতর জায়গায় কোন শক্তিতে সে এগুলো করত তা বের করা হোক। ’ রিপন প্রামানিক লেখেন, ‘তাকে গ্রেফতার করে না কেন? এরা একটা সময় ধর্মীয় বয়ান দিয়ে বেড়াবে।’ আরেকজন লেখেন, ‘এনসিপি দলটি খোলার দুই মাস হয়নি, এখনো নিবন্ধন হয়নি তাতেই এই অবস্থা। এরা আবার স্লোগান দিয়েছিল লীগের বিরুদ্ধে। এরা ক্ষমতা পাইলে হাজার লাখ না, কোটিতে কোটি ডলার পাচার করবে। সেটাই প্রমাণ করে দিল।’ কাশেম আলী লেখেন, ১৭ বছরের পিওনের ৪০০ কোটি আর ৯ মাসের পিওনের ৩০০ কোটি, নতুন দরবেশ বাবা ৪০০ কোটি। সাইফুল ইসলাম শরিফ নামের একজন লেখেন, ‘তাকে যারা থাকার সুযোগ করে দিয়েছে তাদের জবাবদিহি করা উচিত।’ কামাল মোল্লা লেখেন, ‘তার বিরুদ্ধে এত এত অপরাধের প্রমাণ থাকতেও তাকে কেন গ্রেফতার করা হচ্ছে না?’ ইকবাল হোসাইন মোমিন লেখেন, ‘পাক্কা দরবেশের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের মামলা চাই। তাকে আইনের আওতায় আনা হোক। ’ তানভীরকে গ্রেফতারের আহ্বান জানিয়ে ফেসবুকে শহিদ সারওয়ার লেখেন, ‘এই নব্য দরবেশকে অবিলম্বে গ্রেফতার করে তদন্ত করা হোক!’ শামি রাব্বি লেখেন, ‘আইনের আওতায় নিলেই আরও অনেক কিছুই বেরিয়ে আসবে।’ খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তদবির বাণিজ্যের মাধ্যমে গাজী সালাউদ্দীন ইতোমধ্যে বিপুল অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন। বিশেষ করে স্বরাষ্ট্র, স্বাস্থ্যসেবা, পরিবেশ, শিক্ষা, স্থানীয় সরকার এবং গৃহায়নসহ বেশ কয়েকটি মন্ত্রণালয় গাজী সালাউদ্দিনের তদবিরে অতিষ্ঠ ছিল। সর্বশেষ সোমবারও তিনি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যান। এ সময় মন্ত্রণালয়ের কয়েকজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার সঙ্গে তাকে একান্তে আলোচনা করতে দেখা যায়। তানভীর অন্তর্বর্তী সরকারের কোনো পদে নেই। ফলে তার কাছে সচিবালয়ে প্রবেশের নির্ধারিত অনুমতিপত্র বা পাশ থাকার কথা নয়। তবে অভ্যুত্থানের প্রভাব খাটিয়ে সচিবালয়ে প্রবেশের পাশ হাতিয়ে নেন তিনি। প্রশাসনের কেন্দ্রবিন্দু সচিবালয়ে প্রবেশের সুযোগে সেখানে নিজের একটি বলয় গড়ে তোলেন সালাউদ্দিন। বিশেষ করে বিভিন্ন ব্যাচের কিছু দুর্নীতিবাজ ক্যাডার কর্মকর্তা ও কর্মচারীর সঙ্গে তার সখ্য গড়ে ওঠে। গত বছর ৯ ও ১০ সেপ্টেম্বর একসঙ্গে ৫৩ জেলায় ডিসি (জেলা প্রশাসক) নিয়োগ দেওয়া হয়। অসাধু কর্মকর্তাদের মাধ্যমে এই নিয়োগ প্রক্রিয়ার সুযোগ নেন সালাউদ্দিন। ওই নিয়োগে কোটি কোটি টাকা লেনদেনের অভিযোগ ওঠে। সে সময় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন নিয়োগ ও মাঠ প্রশাসন অধিশাখায় কর্মরত বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের ২০তম ব্যাচের কর্মকর্তা, যুগ্মসচিব কেএম আলী আজম এবং ড. জিয়াউদ্দিন আহমেদের বিরুদ্ধে আর্থিক লেনদেনের কথা শোনা যায়। ড. জিয়াউদ্দিনের কক্ষে তিন কোটি টাকার ব্যাংক চেক পাওয়া যায়। ওই টাকা ডিসি নিয়োগের জন্য অগ্রিম হিসাবে তাকে দেওয়া হয়েছে বলে প্রচার হয়। এ দুই কর্মকর্তার সঙ্গে গাজী সালাউদ্দিন তানভীরের গভীর সম্পর্ক ছিল। সাবেক সচিব এবং বাংলাদেশ অ্যাডমিনেস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন (বিএএসএ) সভাপতি ড. আনোয়ার উল্লাহ বলেন, গাজী সালাউদ্দিন তানভীর এক সময় ছাত্র সমন্বয়ক ছিলেন। তার বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগের অবশ্যই কিছু সত্যতা রয়েছে। তা না হলে দল থেকে বহিষ্কারের কথা নয়। তিনি বলেন, ঘটনার অধিকতর তদন্তের স্বার্থে তাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে হস্তান্তর করা প্রয়োজন। এনসিপি থেকেই এ ধরনের উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে দুর্নীতিবাজ ক্যাডার কর্মকর্তাদের সম্পর্কে আরও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যেতে পারে। অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক এনসিপি নেতা গাজী সালাউদ্দিন তানভীর বলেন, ‘আমরা বিরুদ্ধে উপস্থাপিত সব অভিযোগের জবাব লিখিত আকারে দলীয় ফোরামে পেশ করা হবে। তখন বিষয়টি গণমাধ্যমকে জানানো হবে।’